আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 16, আন নহল (মৌমাছি) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 16, আন নহল (মৌমাছি)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১২৮, রুকু সংখ্যা: ১৬

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৩আল্লাহ শিরক থেকে পবিত্র। তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা রসূল নিযুক্ত করেন।
০৪-২১মানুষ সৃষ্টি এবং মানুষের প্রতি আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ।
২২-৩৫অহংকারী লোকেরা ঈমান আনেনা। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। যালিমদের মৃত্যুকালীন এবং মৃত্যু পরবর্তীকালীন দুরবস্থা। আল্লাহভীরুদের নীতি এবং তাদের মৃত্যুকালীন ও মৃত্যু পরবর্তী সুন্দর অবস্থা।
৩৬-৪০আল্লাহ সব জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছেন। সব মানুষ হিদায়েতের পথে আসেনা।
৪১-৪২ইসলামের কারণে নিগৃহীত ও নির্যাতিতদের মহাপুরস্কার।
৪৩-৬৫কুরআনের ব্যাখ্যা দেয়ার দায়িত্ব রসূলের। ইসলাম ও নবীর প্রতি ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি সতর্কবাণী। আল্লাহর তাওহীদের যুক্তি। সকল মতবিরোধের সমাধান আল কুরআন।
৬৬-৮৩মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের বিবরণ। শিরকের অসারতা। মানুষের কাছে সত্যের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া নবীর দায়িত্ব।
৮৪-৮৯প্রত্যাখ্যানকারীদের ও মুশরিকদের পরকালীন দুরবস্থা। কুরআনে প্রতিটি বিষয়ের বর্ণনা ও নির্দেশিকা রয়েছে।
৯০-৯৬ মানুষের জন্য ন্যায় ও সঠিক নীতিমালা।
৯৭উত্তম আমল সুন্দর জীবনের গ্যারান্টি।
৯৮-১১১কুরআন পাঠের সূচনায় শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ। কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য। অবিশ্বাসীদের জন্য দুঃসংবাদ। ইসলামের কারণে নির্যাতিতদের জন্য সুসংবাদ।
১১২-১১৩আল্লাহর অনুগ্রহের অকৃতজ্ঞতা ও রসূলের আদর্শ প্রত্যাখ্যানের পরিণতি।
১১৪-১১৯হালাল ও হারামের বিধান।
১২০-১২৪ইবরাহিমের আনুগত্যের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি। মুহাম্মদ সা. এর প্রতি ইবরাহিমের আদর্শ অনুসরণের নির্দেশ।
১২৫-১২৮আল্লাহর পথে দাওয়াত দানের পন্থা।
16-1 : আল্লাহর নির্দেশ আসবেই, সুতরাং তোমরা তাড়াহুড়া করোনা। তিনি অবশ্যি পবিত্র এবং তারা তাঁর সাথে যাদের শরিক করে তিনি তাদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে।
16-2 : আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যাদেরকে চান, তাদের প্রতি ফেরেশতা এবং রূহকে (জিবরাইলকে) পাঠান এই আদেশসহ: তোমরা সতর্ক করো যে, নিশ্চয়ই আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই, সুতরাং তোমরা আমাকে ভয় করো।
16-3 : তিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ এবং এই পৃথিবী বাস্তবতার সাথে। তারা তাঁর সাথে যাদের শরিক করে, তিনি তাদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে।
16-4 : তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন নোতফা (শুক্রবিন্দু) থেকে। অথচ সে প্রকাশ্যে বিতর্ক করে।
16-5 : তিনি চারপায়ী পশুদেরও সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের জন্যে সেগুলোতে রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ এবং আরো অনেক উপকারী জিনিস এবং সেগুলোর কতক তোমরা খেয়ে থাকো।
16-6 : তোমরা বিকেলে যখন সেগুলোকে চারণভূমি থেকে ফিরিয়ে আনো আর সকালে যখন চারণভূমির দিকে নিয়ে যাও, তখন তোমরা সেগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকো।
16-7 : আর সেগুলো তোমাদের বোঝা বইয়ে নিয়ে যায় এমন স্থানে যেখানে প্রাণান্তকর কষ্ট করা ছাড়া তোমরা পৌঁছাতে পারতে না। তোমাদের প্রভু অবশ্যি দয়াবান, দয়াশীল।
16-8 : তোমাদের আরোহণ এবং সৌন্দর্যের জন্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। তিনি (তোমাদের কল্যাণে) আরো এমন সব জিনিস সৃষ্টি করবেন, যা তোমরা জানোনা।
