আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 4, আন নিসা (নারী) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 4, আন নিসা (নারী)

মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১৭৬, রুকু সংখ্যা: ২৪

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০০১এক ব্যক্তি থেকে মানব বংশের বিস্তার হয়েছে। রক্ত সম্পর্কের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।
০২-১০এতিম এবং এতিমদের সম্পদ তত্ত্বাবধানের বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশাবলি। একত্রে কতজন স্ত্রী রাখা যাবে?
১১-১৪ ওয়ারিশি পাবে কারা এবং কে কতটুকু পাবে? আল্লাহর দেয়া ওয়ারিশি আইন না মানার বেদনাদায়ক পরিণতি।
১৫-১৮কারো স্ত্রী ব্যভিচার করলে তার বিধান। তাওবার নিয়ম।
১৯-২১স্ত্রী গ্রহণ ও বর্জন সংক্রান্ত বিধান।
২২-২৮কাদেরকে বিয়ে করা হারাম? বিয়ের পন্থা।
২৯-৩৩মুমিনদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলি।
৩৪-৩৫পারিবারিক জীবনে পুরুষের কর্তৃত্ব।
৩৬-৪২ মুমিনদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলি।
৪৩ সালাতের জন্যে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি।
৪৪-৫৭ইহুদিদের সীমালঙ্ঘন। শিরকের গুণাহ্ মাফ করা হবেনা।
৫৮-৭৬ মুমিনদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলি।
৭৭-৯১মুনাফিকি আচরণ। মুমিনদের প্রতি উপদেশ।
৯২-৯৩মুমিনকে হত্যা করা নিষিদ্ধ। ভুলবশত হত্যা করলে তার বিধান।
৯৪-১০০যুদ্ধ, জিহাদ ও হিজরত।
১০১-১০৪কসর ও ভয়কালীন সালাত।
১০৫-১১৫নবীর প্রতি কিতাবের বিধান অনুযায়ী ফায়সালা দেয়ার নির্দেশ। নবীর বিরোধিতাকারীরা জাহান্নামি।
১১৬-১২৬শিরকমুক্ত ঈমানের পথে আমল করার আহবান।
১২৭-১৩০কতিপয় দাম্পত্য বিধান।
১৩১-১৪১মুমিনদের প্রতি উপদেশ ও নির্দেশাবলি।
১৪২-১৫২মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
১৫৩-১৬২ইহুদি-খৃষ্টানদের হঠকারিতা ও বাহুল্য দাবি-দাওয়া।

4-1 : হে মানুষ! তোমরা সতর্ক হও তোমাদের রবের প্রতি, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি আত্মা থেকে। আর তা থেকেই সৃষ্টি করেছেন তার জুড়ি। অত:পর তাদের দু’জন থেকে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী। তোমরা ভয় করো আল্লাহকে, যাঁর দোহাই দিয়ে তোমরা (পরস্পর থেকে) তোমাদের অধিকার দাবি করো। আর সতর্ক হও রক্ত সম্পর্কের নিকটাত্মীয়দের (অধিকারের) ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তত্ত্বাবধানকারী পাহারাদার।
4-2 : দিয়ে দাও এতিমদেরকে তাদের মাল - সম্পদ। ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করোনা। তোমরা গ্রাস করোনা তাদের মাল - সম্পদ তোমাদের মাল - সম্পদের সাথে মিশিয়ে নিয়ে। কারণ, এটা একটা কবিরা গুনাহ্।
4-3 : আর তোমরা যদি আশংকা করো, এতিম - মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে যেসব নারীদের তোমরা পছন্দ করো, তাদের মধ্য থেকে বিয়ে করে নাও দুই, তিন, বা চারজনকে। কিন্তু, যদি আশংকা করো (একাধিক বিয়ে করলে) স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারবেনা, সে ক্ষেত্রে একটি বিয়ে করো, অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত মেয়ে। বেইনসাফি থেকে বাঁচার জন্যে এ ব্যবস্থাই অধিকতর সঠিক।
4-4 : আর তোমরা (যাদের বিয়ে করবে তাদের অর্থাৎ) স্ত্রীদের মোহর খোলামনে আনন্দচিত্তে দিয়ে দাও। তবে তারা নিজেরাই যদি সন্তুষ্টচিত্তে (মোহরানার) কিছু অংশ মাফ করে দেয়, তবে তোমরাও সানন্দে তা গ্রহণ করতে পারো।
4-5 : তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের মাল - সম্পদ তুলে দিওনা, যা আল্লাহ তোমাদের জীবন ধারণের মাধ্যম বানিয়েছেন। তবে তা থেকে তাদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করবে এবং তাদের সাথে উত্তম - উপদেশমূলক কথা বলবে।
4-6 : আর তোমরা এতিমদের যাচাই - পরীক্ষা করতে থাকো, যতোদিন তারা বিবাহযোগ্য - বালেগ না হয়। অত:পর যদি তোমরা তাদের মধ্যে ভালোমন্দ যাচাই করার মতো যোগ্যতার সন্ধান পাও, তখন তাদের মাল - সম্পদ তাদের হাতে সোপর্দ করে দাও। তারা বড় হয়ে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এই ভয়ে অপচয় করে তাদের সম্পদ তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলোনা। যে (এতিমের যে তত্ত্বাবধানকারী) সম্পদশালী, সে যেনো (এতিমদের সম্পদ থেকে তত্ত্বাবধানের খরচ নেয়া থেকে) বিরত থাকে। তবে অভাবী হলে প্রচলিত সঙ্গত পরিমাণ গ্রহণ করবে। যখন তাদের সম্পদ তাদের হাতে সোপর্দ করবে, তখন তাতে সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব নেয়ার জন্যে আল্লাহই কাফী (যথেষ্ট)।
4-7 : বাবা - মা ও আত্মীয় - স্বজনের রেখে যাওয়া অর্থ - সম্পদে পুরুষ (ওয়ারিশদের) অংশ রয়েছে, আর আর বাবা - মা ও আত্মীয় - স্বজনের রেখে যাওয়া অর্থ সম্পদে নারী (ওয়ারিশদের)ও অংশ রয়েছে, তা কমই হোক কিংবা বেশি। (উভয়ের) প্রাপ্য নির্ধারিত ও বিধিবদ্ধ।
4-8 : (ওয়ারিশি অর্থ - সম্পদ) বণ্টনকালে (ওয়ারিশ নয় এমন) আত্মীয় এবং এতিম ও অভাবী লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দেবে এবং তাদের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে।
4-9 : একথা ভেবে সবারই ভয় করা উচিত যে, তারাও যদি অসহায় সন্তান রেখে (মারা) যেতো, তবে (মৃত্যুর সময়) তারা কতো যে উদ্বিগ্ন হতো! সুতরাং তারা যেনো আল্লাহকে ভয় করে এবং সরল - সঠিক কথা বলে।
4-10 : নিশ্চয়ই যারা যুলুম করে (অন্যায়ভাবে) এতিমদের মাল - সম্পদ গ্রাস করে, তারা ভক্ষণ করে তাদের উদরে আগুন এবং তাদেরকে দগ্ধ করা হবে জ্বলন্ত আগুনে।
4-11 : আল্লাহ তোমাদের অসিয়ত (নির্দেশ) করছেন তোমাদের সন্তানদের (উত্তরাধিকার) সম্পর্কে: এক ছেলে সন্তান পাবে দুই মেয়ে সন্তানের সমান।কিন্তু তারা(ওয়ারিশরা) যদি শুধু মেয়ে সন্তান হয় এবং তারা যদি দুয়ের অধিক হয়, তবে তারা পরিত্যক্ত অর্থ - সম্পদের তিনভাগের দুইভাগ পাবে। কিন্তু কেউ যদি একমাত্র কন্যা রেখে যায়, তবে সে (পরিত্যক্ত সম্পদের) অর্ধেক পাবে। কেউ যদি সন্তান (এবং পিতা - মাতা) রেখে মারা যায়, তাহলে তার বাবা - মা প্রত্যেকেই ছয় ভাগের একভাগ করে পাবে। কিন্তু সে যদি নিঃসন্তান হয় এবং ওয়ারিশ হিসেবে বাবা - মা দু’জনকেই রেখে যায়, তবে তার মা পাবে তিনভাগের একভাগ। তবে সে যদি ভাইবোনও রেখে যায়, তবে তার মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। এভাবে ওয়ারিশি বণ্টন করতে হবে মৃত ব্যক্তি যদি কোনো অসিয়ত করে যায় কিংবা কোনো দেনা রেখে যায়, সেগুলো পরিশোধ করার পর।তোমরা তো জানো না, তোমাদের বাবা - মা এবং সন্তানের মধ্যে তোমাদের জন্য লাভের দিক থেকে কে বেশি নিকটবর্তী? (উত্তরাধিকার বণ্টন এবং বণ্টনের এই হার) আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আইন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী এবং পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার অধিকারী।
