আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 5, আল মায়েদা (দস্তরখান) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 5, আল মায়েদা (দস্তরখান)

মদিনার অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১২০, রুকু সংখ্যা: ১৬

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৫অঙ্গীকার পূর্ণ করো। ইহরাম অবস্থায় শিকার নিষেধ। যেসব প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ। সব পবিত্র জিনিস হালাল। আহলে কিতাবের খাবার হালাল। আহলে কিতাবের সতী মেয়েদের বিয়ে করা হালাল। শিকারের বিধান।
০৬সালাতের জন্য অযু ও তায়াম্মুমের বিধান।
০৭-১১মুমিনদের প্রতি ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বনের নির্দেশ।
১২-২৬বনি ইসরাঈলের প্রতি উপদেশ এবং তাদের সীমালঙ্ঘনের ইতিহাস।
২৭-৩১ আদমের এক পুত্র কর্তৃক আরেক পুত্র হত্যার ঘটনা।
৩২ বনি ইসরাঈলিদের জন্যে হত্যার বিধান।
৩৩-৩৪ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জন্যে বিধান।
৩৫-৩৭ তাকওয়া, উসিলা ও জিহাদের নির্দেশ।
৩৮-৪০ চোরের দন্ড।
৪১-৫০ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করার নির্দেশ।
৫১-৮৬ ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদেরকে অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক ও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে মুমিনদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা। তারা তাওরাত ও ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠিত করেনি। খ্রিষ্টানরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে শিরকে নিমজ্জিত হয়েছে। ইসরাঈলিদেরকে তাদের নবীরাও অভিশাপ দিয়েছেন। মুমিনদের জঘন্য শত্রু ইহুদি ও মুশ্রিকরা, খ্রিষ্টানরা কিছুটা বন্ধুভাবাপন্ন, কারণ তাদের মধ্যে কিছু বিনয়ী ও সত্য সন্ধানী পাদ্রী আছে।
৮৭-১০৮ মুমিনদের জন্যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
১০৯-১২০ ঈসা আ. এর রিসালাত, মুজিযা ও দাওয়াত। কিয়ামতের দিন তাঁকে আল্লাহর প্রশ্ন।

5-1 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের অংগীকার পূরণ করো। তোমাদের জন্যে হালাল করা হলো গৃহপালিত চতুস্পদ পশু, সেগুলো ছাড়া যেগুলো (সামনে) তিলাওয়াত করা হচ্ছে ; তবে ইহরাম অবস্থায় তোমাদের জন্যে শিকার করা বৈধ নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ হুকুম প্রদান করেন যা তিনি চান।
5-2 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে, হারাম মাসকে, কাবায় প্রেরিত কুরবানির পশুকে, (কুরবানির) উদ্দেশ্যে গলায় চিহ্ন পরানো পশুকে এবং নিজেদের প্রভুর রেজামন্দি ও অনুগ্রহ সন্ধানে বায়তুল হারাম অভিমুখী যাত্রীদের অবমাননা করাকে হালাল করে নিয়োনা। যখন তোমরা ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে, তখন শিকার করো। মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে তোমাদের বাধা দিয়েছে বলে কোনো কওমের প্রতি বিদ্বেষ যেনো তোমাদেরকে কিছুতেই সীমালংঘনে প্ররোচিত না করে। আর পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো, তবে পাপও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করোনা। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা।
5-3 : হারাম করে দেয়া হলো তোমাদের জন্যে মৃত পশু, রক্ত, শুয়োরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ্ করা পশু। দমবন্ধ হয়ে মরে যাওয়া পশু, আঘাতে মৃত পশু, উপর থেকে পড়ে মরা পশু, সিং - এর গুতোয় মরা পশু এবং সেই পশু যাকে হিংস্র জানোয়ার ছিন্ন ভিন্ন করে খেয়েছে। তবে এর মধ্যে যেগুলোকে তোমরা যবেহ্ করার সুযোগ পাও (সেগুলো হালাল)। আর যেগুলো আস্তানা বা বেদিতে যবাই করা হয়েছে সেগুলোও হারাম। আরো হারাম করা হয়েছে জুয়ার তীরের (অর্থাৎ জুয়াবাজির) মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয় করা। এগুলো সবই ফাসেকি কাজ। আজ কাফিররা তোমাদের দীনের বিরোধিতার কাজে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তাদের ভয় পেয়োনা, কেবল আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্যে পূর্ণ করে দিলাম তোমাদের দীন, পরিপূর্ণ করে দিলাম তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত (আল কুরআন) এবং তোমাদের জন্যে দীন (জীবন ব্যবস্থা) মনোনীত করলাম ইসলামকে। কেউ পাপের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে ক্ষুধার তাড়নায় যদি বাধ্য হয়ে (হারামকৃত জিনিসগুলো থেকে কিছু খায়) তবে অবশ্যি আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াময়।
5-4 : তারা তোমার কাছে জানতে চাইছে, তাদের জন্য কী হালাল করা হয়েছে? তুমি তাদের বলো: তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সব ভালো জিনিস। আল্লাহ তোমাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন তার আলোকে তোমরা শিকারী পশু পাখিদের যা প্রশিক্ষণ দাও, তারা তোমাদের জন্য যা শিকার করে আনে সেগুলো খাও। তবে সেগুলোতে আল্লাহর নাম নেবে, আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
5-5 : আজ তোমাদের জন্য হালাল করা হলো সব ভালো - পবিত্র জিনিস। পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্য দ্রব্য (যবাই করা পশু) তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য দ্রব্যও তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্য (বিয়ে করা হালাল) সতী সাধ্বী মুমিন নারীদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সতী সাধ্বী নারীদেরকে যদি তোমরা তাদের মোহরানা প্রদান করো বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, ব্যভিচার এবং গোপন প্রণয়িনী হিসেবে গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে নয়। যে কেউ ঈমানের পথে আসতে অস্বীকার করবে, নিষ্ফল হয়ে যাবে তার আমল এবং আখিরাতে সে অন্তরভুক্ত হবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের।