16-9 : সঠিক পথ দেখানো আল্লাহর দায়িত্ব, যেহেতু অনেক বক্র পথ রয়েছে। তিনি চাইলে তোমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করতেন।
16-10 : তিনি তোমাদের জন্যে আসমান থেকে নাযিল করেন পানি। তাতে রয়েছে তোমাদের জন্যে পানীয়, তা থেকেই জন্মায় গাছ - গাছালি উদ্ভিদ যাতে তোমরা চরিয়ে থাকো পশু।
16-11 : তা থেকেই তিনি তোমাদের জন্যে জন্মান শস্য, যয়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সব রকমের ফল ফলারি। চিন্তাশীল লোকদের জন্যে অবশ্যি এতে রয়েছে নিদর্শ
16-12 : তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে দিয়েছেন রাত আর দিনকে এবং সূর্য আর চাঁদকে। নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। এতে নিদর্শন রয়েছে আকল খাটানো লোকদের জন্যে।
16-13 : তিনি যে তোমাদের জন্যে বিভিন্ন রঙের বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন, তাতেও নিদর্শন রয়েছে সেইসব লোকদের জন্যে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
16-14 : তিনি সমুদ্রকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তা থেকে আহরণ করতে পারো তাজা গোশত (মাছ) এবং কুড়িয়ে আনতে পারো বিভিন্ন রকম রত্ন, যা তোমরা তোমাদের ভূষণ হিসেবে পরে থাকো। তোমরা দেখতে পাচ্ছো, তার বুক চিরে চলাচল করে নৌযান, তা এজন্যে যেনো তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং তাঁর শোকর আদায় করতে পারো।
16-15 : আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পাহাড় - পর্বত স্থাপন করে দিয়েছেন যাতে তা তোমাদের নিয়ে কাঁপতে না থাকে। তিনিই জারি করে দিয়েছেন নদ - নদী এবং চালু করে দিয়েছেন চলাচলের পথ,যাতে করে তোমরা সঠিকভাবেপৌঁছুতে পারো গন্তব্যে।
16-16 : তাছাড়া রয়েছে নির্ণায়ক চিহ্নসমূহ, আর নক্ষত্রের সাহায্যেও তারা পথের নির্দেশনা পায়।
16-17 : যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তার সমতুল্য, যে সৃষ্টি করে না? তোমরা কি শিক্ষা গ্রহণ করবেনা?
16-18 : তোমরা যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করো তবে সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়াময়।
16-19 : আল্লাহ জানেন, তোমরা যা গোপন করো আর যা প্রকাশ করো।
16-20 : যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের ডাকে, তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়।
16-21 : তারা মৃত, নির্জীব, তাদের কখন পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোনো চেতনাই নেই।
16-22 : তোমাদের ইলাহ্ এক ও একক ইলাহ্। সুতরাং যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনেনা, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা দাম্ভিক।
16-23 : নিঃসন্দেহে আল্লাহ জানেন, তারা যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে। অবশ্যি তিনি দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।
16-24 : যখন তাদের বলা হয়: ‘তোমাদের প্রভু কী নাযিল করেছেন?’ তারা বলে: ‘আগের কালের লোকদের কাহিনী।’
16-25 : ফলে কিয়ামতের দিন তারা বহন করবে তাদের পাপের ভার পূর্ণমাত্রায় এবং অজ্ঞতা নিয়ে যাদের বিপথগামী করেছিল তাদের পাপের বোঝাও। তারা যা বহন করবে, তা কতো যে নিকৃষ্ট!
16-26 : তাদের আগেকার লোকরাও চক্রান্ত করেছিল, ফলে আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন এবং ইমারতের ছাদ ধ্বসে পড়েছিল তাদের উপর। আর তাদের উপর আযাব এসে পড়েছিল এমন দিক থেকে, যা তারা টেরও পায়নি।
16-27 : এর পরে কিয়ামতের দিন তিনি তাদের লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদের জিজ্ঞেস করবেন, ‘কোথায় (তোমাদের মনগড়া) আমার সেইসব শরিকদাররা, যাদের ব্যাপারে তোমরা বিতর্ক করতে?’ যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল, তারা বলবে: আজকের অপমান আর অকল্যাণ কাফিরদের জন্যে,
16-28 : যাদেরকে ফেরেশতারা মৃত্যু ঘটায় নিজেদের প্রতি যুলুম করতে থাকা অবস্থায়। তখন তারা আত্মসমর্পণ করে দিয়ে বলে: ‘আমরা কোনো মন্দ কাজ করতাম না।’ হ্যাঁ, আল্লাহ ভালো ভাবেই জানেন তোমরা কী করতে?’