4-12 : তোমাদের স্ত্রীরা যদি সন্তান না রেখে মারা যায়, তবে তাদের পরিত্যক্ত অর্থ - সম্পদের অর্ধেক তোমরা (স্বামীরা) পাবে। কিন্তু তারা যদি সন্তান রেখে যায়, তবে তাদের পরিত্যাক্ত অর্থ - সম্পদের চার ভাগের এক ভাগ তোমরা (স্বামীরা) পাবে, অসিয়ত এবং দেনা পরিশোধ করার পর। তোমাদের (স্বামীদের) পরিত্যক্ত অর্থ - সম্পদের চার ভাগের এক ভাগ তারা (স্ত্রীরা) পাবে, যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। কিন্তু তোমাদের সন্তান থাকলে তোমাদের পরিত্যক্ত অর্থ - সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ তারা পাবে, তোমাদের অসিয়ত এবং দেনা পরিশোধের পর। যদি এমন কোনো পুরুষ বা নারী মারা যায়, যার (ওয়ারিশি পাওয়ার জন্যে) সন্তান নেই, বাবা - মাও বেঁচে নেই, তবে একজন ভাই এবং একজন বোন আছে, সে ক্ষেত্রে উভয়ের প্রত্যেকেই ছয় ভাগের একভাগ পাবে। কিন্তু (তার ওয়ারিশ) এর চাইতে বেশি হলে তারা প্রত্যেকেই এক তৃতীয়াংশ (তিন ভাগের এক ভাগে) সমান অংশীদার হবে। এসব বণ্টনই অসিয়ত এবং ঋণ পরিশোধের পর করতে হবে, যদি তা ক্ষতিকর না হয়। (ওয়ারিশি বণ্টন বিষয়ে) এগুলো হলো আল্লাহর অসিয়ত (নির্দেশ, আইন, বিধান)। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাধৈর্যশীল।
4-13 : এগুলো (ওয়ারিশি বিষয়ে) আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা। যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতসমূহের মধ্যে, যেগুলোর নিচে দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নদ - নদী নহর। সেগুলোর মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল। আর এটাই মহাসাফল্য।
4-14 : কিন্তু যে কেউ অমান্য করবে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশ এবং লংঘন করবে তাঁর (আল্লাহর নির্ধারিত) সীমানা, তিনি তাকে দাখিল করবেন আগুনে (জাহান্নামে)। সেখানেই সে থাকবে চিরকাল। তা ছাড়া তার জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব।
4-15 : তোমাদের যেসব নারী ফাহেশা কাজে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয় (বলে অভিযোগ উঠে), তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করাও। তারা (চারজনই) যদি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়, তবে তাকে গৃহবন্দী করে রাখো যতোদিন না তার মৃত্যু হয়, অথবা আল্লাহ এ ধরনের নারীদের বিষয়ে কোনো বিধান নাযিল করেন।
4-16 : তোমাদের মধ্যে যে দুইজন ঐ কর্মে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হবে, (প্রমাণিত হলে) তাদের দন্ড দাও। আর তারা যদি তওবা করে এবং নিজেদের ইসলাহ করে নেয়, তবে তাদের (শাস্তি) উপেক্ষা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী পরম দয়াবান।
4-17 : জেনে রাখো, আল্লাহ সেই সব লোকদের তওবাই কবুল করেন, যারা অজ্ঞতা বা ভুলবশত মন্দ কর্ম করে ফেলে এবং পরক্ষণেই ভীষণ অনুতপ্ত হয় ও তওবা করে। এরাই সেইসব লোক আল্লাহ যাদের তওবা কবুল করেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।
4-18 : ঐসব লোকদের অনুতপ্ত হওয়া বা তওবা করা নিষ্ফল, যারা মন্দ কর্ম চালিয়ে যেতেই থাকে। অত:পর যখন তাদের কারো মউত এসে হাজির হয়, তখন সে বলে: ‘আমি এখন তওবা করছি’। আর ঐসব লোকদের তওবাও নিষ্ফল, যাদের মউত হয় কুফুরিতে নিমজ্জিত থাকা অবস্থায়। এসব লোকদের জন্যেই আমরা প্রস্তুত রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব (Painful torment)।
4-19 : হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের জন্যে হালাল নয় নারীদের ওয়ারিশ হয়ে বসা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। আর তোমরা তাদের হয়রানি করো না তাদেরকে দেয়া সম্পদের (মোহরানার) কিছু অংশ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে। তবে তারা প্রমাণিত ফাহেশা কাজে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয়ে থাকলে ভিন্ন কথা। তাদের সাথে ভদ্রোচিত ও সম্মানজনকভাবে বাস করো। তোমরা যদি তাদের (স্ত্রীদের) অপছন্দ করো, তবে এমনো হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছু অপছন্দ করছো, অথচ আল্লাহ তাতে দান করবেন প্রভূত কল্যাণ।
4-20 : তোমরা যদি একজন স্ত্রী বাদ দিয়ে তার জায়গায় আরেকজন স্ত্রী গ্রহণ করার এরাদা করো, এবং (যাকে বাদ দেবে) তাকে যদি প্রচুর অর্থ - সম্পদও দিয়ে থাকো, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত নিওনা। তোমরা কি অপবাদ দিয়ে এবং সুস্পষ্ট পাপ কাজ করে তা ফেরত নেবে?
4-21 : তোমরা কী করে তা ফেরত নিতে পারো, অথচ তোমরা একজন আরেকজনের থেকে স্বাদ গ্রহণ করেছো এবং তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের থেকে পাকা প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে?
4-22 : তোমরা তাদের নিকাহ (বিয়ে) করোনা, যাদের নিকাহ করেছে তোমাদের পিতা ও পিতামহ। তবে অতীতে যা হবার হয়েছে। কারণ এ কাজ একটি ফাহেশা ও ঘৃণ্য কাজ এবং চরম নিকৃষ্ট পন্থা।
4-23 : তোমাদের জন্যে (বিয়ে করা) হারাম করা হলো: তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধ - মা, দুধ বোন, শাশুড়ী। আর তোমাদের স্ত্রীদের যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছো তাদের পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে। তবে যে স্ত্রীর সাথে সহবাস করোনি (অর্থাৎ সহবাস করার পূর্বেই যাদের তালাক দিয়েছো) তাদের পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করতে বাধা নেই। এছাড়া তোমাদের জন্যে হারাম তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের (তালাক দেয়া) স্ত্রী। হারাম দুই বোনকে একত্রে বিবাহাধীন করা, তবে পূর্বে (জাহেলি যুগে) যা হবার হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।
4-24 : তাছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ সব নারীই তোমাদের জন্যে হারাম। তবে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের বিয়ে করতে পারো। এগুলো তোমাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া অবশ্য মান্য বিধান। উল্লেখিত নারীদের বাইরে যতো নারী আছে নিজেদের অর্থ - সম্পদের (মোহরানার) বিনিময়ে তাদের (যাকে চাও) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা তোমাদের জন্যে হালাল করা হলো। তবে বিবাহ বহির্ভূত যৌন লালসা তৃপ্ত করার জন্যে কিছুতেই নয়। (বিয়ে করে) তাদের থেকে তোমরা যে যৌন স্বাদ আস্বাদন করো, তার বিনিময়ে তাদের মোহরানা ফরয হিসেবে পরিশোধ করে দাও। মোহরানা নির্ধারণের পর তোমরা যদি কোনো বিষয়ে (নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে বেশি প্রদান করতে) রাজি হয়ে যাও, তাতে তোমাদের কোনো দোষ হবেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