5-6 : হে ঈমানদার লোকেরা ! তোমরা যখন সালাতের জন্য উঠবে তখন ধুয়ে নেবে তোমাদের মুখমন্ডল এবং তোমাদের হাত কনুই পর্যন্ত, আর মাসেহ্ করে নেবে তোমাদের মাথা এবং ধুয়ে নেবে তোমাদের পা টাক্নু পর্যন্ত। কিন্তু তোমরা যদি অপবিত্র থাকো তাহলে (আগেই) পবিত্র হয়ে নেবে। তবে যদি রোগাক্রান্ত হয়ে থাকো, কিংবা সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ যদি পায়খানায় গিয়ে আসো, কিংবা স্ত্রীর সাথে সংগম করে থাকো, অতঃপর যদি পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করে নাও ভালো মাটি দিয়ে। তা দিয়ে মাসেহ্ করে নেবে তোমাদের মুখমন্ডল এবং হাত। আল্লাহ্ তোমাদের কষ্টে ফেলতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে, যাতে করে তোমরা হতে পারো শোকরগুজার।
5-7 : তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করো আর সেই অংগীকারের কথা যার সাথে তিনি তোমাদের শক্তভাবে আবদ্ধ করেছিলেন, যখন তোমরা বলেছিলে: ‘আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।’ আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোভাবে জানেন অন্তরের খবর।
5-8 : হে ঈমান আনা লোকেরা! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদাতা হিসেবে অটল অবিচল থাকো। কোনো কওমের প্রতি বিদ্বেষ যেনো তোমাদেরকে ন্যায়নীতি বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা আদল ও ইনসাফের নীতি গ্রহণ করো। এটাই তাকওয়ার জন্যে নিকটতর। আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আমল (কর্মকান্ড) সম্পর্কে বিশেষভাবে খবর রাখেন।
5-9 : আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ করে তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত এবং বিশাল পুরস্কার।
5-10 : আর যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করে এবং প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আয়াত, তারা হবে জাহিমের (জ্বলন্ত আগুনের) অধিবাসী।
5-11 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো যখন একদল লোক তোমাদের উপর হাত উঠাতে চেয়েছিল, তখন তিনিই তোমাদের থেকে তাদের হাত গুটিয়ে রেখেছিলেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর মুমিনরা তাওয়াক্কুল করুক আল্লাহরই উপর।
5-12 : (দেখো), আল্লাহ বনি ইসরাঈলের অংগীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং আমরা তাদের মধ্য থেকে বারোজন নকিব (নেতা) নিয়োগ করেছিলাম। আল্লাহ তাদের বলেছিলেন: আমি তোমাদের সাথে আছি তোমরা যদি সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো, আমার রসূলদের প্রতি ঈমান রাখো, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং আল্লাহকে করযে হাসানা দাও। তাহলে অবশ্যি তোমাদের থেকে মুছে দেবো তোমাদের পাপসমূহ এবং অবশ্য অবশ্যি তোমাদের দাখিল করবো জান্নাতসমূহে, যেগুলোর নিচে দিয়ে জারি থাকবে নদ নদী নহর। এরপরও যদি (তোমাদের) কেউ কুফুরিতে নিমজ্জিত হয়, সে বিপথগামী হয়ে যাবে সোজা পথ থেকে।
5-13 : অংগীকার ভংগের কারণে আমরা তাদেরকে (বনি ইসরাঈলকে) লানত করেছি এবং তাদের অন্তরগুলোকে করে দিয়েছি কঠিন। তারা বিকৃত করতো কথাকে আসল অর্থ থেকে এবং তাদের যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার একাংশ তারা ভুলে গিয়েছিল। সব সময় তুমি তাদের অল্প কিছু লোক ছাড়া বাকিদেরকে খিয়ানতকারী দেখতে পাবে। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কল্যাণকামীদের মহববত করেন।
5-14 : আমরা তাদের থেকেও অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম যারা বলে আমরা নাসারা (খৃষ্টান)। কিন্তু তাদের যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার একাংশ তারা ভুলে থেকেছিল। সুতরাং আমরা কিয়ামতকাল পর্যন্ত তাদের মধ্যে দুশমনি ও বিদ্বেষ জাগিয়ে রেখেছি। অচিরেই (বিচারের দিন) আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অবহিত করবেন।
5-15 : হে আহলে কিতাব! এখন তো তোমাদের কাছে আমাদের রসূল (মুহাম্মদ) এসে গেছে। সে আল কিতাবের এমন অনেক বিষয়ই তোমাদের কাছে প্রকাশ করেছে, যা তোমরা গোপন করে রাখছিলে, আর অনেক বিষয় সে ক্ষমার চোখেও দেখছে। তোমাদের কাছে তো এসে গেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আলো (অর্থাৎ রসূল মুহাম্মদ) এবং একটি সুস্পষ্ট কিতাব (আল কুরআন)।
5-16 : এর মাধ্যমে আল্লাহ সেইসব লোকদের সালামের (শান্তি ও নিরাপত্তার) পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তোষ লাভের আকাংখী, আর নিজ অনুমতিক্রমে তিনি তাদেরকে অন্ধকাররাশি থেকে বের করে নিয়ে আসেন আলোতে এবং তাদের পরিচালিত করেন সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে।
5-17 : যারা বলে, ‘মসিহ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ’, তারা কুফুরি করেছে। বলো, আল্লাহ যদি মসিহ্ ইবনে মরিয়মকে, তার মাকে এবং বিশ্বের সব মানুষকে হালাক করে দিতে চান, তাহলে তাঁকে তাঁর এই এরাদা থেকে বিরত রাখার ক্ষমতা কার আছে? মহাকাশ, পৃথিবী এবং এদুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর মালিক তো আল্লাহ। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