16-29 : এখন জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে দাখিল হয়ে যাও সেখানে চিরকাল পড়ে থাকার জন্যে। দাম্ভিকদের আবাসস্থল কতো যে নিকৃষ্ট!
16-30 : যারা তাকওয়া অবলম্বন করতো তাদের বলা হবে: ‘তোমাদের প্রভু কী নাযিল করেছিলেন?’ তারা বলবে: ‘মহাকল্যাণ।’ যারা এই দুনিয়ায় ইহসান করে তাদের জন্যে রয়েছে হাসানা (কল্যাণ) আর তাদের জন্যে আখিরাতের আবাস আরো উত্তম। মুত্তাকিদের বাসস্থান কতো যে চমৎকার!
16-31 : তাহলো চিরস্থায়ী জান্নাত, সেখানে তারা দাখিল হবে। তার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। সেখানে তাদের জন্যে থাকবে যা তারা চাইবে। আল্লাহ এভাবেই দিয়ে থাকেন মুত্তাকিদের পুরস্কার।
16-32 : ফেরেশতারা তাদের ওফাত ঘটায় পবিত্র জীবন - যাপন করা অবস্থায়। তারা (তাদের ওফাত ঘটাতে এসে) বলে: ‘সালামুন আলাইকুম - আপনাদের প্রতি বর্ষিত হোক শান্তি, আপনারা দাখিল হোন জান্নাতে আপনাদের উত্তম আমলের বিনিময়ে।’
16-33 : তারা (কাফিররা) কি তাদের কাছে ফেরেশতা আসার অপেক্ষায় রয়েছে, নাকি তাদের প্রভুর নির্দেশ আসার অপেক্ষায়? তাদের আগেকার লোকেরাও এ রকমই করতো। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।
16-34 : সুতরাং তাদের উপর আপতিত হয়েছিল তাদেরই মন্দ কাজের শাস্তি এবং সেই জিনিসই তাদের পরিবেষ্টন করে নিয়েছিল যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করতো।
16-35 : যারা শিরক করে তারা বলে: ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদত করতাম না, আমরাও না, আমাদের পূর্ব পুরুষরাও না এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া আমরা কোনো কিছুই হারাম করতাম না।’ তাদের আগেকার লোকেরা এ রকমই (বাহানাবাজি) করতো। পরিষ্কারভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়া ছাড়া রসূলদের উপর আর কোনো দায়িত্ব আছে কি?
16-36 : আমরা প্রতিটি জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দেয়ার জন্যে যে: ‘তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত (আনুগত্য, দাসত্ব, প্রার্থনা, উপাসনা) করো এবং তাগুতকে ত্যাগ করো।’ ফলে তাদের কিছু লোককে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন আর কিছু লোকের জন্যে সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল গোমরাহি। সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ করে দেখো, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী হয়েছিল?
16-37 : তুমি তাদের হিদায়াতের আকাংখী হলেও আল্লাহ সেসব লোকদের হিদায়াত করেন না, যারা ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করে। আর তাদের কোনো সাহায্যকারীও হবেনা।
16-38 : তারা জোর দিয়ে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলে: ‘যারা মরে যায় আল্লাহ তাদের পুনরুত্থিত করবেননা।’ হ্যাঁ, অবশ্যি তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করবেন। তবে অধিকাংশ লোকই তা জানেনা।
16-39 : (তিনি তাদের পুনরুত্থিত করবেন) যে বিষয়ে তারা মতানৈক্য করতো তা তাদেরকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়ার জন্যে, এবং কাফিররাও যেনো জানতে পারে যে, তারা ছিলো মিথ্যাবাদী।
16-40 : আমরা কোনো কিছু করার ইচ্ছা করলে সে বিষয়ে শুধু এতোটুকু বলি, ‘হও’ আর সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
16-41 : যারা অত্যাচারিত হবার পর হিজরত করেছে, আমরা অবশ্যি দুনিয়ায় তাদের উত্তম আবাস দেবো, আর আখিরাতের পুরস্কার তো অনেক বড়। হায়, তারা যদি এটা জানতো,
16-42 : যারা সবর অবলম্বন করে এবং তাদের প্রভুর উপর তাওয়াক্কুল করে।
16-43 : তোমার আগে আমরা যাদের পাঠিয়েছিলাম এবং অহি করেছিলাম, তারা পুরুষ (মানুষই) ছিলো। তোমরা যদি না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো।
16-44 : তাদেরকে আমরা পাঠিয়েছিলাম স্পষ্ট প্রমাণ এবং গ্রন্থাবলি দিয়ে। আর তোমার প্রতি আমরা নাযিল করেছি ‘আয যিকির’ (আল - কুরআন) মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে যা তাদের জন্যে নাযিল করা হয়েছে এবং তারা যেনো চিন্তা - ভাবনা করতে পারে।
16-45 : যারা অন্যায় কাজের ষড়যন্ত্র করে তারা কি নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, আল্লাহ তাদের নিয়ে জমিনকে তলিয়ে দেবেন না, কিংবা এমন জায়গা থেকে তাদের উপর আযাব এসে পড়বেনা যার চিন্তাও তারা করেনি?