4-25 : তোমাদের মধ্যে যে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মুমিন নারীদের বিয়ে করার সামর্থ রাখেনা, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুমিন দাসীদের কাউকেও বিয়ে করবে। তোমাদের ঈমান সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি অবহিত। তোমরা একজন আরেকজন থেকে (অর্থাৎ তোমরা একই আদর্শ ও একই উম্মতভুক্ত)। সুতরাং তাদের বিয়ে করো তাদের অভিভাবকদের এযেন (অনুমতি) সাপেক্ষে এবং পরিশোধ করে দাও তাদের মোহরানা প্রচলিত ন্যায্য নিয়মে। তারা হবে সতী - সুরক্ষিত, অবৈধ যৌন নিবেদিতা নয় এবং ছেলে - বন্ধু গ্রহণকারিণীও নয়। তারা যখন বিবাহের দুর্গে আবদ্ধ হবে, তখন যদি ফাহেশা কাজে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয়, তখন তাদের দন্ড হবে স্বাধীন সম্ভ্রান্ত নারীদের দন্ডের অর্ধেক। (বিয়ের) এই বিধানটি দেয়া হলো তোমাদের মধ্যকার সেসব লোকদের জন্যে যারা (বিয়ে না করলে) দীনের বিধান লংঘন এবং স্বাস্থ্যহানির আশংকা করে। তবে সবর অবলম্বন করা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল পরম দয়াবান।
4-26 : আল্লাহ তোমাদের জন্যে বয়ান করে দেয়ার এরাদা করেছেন (হালাল এবং হারামের বিধান) এবং তোমাদের পরিচালিত করতে চাইছেন তোমাদের পূর্ববর্তী ভালো লোকদের নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। আর তিনি কবুল করে নিতে চাইছেন তোমাদের তওবা - অনুশোচনা। আল্লাহ তো আলিমুল হাকিম (সর্বজান্তা সর্বজ্ঞানী)।
4-27 : আল্লাহ এরাদা করেছেন তোমাদের তওবা ও অনুশোচনা কবুল করতে। অপরদিকে যারা কুপ্রবৃত্তির এত্তেবা (অনুসরণ) করে, তারা চায় তোমরা যেনো সত্যের পথ থেকে চরমভাবে বিচ্যুত হও।
4-28 : আল্লাহ এরাদা করেছেন তোমাদের উপর থেকে (বিধি নিষেধের) বোঝা হালকা করতে। কারণ, মানুষকে তো সৃষ্টি করা হয়েছে জয়ীফ (দুর্বল) করে।
4-29 : হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! তোমরা তোমাদের পরস্পরের মাল - সম্পদ গ্রাস করোনা বাতিল পন্থায়। তবে পরস্পরের রাজি খুশির ভিত্তিতে তেজারত (ব্যবসা) করার মধ্যে দোষ নেই। তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াবান।
4-30 : যে কেউ সীমা লঙ্ঘনের মাধ্যমে এবং যুলুম করে তা করবে, আমরা তাকে নিক্ষেপ করবো আগুনে। আর এ কাজ করা আল্লাহর জন্যে একেবারেই সহজ।
4-31 : তোমরা যদি কবিরা গুনাহসমূহ পরিহার করে চলো, যেগুলো করতে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে আমরা তোমাদের ছোট খাটো সব গুনাহখাতা মুছে (expiate) দেবো এবং তোমাদের দাখিল করবো অতীব সম্মান ও মর্যাদার জায়গায় (জান্নাতে)।
4-32 : আল্লাহ তাঁর যেসব (অনুগ্রহ) দান করে তোমাদের একজনকে আরেকজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন, তোমরা সেগুলোর লালসা করোনা। পুরুষ যা উপার্জন করে, তার অংশ হবে সে অনুযায়ী, আর নারী যা উপার্জন করে তার অংশ সে অনুযায়ী। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো তাঁর অনুগ্রহ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে অবহিত।
4-33 : পিতা - মাতা ও আত্মীয় স্বজনের রেখে যাওয়া প্রতিটি অর্থ - সম্পদের জন্যে আমরা উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ তাদেরকে তাদের অংশ দিয়ে দেবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের সাক্ষী।
4-34 : পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও ব্যবস্থাপক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের উপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া পুরুষরা তাদের (নারীদের) জন্যে নিজেদের মাল - সম্পদ ব্যয় করবে। সতী সাধ্বী স্ত্রীরা হয়ে থাকে অনুগত এবং তারা স্বামীর অনুপস্থিতিতে হেফাযত করে আল্লাহ তাদের যা হেফাযত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে অবাধ্যতার আশংকা করো তাদেরকে (প্রথমে) বুঝাও উপদেশ দাও, (দ্বিতীয় পর্যায়ে) তাদের সাথে শয্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করো, (তাতেও সুপথে না এলে অবশেষে) প্রহার করো (হালকাভাবে, যদি তা উপকারী হয়)। যে কোনো পর্যায়ে যখন তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যাবে, তখন আর তাদের উপর নির্যাতন চালাবার বাহানা তালাশ করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান এবং শ্রেষ্ঠ।
4-35 : তোমরা যদি তাদের (অর্থাৎ স্বামী - স্ত্রী) দুইজনের মাঝে সম্পর্ক ফাটল - এর আশংকা করো, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ (মোট দুইজন সালিশ) নিযুক্ত করো। তারা উভয়ে শান্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মাঝে মীমাংসার তৌফিক দান করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, সর্ববিষয়ে অবহিত।
4-36 : তোমরা সবাই এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করোনা। পিতা - মাতার প্রতি ইহ্সান করো এবং আত্মীয় - স্বজন, এতিম, মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ব সাথি, ভ্রমণ পথের সাক্ষাত লাভকারী পথিক এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস - দাসীদের প্রতিও ইহ্সান করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী দাম্ভিকদের পছন্দ করেননা।
4-37 : (এবং তিনি এমন লোকদেরও পছন্দ করেননা,) যারা নিজেরা বখিলি করে, মানুষকেও বখিলি করার আদেশ করে এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ ভান্ডার থেকে তাদের যা দিয়েছেন সেগুলো গোপন করে। আমরা অকৃতজ্ঞদের জন্যে প্রস্তুত করে রেখেছি অবমাননাকর আযাব।
4-38 : আর যারা নিজেদের মাল - সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখাবার উদ্দেশ্যে এবং (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখেনা (আল্লাহ তাদেরও পছন্দ করেন না)। মূলত শয়তান যার সাথি, তার সাথি বড়ই নিকৃষ্ট!
4-39 : তাদের কী ক্ষতি হতো, যদি তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি আস্থা রাখতো এবং আল্লাহ তাদের যে সম্পদ দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করতো? আল্লাহ তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন।
4-40 : আল্লাহ কারো প্রতি অণু পরিমাণ যুলুম করেন না। আর কেউ যদি একটি পুণ্যের কাজও করে, তিনি সেটাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।
4-41 : ভেবে দেখো, সে সময় ব্যাপারটা কী গুরুতর হবে, যখন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করাবো এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে হাজির করবো?