5-18 : ইহুদি এবং নাসারারা বলে: ‘আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র।’ বলো: তাহলে তোমাদের অপরাধের জন্যে তিনি তোমাদের শাস্তি দেন কেন? বরং তোমরা তো সে রকমই মানুষ, যেমন তিনি অন্যান্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ক্ষমা করে দেন যাকে ইচ্ছা এবং আযাব দেন যাকে ইচ্ছা। মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। সবাইকে ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে।
5-19 : হে আহলে কিতাব! এখন তো তোমাদের কাছে এসে গেছে আমার রসূল (মুহাম্মদ) দীনের সমস্ত বিষয় তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট করার জন্যে দীর্ঘকাল রসূলদের আসা বন্ধ থাকার পর, যাতে করে তোমরা বলতে না পারো যে: ‘আমাদের কাছে তো কোনো সুসংবাদদাতা কিংবা সতর্ককারী আসেনি।’ এখন তো তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী এসে গেছে। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
5-20 : (স্মরণ করো) যখন মূসা তার কওমকে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই নিয়ামত - এর কথা স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে অনেক নবী প্রেরণ করেছিলেন, তোমাদের বানিয়েছিলেন শাসক এবং তোমাদের দিয়েছিলেন (এতোসব) যা বিশ্বজগতের আর কাউকেও দেয়া হয়নি।
5-21 : হে আমার কওম, দাখিল হও পবিত্র ভূমিতে (জেরুযালেমে) যা লিখে দিয়েছেন আল্লাহ তোমাদের জন্যে, পেছনে হটে যেয়োনা, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’’
5-22 : তারা বললো: ‘হে মূসা! সেখানে যে রয়েছে একটি দুর্ধর্ষ জাতি! আমরা কিছুতেই সেখানে দাখিল হবোনা, যদি না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে যায়, তবেই আমরা দাখিল হবো সেখানে।’
5-23 : তবে (তাদের মধ্য থেকে) দুইজন লোক যারা ভয় করছিল এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন তারা বললো: ‘তোমরা (তাদের সাথে লড়াই করে) দরজা দিয়ে দাখিল হয়ে যাও। যখনই তোমরা দাখিল হয়ে যাবে তোমরাই গালিব (জয়ী) হবে। আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করো যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।’
5-24 : কিন্তু তারা একইভাবে বললো: ‘হে মূসা! আমরা ততোদিন সেখানে কিছুতেই দাখিল হবোনা যতোদিন তারা সেখানে অবস্থান করবে। সুতরাং তুমি আর তোমার রব গিয়ে (তাদের সাথে) যুদ্ধ করো, আমরা এখানেই বসে থাকবো।’
5-25 : সে (মূসা) বললো: ‘আমার রব! আমার তো আমার নিজের এবং আমার ভাই (হারূণ) - এর ছাড়া আর কারো উপর কর্তৃত্ব নেই। সুতরাং তুমি আমাদের এবং এই ফাসিক (সীমালংঘনকারী) লোকদের মধ্যে ফায়সালা করে দাও।’
5-26 : আল্লাহ বললেন: ‘যাও এখন থেকে চল্লিশ বছর তাদের জন্যে এই ভূ - খন্ড নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। তারা (মরু) ভূমিতে উদ্ভ্রান্তের মতো বেড়াবে। সুতরাং তুমি এই ফাসিকদের জন্যে ব্যথিত হয়োনা।’
5-27 : তুমি তাদের প্রতি হকভাবে তিলাওয়াত করো আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) সংবাদ। তারা যখন কুরবানি করেছিল, তখন একজনের (হাবিলের) কুরবানি কবুল করা হয়, আর অপর জনের (কাবিলের) কুরবানি কবুল করা হয়নি। সে বললো: ‘আমি অবশ্য অবশ্যি তোমাকে কতল করবো।’ অপরজন বললো: ‘‘আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকিদের থেকেই (কুরবানি) কবুল করেন।
5-28 : তুমি যদি আমাকে কতল করার জন্যে হাত বাড়াও, আমি কিন্তু তোমাকে কতল করার জন্যে হাত বাড়াবোনা। আমি আল্লাহ রাববুল আলামিনকে ভয় করি।
5-29 : আমি চাই তুমি আমার এবং তোমার পাপের ভার বহন করো এবং জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যাও, আর এটাই যালিমদের (সঠিক) জাযা (কর্মফল)।’’
5-30 : অতরপর তার নফস্ তার ভাইকে কতল করার কাজে তাকে প্ররোচিত করলো এবং সে তাকে কতল করলো আর ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তরভুক্ত হয়ে গেলো।
5-31 : তার ভাইয়ের লাশ কিভাবে ঢাকবে তা দেখানোর জন্যে আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন। সে এসে মাটি খুঁড়তে থাকলো। এটা দেখে সে (হত্যাকারী কাবিল) বললো: হায়, আমার ভাইয়ের লাশ ঢাকার ব্যাপারে আমি কি এই কাকটির মতো হতেও অক্ষম। অতপর সে লজ্জিত - অনুতপ্ত হয়।
5-32 : এ প্রেক্ষিতে আমরা বনি ইসরাঈলের জন্যে বিধান লিখে দিলাম: কাউকেও কতল করা বা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করার মতো ঘটনা ঘটানো ছাড়াই যদি কেউ কাউকেও কতল করে, তবে সে যেনো সমস্ত মানুষকে কতল করলো। আর কেউ যদি কারো প্রাণ রক্ষা করে, তবে সে যেনো সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো। তাদের কাছে তো আমাদের রসূলরা স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তাদের অনেকেই পৃথিবীতে সীমালংঘনকারীই থেকে গেলো।
5-33 : যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের এই কাজের জাযা (শাস্তি) হলো: তাদের হত্যা করা হবে, অথবা শূলবিদ্ধ করা হবে, কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে, নতুবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এ হলো তাদের দুনিয়ার লাঞ্ছনা, আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব।
5-34 : অবশ্য, যারা তোমাদের আয়ত্বে আসার আগেই তওবা করবে, (তাদের জন্যে এ শাস্তি প্রযোজ্য হবেনা)। জেনে রাখো, আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াময়।
5-35 : হে ঈমান আনা লোকেরা! আল্লাহকে ভয় করো এবং আল্লাহর দিকে উসিলা তালাশ করো আর জিহাদ করো তাঁর পথে, অবশ্যি তোমরা সফলকাম হবে।
5-36 : যারা কুফুরিকে আঁকড়ে ধরবে, পৃথিবীর সব কিছু যদি তাদের হয় এবং সমপরিমাণ যদি আরো থাকে, কিয়ামত কালের আযাব থেকে মুক্তির জন্যে (তারা সবই মুক্তিপণ স্বরূপ দিয়ে দিতে চাইবে, কিন্তু) তাদের থেকে তা কবুল করা হবেনা। তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