16-46 : অথবা তাদের চলাফেরা করতে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তাদের পাকড়াও করবেন না? শাস্তি যখন এসে পড়বে তখন তারা তা ব্যর্থ করতে পারবে না।
16-47 : কিংবা তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তিনি ধরে ফেলবেন না? তোমাদের প্রভু অবশ্যি পরম দয়াশীল, করুণাময়।
16-48 : তারা কি দেখেনা, আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর ছায়া ডানে এবং বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সাজদাবনত21 হয়?
16-49 : মহাকাশে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীতে যতো জীবজন্তু আছে সবাই আল্লাহর জন্যে সাজদাবনত21 হয়, আর ফেরেশতারাও তাঁকে সাজদা করে এবং তারা অহংকার করেনা।
16-50 : তারা তাদের উপর থেকে তাদের প্রভুর ভয়ে ভীত থাকে এবং তারা কেবল তাই করে যা তাদের নির্দেশ দেয়া হয়। (সাজদা)
16-51 : আল্লাহ বলেছেন: ‘তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করোনা। তিনি তো একমাত্র ইলাহ্। তাই তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো।’
16-52 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর। আর অবিচ্ছিন্ন আনুগত্য পাওয়ার মালিক কেবল তিনিই। তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করবে?
16-53 : তোমাদের সাথে যতো নিয়ামত রয়েছে সবই তো আল্লাহর প্রদত্ত। তাছাড়া তোমাদেরকে যখনই কোনো দু:খ - দুর্দশা স্পর্শ করে, তখনো তো তোমরা ব্যাকুল হয়ে কেবল তাঁকেই ডাকো।
16-54 : তারপর তিনি যখন তোমাদের দু:খ - দুর্দশা দূর করে দেন, তখন তোমাদেরই একটি দল তাদের প্রভুর সাথে শরিক করে।
16-55 : ফলে আমরা তাদের যা কিছু দিয়েছি তারা তা অস্বীকার করে। সুতরাং ভোগ করে নাও, অচিরেই জানতে পারবে।
16-56 : আর আমরা তাদের যে রিযিক দিয়েছি তারা তার একাংশ নির্ধারণ করে তাদের (বাতিল উপাস্যদের) জন্যে, যাদের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেনা। আল্লাহর কসম, তোমরা যে মিথ্যা রচনা করছো সে সম্পর্কে অবশ্যি তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
16-57 : তারা আল্লাহর জন্যে কন্যা সন্তান নির্ধারণ করে, যা থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র, আর তাদের জন্যে সেই (সন্তান) যা তারা কামনা করে!
