আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 10, ইউনুস - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 10, ইউনুস



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১০৯, রুকু সংখ্যা: ১১

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৬কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব। মহাবিশ্ব আল্লাহর বিজ্ঞানময় সৃষ্টি।
০৭-৭০আখিরাত, তাওহীদ ও রিসালাতের ব্যাপারে যুক্তি ও উপদেশ।
৭১-৭৪নিজ জাতির কাছে নূহ আ. এর দাওয়াত। তাদের অস্বীকৃতি ও ধ্বংস।
৭৫-৯৩ফিরাউন ও তার জনগণের কাছে মূসা ও হারূণ আ.-এর দাওয়াত। তাদের অস্বীকৃতি ও ধ্বংস।
৯৪-১০৯মানুষ ঈমান না আনলেও নবীগণ হতাশ হবেন না এবং মানুষকে বাধ্যও করবেন না। নবীর চলার পথ সুস্পষ্ট।
10-1 : আলিফ লাম রা! এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত।
10-2 : এটা কি মানুষের জন্য কোনো তাজ্জবের বিষয় যে, আমি তাদেরই এক ব্যক্তির কাছে এই নির্দেশ দিয়ে অহি পাঠিয়েছি: ‘তুমি মানুষকে সতর্ক করো এবং মুমিনদের এই সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্যে তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে মর্যাদার আসন।’ কাফিররা বলে: ‘নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি একজন সুস্পষ্ট ম্যাজিসিয়ান।’
10-3 : তোমাদের প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ্, যিনি মহাকাশ ও এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয়টি কালে। তারপর তিনি সমাসীন হয়েছেন আরশে। সব বিষয় তিনিই পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনো শাফায়াতকারী শাফায়াত করতে পারবেনা। তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রভু। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত করো। তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবেনা?
10-4 : তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন হবে তাঁরই কাছে। আল্লাহর ওয়াদা হক। তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তিনিই পুন: সৃষ্টি করবেন যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে তাদেরকে ইনসাফের সাথে তাদের কর্মফল দেয়ার জন্যে। আর যারা কুফুরি করে, তাদের জন্যে রয়েছে প্রচন্ড গরম পানির শরবত আর বেদনাদায়ক আযাব, তাদের কুফুরির কারণে।
10-5 : তিনিই সূর্যকে বানিয়েছেন আলোদানকারী এবং চাঁদকে করেছেন আলোকিত, আর তার মনযিল ঠিক করে দিয়েছেন যাতে করে তোমরা বছর গুণতে পারো এবং হিসাব করতে পারো। আল্লাহ্ বাস্তব কারণ ও প্রয়োজন ছাড়া এগুলো সৃষ্টি করেননি। তিনি জ্ঞানীদের জন্যে বিশদভাবে বর্ণনা করেন আয়াত সমূহ।
10-6 : নিশ্চয়ই দিন ও রাতের পরিবর্তন এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে সতর্ক লোকদের জন্যে নিদর্শন।
10-7 : যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা করেনা এবং দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট আর তাতেই পরিতৃপ্ত এবং যারা আমাদের আয়াত সম্পর্কেও গাফিল,
10-8 : তাদেরই আবাস হবে জাহান্নাম তাদের (মন্দ) কৃতকর্মের কারণে।
10-9 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের প্রভু তাদের ঈমানের ভিত্তিতে তাদের পরিচালিত করেন সেই নিয়ামতে ভরা জান্নাতের দিকে, যার নিচে দিয়ে বহমান রয়েছে নদ - নদী - নহর।
10-10 : সেখানে তাদের দোয়া হবে: ‘হে আল্লাহ্! তুমি সকল ত্রুটির উর্ধ্বে, অতীব পবিত্র, অতি মহান!’ আর সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম।’ সেখানে তাদের শেষ দোয়া হবে: ‘আল হামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামিন - সব প্রশংসা মহাজগতের প্রভু আল্লাহর।’