4-42 : যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করেছে এবং এই রসূলের অবাধ্য হয়েছে, সেদিন তারা কামনা করবে, হায়, মাটি যদি তাদেরকে তার গর্ভে ঢুকিয়ে নিতো! সেদিন তারা আল্লাহর নিকট থেকে কোনো কথাই গোপন করতে পারবে না।
4-43 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা সালাতের নিকটবর্তীও হয়োনা নেশাগ্রস্ত অবস্থায়১২ যতোক্ষণ না তোমরা যা বলো তা বুঝতে পারো। অনুরূপ জুনুবি (গোসল ফরয) অবস্থায়ও গোসল না করা পর্যন্ত সালাতের কাছে যেয়ো না; তবে ভ্রমণরত (মুসাফির অবস্থায়) থাকলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা যদি পীড়িত - অসুস্থ হও, অথবা সফরে থাকো, কিংবা তোমাদের কেউ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে এসে থাকে, অথবা যদি তোমরা নারী সহবাস করে থাকো এবং এসব অবস্থায় পানি না পাও, তবে পাক মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করে নিও, (এভাবে যারা) মাসেহ্ করবে নিজেদের মুখমন্ডল এবং হাত, নিশ্চয়ই আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) অতীব পাপমোচনকারী এবং পরম ক্ষমাশীল।
4-44 : তুমি কি তাদের দেখোনি, যাদের আল কিতাবের অংশ বিশেষ দেয়া হয়েছে? তারা ক্রয় করে ভ্রান্ত পথ এবং এরাদা করে: তোমরাও যেনো হও বিপথগামী।
4-45 : আল্লাহ তোমাদের দুশমনদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। তোমাদের অলি হিসেবে আল্লাহই কাফী (যথেষ্ট) এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই কাফী।
4-46 : যারা ইহুদি হয়েছে তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কথাকে স্থানচ্যুত করে বিকৃত করে। তারা বলে: ‘আমরা তোমার কথা শুনলাম এবং অমান্য করলাম’; আর শুনে, না শুনার মতো; নিজেদের জিহবা কুঞ্চিত করে দীনের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে তারা আরো বলে: ‘রায়েনা’।১৩ অথচ তারা যদি বলতো: ‘আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম’, ‘শুনুন’ এবং ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’, তবে সেটাই তাদের জন্যে উত্তম ও সঙ্গত হতো। কিন্তু আল্লাহ তাদের অবিশ্বাসের জন্যে তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন। সুতরাং স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তারা ঈমান আনবেনা।
4-47 : হে ঐসব লোক, যাদেরকে ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে! তোমাদের কাছে যা আছে (অর্থাৎ তাওরাত ও ইনজিল) তার সত্যায়নকারী যে কিতাব আমরা (মুহাম্মদের প্রতি) নাযিল করেছি, তোমরা তার প্রতি ঈমান আনো আমরা চেহারাগুলোকে বিকৃত করে পেছনের দিকে ফিরিয়ে দেয়ার পূর্বেই, অথবা শনিবার ওয়ালাদের যেমন অভিশপ্ত করেছি, সেরকম অভিশপ্ত করার পূর্বেই। আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে।
4-48 : আল্লাহর সাথে শিরক করা হলে (সে পাপ) আল্লাহ ক্ষমা করবেননা। এছাড়া অন্য পাপসমূহ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেবেন। যে আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে তো উদ্ভাবন করে নেয় এক মহাপাপ।
4-49 : তুমি কি তাদের (ইহুদি ও খৃস্টানদের) দেখোনি, যাঁরা নিজেরাই নিজেদেরকে পুত - পবিত্রতার সার্টিফিকেট দেয়? বরং আল্লাহ যাকে চান, শুদ্ধ ও পবিত্র করে দেন। তিনি কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ যুলুম করেন না।
4-50 : দেখো তাদের ঔদ্ধত্য, তারা স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করে। সুস্পষ্ট পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট।
4-51 : তুমি কি তাদের দেখোনি যাদের কিতাবের অংশ বিশেষ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত্১৪ ও তাগুতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। তারা কাফিরদের সম্পর্কে বলে: ‘যারা ঈমানের পথে চলে তাদের চাইতে এদের পথই অধিকতর সঠিক।’
4-52 : এরাই সেসব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেছেন। আর আল্লাহ যাকে লানত বর্ষণ করেন, তুমি কখনো তার জন্যে কোনো সাহায্যকারী পাবেনা।
4-53 : নাকি (আল্লাহর) সাম্রাজ্যে তাদের কোনো অংশ আছে? তেমনটি হলেও তারা মানুষকে একটি কানাকড়িও দেবেনা।
4-54 : নাকি আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ - ভান্ডার থেকে মানুষকে (মুহাম্মদ সা. ও তার অনুসারীদেরকে) যা দিয়েছেন, সে কারণে তারা তাদের প্রতি হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে? যদি তাই হয়, তবে তো আমরা ইবরাহিমের বংশধরদের (বনি ইসরাঈলকেও) কিতাব এবং হিকমাহ্ দিয়েছিলাম। আরো দিয়েছিলাম এক বিশাল সাম্রাজ্য।
4-55 : কিন্তু (সে ক্ষেত্রেও তো তাদের সবাই ঈমান আনেনি) তাদের কিছু লোক ঈমান এনেছিল আর কিছু লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তাদের দগ্ধ করার জন্যে তো জাহান্নামই যথেষ্ট।
4-56 : যারা আমার আয়াত মেনে নিতে অস্বীকার করে, অচিরেই আমরা তাদের দগ্ধ করবো আগুনে। যখনই তাদের চামড়া দগ্ধ হয়ে যাবে, তখনই নতুন চামড়া দিয়ে তা বদল করে দেবো, যাতে করে তারা (লাগাতার) আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
4-57 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ (উত্তম, ন্যায় ও পুণ্যের কাজ) করে, অচিরেই আমরা তাদের দাখিল করবো জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। তাছাড়া সেখানে তারা পাবে পবিত্র স্বামী এবং স্ত্রী। আর আমরা তাদের দাখিল করবো সুবিস্তৃত চিরস্নিগ্ধ ছায়ায়।
4-58 : নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমানত তার হকদারকে দিয়ে দিতে। তিনি আরো নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালা করবে, ন্যায় ও ইনসাফের সাথে সুবিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের অতি উত্তম উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
4-59 : হে লোকেরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো এই রসূলের, আর তোমাদের (মুসলিমদের) মধ্যকার সেইসব লোকদের যারা দায়িত্বশীল ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত। আর তোমরা যখনই কোনো বিষয়ে মতভেদ ও মতবিরোধ করবে, তা (ফায়সালার জন্যে) উপস্থাপন করো আল্লাহ ও রসূলের (কুরআন ও সুন্নাহর) নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখো। এটিই কল্যাণকর পন্থা এবং পরিণতির দিক থেকেও সর্বোত্তম।
4-60 : তুমি কি তাদের দেখোনি, যারা (অর্থাৎ মুনাফিকরা) দাবি করে, তারা তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে, সে সবগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে; কিন্তু তারা বিচার ফায়সালার জন্যে তাগুতের দ্বারস্থ হয়, অথচ তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করতে। মূলত শয়তান তাদের বিপথগামী করে নিয়ে যেতে চায় বহুদূর।
4-61 : যখন তাদের বলা হয়: ‘আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব এবং রসূলের দিকে আসো,’ তখন তুমি দেখতে পাও, মুনাফিকরা তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে পেছনে হটে যায়।
4-62 : তাদের কৃতকর্মের জন্যে যখন তাদের উপর কোনো মসিবত আপতিত হবে, তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে? তখন তারা তোমার কাছে এসে হলফ করে বলবে: আল্লাহর কসম, আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ছাড়া আর অন্য কিছু চাইনি।’
4-63 : তারা (মুনাফিক), তাদের মনের খবর আল্লাহ ভালো করেই জানেন। সুতরাং তাদের উপেক্ষা করো, আর তাদের ওয়ায (উপদেশ দান) করো এবং তাদের উদ্দেশ্যে এমনভাবে কথা বলো, যেনো তাদের মর্ম স্পর্শ করে।
4-64 : আল্লাহর নির্দেশে তাঁর আনুগত্য করা হবে - এ উদ্দেশ্য ছাড়া আমরা একজন রসূলও পাঠাইনি। তারা (মুনাফিকরা) নিজেদের প্রতি কোনো যুলুম করার পর যদি এ পন্থা অবলম্বন করতো যে, তোমার কাছে ছুটে আসতো, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং রসূলও তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতো, তাহলে অবশ্যি তারা আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দায়াবান পেতো।
4-65 : কিন্তু না (তাদের অবস্থা তা নয়), তোমার প্রভুর শপথ, এরা কখনো ঈমানদার হতে পারবেনা, যতোক্ষণনা তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ বিসম্বাদে তোমাকে হাকিম (Judge) নিযুক্ত করে, অত:পর তোমার ফায়সালা সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং বিনীতভাবে তোমার ফায়সালা তসলিম (গ্রহণ) করে নেয়।
4-66 : (এমন কি স্বয়ং) আমরাও যদি তাদের নির্দেশ দিতাম: ‘তোমার নিজেদের হত্যা করো অথবা নিজেদের গৃহ ত্যাগ করো’, তবে অল্প কিছু লোক ছাড়া তারা তা করতো না। তাদেরকে যে ওয়ায (উপদেশ দান) করা হয়েছে তারা যদি তা পালন করতো, তবে তা হতো তাদের জন্যে কল্যাণকর এবং তাদের ঈমানের দৃঢ়তা সাধনকারী।
4-67 : আর তখন অবশ্যি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তাদের দান করতাম মহাপুরস্কার।
4-68 : এবং অবশ্যি আমরা তাদের পরিচালিত করতাম সিরাতুল মুসতাকিমে।
4-69 : আর যে কেউ আনুগত্য করবে আল্লাহর এবং এই রসূলের, তারা সঙ্গি হবে আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং পুণ্যবানদের। সঙ্গি হিসেবে এরা কতোইনা উত্তম!