16-58 : কিন্তু তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তাদের চেহারা কালো হয়ে যায় এবং সে চরম মনোকষ্টে দগ্ধ হয়।
16-59 : তাকে যে সংবাদ দেয়া হয় তার গ্লানিতে সে সমাজ থেকে আত্মগোপন করে। সে ভাবতে থাকে, গ্লানি সত্ত্বেও সে কি তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুতে ফেলবে? সাবধান, তোমাদের সিদ্ধান্ত চরম নিকৃষ্ট।
16-60 : যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনেনা, তারা ভীষণ নিকৃষ্ট স্বভাবের লোক। সর্বশ্রেষ্ঠ মহোত্তম স্বভাব - প্রকৃতি আল্লাহর এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাবান।
16-61 : আল্লাহ যদি মানুষকে তার যুলুমের জন্যে পাকড়াও করতেন, তাহলে পৃথিবীর বুকে কোনো জীবকেই রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অত:পর যখন তাদের নির্ধারিত সময়টি এসে উপস্থিত হয়, তখন তারা কিছুক্ষণও আগপাছ করতে পারে না।
16-62 : আর তারা আল্লাহর প্রতি তাই আরোপ করে, যা নিজেদের জন্যে অপছন্দ করে। তাদের যবান মিথ্যা কথা বলে যে: ‘কল্যাণ তাদেরই জন্যে।’ কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নাম এবং সবার আগেই তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে তাতে।
16-63 : আল্লাহর কসম! তোমার আগেও আমরা বহু জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু শয়তান তাদের কার্যকলাপ তাদের কাছে চাকচিক্যময় করে রেখেছিল। সে - ই আজো তাদের অলি। আর তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
16-64 : আমরা তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদের সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে। তাছাড়াকিতাব মুমিনদের জন্যে জীবন যাপনের নির্দেশিকা এবং একটি রহমত।
16-65 : আল্লাহই নাযিল করেন আসমান থেকে পানি, অত:পর তা দিয়ে পুনর্জীবিত করেন জমিনকে মরে (শুকিয়ে) যাবার পর। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে একটি নিদর্শন সেইসব লোকদের জন্যে যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে।
16-66 : গবাদি পশুর মধ্যেও তোমাদের জন্যে রয়েছে একটি শিক্ষা। তাদের পেটের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে আমরা তোমাদের পান করাই খাঁটি দুধ, যা পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু।
16-67 : আর খেজুর গাছের ফল এবং আঙ্গুর থেকে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাকো। এতেও সেইসব লোকদের জন্যে রয়েছে একটি নিদর্শন যারা আকল খাটায়।
16-68 : তোমার প্রভু মৌমাছির কাছে অহি করেছেন: ‘‘তোমরা মৌচাক নির্মাণ করো পাহাড়ে - পর্বতে, গাছ - গাছালিতে এবং মানুষের নির্মিত উঁচু জায়গাতে।
16-69 : তারপর প্রত্যেক ফল (ফুল) থেকে কিছু কিছু খাও এবং তোমার প্রভুর প্রদর্শিত সহজ পথ অনুসরণ করো।’’ এভাবে তার পেট থেকে বের হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয় (মধু), যাতে মানুষের জন্যে রয়েছে নিরাময়। অবশ্যি চিন্তাশীল লোকদের জন্যে এতে রয়েছে একটি নিদর্শন।
16-70 : আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনিই তোমাদের ওফাত ঘটাবেন। তোমাদের কাউকেও কাউকেও উপনীত করা হবে জরাজীর্ণ বার্ধক্যে, যাতে করে তারা যা কিছু জানতো তা অজানা হয়ে যায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ জ্ঞানী এবং সক্ষম।
16-71 : জীবিকার দিক থেকে আল্লাহ তোমাদের কাউকেও কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থদের এতোটা দেয়না, যাতে তারা এ ক্ষেত্রে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করে?
16-72 : আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্যে জুড়ি এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন ছেলে - মেয়ে ও নাতি - নাতনি। তাছাড়া তিনি তোমাদের দিয়েছেন জীবিকার উপকরণসমূহ। তারপরও কি তোমরা মিথ্যার প্রতি ঈমান আনবে, আর আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি করবে কুফুরি?
16-73 : তারা কি ইবাদত করবে আল্লাহ ছাড়া এমন অক্ষমদের, যারা মহাকাশ এবং পৃথিবী থেকে রিযিক সরবরাহ করার কোনো শক্তিই রাখেনা?
16-74 : সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোনো মেছাল (সাদৃশ্য ও সমকক্ষ) সাব্যস্ত করোনা। আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানোনা।
16-75 : আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধীনস্থ এক দাসের, যে কোনো কিছুর উপর সামর্থ রাখেনা। আরো উপমা দিচ্ছেন এমন এক ব্যক্তির যাকে তিনি নিজ থেকে উত্তম রিযিক দিয়েছেন এবং সে তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, এই দুই ব্যক্তি কি সমতুল্য? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, বরং তাদের অধিকাংশই জানেনা।
16-76 : আল্লাহ আরো উপমা দিচ্ছেন দুই ব্যক্তির, তাদের একজন বোবা, সে কোনো কিছুরই সামর্থ রাখেনা এবং সে তার মনিবের বোঝা স্বরূপ। তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন, ভালো কিছু করে আসতে পারেনা, সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য, যে ন্যায়ের আদেশ করে এবং সিরাতুল মুসতাকিমের উপর চলে?