10-11 : আল্লাহ্ যদি মানুষের ক্ষতির বিষয়টা দ্রুত করতেন, যেভাবে তারা তাদের কল্যাণের বিষয়টা দ্রুত করে, তাহলে তাদের মরণ হয়ে যেতো। সুতরাং যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা করেনা, আমরা তাদেরকে তাদের বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানোর জন্যে ছেড়ে দেই।
10-12 : মানুষকে যখন দুঃখ - দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন সে আমাদের ডাকে শুয়ে, বসে, কিংবা দাঁড়িয়ে। কিন্তু আমরা যখনই তার দুঃখ - দুর্দশা দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলে যেনো তাকে যখন দুঃখ - দুর্দশা স্পর্শ করেছিল, তখন সে আমাকে ডাকেনি। এভাবে সীমালংঘনকারীদের কর্মকান্ড তাদের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে।
10-13 : তোমাদের আগেকার বহু মানব প্রজন্মকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা যুলুম করেছিল। তাদের কাছে তাদের রসূলরা এসেছিল স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে। কিন্তু তারা ঈমান আনার জন্যে এগিয়ে আসেনি। এভাবেই আমরা অপরাধী লোকদেরকে তাদের কাজের প্রতিফল দিয়ে থাকি।
10-14 : তাদের পরে আমরা পৃথিবীতে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছি তোমাদেরকে। কারণ, আমরা দেখতে চাই তোমরা কেমন আমল করো।
10-15 : যখন তাদেরকে আমাদের সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয়, তখন যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা করেনা তারা বলে: ‘এটির পরিবর্তে অন্য একটি কুরআন আনো, অথবা এটি রদবদল করো।’ হে নবী! বলো: ‘আমার নিজ থেকে এটিতে রদবদল করা আমার কাজ নয়। আমি তো কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার কাছে অহি করা হয়। আমি যদি আমার প্রভুর নির্দেশের অবাধ্য হই, তবে আমি এক মহা ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করি।’
10-16 : হে নবী! বলো: ‘আল্লাহ্ চাইলে আমি এটি তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করতাম না এবং তিনিও এ বিষয়ে তোমাদের অবহিত করতেন না। আমি তো আমার একটা দীর্ঘ বয়সকাল তোমাদেরই মাঝে কাটিয়েছি, তবু কি তোমরা আকল খাটাবে না?’
10-17 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যে মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর প্রতি আরোপ করে, কিংবা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর আয়াতকে? নিশ্চয়ই অপরাধিরা সফলকাম হয়না।
10-18 : তারা আল্লাহ্ ছাড়া যে সবের ইবাদত (পূজা, উপাসনা, প্রার্থনা) করে, সেগুলো না তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে, আর না কোনো উপকার। তারা বলে: ‘এরা আল্লাহর কাছে আমাদের শাফায়াতকারী।’ হে নবী! বলো: ‘তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয় অবহিত করতে চাও, মহাকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যে বিষয়ে তিনি জানেন না?’ তিনি ত্রুটিমুক্ত পবিত্র এবং সেসব থেকে অনেক ঊর্ধ্বে যাদেরকে তোমরা শরিক করছো তাঁর সাথে।
10-19 : মানুষ তো প্রথমে এক উম্মতই ছিলো। পরে তারা ইখতেলাফ (বিভেদ সৃষ্টি) করে। তোমার প্রভুর পূর্ব ঘোষণা না থাকলে তারা যে বিষয়ে ইখতেলাফ করছে তার ফায়সালা হয়ে যেতো।
10-20 : তারা বলে: ‘তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার কাছে কোনো নিদর্শন নাযিল হলো না কেন?’ তুমি বলো: ‘গায়েব তো কেবল আল্লাহ্ই জানেন। সুতরাং তোমরা এনতেযার (অপেক্ষা) করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’
10-21 : দুঃখ - দুর্দশা স্পর্শ করার পর যখনই আমরা মানুষকে আমাদের রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখনই তারা আমাদের আয়াতের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয়। বলো: ‘কৌশল প্রয়োগে আল্লাহ্ সবচেয়ে দ্রুত।’ আমাদের রসূলরা (ফেরেশতারা) রেকর্ড করে রাখছে তোমাদের সব চক্রান্ত।