5-37 : তারা আগুন থেকে বের হতে চাইবে, কিন্তু তারা তা থেকে বেরুতে পারবেনা এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আযাব।
5-38 : চোর পুরুষ হোক আর নারী হোক, তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের জাযা (শাস্তি), আল্লাহর পক্ষ থেকে সঠিক দন্ড, আল্লাহ দুর্জয় শক্তিমান মহাপ্রজ্ঞাময়।
5-39 : তবে যুলুম করার পর কেউ যদি তওবা করে এবং নিজেকে ইসলাহ্ করে নেয়, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
5-40 : তুমি কি জানোনা যে, মহাকাশ এবং পৃথিবীর কর্তৃত্ব আল্লাহর? তিনি যাকে চান শাস্তি দেন এবং যাকে চান ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে শক্তিমান।
5-41 : হে রসূল! তুমি মনে কষ্ট পেয়োনা ঐসব লোকদের কর্মকান্ডে, যারা দ্রুতবেগে কুফুরির দিকে অগ্রসর হয়, তারা সেইসব লোকদের অন্তরভুক্ত, যারা মুখে বলে: ‘আমরা ঈমান এনেছি’ অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি; আর সেইসব ইহুদির কর্মকান্ডে যারা অন্য এমন লোকদের মিথ্যা কথা শুনতে তৎপর যারা তোমার কাছে আসেনা। তারা সুবিন্যস্ত কথাকে তার সঠিক অর্থ থেকে সরিয়ে বিকৃত অর্থ করে। তারা বলে: ‘এরকম বিধান দিলে গ্রহণ করো, সেরকম না দিলে বর্জন করো।’ আল্লাহ যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্যে তোমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। এরা সেসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তরগুলোকে পবিত্র করতে চাননা। তাদের জন্যে দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব।
5-42 : তারা মিথ্যা কথা শুনতে খুবই উৎসাহী, তারা হারাম (সুদ ঘুষ) খেতে আসক্ত। তারা (বিচার চাইতে) তোমার কাছে এলে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিও, অথবা তাদের উপেক্ষা করবে। তুমি তাদের উপেক্ষা করলে তারা তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারবেনা। আর যদি তাদের মধ্যে ফায়সালা করো ন্যায় বিচার করবে। কারণ আল্লাহ ন্যায় বিচারকদের পছন্দ করেন।
5-43 : তারা কী করে তোমার উপর তাদের বিচার ফায়সালার দায়িত্ব অর্পণ করবে, কারণ তাদের কাছে তো তাওরাত রয়েছে আর তাতেই আল্লাহর আইন বিদ্যমান রয়েছে? তা সত্তেবও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আসলে তারা মুমিনই নয়।
5-44 : আমরা তাওরাত নাযিল করেছিলাম, তাতে ছিলো হিদায়াত এবং নূর (জ্ঞান)। নবীরা, যারা ছিলো আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পিত তার ভিত্তিতে ইহুদিদের ফায়সালা দিতো, রাবিব এবং জ্ঞানীরাও তার ভিত্তিতে তাদের ফায়সালা দিতো, কারণ তাদের বানানো হয়েছিল আল্লাহর কিতাবের হিফাযতকারী এবং তার (কিতাবের) সাক্ষী। সুতরাং মানুষকে ভয় পেয়োনা, আমাকে ভয় করো আর বিক্রয় করোনা আমার আয়াতকে তুচ্ছ মূল্যে। যারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করেনা, তারা কাফির।
5-45 : আমরা তাতে (তাওরাতে এই বিধান) লিখে দিয়েছিলাম: জীবনের বদলে জীবন, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে কিসাস (অনুরূপ যখম)। আর কেউ যদি ক্ষমা করে দেয় তা তারই জন্যে কাফ্ফারা (হবে)। যারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করেনা, তারা যালিম।
5-46 : অতপর তাদেরই আদর্শের উপর আমরা পাঠিয়েছিলাম ঈসা ইবনে মরিয়মকে তার পূর্বে নাযিল করা তাওরাতের সত্যায়নকারী হিসেবে। আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম ইনজিল, তাতে ছিলো হিদায়াত এবং নূর (জ্ঞান)। আর এ (ইনজিল) ছিলো তার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থক এবং মুত্তাকিদের জন্যে হিদায়াতউপদেশ।
5-47 : ইনজিলের বাহকরা যেনো ফায়সালা করে সে বিধান অনুযায়ী যা আল্লাহ তাতে নাযিল করেছেন। যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করেনা তারা ফাসিক।
5-48 : আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি আল কিতাব (আল কুরআন) বাস্তব সত্য বিধান দিয়ে ইতোপূর্বে নাযিলকৃত কিতাবের সত্যায়নকারী এবং সত্যের সংরক্ষণকারী হিসেবে। অতএব তাদের মাঝে ফায়সালা করো আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী। তোমার কাছে যে সত্য বিধান এসেছে তা ত্যাগ করে তাদের ইচ্ছা বাসনার অনুসরণ করোনা। আমরা তোমাদের প্রত্যেকের জন্যে একটি (পৃথক) শরিয়ত ও একটি আলোকিত চলার পথ দিয়েছি। আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে একটি উম্মতই বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান তোমাদেরকে প্রদত্ত বিধানের ভিত্তিতে। সুতরাং কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতা করো। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছিলে সেখানে তিনি তোমাদের সেগুলো অবহিত করবেন।
5-49 : তাদের মাঝে ফায়সালা করো সেই বিধান দিয়ে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের ইচ্ছা বাসনার অনুসরণ করোনা। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো, তোমার প্রতি আল্লাহ যে বিধান নাযিল করেছেন তার কোনো অংশ থেকে যেনো তারা তোমাকে বিচ্যুত না করে। তারা যদি (তোমার থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ তাদের কোনো কোনো পাপের জন্যে তাদের শাস্তি দিতে চান। নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে অনেকেই নিশ্চিত ফাসিক।
5-50 : তবে কি তারা জাহেলি যুগের বিধান চায়? যারা আল্লাহর প্রতি একীন রাখে, তাদের কাছে বিধানদাতা হিসেবে আল্লাহর চাইতে অধিকতর কল্যাণকামী আর কে?