16-77 : মহাকাশ এবং পৃথিবীর গায়েবের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে। কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবার ব্যাপারটা তো চোখের পলকের মতো, বরং তার চাইতেও নিকটতর। আল্লাহ সব বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান।
16-78 : তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে আল্লাহই তোমাদের বের করে এনেছেন। তখন তোমরা কিছুই জানতে না। আর তিনিই তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি এবং হৃদয়, যাতে করে তোমরা (তাঁর) শোকর আদায় করো।
16-79 : তারা কি শূন্য আকাশে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি লক্ষ্য করে দেখেনি? আল্লাহ ছাড়া কেউ তাদের ধরে রাখেনা। এতে অনেকগুলো নিদর্শন রয়েছে মুমিনদের জন্যে।
16-80 : আল্লাহই তোমাদের জন্যে তোমাদের ঘরকে শান্তির আবাস বানিয়েছেন, তিনিই তোমাদের জন্যে পশুর চামড়া দিয়ে তাবুর ব্যবস্থা করেন, সেগুলোকে তোমরা হালকা মনে করো ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। তিনিই তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন সেগুলোর পশম, লোম ও কেশ থেকে স্বল্প কালের গৃহসামগ্রী এবং ব্যবহারের উপরকণ।
16-81 : আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেন সেগুলো থেকে তিনি তোমাদের জন্যে ছায়ার ব্যবস্থা করেন, তিনি তোমাদের জন্যে পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন, তিনি তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের যা তোমাদের রক্ষা করে তাপ থেকে এবং তিনি তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন বর্মের যা তোমাদের রক্ষা করে যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের জন্যে তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন যাতে করে তোমরা তাঁর প্রতি বিনত থাকো।
16-82 : এর পরেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে হে নবী! তোমার উপর স্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়া ছাড়া আর কোনো দায়দায়িত্ব নেই।
16-83 : তারা আল্লাহর নিয়ামত চিনতে পারে, তারপরেও সেগুলো অস্বীকার করে। আসলে তাদের অধিকাংশই কাফির।
16-84 : সেদিন তাদের কী অবস্থা হবে, যেদিন আমরা প্রত্যেক জাতি থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো, তারপর কাফিরদেরকে (কৈফিয়ত দেয়ার) কোনো অনুমতি দেয়া হবেনা এবং তাদের কোনো ওযরও গ্রহণ করা হবেনা।
16-85 : যালিমরা যখন আযাব দেখতে পাবে, তখন তাদের শাস্তি আর হালকা করা হবেনা এবং তাদেরকে কোনো অবকাশও দেয়া হবেনা।
16-86 : যারা আল্লাহর সাথে শরিকদার বানিয়েছিল, তারা যখন তাদের বানানো শরিকদারদের দেখবে, তখন বলবে: ‘প্রভু! এরাই আমাদের বানানো শরিকদার, তোমার পরিবর্তে আমরা এদেরকেই ডাকতাম।’ উত্তরে তারা বলবে: ‘অবশ্যি তোমরা মিথ্যাবাদী।’
16-87 : সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং যাদেরকে তারা উদ্ভাবন করে নিয়েছিল তারা সব উধাও হয়ে যাবে।
16-88 : যারা কুফুরি করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমরা তাদের আযাবের উপর আযাব বাড়িয়ে দেবো, কারণ তারা ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল।
16-89 : সেদিন আমরা প্রত্যেক জাতি থেকে তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী দাঁড় করাবো আর তোমাকে নিয়ে আসবো তাদের সবার বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে। আর আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি আল - কিতাব প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা সম্বলিত, আর সেটি হলো একটি পথ নির্দেশ, একটি অনুকম্পা এবং একটি সুসংবাদ মুসলিমদের জন্যে।
16-90 : আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন আদল (ন্যায়বিচার) ও ইহসান (উপকার) করার, আত্মীয় - স্বজনকে দান করার। আর নিষেধ করছেন ফাহেশা কাজ, অন্যায় কাজ এবং সীমালংঘন থেকে। তিনি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।
16-91 : তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করবে যখন পরস্পর অঙ্গীকার করো। তোমরা তোমাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করোনা আল্লাহকে জামিন বানিয়ে অঙ্গীকার মজবুত করার পর। তোমরা যা - ই করো না কেন আল্লাহ তা জানেন।