10-22 : তিনিই তোমাদের ভ্রমণ করান স্থলভাগে এবং সমুদ্রে। এভাবে তোমরা যখন নৌযানে ভ্রমণ করো এবং সেগুলো আরোহীদের নিয়ে অনুকূল বাতাসে এগিয়ে চলে এবং তাতে তারা আনন্দিত হয়। অত:পর যখন দমকা হাওয়া এবং সবদিক থেকে আগত উত্তাল তরঙ্গমালা সেগুলোকে আক্রমণ করে এবং তারা মনে করে যে, তারা ঘেরাও হয়ে পড়েছে, তখন আল্লাহর জন্যে আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে তারা কেবল তাঁকেই ডাকতে থাকে। তারা তখন তাঁকে বলে: ‘তুমি যদি আমাদের উদ্ধার করো তাহলে অবশ্যি আমরা শোকরগুজার হবো।’
10-23 : কিন্তু যখন তিনি তাদের বিপদ থেকে নাজাত দেন, তখন তারা না - হকভাবে দেশে সীমালংঘন করতে থাকে। হে মানুষ! তোমাদের সীমালংঘন তোমাদেরই ধ্বংসের কারণ হয়। দুনিয়ার জীবনে কিছুটা ভোগবিলাস করে নাও, তারপর আমাদের কাছেই হবে তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন আমরা তোমাদের অবহিত করবো তোমরা কী সব কান্ড কারবার করছিলে।
10-24 : দুনিয়ার জীবনের উপমা হলো (বৃষ্টির) পানি, যা আমরা আকাশ থেকে নাযিল করি। তা থেকে গজিয়ে উঠে ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন নিবিড় হয়ে। তা থেকেই আহার করে মানুষ এবং জীব - জানোয়ার। তারপর জমিন যখন তার শোভা ধারন করে এবং চাকচিক্যময় হয়ে উঠে আর তার অধিবাসীরা মনে করে, সেগুলো তাদের আয়ত্তাধীন, তখন আমাদের নির্দেশ এসে পড়ে রাতে কিংবা দিনে এবং আমরা সেগুলো এমনভাবে ধ্বংস করে দেই, যেনো গতকালও সেখানে কিছু ছিলনা। এভাবেই আমরা বিশদ বিবরণ দেই আমাদের আয়াতের, চিন্তাশীল লোকদের জন্যে।
10-25 : আল্লাহ্ দাওয়াত দিচ্ছেন দারুস সালামের (শান্তি নিবাসের) দিকে এবং তিনি যাকে চান পরিচালিত করেন সিরাতুল মুস্তাকিমে (সঠিক সুদৃঢ় পথে)।
10-26 : যারা কল্যাণের কাজ করে তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ এবং আরো অধিক। তাদের চেহারাকে আচ্ছন্ন করবেনা কালিমা কিংবা জিল্লতি। তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী, সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।
10-27 : আর যারা কামাই করবে মন্দ কর্ম, তাদের প্রতিফলও হবে অনুরূপ মন্দ। তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে জিল্লতি। তাদেরকে আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে রক্ষা করার কেউ হবেনা। তাদের চেহারা হবে (কালো) যেনো রাতের অন্ধকার আবরণে আচ্ছন্ন। তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।
10-28 : যেদিন আমরা তাদের সবাইকে হাশর (সমবেত) করবো এবং মুশরিকদের বলবো: ‘তোমাদের নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করো, তোমরা নিজেরা এবং তোমরা যাদের শরিক করেছিলে তারা। তারপর আমরা তাদেরকে পরস্পর থেকে আলাদা করে দেবো। তখন তারা যাদের শরিক করেছিল তারা বলবে: ‘‘তোমরা তো আমাদের ইবাদত করতে না।
10-29 : আমাদের এবং তোমাদের মাঝে আল্লাহই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (তোমরা যে বলছো তোমরা আমাদের ইবাদত করতে) আমরা তো তোমাদের ইবাদত সম্পর্কে একেবারেই গাফিল ছিলাম।’’
10-30 : সেখানেই তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ কৃতকর্ম পরীক্ষা করে নেবে এবং তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে তাদের প্রকৃত মাওলা (মনিব) আল্লাহর দিকে, আর তাদের থেকে উধাও হয়ে যাবে তাদের মনগড়া (সুপারিশকারীরা)।
10-31 : হে নবী! তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘কে তোমাদের রিযিক দেন আসমান ও জমিন থেকে? কিংবা শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তির কর্তৃত্ব কার? কে বের করেন মৃত থেকে জীবিতকে? কে বের করেন জীবিত থেকে মৃতকে? কে পরিচালনা করেন সমস্ত বিষয়?’ এসব প্রশ্নের জবাবে তারা বলবে: ‘আল্লাহ্’। বলো: ‘তাহলে কেন তোমরা সতর্ক হওনা (আল্লাহর আযাব সম্পর্কে)?’