4-70 : এটা (এমনটি লাভ করা) আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞানী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
4-71 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা সতর্কতা গ্রহণ করো, তারপর দলে দলে ভাগ হয়ে সামনে অগ্রসর হও, অথবা একত্রে অগ্রসর হও।
4-72 : তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে (যুদ্ধে যেতে) গড়িমসি করে। তারপর তোমাদের কোনো মসিবত স্পর্শ করলে সে বলে: ‘আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে যাইনি।’
4-73 : আর তোমরা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো অনুগ্রহ লাভ করো, তখন তোমাদের ও তার মধ্যে যেনো কোনো সম্পর্ক নেই এমন ভাব দেখিয়ে সে অবশ্যি বলবে: ‘হায়, আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম, তবে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’
4-74 : সুতরাং যারা আখিরাতের (সাফল্যের) বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিক্রয় করে দেয়ার সাহস রাখে, তারাই আল্লাহর পথে লড়াই করুক। যে কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে, সে নিহত হোক, কিংবা বিজয়ী হোক, আমরা অচিরেই তাকে প্রদান করবো মহাপুরস্কার।
4-75 : তোমাদের কী হয়েছে, কেন তোমরা লড়াই করছোনা আল্লাহর পথে! সেইসব দুর্বল অসহায় নর, নারী ও শিশুদের জন্যে, যারা ফরিয়াদ করে বলছে: ‘আমাদের প্রভু! আমাদের বের করে নাও এই জনপদ থেকে। এর অধিবাসীরা যালিম। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে একজন অলির (অভিভাবকের) ব্যবস্থা করে দাও এবং ব্যবস্থা করে দাও একজন সাহায্যকারীর।’
4-76 : যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে, আর যারা কুফুরি করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। অবশ্যই শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।
4-77 : তুমি কি তাদের অবস্থা দেখছোনা, যাদের বলা হয়েছিল: ‘তোমাদের হাত সংবরণ করো, সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো।’ তারপর যখন তাদের জন্যে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হলো, তখন তাদেরই একটি দল মানুষকে ভয় করতে থাকলো আল্লাহকে ভয় করার মতো, কিংবা তার চেয়েও বেশি ভয়। তারা বলতে থাকলো: ‘আমাদের প্রভু! আমাদের কেন যুদ্ধের নির্দেশ দিলে? প্রভু! আমাদেরকে কিছুকালের অবকাশ দাও।’ হে নবী! বলো: ‘পার্থিব ভোগ - সম্ভার তো সামান্য। মুত্তাকিদের জন্যে আখিরাতই সর্বোত্তম। তোমাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবেনা।’
4-78 : তোমরা যেখানেই অবস্থান করো না কেন, মউত তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি তোমরা উঁচু মজবুত দুর্গে অবস্থান করলেও। তাদের কোনো কল্যাণ হলে তারা বলে: ‘এটা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর কোনো অকল্যাণ হলে বলে: এটা হয়েছে তোমার কারণে।’ তুমি বলো: ‘সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ এই লোকদের কী হলো, তারা যে কোনো কথাই বুঝেনা!
4-79 : তুমি যা কিছু কল্যাণ লাভ করো তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই, আর তোমার যা কিছু অকল্যাণ হয়, তা হয় তোমার নিজের কারণে। আমরা তোমাকে মানুষের জন্যে পাঠিয়েছি একজন রসূল হিসেবে। আল্লাহই যথেষ্ট সাক্ষী হিসেবে।
4-80 : যে রসূলের আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় আমরা তোমাকে তাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত করিনি।
4-81 : তারা বলে: ‘আমরা আনুগত্য করি।’ তারপর তোমার কাছ থেকে চলে গেলে রাতে তাদের একদল লোক তাদের কথার বিপরীত পরামর্শ করে। তারা রাতে যা সলাপরামর্শ করে আল্লাহ তা লিখে রাখেন। সুতরাং তুমি তাদের উপেক্ষা করো এবং আল্লাহর উপর ভরসা করো। উকিল হিসেবে আল্লাহই কাফী (যথেষ্ট)।
4-82 : তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তা - গবেষণা করেনা? এ কুরআন যদি আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষ থেকে আসতো, তবে অবশ্যি তারা এতে পেতো অনেক সাংঘর্ষিক কথা।
4-83 : যখনই তাদের কাছে শান্তি বা ত্রাসের কোনো সংবাদ আসে, তারা তা প্রচার করে বেড়ায়। তারা যদি (তা না করে) সেটা রসূল বা তাদের দায়িত্বশীলদের গোচরে আনতো, তবে তাদের মাঝে যারা উদ্ভাবনী যোগ্যতার অধিকারী তারা এর যথার্থতা অনুধাবন করতে পারতো। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমত না থাকলে তোমাদের স্বল্প সংখ্যক ছাড়া বাকিরা শয়তানের অনুসরণ করতো।
4-84 : সুতরাং তোমরা লড়াই করো আল্লাহর পথে। তোমাকে দায়ী করা হবে শুধু তোমার নিজের জন্যে। মুমিনদের উৎসাহ দিয়ে যাও। হয়তো আল্লাহ কাফিরদের শক্তি নিবারণ করবেন। আল্লাহই প্রবল শক্তিধর এবং কঠোরতর শাস্তিদাতা।
4-85 : যে কেউ ভালো কাজের সুপারিশ করবে, তার পুরস্কারে তার অংশ থাকবে। আর যে কেউ মন্দ কাজের সুপারিশ করবে, তাতেও তার অংশ থাকবে। প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ দৃষ্টি রাখেন।
4-86 : যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চাইতে উত্তম অভিবাদনে তার জবাব দাও, অথবা অন্তত অনুরূপ জবাব দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের হিসাব গ্রহণ করবেন।
4-87 : আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি কিয়ামতের দিন তোমাদের অবশ্যি জমা করবেন, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। আল্লাহর চেয়ে বড় সত্যবাদী আর কে?
4-88 : তোমাদের কী হলো, মুনাফিকদের ব্যাপারে যে তোমরা দুই দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের জন্যে তাদেরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেছেন, তোমরা কি তাকে হিদায়াতের পথে চালাতে চাও? আল্লাহ যাকে গোমরাহ্ করে দেন, তুমি তার জন্যে কখনো কোনো পথ পাবেনা।
4-89 : তারা কামনা করে তোমরা যেনো কুফুরি করো, যেমন তারা কুফুরি করেছে, যাতে করে তোমরা তাদের বরাবর হয়ে যাও। সুতরাং আল্লাহর পথে হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের কাউকেও অলি (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা যদি অস্বীকার করে, তবে তাদের যেখানে পাবে, গ্রেফতার করবে এবং হত্যা করবে। আর তাদের কাউকেও অলি (বন্ধু) এবং সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করোনা।
4-90 : তবে তাদেরকে নয়, যারা এমন জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রাখে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ, অথবা যারা তোমাদের কাছে এমন অবস্থায় আসে যখন তাদের মন থাকে তোমাদের সাথে, কিংবা তাদের সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করতে তারা সংকোচ বোধ করে। আল্লাহ চাইলে তিনি তাদেরকে তোমাদের উপর ক্ষমতাবান করে দিতেন এবং তারা অবশ্যি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো। এখন যদি তারা তোমাদের থেকে সরে দাঁড়ায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের কাছে শান্তির প্রস্তাব দেয়, তবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো পথ রাখেননি।
4-91 : তোমরা অপর এমন কিছু লোক পাবে, যারা তোমাদের সাথে এবং তাদের সম্প্রদায়ের সাথে শান্তি চাইবে। যখন তাদেরকে ফিতনার দিকে আহবান করা হয়, তখনই তারা এ ব্যাপারে তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। যদি তারা তোমাদের কাছ থেকে চলে না যায় এবং তোমাদের কাছে শান্তির প্রস্তাব না দেয় এবং তাদের হাত গুটিয়ে না রাখে, তবে তাদের যেখানেই পাবে গ্রেফতার করবে এবং হত্যা করবে। আমরা তোমাদেরকে এদের বিরুদ্ধে অবস্থানের সুস্পষ্ট অধিকার দিলাম।
4-92 : কোনো মুমিনের জন্যে অপর মুমিনকে হত্যা করা বৈধ নয়, তবে ভুলবশত করলে ভিন্ন কথা। কেউ যদি ভুলবশত কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তাহলে এর বিধান হলো, একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করা এবং নিহতের পরিবারবর্গকে গ্রহণযোগ্য মুক্তিপণ প্রদান করা, যদি তারা ক্ষমা করে না দেয়। আর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয় তবে এক মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি সে এমন কোনো সম্প্রদায়ের লোক হয় যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ, তবে তাদের পরিবারবর্গকে গ্রহণযোগ্য মুক্তিপণ প্রদান করবে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। কিন্তু কারো যদি সঙ্গতি না থাকে তবে লাগাতার দুইমাস রোযা রাখবে। এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে তওবা করার ব্যবস্থা, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান।
4-93 : আর কেউ যদি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে, তবে তার শাস্তি হলো জাহান্নাম, সে চিরকাল সেখানেই থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট এবং তিনি তাকে অভিশাপ দেন, আর তার জন্যে তিনি প্রস্তুত রেখেছেন বিশাল আযাব।
4-94 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা যখন আল্লাহর পথে রওয়ানা করবে, তখন পরীক্ষা করে নেবে (কে বন্ধু, কে শত্রু)। কেউ তোমাদের সালাম করলে দুনিয়ার স্বার্থ কামনায় তাকে বলো না: ‘তুমি মুমিন নও।’ তোমরা যদি পার্থিব জীবনের স্বার্থ হাসিল করতে চাও, তবে আল্লাহর কাছে রয়েছে অনেক গনিমত। তোমরাও তো আগে এরকমই ছিলে, তারপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করে নেবে। তোমরা যা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
4-95 : মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম না হওয়া সত্ত্বেও ঘরে বসে থাকে, তারা আর যারা নিজেদের ধনমাল এবং জান প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়। যারা নিজেদের ধনমাল এবং জানপ্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ ঘরে বসে থাকাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। তবে আল্লাহ প্রত্যেককেই কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। যারা ঘরে বসে থাকে, তাদের উপর আল্লাহ মুজাহিদদের মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
4-96 : তাঁর পক্ষ থেকে তাদের জন্যে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত। আর আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।
4-97 : নিজেদের প্রতি যুলুম করতে থাকা লোকদের যখন ফেরেশতারা ওফাত ঘটাতে আসে, তারা বলে: ‘তোমরা কী অবস্থার মধ্যে ছিলে?’ তখন তারা বলে: ‘আমরা দেশে দুর্বল অসহায় ছিলাম।’ তখন তারা বলে: ‘কেন আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিলনা যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে?’ এরাই সেইসব লোক যাদের আবাস হবে জাহান্নাম আর সেটা কতো যে নিকৃষ্ট আবাস!