5-51 : হে ঈমান ওয়ালা লোকেরা! তোমরা ইহুদিনাসারাদের অলি (বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা নিজেরা পরস্পরের অলি। তোমাদের কেউ যদি তাদের অলি হিসেবে গ্রহণ করে, তবে সে হবে তাদেরই লোক। আল্লাহ্ যালিম লোকদের সঠিক পথ দেখান না।
5-52 : তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা (অর্থাৎ মুনাফিকরা) অচিরেই তাদের (ইহুদি, খৃষ্টান ও মুশরিকদের) সাথে মিলবে - বন্ধুতা করবে। তারা বলবে: ‘আমাদের আশংকা হয় (ওদের সাথে মিলে না গেলে) আমাদের দুরাবস্থা সৃষ্টি হবে।’ অচিরেই আল্লাহ হয়তো বিজয়, নয়তো এমন কিছু দেবেন যার ফলে তারা মনের মধ্যে যা গোপন করে রেখেছিল তার জন্যে লজ্জিত - অনুতপ্ত হবে।
5-53 : যারা ঈমান এনেছে তারা বলবে: এরাই কি তারা? যারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ গ্রহণ করেছিল যে, তারা তোমাদের সাথেই আছে? তাদের সমস্ত আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে, ফলে তারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।
5-54 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ (বা কোনো গোষ্ঠী) তার দীন থেকে ফিরে গেলে অচিরেই আল্লাহ এমন একদল লোককে (দীনের মধ্যে) নিয়ে আসবেন, যাদের তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল, কাফিরদের প্রতি কঠোর। তারা জিহাদ করবে আল্লাহর পথে এবং ভয় করবেনা কোনো নিন্দুকের নিন্দা। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ - যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। আল্লাহ বড়ই প্রশস্ত - উদার ও মহাজ্ঞানী।
5-55 : (জেনে রাখো) তোমাদের অলি (বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) তো আল্লাহ এবং তাঁর রসূল আর সেইসব লোক যারা ঈমান এনেছে, যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং যারা (আল্লাহর প্রতি) সদা বিনত।
5-56 : যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে অলি হিসেবে গ্রহণ করে, তারা জেনে রাখুক, আল্লাহর দলই হবে গালিব (বিজয়ী)।
5-57 : হে ঈমানদার লোকেরা! ইতোপূর্ব যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দীনকে খেল তামাশার বস্তু বানিয়ে নিয়েছে, তাদেরকে এবং কাফিরদেরকে অলি হিসেবে গ্রহণ করোনা। আল্লাহকে ভয় করো যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
5-58 : তোমরা যখন সালাতের আহবান করো তখন তারা সেটাকে খেল তামাশা হিসেবে গ্রহণ করে। এর কারণ তারা বে - আকল।
5-59 : বলো: হে আহলে কিতাব! আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি বলে এবং আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি আর পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছি বলে কি তোমরা আমাদের থেকে প্রতিশোধ নেবে? আসলে তোমাদের অধিকাংশ লোকই ফাসিক (সীমালংঘনকারী)।
5-60 : (হে নবী! তাদের) বলো: আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে এর চাইতেও নিকৃষ্ট পরিণতির সংবাদ জানাবো কি? (তা হলো) আল্লাহ যাদের লা’নত করেছেন, যাদের উপর গজব আপতিত করেছেন এবং যাদের কিছু লোককে বানর ও শূয়োর বানিয়েছেন আর যারা তাগুতের ইবাদত করে, মর্যাদার দিক থেকে তারাই নিকৃষ্ট এবং সরল সঠিক পথ থেকে তারাই অধিকতর বিপথগামী।
5-61 : তারা তোমার কাছে এলে বলে: ‘আমরা ঈমান এনেছি’, অথচ তারা কুফুরি সাথে নিয়েই (তোমার কাছে) দাখিল হয় এবং তা নিয়েই খারিজ (বের) হয়। তারা যা গোপন করে তা আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন।
5-62 : তুমি দেখবে, তাদের অনেকেই পাপ, সীমালংঘন ও হারামখুরিতে তৎপর। তাদের এই আমল বড়ই নিকৃষ্ট।
5-63 : তাদের রিবিব ও যাজকরা তাদেরকে তাদের পাপ কথা এবং হারাম খুরি থেকে কেন নিষেধ করেনা? আসলে তাদের কর্ম বড়ই নিকৃষ্ট।
5-64 : ইহুদিরা বলে: ‘আল্লাহর হাত বাঁধা (অর্থাৎ তিনি কৃপণ)।’ মূলত তাদের হাতই আবদ্ধ এবং তারা যা বলে সে জন্যে তারা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহর দুই হাত অবাধ প্রসারিত, তিনি যেভাবে চান দান করেন। তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা তাদের অনেকেরই আল্লাহদ্রোহীতা ও কুফুরি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের মধ্যে কিয়ামতকাল পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দিয়েছি। তারা যখনই যুদ্ধের আগুন উস্কায়, তখনই আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন। তারা বিশ্বে ফাসাদ সৃষ্টির কাজে তৎপর। অথচ আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।
5-65 : আহলে কিতাবরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, আমরা তাদের থেকে মুছে দিতাম তাদের পাপ এবং তাদের দাখিল করতাম জান্নাতুন নায়ীমে।
5-66 : তারা যদি তাওরাত, ইনজিল এবং (এখন) তাদের কাছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে যা (যে কুরআন) নাযিল হয়েছে তা কায়েম ও প্রবর্তন করতো, তাহলে তারা তাদের উপর থেকে এবং নিচে থেকে আহার লাভ করতো। তাদের মধ্যে কিছু মধ্যপন্থী লোক আছে বটে, তবে তাদের অনেকেই যা করে তা নেহাতই নিকৃষ্ট।
5-67 : হে রসূল! তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা নাযিল হয়েছে তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দাও। যদি তা না করো, তবে তুমি তাঁর বার্তা পৌঁছালেনা। আল্লাহ্ই তোমাকে রক্ষা করবেন মানুষের অনিষ্ট থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ হিদায়াত করেন না কাফির লোকদেরকে।
5-68 : হে নবী! বলো: হে আহলে কিতাব! তোমরা তাওরাত, ইনজিল এবং তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে যা (যে কুরআন) নাযিল হয়েছে তা কায়েম ও প্রবর্তন না করা পর্যন্ত তোমাদের কোনো (ধর্মীয়) ভিত্তি নেই। তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা তাদের অনেকের মধ্যেই আল্লাহদ্রোহীতা ও কুফুরি বাড়িয়ে দেয়ার কারণ হয়েছে। সুতরাং এই কাফির কওমের জন্যে দুঃখিত হয়োনা।
5-69 : নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে তাদের মধ্যে, যারা ইহুদি হয়েছে তাদের মধ্যে এবং সাবি ও নাসারাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং দুশ্চিন্তাও নেই।
5-70 : আমরা বনি ইসরাঈলের অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তাদের প্রতি পাঠিয়েছিলাম অনেক রসূল। যখনই তাদের কাছে কোনো রসূল এসেছিল এমন কিছু (বিধান) নিয়ে যা তাদের মনপূত হয়নি, তখনই তারা কিছু রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং হত্যা করেছে কিছু রসূলকে।