10-32 : তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রকৃত প্রভু। সত্য ত্যাগ করলে গোমরাহি ছাড়া আর কী থাকে? তাহলে তোমরা ঘুরে ফিরে কোন্ দিকে যাচ্ছো?
10-33 : এভাবেই ফাসিকদের উপর তোমার প্রভুর বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে যে, তারা ঈমান আনবে না।
10-34 : বলো: তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরিক বানাও, তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে সৃষ্টির অস্তিত্ব দেয়, পরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটায়? বলো: আল্লাহ্ই সৃষ্টির অস্তিত্ব দেন এবং পরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটান। ফলে তোমরা কী করে সত্য ত্যাগ করে দূরে সরে যাচ্ছো?
10-35 : বলো: তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরিক বানাচ্ছো, তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে সত্যের দিকে পথ দেখায়? বলো: সত্যের দিকে পথ দেখান তো কেবল আল্লাহ্। যিনি সত্যের দিকে পথ দেখান তিনি আনুগত্য লাভের অধিক হকদার? নাকি সে, যাকে পথ না দেখালে সে নিজেই পথ পায়না? তোমাদের হয়েছে কী? কিভাবে তোমরা ফায়সালা গ্রহণ করো?
10-36 : তাদের অধিকাংশই অনুমান ছাড়া আর কিছুরই অনুসরণ করেনা। নিশ্চয়ই অনুমান সত্যে উপনীত হবার ব্যাপারে কোনো কাজেই আসেনা। তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ পূর্ণ অবহিত।
10-37 : এ কুরআন আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়। বরং এটি এর পূর্বে যেসব (কিতাব) অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী এবং বিধানসমূহের বিশদ বিবরণ। এতে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই যে, এটি নাযিল হয়েছে মহাজগতের প্রভুর পক্ষ থেকে।
10-38 : নাকি তারা বলে: এটি সে (মুহাম্মদ) রচনা করে নিয়েছে? তুমি বলো: তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো105 এবং আল্লাহ্ ছাড়া আর যাদেরকে পারো (সহযোগিতার) জন্যে ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
10-39 : বরং তারা এমন বিষয় অস্বীকার করছে, যে বিষয়ে জ্ঞান তারা আয়ত্ত করেনি এবং যার তা’বিলও তাদের কাছে আসেনি। তাদের পূর্ববর্তী (কাফিররাও) এভাবেই সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এখন তাকিয়ে দেখো, যালিমদের কী পরিণতি হয়েছিল!
10-40 : তাদের মধ্যে কিছু লোক তার প্রতি ঈমান রাখে আর কিছু লোক ঈমান রাখেনা। তোমার প্রভু ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের সবচে’ ভালো করে জানেন।
10-41 : তারা যদি তোমাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে, তুমি তাদের বলো: ‘আমার কাজের দায়িত্ব আমার, আর তোমাদের কাজের দায়িত্ব তোমাদের। আমি যে কাজ করি তোমরা তার দায়মুক্ত। আর তোমরা যে কাজ করছো আমিও তার দায়মুক্ত।’
10-42 : তাদের কিছু লোক তোমার কথা শুনে। কিন্তু তারা বুঝতে না পারলেও তুমি কি বধিরদের শুনাবে?
10-43 : তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাকে দেখে । কিন্তু তুমি কি অন্ধদের পথ দেখাবে তারা না দেখলেও?
10-44 : আল্লাহ্ মানুষের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করেন না, বরঞ্চ মানুষই নিজেরা নিজেদের প্রতি যুলুম করে।
10-45 : যেদিন তিনি তাদের হাশর করবেন, সেদিন তাদের মনে হবে (পৃথিবীতে) তারা অবস্থান করেছিল দিনের কিছুক্ষণ মাত্র। তারা পরস্পরকে চিনবে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেইসব লোক যারা আল্লাহর সাক্ষাত অস্বীকার করেছে এবং তারা সঠিক পথেও ছিলনা।
10-46 : আমরা তাদেরকে যে ভয় দেখাচ্ছি, তার কিছুটা যদি তোমার জীবনকালে দেখিয়ে দেই, কিংবা তোমার জীবনকাল যদি পূর্ণ করে দেই, শেষ পর্যন্ত তাদের প্রত্যাবর্তন তো আমাদের কাছেই হবে। তারপর আল্লাহ্ই তো তাদের কর্মকান্ডের সাক্ষী।
10-47 : প্রত্যেক উম্মতের জন্যেই ছিলো একজন রসূল। যখনই তাদের কাছে তাদের রসূল এসেছিল, তখন ইনসাফের সাথে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার করা হয়নি।
10-48 : তারা বলে: ‘তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে বলো, তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া সেই সময়টি কখন আসবে?’