4-98 : তবে সেসব লোকেরা নয়, যেসব দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা কোনো উপায় অবলম্বনের সামর্থ রাখেনা এবং কোনো পথও খুঁজে পায়না।
4-99 : তারা সেসব লোক, শীঘ্রি আল্লাহ যাদের পাপ মুছে দেবেন, কারণ আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
4-100 : যে হিজরত করবে আল্লাহর পথে সে জগতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করবে। যে কেউ নিজের ঘর থেকে আল্লাহর ও তার রসূলের দিকে মুহাজির হিসেবে বের হবে, এ পথে তার মৃত্যু হলে তার পুরস্কারের দায়িত্ব আল্লাহর। আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল পরম দয়াময়।
4-101 : তোমরা যখন ভ্রমণে বের হও, তখন যদি তোমরা আশংকা করো যে, কাফিররা তোমাদের জন্যে ফিতনা সৃষ্টি করবে, তবে সালাত কসর করলে তোমাদের কোনো দোষ হবেনা। নিশ্চয়ই কাফিররা তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন।
4-102 : (হে নবী!) যখন তুমি তাদের মাঝে থাকো এবং (যুদ্ধ ও ত্রাস চলাকালে) তাদের সাথে নিয়ে সালাতে দাঁড়াও, তখন তাদের মধ্য থেকে একটি গ্রুপ তোমার সাথে সালাতে দাঁড়াবে এবং তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র সাথে রাখবে। তারপর তারা সাজদা করে নিলে পেছনে গিয়ে অবস্থান নেবে এবং অপর গ্রুপ - যারা এখনো সালাতে অংশ নেয়নি এসে তোমার সাথে সালাতে অংশ নেবে। তারাও সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র সাথে রাখবে। কারণ, কাফিররা তো চায়, তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র এবং মাল সামানের ব্যাপারে সামান্য গাফিল হলেই তারা তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে, তোমরা যদি বৃষ্টির কারণে অসুবিধা বোধ করো, কিংবা অসুস্থ থাকো, তবে অস্ত্র রেখে দিলে কোনো অসুবিধা নেই, কিন্তু সতর্ক থাকবে। জেনে রাখো, আল্লাহ কাফিরদের জন্যে প্রস্তুত করে রেখেছেন অপমানকর আযাব।
4-103 : তারপর যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর যিকির করবে। তারপর যখন নিরাপদ বোধ করবে, তখন যথা নিয়মে সালাত আদায় করবে। নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্যে এক লিখিত বিধান।
4-104 : শত্রু কওমের সন্ধানে তোমরা দুর্বলতা প্রদর্শন করোনা, যদি তোমরা যন্ত্রণা ভোগ করে থাকো তবে তারাও তোমাদের মতোই যন্ত্রণা পায়। আল্লাহর কাছে তোমরা এমন জিনিস আশা করো, যা তারা আশা করেনা। আল্লাহ জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান।
4-105 : আমরা তোমার প্রতি সত্যতা ও বাস্তবতার নিরিখে নাযিল করেছি এই কিতাব, যাতে আল্লাহ তোমাকে যে সঠিক পথ জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালা করে দিতে পারো। তুমি কখনো খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ক করোনা।
4-106 : আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়াবান।
4-107 : যারা নিজেদের সাথে খিয়ানত করে, তুমি তাদের পক্ষে বিবাদে লিপ্ত হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো খেয়ানতকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।
4-108 : তারা মানুষ থেকে তাদের দুষ্কর্ম গোপন করতে চায়, কিন্তু আল্লাহর থেকে গোপন করতে পারেনা, তিনি তাদের সাথেই থাকেন রাত্রে যখন তারা তাঁর অপছন্দনীয় সলাপরামর্শ করে। তারা যা করে আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।
4-109 : হ্যাঁ, তোমরা ইহজীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করছো, কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে কে বিতর্ক করবে তাদের পক্ষে? কিংবা কে হবে তাদের পক্ষে উকিল?
4-110 : যে কেউ পাপ কাজ করে, কিংবা নিজের প্রতি যুলুম করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল দয়াবানই পাবে।
4-111 : যে কেউ কামাই করবে পাপ, সে তা কামাই করবে নিজেরই বিরুদ্ধে। আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাবান।
4-112 : যে কেউ উপার্জন করবে অপরাধ বা পাপ, পরে তা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করবে, সে তো বহন করবে মিথ্যা অপবাদ এবং সুস্পষ্ট পাপের বোঝা।
4-113 : তোমার প্রতি যদি আল্লাহর ফজল (অনুগ্রহ) এবং রহমত (দয়া) না হতো, তাহলে তাদের একটি দল তোমাকে বিপথগামী করতে চাইতো। আসলে তারা তো নিজেদের ছাড়া আর কাউকেও পথভ্রষ্ট করেনা। তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তো তোমার প্রতি নাযিল করেছেন আল কিতাব (আল কুরআন) এবং হিকমাহ (কর্মকৌশল ও কার্যনির্বাহী জ্ঞান) আর তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। তোমার প্রতি আল্লাহর ফজল বিরাট।
4-114 : তাদের অধিকাংশ গোপন সলাপরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ থাকে (সেই ব্যক্তির গোপন পরামর্শে) যে নির্দেশ দেয় দান করার, ভালো কাজ করার কিংবা মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপন করার। আল্লাহর সন্তোষ কামনায় কেউ যদি এসব কাজ করে, আমরা শীঘ্রি তাকে দান করবো মহাপু
4-115 : কারো কাছে হিদায়াত (সত্যপথ) সুস্পষ্ট হবার পরও যদি সে রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অবলম্বন করে, তাহলে সে যেদিকে মুখ ফিরিয়েছে আমরা তাকে সে দিকেই ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে প্রবেশ করাবো জাহান্নামে, যা চরম নিকৃষ্ট আবাস।
4-116 : নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার পাপ ক্ষমা করবেন না, এ ছাড়া অন্যগুলো ক্ষমা করে দেবেন যাকে ইচ্ছা করবেন। যে কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করে সে তো পথহারা হয়ে চলে যায় বহু দূরে।
4-117 : তারা তো আল্লাহর পরিবর্তে দেবীর এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে।
4-118 : তার প্রতি আল্লাহর লানত। সে বলে: ‘‘আমি অবশ্যি তোমার বান্দাদের একটি নির্দিষ্ট অংশকে আমার তাবেদার বানিয়ে নেবো।
4-119 : আমি অবশ্যি তাদের পথভ্রষ্ট করবো, তাদের মনে মিথ্যা আকাংখা সৃষ্টি করবো, তারা আমার নির্দেশ মতো পশুর কান ছিদ্র করবে এবং আমি তাদের নির্দেশ দিয়ে যাবোই এবং তারা অবশ্যি আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করতে থাকবে।’’ যে কেউ আল্লাহর পরিবর্তে এই শয়তানকে অলি (বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক) হিসেবে গ্রহণ করবে, সে অবশ্যি নিমজ্জিত হবে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে।
4-120 : সে তাদের ওয়াদা দেয় এবং তাদের মনে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করে দেয়। আর শয়তানের ওয়াদা তো প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
4-121 : এদের (শয়তানের অনুসারীদের) আবাস হবে জাহান্নাম এবং সেখান থেকে নিষ্কৃতির কোনো পথ তারা পাবেনা।
4-122 : পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, আমরা অবশ্যি তাদের দাখিল করবো জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ নদী নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কথার দিক থেকে আল্লাহর চাইতে সত্যবাদী আর কে?