5-71 : অথচ তারা ধরে নিয়েছিল তাদের কোনো ফিতনা (শাস্তি) হবেনা। ফলে তারা (তাদের বদ্ধমূল নীতি ও ধারণায়) অন্ধ ও বধির হয়ে পড়েছিল। তারপরও আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল দৃষ্টি প্রদান করেন। কিন্তু এর পরেও তাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হয়ে যায়। তারা যা করছে আল্লাহ তার প্রতি দৃষ্টি রেখে চলেছেন।
5-72 : ওরা তো কুফুরি করেছেই যারা বলে: ‘মসিহ্ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ।’ অথচ মসিহ্ তাদের বলেছিল: ‘হে বনি ইসরাঈল! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো। জেনে রাখো, যে কেউ আল্লাহর সাথে (কাউকেও) শরিক বানাবে, আল্লাহ তার জন্যে হারাম করে দেবেন জান্নাত এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্যে থাকবেনা কোনো সাহায্যকারী।’
5-73 : ওরাও কুফুরি করেছে যারা বলে: ‘আল্লাহ হলেন তিন জনের একজন।’ অথচ এক ইলাহ্ (আল্লাহ) ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তারা যা বলে তা থেকে যদি বিরত না হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফুরি করবে, অবশ্যি তাদের স্পর্শ করবে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
5-74 : তারা কি ফিরে আসবেনা আল্লাহর দিকে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবেনা তাঁর কাছে? আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল দয়াময়।
5-75 : মসিহ্ ইবনে মরিয়ম একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নয়। তার আগেও (তার মতো) বহু রসূল বিগত হয়েছে। তার মা ছিলো এক সত্যনিষ্ঠ নারী। তারা দুজনেই খাবার খেতো। দেখো কতো পরিষ্কার করে আমরা তাদের জন্যে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করছি। তারপর এটাও দেখো, কিভাবে তারা সত্যের প্রতি মিথ্যারোপ করছে।
5-76 : (হে নবী!) তাদের বলো: তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কারো ইবাদত করবে যার কোনো ক্ষমতাই নেই তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংবা উপকার করার? একমাত্র আল্লাহ্ই সবকিছু শুনেন এবং সব কিছু জানেন।
5-77 : বলো: হে আহলে কিতাব! তোমরা সত্যের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করোনা এবং তোমরা এমন লোকদের মনগড়া বিষয়ের অনুসরণ করোনা ইতোপূর্বে যারা নিজেরাও হয়েছে বিপথগামী আর অনেক মানুষকেও করেছে পথভ্রষ্ট। আসলে তারা সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথে চলে গেছে।
5-78 : বনি ইসরাঈলের যারা কুফুরি করেছিল, তাদের উপর লা’নত বর্ষিত হয়েছিল দাউদ এবং ঈসা ইবনে মরিয়মের যবানে। এর কারণ, তারা ছিলো নাফরমান এবং সীমালংঘনকারী।
5-79 : তারা যেসব মুনকার - মন্দ কাজ করতো ,তা থেকে তারা পরস্পরকে নিষেধ করতোনা। তাদের কার্যক্রম ছিলো খুবই মন্দ - নিকৃষ্ট।
5-80 : তুমি দেখবে, তাদের অনেকেই কাফিরদের অলি (বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) বানিয়ে নিয়েছে। তাদের কর্মকান্ড এতোই নিকৃষ্ট, যার কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি বিরূপ হয়েছেন আর আযাবের মধ্যেই থাকবে তারা চিরকাল।
5-81 : তারা আল্লাহর প্রতি, এই নবীর প্রতি এবং তার প্রতি যা নাযিল হয়েছে সেটার প্রতি যদি ঈমান আনতো তাহলে ওদেরকে অলি হিসেবে গ্রহণ করতো না। কিন্তু তাদের অনেকেই ফাসিক - সীমালংঘনকারী।
5-82 : অবশ্যি তুমি মানুষের মাঝে মুমিনদের প্রতি শত্রুতার ক্ষেত্রে সবচে’ শক্ত অবস্থানে পাবে ইহুদিদের, আর যারা শিরক করে তাদের। আর তাদের সাথে বন্ধুতার ক্ষেত্রে সবচে’ নিকটে পাবে ঐ লোকদের যারা বলে আমরা নাসারা (খৃষ্টান)। এর কারণ, তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক (সত্যনিষ্ঠ) পাদ্রী আর দুনিয়া বিমুখ ব্যক্তি এবং তারা অহংকার করে বেড়ায় না।
5-83 : এই রসূলের কাছে যে কিতাব নাযিল হয়েছে তারা যখন তা শুনে, তুমি দেখবে তখন সত্য উপলব্ধির কারণে তাদের চোখ অশ্রুসিক্ত। তারা বলে: ‘‘আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনলাম, আমাদেরকে সাক্ষীদের অন্তরভুক্ত করো।
5-84 : আমাদের জন্যে আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের কাছে যে মহাসত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান না আনার কোনো কারণ নেই; যেহেতু আমাদের তীব্র আকাংখা তো হলো আমাদের প্রভু যেনো আমাদেরকে সালেহ্ লোকদের মধ্যে দাখিল করেন।’’
5-85 : তাদের একথার জন্যে আল্লাহ তাদের পুরস্কার দিয়েছেন জান্নাতসমূহ, সেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান রয়েছে নদ - নদী - নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। কল্যাণকামীদের এটাই পুরস্কার।
5-86 : অন্যদিকে যারা কুফুরি করে এবং অস্বীকার করে আমাদের আয়াতসমূহকে, তারা হবে জাহিমের (জাহান্নামের) অধিবাসী।
5-87 : হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ তোমাদের জন্যে যেসব ভালো জিনিস হালাল করেছেন, তোমরা সেগুলোকে হারাম সাব্যস্ত করোনা এবং সীমালংঘন করোনা; কারণ আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
5-88 : আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল উত্তম জীবিকা দিয়েছেন সেগুলো থেকে খাও এবং সেই মহান আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর প্রতি তোমরা মুমিন (বিশ্বাসী)।
5-89 : তোমাদের অযথা শপথের জন্যে আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না। কিন্তু তোমাদের ইচ্ছাকৃত শপথের জন্যে তিনি তোমাদের পাকড়াও করবেন। এর কাফ্ফারা হলো দশজন মিসকিনকে আহার করানো মধ্যম ধরণের আহার, যে রকম তোমরা তোমাদের আহলকে খাইয়ে থাকো। অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান করা, নতুবা একজন দাসমুক্ত করা। যে এগুলো করতে পারবেনা সে তিন দিন রোযা রাখবে। তোমরা যদি শপথ করো তবে এটাই তার কাফ্ফারা। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে ব্যাখ্যা করেন তাঁর আয়াত, যাতে করে তোমরা শোকর আদায় করো।
5-90 : হে ঈমানদার লোকেরা! জেনে রাখো, মদ, জুয়া, আস্তানা এবং ভাগ্য নির্ণয়ের শর - এগুলো সবই নোংরা শয়তানি কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন করো, তবেই সফলকাম হবে।
5-91 : শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে সে তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাবে এবং তোমাদের বাধা দেবে আল্লাহর যিক্র ও সালাত থেকে। তারপরও কি তোমরা তা থেকে বিরত হবেনা?