10-49 : হে নবী! বলো: আমার নিজের লাভ ক্ষতির উপরও আমার কোনো অধিকার নেই, তবে আল্লাহ্ কিছু চাইলে ভিন্ন কথা। প্রত্যেক উম্মতেরই একটি নির্ধারিত সময় আছে। যখন তার সেই নির্ধারিত সময়টি আসবে, তখন কিছুক্ষণ সময়ও আগপর হবেনা।
10-50 : হে নবী! বলো: ‘তোমাদের রায় কী; আল্লাহর আযাব তো রাত বা দিনে তোমাদের উপর এসেই পড়তে পারে। তারপরও অপরাধীরা সেটার জন্যে তাড়াহুড়া করে কেন?’
10-51 : সেটা (কিয়ামত) ঘটে যাবার পরই কি তোমরা ঈমান আনবে? এখন (ঈমান আনবেনা)? তোমরাই তো এর জন্যে তাড়াহুড়া করছিলে।
10-52 : তারপর যালিমদের বলা হবে, চিরস্থায়ী আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো। তোমরা যা কামাই করে এসেছো সেটার ছাড়া অন্য কিসের প্রতিফল তোমাদের দেয়া হবে?
10-53 : (হে নবী!) তারা তোমার কাছে জানতে চায়, সেটা (পুনরুত্থান দিবস) কি সত্য? বলো: ‘হ্যাঁ, আমার প্রভুর শপথ সেটা অবশ্যি সত্য। তোমরা সেটার আগমন ঠেকাতে পারবে না।’
10-54 : আর যদি প্রত্যেক অন্যায়কারী পৃথিবীর সবকিছুর মালিকও হয়, তবে সে (কিয়ামতের দিন) মুক্তির বিনিময়ে সবকিছু দিয়ে দিতে চাইবে। আযাব দেখতে পেলে সে অনুতাপ লুকাবার চেষ্টা করবে। সেদিন ইনসাফের সাথে তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার করা হবেনা।
10-55 : সাবধান, জেনে রাখো, মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। সাবধান, জেনে রাখো আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানেনা।
10-56 : তিনি জীবন দান করেন এবং তিনি মরণ দিয়ে থাকেন এবং সবাইকে তাঁরই কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
10-57 : হে মানুষ! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছ এসেছে একটি উপদেশ এবং তোমাদের কলবে (অন্তরে) যা আছে তার নিরাময়, আর হিদায়াত ও রহমত মুমিনদের জন্যে।
10-58 : হে নবী! বলো: ‘এই (কুরআন এসেছে) আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়ায়। সুতরাং এর জন্যে তারা উৎফুল্ল ও আনন্দিত হোক।’ তারা যা জমা করে এটি তার চাইতে উত্তম।
10-59 : হে নবী! বলো: তোমরা ভেবে দেখেছো কি, আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে যে রিযিক নাযিল করেছেন, তারপর তোমরা যে সেগুলোর কিছু হালাল আর কিছু হারাম বানিয়ে নিয়েছো - হে নবী! তাদের জিজ্ঞেস করো, তোমাদের এ নির্দেশ কি আল্লাহ্ দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছো?