4-123 : তোমাদের খেয়াল খুশি কিংবা আহলে কিতাবের খেয়াল খুশি মতো কাজ হবেনা। যে মন্দ কাজ করবে, তার প্রতিফল সে পাবেই এবং সে আল্লাহর পরিবর্তে কোনো অলি বা সাহায্যকারী পাবেনা।
4-124 : যে কোনো পুরুষ বা নারী মুমিন অবস্থায় আমলে সালেহ্ করবে, তারা অবশ্যি দাখিল হবে জান্নাতে এবং তাদের প্রতি কণা পরিমাণও অবিচার করা হবেনা।
4-125 : দীনের দিক থেকে ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কে আছে, যে মুহসিন (পুণ্যবান) অবস্থায় আল্লাহর বাধ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহিমের মিল্লাত (আদর্শ) অনুসরণ করেছে? আর আল্লাহ তো ইবরাহিমকে নিজের বন্ধু হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।
4-126 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, আর আল্লাহ প্রতিটি বস্ত্তকেই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।
4-127 : নারীদের ব্যাপারে তারা তোমার কাছে জানতে চাইছে। তুমি বলো আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদের ফতোয়া দিচ্ছেন, আর এতিম নারীদের ব্যাপারে, যাদের প্রাপ্য তোমরা পরিশোধ করোনা, অথচ তোমরা তাদের বিয়ে করতে চাও এবং অসহায় শিশুদের ব্যাপারে আর এতিমদের ব্যাপারে তোমাদের সুবিচার সম্পর্কে যা তোমাদের এই কিতাবে তিলাওয়াত করে শুনানো হয়, তা আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর তোমরা যে কোনো কল্যাণকর কাজই করোনা কেন, আল্লাহ তা বিশেষভাবে জ্ঞাত।
4-128 : কোনো নারী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে তারা আপোস মীমাংসা করতে চাইলে তাদের কোনো দোষ হবেনা। তাছাড়া আপোস - মীমাংসাই উত্তম। লোভের কারণে মানুষ স্বভাবত কৃপণ। তোমরা যদি ইহ্সান করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তবে জেনে রাখো, তোমরা যা করো আল্লাহ তার খবর রাখেন।
4-129 : তোমরা যতোই আকাংখা করোনা কেন, তোমরা কিছুতেই স্ত্রীদের মাঝে সমান ব্যবহার করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা কোনো একজনের দিকে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়োনা এবং অন্যকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দিওনা। তোমরা যদি সংশোধন করে নাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।
4-130 : আর যদি তারা (স্বামী স্ত্রী) পরস্পর পৃথক হয়েই যায়, তবে আল্লাহ তাঁর অসীম ভান্ডার থেকে দান করে তাদের প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করবেন। আর আল্লাহ তো প্রাচুর্যশালী প্রজ্ঞাবান।
4-131 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। ইতোপূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং বিশেষভাবে তোমাদেরকে আমরা অসিয়ত (নির্দেশ) করছি: ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।’ তোমরা যদি এটা অস্বীকার করো, তবে জেনে রাখো, নিশ্চয়ই মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং আল্লাহ মুখাপেক্ষাহীন সপ্রশংসিত।
4-132 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, আর উকিল (কর্মসম্পাদক) হিসেবে আল্লাহই কাফী (যথেষ্ট)।
4-133 : হে মানুষ! তিনি চাইলে তোমাদের অপসারিত করে অন্যদের নিয়ে আসতে পারেন। একাজ করতে আল্লাহ সম্পূর্ণ সক্ষম।
4-134 : কেউ যদি (শুধু) দুনিয়ার সওয়াব (পুরস্কার) চায়, তবে সে জেনে রাখুক, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় স্থানের সওয়াবই (পুরস্কারই) রয়েছে। আল্লাহ সব কিছু শুনেন, সব কিছু দেখেন।
4-135 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা সুবিচারের উপর মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো আল্লাহর সাক্ষী হিসেবে, তা যদি তোমাদের নিজেদের, কিংবা তোমাদের পিতা - মাতা বা নিকটজনের বিরুদ্ধেও যায়। সে বিত্তবান হোক কিংবা অভাবী, আল্লাহ তাদের উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা সুবিচার করতে গিয়ে খেয়াল খুশির অনুগামী হয়োনা। তোমরা যদি পেঁচালো কথা বলো, কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে জেনে রাখো, তোমরা যা করো আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
4-136 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলের প্রতি, আর সেই কিতাবের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রসূলের কাছে এবং ঐ কিতাবের প্রতিও যা তিনি নাযিল করেছেন তার পূর্বে। যে কেউ কুফুরি করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রসূলদের প্রতি এবং পরকালের প্রতি, সে তো বিপথগামী হয়ে চলে যাবে বহু দূর।
4-137 : যারা ঈমান এনেছে, তারপর কুফুরি করেছে, তারপর ঈমান এনেছে, তারপরও কুফুরি করেছে, তারপর কুফুরিতে অগ্রসর হয়েছে। আল্লাহ কিছুতেই তাদের ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে সঠিক পথও দেখাবেন না।
4-138 : মুনাফিকদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
4-139 : যারা মুমিনদের পরিবর্তে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে কাফিরদের, তারা কি তাদের কাছে ইজ্জত চায়? অথচ ইজ্জত তো পুরোটাই আল্লাহর।
4-140 : তিনি তো তোমাদের জন্যে কিতাবে একথা আগেই নাযিল করেছেন যে, তোমরা যখন শুনবে আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবেনা যতোক্ষণ না তারা অন্য প্রসঙ্গে চলে যাবে। তা না হলে তোমরাও তাদের অনুরূপ বলে গণ্য হবে। আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফিরদের জাহান্নামে একত্র করবেন।
4-141 : যারা তোমাদের অকল্যাণের অপেক্ষায় থাকে, তারপর যখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের বিজয় অর্জিত হয়, তখন তারা বলে: ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?’ আর যদি কাফিরদের আংশিক বিজয় হয়, তখন তারা বলে: ‘আমরা কি তোমাদের পরিবেষ্টন করে রাখিনি এবং মুমিনদের হাত থেকে রক্ষা করিনি?’ কিয়ামতের দিনই আল্লাহ তোমাদের মাঝে ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ কখনো মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের কোনো পথ করে দেবেন না।
4-142 : মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোকাবাজি করে। আসলে তিনিই তাদের ধোকায় ফেলে রেখেছেন। তারা যখন সালাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়ায়, তখন আলস্যের সাথে দাঁড়ায়। তারা সালাতে আসে লোক দেখানোর জন্যে এবং খুব কমই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে।
4-143 : তারা দোটানায় দোদুল্যমান থাকে, না এদের দিকে, না ওদের দিকে। আল্লাহ যাকে গোমরাহ করে দেন, তুমি তার জন্যে কোনো পথ পাবেনা।
4-144 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদের অলি হিসেবে গ্রহণ করোনা। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও?