5-92 : তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং এই রসূলের আনুগত্য করো আর সতর্ক - সাবধান থাকো। কিন্তু তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখো, আমাদের রসূলের দায়িত্ব তো কেবল পরিষ্কারভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়া।
5-93 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ করে তারা পূর্বে যা - ই খেয়েছে তার গুনাহ্ ধরা হবেনা যদি তারা তাকওয়া অবলম্বন করে, ঈমানের উপর অটল থাকে এবং আমলে সালেহ করে। যদি তারা সতর্ক থাকে এবং ঈমানদার থাকে, তারপরও সতর্ক থাকে এবং কল্যাণের পথ অবলম্বন করে, আর আল্লাহ তো কল্যাণের পথ অবলম্বনকারীদেরই পছন্দ করেন।
5-94 : হে ঈমানদার লোকেরা! (ইহরাম অবস্থায়) তোমাদের হাত ও বর্শা যা শিকার করে সে বিষয়ে অবশ্যি আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা করবেন। কারণ, তিনি জানতে চান, না দেখেও কে আল্লাহকে ভয় করে চলে। এরপর থেকে যে কেউ সীমালংঘন করবে, তার জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
5-95 : হে ঈমানদার লোকেরা! ইহরাম অবস্থায় তোমরা শিকার (করে প্রাণী) হত্যা করোনা। তোমাদের কেউ যদি (এ অবস্থায়) ইচ্ছাকৃত তা হত্যা করে তবে তার বিনিময় হবে সমসংখ্যক গৃহপালিত জন্তু, যা কাবার উদ্দেশ্যে কুরবানির জন্যে পাঠাতে হবে, এ বিষয়টির ফায়সালা করে দেবে তোমাদের মধ্যকার দুইজন ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি। অথবা এর কাফ্ফারা হবে মিসকিনদের খাবার দেয়া, অথবা সমসংখ্যক রোযা রাখা। (এই কাফ্ফারা নির্ধারণ করা হলো) যাতে করে সে তার কাজের ফল ভোগ করে। পূর্বে যা কিছু হয়েছে তা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। এরপরেও যদি কেউ অনুরূপ কাজ করে, তবে আল্লাহ তাকে দন্ড প্রদান করবেন। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, কঠোর শাস্তিদাতা।
5-96 : তোমাদের জন্যে সমুদ্রের শিকার এবং সেই শিকার খাওয়া হালাল করে দেয়া হলো - তোমাদের ও পর্যটকদের ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে। আর তোমাদের জন্যে স্থলভাগের শিকার হারাম করে দেয়া হলো যতোদিন যতো সময় তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকবে। আল্লাহকে ভয় করো, তিনি তোমাদের হাশর করবেন তাঁর কাছে।
5-97 : আল্লাহ তায়ালা মর্যাদাপূর্ণ কাবা ঘরকে, হারাম মাসকে, কুরবানির পশুকে এবং কুরবানি করার উদ্দেশ্যে মালা পরানো পশুকে মানুষের জন্যে কল্যাণকর নির্ধারণ করেছেন। এর কারণ হলো, যাতে করে তোমরা জানতে পারো মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ সবই জানেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞানী।
5-98 : জেনে রাখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা এবং তিনি পরম ক্ষমাশীল পরম দয়াময়।
5-99 : আল্লাহর রসূলের উপর বার্তা পৌঁছে দেয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব নেই। তোমরা যা প্রকাশ করো আর যা গোপন করো, আল্লাহ সবই জানেন।
5-100 : হে নবী! তাদের বলো: মন্দ আর ভালো এক নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে তাজ্জব করে। অতএব, আল্লাহকে ভয় করো হে বুঝ বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরা, অবশ্যি তোমরা সফলকাম হবে।
5-101 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা এমন সব বিষয়ে প্রশ্ন করোনা, যেগুলো তোমাদের কাছে প্রকাশ হলে সেগুলো তোমাদের কষ্ট দেবে। কুরআন নাযিল হবার সময়কালেই যদি তোমরা ঐসব প্রশ্ন করো, তবে সেগুলো তোমাদের কাছে প্রকাশ করে দেয়া হবে। আল্লাহ সেগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল পরম সহনশীল।
5-102 : তোমাদের আগে একটি কওম সেগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল, পরে তারা হয়ে যায় সেগুলো অস্বীকারকারী।
5-103 : বাহিরা, সায়িবা, অসিলা এবং হাম আল্লাহর নির্ধারিত নয়। তবে যারা কুফুরি করে তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। তাদের অধিকাংশই বে - আক্কেল।
5-104 : তাদের যখন বলা হয়: ‘এসো আল্লাহর নাযিল করা কিতাবের দিকে এবং রসূলের দিকে (ফায়সালা গ্রহণ করার জন্যে)’, তখন তারা বলে: ‘আমরা আমাদের বাপ - দাদাদের যেসব নিয়ম - আচারের উপর পেয়েছি সেগুলোই আমাদের জন্যে যথেষ্ট।’ তাদের বাপ - দাদারা যদিও কিছুই জানতোনা এবং হিদায়াত প্রাপ্তও ছিলনা, তারপরও কি তারা তাদেরই অনুসরণ করবে?