10-60 : যারা আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, কিয়ামতকাল সম্পর্কে তাদের ধারণা কী? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহওয়ালা, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই শোকর আদায় করেনা।
10-61 : (হে মুহাম্মদ!) তুমি যে অবস্থায়ই থাকো এবং কুরআন থেকে যা - ই তিলাওয়াত করোনা কেন আর (হে মানুষ!) তোমরা যা - ই করোনা কেন, আমরা তোমাদের উপর সাক্ষী থাকি যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ করো। মহাকাশ এবং পৃথিবীতে একটি অণু পরিমাণ কিছুও তাঁর অগোচরে নেই এবং তার চাইতে ক্ষুদ্রতম কিংবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা এক সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা নেই।
10-62 : জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেই এবং দুঃখ - দুশ্চিন্তাও নেই।
10-63 : (তারা হলো সেইসব লোক) যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।
10-64 : তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই মহাসাফল্য।
10-65 : (হে নবী! এরা তোমাকে যা কিছু বলছে) তাদের কথা যেনো তোমাকে দুঃখ না দেয়। সমস্ত ইয্যত ও শক্তির মালিক তো আল্লাহ্। তিনি সব শুনেন, সব জানেন।
10-66 : সাবধান, মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারা আছে সবাই আল্লাহর। যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদেরকে আল্লাহর শরিক বানিয়ে ডাকে, তারা কিসের অনুসরণ করে? তারা তো কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে এবং তারা কেবল মিথ্যাই বলে।
10-67 : তিনিই তোমাদের জন্যে রাত বানিয়েছেন বিশ্রামের জন্যে আর দিন বানিয়েছেন দেখার জন্যে। যারা (উপদেশ) শুনে এতে তাদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।
10-68 : তারা বলে: ‘আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি (এ থেকে) পবিত্র মহান। তিনি অভাবমুক্ত। মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর। (তোমরা যা বলছো) সে বিষয়ে তোমাদের কাছে কোনো সার্টিফিকেট নেই। তোমরা কি আল্লাহর উপর এমন কথা আরোপ করছো, যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই?
10-69 : হে নবী! বলো: যারা মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর উপর আরোপ করে, তারা সফল হবেনা।
10-70 : পৃথিবীতে তাদের জন্যে রয়েছে কিছু ভোগ বিলাস। তারপর আমাদের কাছেই হবে তাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমরা তাদের স্বাদ গ্রহণ করাবো কঠিন আযাবের, তাদের কুফুরির কারণে।
10-71 : তাদের প্রতি তিলাওয়াত করো নূহের সংবাদ। সে তার কওমকে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আয়াতের ভিত্তিতে আমার উপদেশ যদি তোমাদের অসহনীয় হয়, তবে আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলাম। তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরিক করছো তাদেরকে সাথে নিয়ে তোমাদের চক্রান্ত ঠিক করে নাও, পরে যেনো তোমাদের চক্রান্তের বিষয়ে তোমাদের কোনো সংশয় না থাকে। তারপর আমার বিরুদ্ধে তোমাদের ফায়সালা ঠিক করে নাও এবং আমাকে কোনো অবকাশ দিও না।
10-72 : তারপরও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও নিতে পারো। আমি তো এ কাজের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। আমার প্রতিদানের দায়িত্ব আল্লাহর উপর। আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেনো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তরভুক্ত হই।’’
10-73 : শেষ পর্যন্ত তারা তাকে (নূহকে) মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে। তখন আমরা তাকে এবং তার সাথে যারা নৌযানে আরোহণ করেছিল তাদেরকে নাজাত দেই এবং তাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করি আর ডুবিয়ে দেই সেইসব লোকদের যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের আয়াত। চেয়ে দেখো, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, কী করুণ পরিণতি হয়েছিল তাদের!
10-74 : তার (নূহের) পরেও আমরা আরো অনেক রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের কওমের কাছে। তারা তাদের কাছে এসেছিল সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে। কিন্তু তারা আগে যা প্রত্যাখ্যান করেছে তার প্রতি আর ঈমান আনতে প্রস্ত্তত হয়নি। এভাবেই আমরা সীমালংঘনকারীদের অন্তর সীলগালা করে দেই।
10-75 : তাদের পরে আমরা পাঠিয়েছি মূসা এবং হারূণকে ফেরাউন আর তার নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের নিদর্শন নিয়ে। কিন্তু তারা দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। আসলে তারা ছিলো একটি অপরাধী কওম।
10-76 : অত:পর তাদের কাছে যখন আমাদের পক্ষ থেকে সত্য প্রকাশ হয়ে যায়, তখন তারা বললো: ‘এতো এক সুস্পষ্ট ম্যাজিক।’
10-77 : মূসা বললো: ‘তোমাদের কাছে যখন সত্য এসে গেছে, তখন সে সম্পর্কে তোমরা এমনটি বলছো? এ কি ম্যাজিক? ম্যাজেসিয়ানরা কখনো সফল হয়না।’
10-78 : তারা বললো: ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের যে ধর্মের উপর পেয়েছি তুমি কি আমাদেরকে তা থেকে বিচ্যুত করার জন্যে এসেছো এবং দেশে যেনো তোমার প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়ে যায় সে জন্যে এসেছো? আমরা তোমাদের দু’জনের প্রতি বিশ্বাসী নই।’
10-79 : ফেরাউন (তার পারিষদকে) বললো: ‘তোমরা সব দক্ষ ম্যাজেসিয়ানদের খুঁজে আমার কাছে নিয়ে আসো।’
10-80 : তারপর ম্যাজেসিয়ানরা সবাই যখন এসে উপস্থিত হলো: মূসা তাদের বললো: ‘তোমরা যা নিক্ষেপ করতে চাও নিক্ষেপ করো।’
10-81 : তারা যখন নিক্ষেপ করলো, মূসা বললো: ‘‘তোমরা যা নিয়ে এসেছো তা তো ম্যাজিক! আল্লাহ্ অবশ্যি এ জিনিসকে বাতিল করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের সংশোধন করেননা।
10-82 : আল্লাহ্ তাঁর বাণীর সাহায্যে সত্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও অপরাধীরা তা পছন্দ করেনা।’’
10-83 : ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গ নির্যাতন করবে এই ভয়ে মূসার কওমের কিছু যুবক ছাড়া আর কেউই তার প্রতি ঈমান আনেনি। ফেরাউন ছিলো দেশে এক উদ্ধত উচ্চাভিলাসী এবং সে ছিলো সীমালংঘনকারী।
10-84 : মূসা বলেছিল: ‘হে আমার কওম! তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাকো তাহলে তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করো যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাকে।’
10-85 : তারা বলেছিল: ‘‘আমরা আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করলাম, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এই যালিম লোকদের নির্যাতনের পাত্র বানিয়োনা।
10-86 : আর তোমার দয়ায় আমাদেরকে এ কাফির কওমের কবল থেকে নাজাত দাও।’’
10-87 : আমরা মূসা এবং তার ভাইকে অহির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছিলাম: ‘তোমাদের কওমের জন্যে মিসরে ঘর নির্মাণ করো আর তোমাদের ঘরগুলোকে কিবলা (ইবাদতের স্থান) বানিয়ে নাও, সালাত কায়েম করো আর মুমিনদের সুসংবাদ দাও।’
10-88 : মূসা বলেছিল: ‘আমাদের প্রভু! তুমি ফেরাউন আর তার পারিষদবর্গকে দুনিয়ার জীবনে চাকচিক্য আর সম্পদ দান করেছো। আমাদের প্রভু! তারা সেগুলো দিয়ে মানুষকে তোমার পথ থেকে বিপথগামী করে। আমাদের প্রভু! তাদের মাল - সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং তাদের হৃদয়গুলো কঠিন করে দাও। তারা বেদনাদায়ক আযাব দেখার আগ পর্যন্ত ঈমান আনবে না।’
10-89 : তিনি বলেছিলেন: তোমাদের দোয়া কবুল করা হলো, সুতরাং তোমরা অটল অবিচল থাকো, আর তোমরা অজ্ঞদের পথের অনুসরণ করোনা।
10-90 : আমরা বনি ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিয়েছিলাম আর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী ঔদ্ধত্যের সাথে সীমালংঘন করে তাদের পিছু ধাওয়া করে। তারপর যখন সে পানিতে ডুবতে থাকলো, বললো: ‘আমি (একথার প্রতি) ঈমান আনলাম যে, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই, যার প্রতি ঈমান এনেছে বনি ইসরাঈল এবং আমি মুসলিমদের অন্তরভুক্ত হলাম।’
10-91 : এখন! অথচ ইতোপূর্বে তুমি অমান্য করেছিলে এবং তুমি ছিলে একজন ফাসাদ সৃষ্টিকারী।
10-92 : আজ আমরা তোমার দেহটা রক্ষা করবো, যাতে করে তুমি পরবর্তীদের জন্যে নিদর্শন হয়ে থাকো। অনেক মানুষই আমাদের নিদর্শন সম্পর্কে গাফিল।
10-93 : আমরা বনি ইসরাঈলকে উৎকৃষ্ট মানের আবাসভূমিতে বসবাস করিয়েছি এবং তাদের দিয়েছি উত্তম জীবন। তারপর তাদের কাছে এলেম আসার পর তারা বিভেদে লিপ্ত হয়। তোমার প্রভু কিয়ামতের দিন তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবেন, যে বিষয়ে তারা বিভেদ সৃষ্টি করেছিল।
10-94 : আমরা তোমার কাছে যা নাযিল করেছি সে বিষয়ে যদি তোমার সন্দেহ থাকে, তাহলে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখো। অবশ্যি তোমার কাছে তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য এসেছে, সুতরাং তুমি কোনো অবস্থাতেই সন্দেহে পড়ে থাকা লোকদের অন্তরভুক্ত হয়োনা।
10-95 : তুমি সেইসব লোকদেরও অন্তরভুক্ত হয়োনা যারা মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর আয়াতকে, তাহলে তুমি শামিল হয়ে পড়বে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে,
10-96 : যাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রভুর বাণী সাব্যস্ত হয়ে গেছে, তারা ঈমান আনবে না।
10-97 : এমন কি তাদের কাছে প্রতিটি নিদর্শন এলেও তারা যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখার আগ পর্যন্ত (ঈমান আনবে না)।
10-98 : তবে ইউনুসের কওমের কথা ভিন্ন। তারা ছাড়া কোনো জনপদের অধিবাসীরা কেন এমন হলো না যে, তারা ঈমান আনতো এবং তাদের ঈমান তাদের উপকারে আসতো? তারা যখন ঈমান এনেছিল আমরা তাদের থেকে লাঞ্ছনাকর আযাব দূর করে দিয়েছিলাম এবং তাদেরকে কিছুকালের জন্যে ভোগ বিলাসের সামগ্রী সরবরাহ করেছিলাম।
10-99 : তোমার প্রভু চাইলে বিশ্বে যারা আছে অবশ্যি সবাই ঈমান আনতো। তবে কি তুমি মানুষকে ঈমান আনার জন্যে বাধ্য করবে?
10-100 : আল্লাহর অনুমিত ছাড়া কোনো ব্যক্তির পক্ষে ঈমান আনা সম্ভব নয়। যারা আকল খাটায় না আল্লাহ্ তাদের কালিমা লিপ্ত করেন।
10-101 : বলো: ‘মহাকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করো। যারা ঈমান আনে না, নিদর্শন এবং সতর্কবাণী তাদের কোনো উপকারে আসেনা।
10-102 : তারা কি তাদের আগেকার লোকদের উপর যা ঘটেছিল সেটার অপেক্ষা করছে। বলো: ‘তোমরা অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’
10-103 : তারপর আমরা নাজাত দেবো আমাদের রসূলদেরকে আর ঈমানদারদেরকে। এভাবেই আমাদের দায়িত্ব মুমিনদের নাজাত দেয়া।
10-104 : বলো: ‘হে মানুষ! তোমরা এখনো যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহে থেকে থাকো, তবে জেনে রাখো, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদের ইবাদত করো আমি তাদের ইবাদত করিনা। আমি ইবাদত করি একমাত্র আল্লাহর যিনি তোমাদের ওফাত ঘটান। আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেনো মুমিনদের অন্তরভুক্ত থাকি।’
10-105 : আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে: ‘‘তুমি একনিষ্ঠভাবে আদ - দীনের উপর কায়েম থাকো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়োনা।
10-106 : আর আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদের ডাকবেনা, যারা তোমার লাভক্ষতি কিছুই করতে পারেনা। তুমি যদি এমনটি করো তাহলে যালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।’’
10-107 : আল্লাহ্ তোমাকে কোনো অকল্যাণ দিলে তিনি ছাড়া তা দূর করার আর কেউই নেই। তিনি যদি তোমাকে কোনো কল্যাণ দান করেন, তবে তাঁর অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তিনি তাঁর দাসদের যাঁকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করেন। তিনি মহা ক্ষমাশীল মহাদয়াময়।
10-108 : হে নবী! বলো: ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সত্য এসেছে, সুতরাং যে কেউ সঠিক পথে চলবে, সে তো নিজেরই কল্যাণ করবে, আর যে কেউ বিপথে চলবে সে নিজেরই অকল্যাণ করবে। আমি তোমাদের উকিল (কর্মসম্পাদক) নই।’
10-109 : তোমার প্রতি যে অহি নাযিল হচ্ছে তুমি তারই ইত্তেবা (অনুসরণ) করো, আর সবর অবলম্বন করো যতোক্ষণ না আল্লাহর ফায়সালা আসে। তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।