16-92 : তোমরা হয়োনা সেই নারীর মতো, যে মজবুত করে সূতা পাকানোর পর পাক খুলে সেগুলো নষ্ট করে দেয়। তোমরা তোমাদের শপথ পরস্পরকে ঠকানোর জন্যে ব্যবহার করে থাকো, যাতে করে একদল লোক অন্য দল থেকে অধিক লাভবান হয়। এর দ্বারা আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা করেন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা স্পষ্টভাবে তোমাদের জন্যে প্রকাশ করে দেবেন, যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে।
16-93 : আল্লাহ চাইলে তিনি তোমাদের এক উম্মত বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি যাকে চান বিপথগামী করেন এবং যাকে চান সঠিক পথ দেখান। তোমরা যা করছো সে বিষয়ে অবশ্যি তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
16-94 : তোমরা পরস্পরকে ঠকানোর জন্যে তোমাদের শপথকে ব্যবহার করোনা, যদি তা করো, তবে পা অবিচল হবার পর তা পিছলে যাবে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করার কারণে শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করবে, আর তোমাদের জন্যে মহা আযাব তো রয়েছেই।
16-95 : তোমরা আল্লাহর সাথে করা অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে যা রয়েছে সেটাই তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা জানতে।
16-96 : তোমাদের কাছে যা আছে তা ফুরিয়ে যায় আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা অফুরন্ত। যারা সবর অবলম্বন করে আমরা তাদের আমলের চাইতেও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তাদের দান করবো (অথবা আমরা তাদের সর্বোত্তম আমলের ভিত্তিতে তাদের পুরস্কার দেবো।)
16-97 : যে কোনো পুরুষ বা নারী আমলে সালেহ্ করবে মুমিন অবস্থায়, আমরা অবশ্যি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদেরকে তাদের আমলের চাইতে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবো।
16-98 : তুমি যখন কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে নেবে।
16-99 : যারা ঈমান আনে এবং তাদের প্রভুর উপর তাওয়াক্কুল করে তাদের উপর তার (শয়তানের) কোনো কর্তৃত্ব নেই।
16-100 : সে তো কর্তৃত্ব খাটায় কেবল তাদের উপর, যারা তাকে অলি (অভিভাবক) বানিয়ে নিয়েছে এবং যারা মুশরিক।
16-101 : আমরা যখন একটি আয়াতের বদলে আরেকটি আয়াত উপস্থিত করি, আর আল্লাহই অধিক জানেন তিনি কী নাযিল করেন, তখন তারা বলে: ‘তুমি তো একজন মিথ্যা রচনাকারী।’ বরং তাদেরই অধিকাংশ লোক জানেনা।
16-102 : তুমি বলো, তোমার প্রভুর কাছ থেকে তা (আল - কুরআন) সত্যসহ নাযিল করে রুহুল কুদুস (জিবরিল) ঈমানদারদের বিশ্বাসকে মজবুত করার জন্যে। তাছাড়া এটি একটি পথ নির্দেশ এবং সুসংবাদ মুসলিমদের জন্যে।
16-103 : আমরা জানি, তারা (তোমার সম্পর্কে) বলে: ‘তাকে শিক্ষা দেয় তো একজন মানুষ।১’ তারা যার প্রতি একথা আরোপ করে সে তো একজন অনারব, অথচ এ কুরআন সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়।
16-104 : যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনেনা, আল্লাহ তাদের সঠিক পথ দেখাননা। তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
16-105 : মিথ্যা রচনা করে তো তারা, যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনেনা। তারাই হলো মিথ্যাবাদী।
16-106 : যে কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফুরি করবে এবং কুফুরির জন্যে তার হৃদয়কে উদার রাখবে, তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তাদের জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব। তবে ঐ ব্যক্তি নয়, যাকে (কুফরির জন্যে) বাধ্য করা হয়েছে এবং যার হৃদয় ঈমানের উপর অটল।
16-107 : এর কারণ, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় এবং আল্লাহ কাফিরদের সঠিক পথ দেখান না।
16-108 : এরা সেইসব লোক, আল্লাহ যাদের হৃদয়ে, কানে এবং চোখে সীলমোহর মেরে দিয়েছেন। এরাই গাফিল।
16-109 : নিশ্চিতই আখিরাতে এরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
16-110 : যারা নির্যাতিত হবার পর হিজরত করেছে, তারপর জিহাদ করেছে এবং অটল থেকেছে, তোমার প্রভু এই অটল থাকার পর তাদের প্রতি অবশ্যি পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।
16-111 : স্মরণ করো, সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে আসবে এবং প্রত্যেককেই তার কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা।
16-112 : আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন একটি জনপদের, যেটি ছিলো নিরাপদ নিশ্চিন্ত। সেখানে আসতো সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ। তারপর সেই জনপদ আল্লাহর প্রতি কুফুরি করলো, ফলে তাদের কর্মকান্ডের জন্যে আল্লাহ তাদের আস্বাদন করান ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক।
16-113 : তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে তাদের পাকড়াও করে আযাব। আর তারা ছিলো যালিম।
16-114 : আল্লাহ তোমাদের যে হালাল ও উত্তম জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে তোমরা খাও এবং তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের শোকর আদায় করো যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করে থাকো।
16-115 : নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন মৃত প্রাণী, (প্রবাহিত) রক্ত, শুয়োরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে জবাই করা হয়েছে তা। তবে কেউ যদি অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং সে যদি বিদ্রোহ কিংবা সীমালংঘন না করে কিছু খেয়ে নেয় (তার দোষ হবেনা), নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাক্ষমাশীল দয়াময়।
16-116 : তোমাদের জবান মিথ্যারোপ করে বলে, এটা হালাল আর এটা হারাম, তোমরা এভাবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করোনা। যারা মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর উপর আরোপ করে তারা কখনো সফল হবেনা।
16-117 : তাদের ভোগ বিলাস সামান্য ক’দিনের এবং তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
16-118 : ইহুদিদের জন্যে আমরা সে সবই হারাম করেছিলাম, যা তোমার কাছে আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। আমরা তাদের প্রতি কোনো যুলুম করিনি, বরং তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।
16-119 : যারা অজ্ঞতাবশত পাপ কাজ করে, তারপরে তওবা করে এবং নিজেদেরকে এস্লাহ (সংশোধন) করে নেয়, নিশ্চয়ই তোমার প্রভু মহাক্ষমাশীল, দয়াময়।
16-120 : ইবরাহিম ছিলো একাই একটি উম্মত, আল্লাহর অনুগত, নিষ্ঠাবান এবং সে মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিলনা।
16-121 : সে ছিলো আল্লাহর নিয়ামতরাজির জন্যে কৃতজ্ঞ। তিনি তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং পরিচালিত করেছিলেন সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর।
16-122 : আমরা তাকে দুনিয়ায় দিয়েছিলাম কল্যাণ এবং নিশ্চয়ই আখিরাতেও সে থাকবে সালেহ্ লোকদের অন্তরভুক্ত।
16-123 : তারপর আমরা তোমাকে অহির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছি: তুমি নিষ্ঠাবান ইবরাহিমের মিল্লাতের (আদর্শের) অনুসরণ করো। সে মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিলনা।
16-124 : শনিবার পালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল তাদের জন্যে, যারা এ নিয়ে মতভেদ করতো। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করতো তোমার প্রভু অবশ্যি সে বিষয়ে কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন।
16-125 : তোমার প্রভুর পথের দিকে মানুষকে দাওয়াত দাও হিকমত এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করবে উত্তম পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু জানেন, কারা সঠিক পথ থেকে বিপথগামী হয়, আর সঠিক পথ প্রাপ্তদেরও তিনি ভালোভাবে জানেন।
16-126 : তোমরা যদি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে চাও, তবে ঠিক ততোখানি নেবে যতোটা শাস্তি তোমাদের দেয়া হয়েছে। তবে তোমরা যদি সহনশীল হও, সহনশীলদের জন্যে সেটা অবশ্যি উত্তম।
16-127 : সহনশীল হও, কারণ তোমার সহনশীলতা তো আল্লাহর সাহায্যেই পেয়েছো। তাদের জন্যে দু:খ করোনা এবং তাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনকেও সংকুচিত করোনা।
16-128 : আল্লাহ তাদের সাথেই রয়েছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা কল্যাণপরায়ণ।