5-105 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের দায় দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। যারা বিপথগামী হয়েছে তারা তোমাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবেনা যদি তোমরা হিদায়াতের (সঠিক পথের) উপর অটল থাকো। আল্লাহর কাছে তোমাদের সবারই ফিরে আসতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের সংবাদ দেবেন তোমাদের আমল সম্পর্কে।
5-106 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের কারো যখন মউতের সময় হাজির হয়, তখন অসিয়ত করার সময় দুইজন সুবিচারক লোককে সাক্ষী রাখবে। আর তোমরা যদি সফরে থাকা অবস্থায় মউতের মসিবতে পড়ো, তাহলে অন্য লোকদের মধ্য থেকে দুইজন সাক্ষী রাখো। তোমাদের সন্দেহ হলে সালাতের পর তাদেরকে অপেক্ষমান রাখবে, তারপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে: ‘আমরা এর বিনিময়ে কোনো মূল্য গ্রহণ করবোনা যদি সে নিকটাত্মীয়ও হয় এবং আল্লাহর সাক্ষ্য গোপন রাখবোনা, রাখলে অবশ্যি আমরা পাপীদের মধ্যে গণ্য হবো।’
5-107 : তারা দুজন অপরাধে লিপ্ত হয়েছে বলে যদি প্রকাশ পায়, তবে যাদের স্বার্থহানি ঘটে তাদের মধ্য থেকে নিকটতম দু’জন ওদের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে: ‘আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যি তাদের দু’জনের সাক্ষ্য থেকে অধিকতর হক এবং আমরা সীমালংঘন করিনি। সীমালংঘন করলে অবশ্যি আমরা যালিম বলে গণ্য হবো।’
5-108 : এ পদ্ধতিতেই সঠিক সাক্ষ্যদানের, অথবা শপথের পর তোমাদেরকে পুনরায় শপথ করানো হবে - এ ভয় থেকে বাঁচার অধিকতর সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহকে ভয় করো এবং (আল্লাহর বাণী) শুনো। আল্লাহ ফাসিকদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।
5-109 : মনে রেখো, আল্লাহ যেদিন সব রসূলকে একত্র করবেন এবং তাদের জিজ্ঞেস করবেন: ‘(তোমরা আমার বাণী ও বিধান পৌঁছানোর পর) কী জবাব পেয়েছিলে?’ তারা বলবে: ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো এলেম নেই। সমস্ত গায়েব - এর ব্যাপারে কেবল তুমিই মহাজ্ঞানী।’
5-110 : স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বলবেন: হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তোমার প্রতি এবং তোমার মায়ের প্রতি আমার নিয়ামতের কথা মনে করো: যখন আমি তোমাকে সহযোগিতা করেছিলাম রুহুল কুদুসকে (জিবরিলকে) দিয়ে, দোলনায় থাকা অবস্থায় এবং পরিণত বয়েসে তুমি কথা বলেছো, এবং আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম আল কিতাব, আল হিক্মাহ্, তাওরাত ও ইনজিল। তুমি আমার অনুমতিক্রমে কাদামাটি দিয়ে পাখির মতো আকৃতি তৈরি করতে এবং তাতে ফুঁ দিতে আর সাথে সাথে তা পাখি হয়ে যেতো। আমার অনুমতিক্রমে তুমি কুষ্ঠরোগী ও জন্মান্ধকে নিরাময় করতে, আর আমার অনুমতিক্রমে তুমি মৃতকে জীবিত করতে। আরো স্মরণ করো, আমিই তো বনি ইসরাঈলকে তোমার থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম যখন তুমি তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলে, তখন তাদের মধ্যে যারা কুফুরিতে লিপ্ত ছিলো তারা বলেছিল: ‘এ তো এক স্পষ্ট ম্যাজিক।’
5-111 : আরো স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদের অহি (আদেশ) করেছিলাম: ‘তোমরা আমার প্রতি এবং আমার রসূলের প্রতি ঈমান আনো,’ তখন তারা বলেছিল: ‘আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থাকো আমরা মুসলিম (অনুগত, আত্মসমর্পিত)।’
5-112 : স্মরণ করো যখন হাওয়ারীরা বলেছিল: ‘হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তোমার প্রভু কি আমাদের জন্যে আসমান থেকে খাবারে পূর্ণ একটি মায়েদা (খাঞ্চা) পাঠাতে পারবেন’? তখন সে বলেছিল: ‘তোমরা মুমিন হয়ে থাকলে আল্লাহকে ভয় করো।’
5-113 : তারা বললো: ‘আমাদের বাসনা, আমরা সেই মায়েদা (খাঞ্চা) থেকে খাবো এবং তাতে আমাদের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করবে আর আমরা জানতে পারবো, আপনি আমাদের সত্য বলেছেন এবং আমরা এর সাক্ষী হয়ে থাকবো।’
5-114 : তখন ঈসা ইবনে মরিয়ম বললো: ‘হে আল্লাহ আমাদের প্রভু! তুমি আসমান থেকে আমাদের জন্যে একটি খাবারে পূর্ণ মায়েদা (খাঞ্চা) নাযিল করো। এটা আমাদের জন্যে এবং আমাদের পূর্ব ও পরবর্তী লোকদের জন্যে হবে আনন্দের কারণ এবং তোমার পক্ষ থেকে হবে একটি নিদর্শন। আর আমাদের রিযিক দান করো, কারণ তুমিই তো সর্বোত্তম রিযিক দাতা।’
5-115 : তখন আল্লাহ বললেন: ‘আমি অবশ্যি তোমাদের জন্যে তা নাযিল করবো বটে, কিন্তু এরপর যদি তোমাদের কেউ কুফুরিতে নিমজ্জিত হয়, আমি তাকে আযাব দেবো এমন আযাব যা জগদ্বাসীর আর কাউকেও দিইনি।’
5-116 : যখন আল্লাহ বলবেন: ‘হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি মানুষকে বলেছিলে: তোমরা আল্লাহ ছাড়াও আমাকে এবং আমার মাকে দু’জন ইলাহ্ (উপাস্য) হিসেবে গ্রহণ করো?’ সে বলবে: ‘‘তুমি মহামহিম, যা বলার অধিকার আমার নেই আমি তা বলতে পারিনা। আমি যদি তা বলতাম তবে অবশ্যি তুমি তা জানতে। আমার অন্তরে যা আছে তুমি তা জানো, কিন্তু তোমার অন্তরে যা আছে তা আমি জানিনা। নিশ্চয়ই তুমি গায়েব সম্পর্কে মহাজ্ঞানী।
5-117 : তুমি আমাকে যা আদেশ করেছো তা ছাড়া আমি তাদের আর কিছুই বলিনি এবং তাহলো: তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত (আনুগত্য দাসত্বউপাসনা) করো যিনি আমার প্রভু এবং তোমাদেরও প্রভু। যতোদিন আমি তাদের মাঝে ছিলাম ততোদিন আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম। আর যখন তুমি আমাকে উঠিয়ে নিয়েছো তখন তো তুমিই ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক আর তুমিই সব বিষয়ের সাক্ষী।
5-118 : তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই দাস, আর তুমি যদি তাদের ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয়ই তুমি মহাশক্তিমান প্রজ্ঞাবান।’’
5-119 : আল্লাহ বলবেন: আজ হলো সেইদিন যেদিন কেবল সত্যপন্থীরাই তাদের সত্যপন্থার জন্যে উপকৃত হবে। তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাতসমূহ, যেগুলোর নিচে দিয়ে জারি থাকবে নদ - নদী - নহর। সেখানে থাকবে তারা চিরকাল চিরদিন। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আর এটাই মহাসাফল্য।
5-120 : মহাকাশ, পৃথিবী এবং এগুলোতে যা কিছু আছে সব কিছুর কর্তৃত্ব আল্লাহর এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।