4-145 : নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। তুমি তাদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী পাবেনা।
4-146 : তবে যারা তওবা করে, নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর জন্যে নিজেদের দীনকে একনিষ্ঠ করে নেয়, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে। আল্লাহ শীঘ্রি মুমিনদের দান করবেন মহাপুরস্কার।
4-147 : তোমরা যদি শোকর আদায় করো এবং ঈমান রাখো, তাহলে তোমাদের শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী কাজ? আল্লাহ তো কৃতজ্ঞতার মর্যাদাদানকারী সর্বজ্ঞানী।
4-148 : মনদ ও পাপের কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যার প্রতি যুলুম করা হয়েছে, তার কথা ভিন্ন। আল্লাহ সব শুনেন, সব জানেন।
4-149 : তোমরা যদি কল্যাণের কাজ প্রকাশ করো, কিংবা তা গোপন করো, অথবা যদি দোষ ক্ষমা করে দাও, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ পাপ ক্ষমাকারী শক্তিমান।
4-150 : যারা কুফুরি করে আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলদের প্রতি আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করে দিতে চায় এবং বলে: ‘আমরা কিছু মানি, আর কিছু মানি না’ আর তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়,
4-151 : তারাই আসল কাফির। আর আমরা কাফিরদের জন্যে প্রস্তুত করে রেখেছি অপমানকর আযাব।
4-152 : আর যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলদের প্রতি এবং তাদের কারো মধ্যে কোনো ফারাক করেনা, অচিরেই এদের তিনি পুরস্কার দেবেন তাদের প্রাপ্য পুরস্কার, এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াময়।
4-153 : আহলে কিতাবের লোকেরা তোমার কাছে দাবি করে, তুমি যেনো আসমান থেকে তাদের জন্যে একটি কিতাব নাযিল করো। মূসার কাছে তারা এর চাইতেও বড় জিনিস দাবি করেছিল। তারা (মূসাকে) বলেছিল: ‘আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও’। তাদের এই সীমালংঘনের কারণে বজ্রাঘাতে তারা মারা পড়েছিল। তারপরেও তারা গরুর বাছুরকে দেবতা হিসেবে গ্রহণ করেছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পর। তারপরও আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং মূসাকে প্রদান করেছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ।
4-154 : আমরা তাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়ার জন্যে তুর পাহাড়কে তাদের উপরে তুলে ধরেছিলাম এবং তাদের বলেছিলাম: ‘অবনত শিরে এই গেইট দিয়ে প্রবেশ করো।’ আমরা তাদের আরো বলেছিলাম: ‘শনিবারে বাড়াবাড়ি করোনা’। তাদের থেকে আমরা মজবুত অঙ্গীকার আদায় করেছিলাম।
4-155 : তারা অভিশপ্ত হয়েছে তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে, আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করার কারণে, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই কথার কারণে যে: ‘আমাদের অন্তর আচ্ছাদিত’। বরং তাদের কুফুরির কারণে আল্লাহ তাদের অন্তর সীলমোহর করে দিয়েছেন। ফলে তারা আর ঈমান আনবে না, স্বল্প সংখ্যক ছাড়া।
4-156 : তারা অভিশপ্ত হয়েছে তাদের কুফুরির কারণে এবং মরিয়মের উপর গুরুতর অপবাদ আরোপের কারণে।
4-157 : আর তাদের এ কথার কারণেও যে, ‘আমরা আল্লাহর রসূল মরিয়মের পুত্র ঈসা মসিহ্কে হত্যা করেছি।’ অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি, বরং তাদের এ রকম বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্পর্কে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যি এ বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে ছিলো। অনুমানের অনুগামী হওয়া ছাড়া এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞানই ছিলনা। তারা যে তাকে হত্যা করেনি, তা নিশ্চিত।
4-158 : বরং আল্লাহ তাকে তাঁর কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহাশক্তিধর, প্রজ্ঞাবান।
4-159 : আহলে কিতাবের প্রতিটি মানুষ অবশ্যি তার (ঈসার) প্রতি ঈমান আনবে তার মৃত্যুর আগে এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে।
4-160 : ইহুদিদের যুলুমের কারণে আমরা তাদের জন্যে হারাম করে দিয়েছি ভালো ভালো সেসব জিনিস, যা তাদের জন্যে হালাল ছিলো এবং আল্লাহর পথে যে তারা অনেককে বাধা দেয় সে কারণে।
4-161 : তাছাড়া তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, যা থেকে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। আর অন্যায়ভাবে মানুষের অর্থসম্পদ গ্রাস করার করণে। আমরা কাফিরদের জন্যে তৈরি করে রেখেছি বেদানাদায়ক আযাব।
4-162 : তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে গভীরতা রাখে তারা এবং মুমিনরা ঈমান রাখে যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি সেটার প্রতি এবং যা আমরা তোমার আগে নাযিল করেছি তার প্রতিও। তারা সালাত কায়েমকারী, যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান পোষণকারী। আমরা এদের শীঘ্রি প্রদান করবো মহাপুরস্কার।
4-163 : আমরা তোমার কাছে অহি পাঠিয়েছি, যেমন পাঠিয়েছিলাম নূহের কাছে এবং তার পরের নবীদের কাছে, ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইয়াকুব ও তার বংশধরদের কাছে এবং ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূণ ও সুলাইমানের কাছে, আর আমরা দাউদকে দিয়েছিলাম যবুর।
4-164 : এছাড়া আরো অনেক রসূল। তাদের কথা আমরা আগেই তোমাকে জানিয়েছি আর অনেক রসূলের কথা আমরা তোমাকে বলিনি। এছাড়া আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন।
4-165 : তারা ছিলো সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রসূল, যাতে করে রসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ করার সুযোগ না থাকে। আর আল্লাহ তো মহাশক্তিমান ও মহাপ্রজ্ঞাবান।
4-166 : আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন তোমার প্রতি যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যে, তিনি তা নাযিল করেছেন নিজ জ্ঞানের ভিত্তিতে, ফেরেশতারাও এ সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে তো আল্লাহই যথেষ্ট।
4-167 : নিশ্চয়ই যারা কুফুরি করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়, তারা বিপথগামী হয়ে চলে গেছে বহু দূর।
4-168 : নিশ্চয়ই যারা কুফুরি করেছে এবং যুলুম করেছে, আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না, আর তাদেরকে কোনো পথও দেখাবেন না।
4-169 : তবে জাহানণামের পথ। সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল। এটা আল্লাহর জন্যে খুবই সহজ।
4-170 : হে মানুষ! এই রসূল তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে মহাসত্য নিয়ে। সুতরাং তোমরা তার প্রতি ঈমান আনো, এটাই হবে তোমাদের জন্যে কল্যাণবহ। কিন্তু তোমরা যদি অস্বীকার করো, তবে জেনে রাখো, মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাপ্রজ্ঞাবান।
4-171 : হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করোনা এবং আল্লাহর সম্পর্কে সত্য ছাড়া বলোনা। নিশ্চয়ই মরিয়মের পুত্র ঈসা মসিহ্ আল্লাহর একজন রসূল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি নিক্ষেপ করেছিলেন মরিয়মের প্রতি, আর সে আল্লাহর একটি আদেশ। সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলদের প্রতি, আর তোমরা তিন খোদা বলো না। তোমরা এ থেকে বিরত হও, এটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। নিশ্চয়ই আল্লাহ একমাত্র ইলাহ্। তাঁর সন্তান থাকবে - এমন বিষয় থেকে তিনি পবিত্র। মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তো তাঁর। উকিল হিসেবে আল্লাহই কাফী (যথেষ্ট)।
4-172 : মসিহ্ (ঈসা) আল্লাহর বান্দা হওয়াকে কখনো ছোট করে দেখেনি, নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারাও নয়। যে কেউ আল্লাহর দাসত্ব করাকে হেয় জ্ঞান করবে এবং অহংকার করবে, তিনি তাদের সবাইকে অবশ্যি তাঁর কাছে জমা করবেন।
4-173 : তবে যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তিনি তাদের পুরোপুরি দান করবেন তাদের পুরস্কার এবং নিজ অনুগ্রহ থেকে তাদের আরো বেশি করে দেবেন। কিন্তু যারা হেয় জ্ঞান করবে এবং অহংকার করবে তাদের তিনি আযাব দেবেন বেদনাদায়ক আযাব। তারা আল্লাহর পরিবর্তে কোনো পৃষ্ঠপোষক কিংবা সাহায্যকারী পাবেনা।
4-174 : হে মানুষ! অবশ্যি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে একটি প্রমাণ, (মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ) আর আমরা তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি একটি সুস্পষ্ট নূর (আল কুরআন)।
4-175 : তাই যারা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি এবং মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে তাঁকে, তিনি তাদের দাখিল করবেন তাঁর রহমত ও অনুগ্রহের মধ্যে এবং তাদের পরিচালিত করবেন তাঁর দিকে সিরাতুল মুসতাকিমে (সরল সঠিক পথে)।
4-176 : লোকেরা তোমার কাছে ফতোয়া চাইছে। তুমি বলো: আল্লাহ তোমাদের ফতোয়া দিচ্ছেন নিঃসন্তান পিতা - মাতাহীন ব্যক্তির ব্যাপারে: কোনো পুরুষ মারা গেলে তার যদি সন্তান না থাকে এবং থাকে যদি শুধু একজন বোন, তবে সে পাবে পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক। আর তার ঐ একক বোনটি যদি (তার আগে) মারা যায় তবে সে হবে তার ওয়ারিশ যদি তার কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি দুই বোন থাকে, তবে তারা পাবে তার পরিত্যক্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ। কিন্তু যদি তারা একাধিক ভাই - বোন থাকে সে ক্ষেত্রে এক পুরুষের অংশ হবে দুই নারীর সমান। আল্লাহ তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট বিধান দিচ্ছেন, যাতে করে তোমরা বিভ্রান্ত না হও। আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞানী।