আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 17, ইসরা (রাত্রি ভ্রমণ) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 17, ইসরা (রাত্রি ভ্রমণ)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১১১, রুকু সংখ্যা: ১২

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১মুহাম্মদ সা. এর মি’রাজ সংক্রান্ত সফরের সত্যতা ঘোষণা।
০২-০৮বনি ইসরাঈলিদের উত্থান পতনের ভিত্তি।
০৯-২১কুরআন সঠিক পথের দিশারি। মানুষের আমল রেকর্ড করা হয়। কেউ কারো পাপের বোঝা বইবেনা। কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আল্লাহর মূলনীতি। দুনিয়াপ্রার্থী ও আখিরাত প্রার্থীর পরিণতি।
২২-৩৮ইসলামি সমাজের আদর্শিক ভিত্তি ও মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ।
৩৯-৪৮শিরকের অসারতা ও তাওহীদের যুক্তি।
৪৯-৫২আখিরাত ও পুনরুত্থানের যুক্তি।
৫৩-৬০মানুষের প্রতি কতিপয় উপদেশ।
৬১-৭০মানুষের প্রতি ইবলিসের শত্রুতা। শয়তান কাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবেনা। বনি আদমের মর্যাদা।
৭১-৭৭কিয়ামতের দিন প্রতিটি মানবগোষ্ঠিকে তাদের নেতার নেতৃত্বে হাজির করা হবে। দুনিয়ায় যারা সত্যের ব্যাপারে অন্ধ আখিরাতেও হবে তারা অন্ধ।
৭৮-৭৯সালাতের সময়ের বর্ণনা।
৮০-৮৪রসূল সা. কর্তৃক রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রার্থনা। বাতিল বিলীন হবে, সত্যের জয় হবে। কুরআন মুমিনদের জন্য নিরাময় ও অনুকম্পা।
৮৫-১০০রূহ কি? জিন ইনসান মিলেও কুরআনের বাণী তৈরি করতে পারবে না। রসূলের কাছে কাফিরদের উদ্ভট দাবি। রিসালাত ও আখিরাতের পক্ষে যুক্তি।
১০১-১০৪মূসাকে নয়টি মুজিযা দেয়া হয়েছিল। ফিরাউনের ধ্বংস ও বনি ইসরাঈলের নিরাপত্তা।
১০৫-১১১কুরআন মহাসত্য কিতাব। কুরআন অল্প অল্প করে নাযিল করার কারণ। সত্য সন্ধানীরা কুরআন অধ্যয়ন করলে ঈমান আনে। আল্লাহ্ এক এবং সন্তান ও শরিক থেকে মুক্ত।
17-1 : মহাবিশ্বের ত্রুটিহীন মহাপরিচালক তিনি, যিনি তাঁর দাস (মুহাম্মদকে) রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসার দিকে, যেটির চারপাশের পরিবেশকে আমরা করে দিয়েছিলাম বরকতময়। এ ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিলো তাকে আমাদের নিদর্শনসমূহ দেখানো। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
17-2 : আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং সেটিকে বানিয়েছিলাম বনি ইসরাঈলের জন্যে পথপ্রদর্শক। তাতে আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম: ‘‘তোমরা আমাকে ছাড়া আর কাউকেও উকিল (কর্ম সম্পাদক) হিসেবে গ্রহণ করোনা।
17-3 : তোমরা তো তাদেরই বংশধর, যাদের আমরা নূহের সাথে (নৌযানে) আরোহণ করিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই সে ছিলো আমার এক কৃতজ্ঞ দাস।’’
17-4 : আমরা বনি ইসরাঈলকে কিতাবের মধ্যে ফায়সালা জানিয়েছিলাম, ‘অবশ্যি তোমরা পৃথিবীতে দুইবার ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং তোমরা চরম অহংকার ও দাম্ভিকতায় মেতে উঠবে।’
17-5 : যখন প্রথমটির সময় উপস্থিত হয়, তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম আমাদের একদল বান্দাকে, যারা ছিলো শক্তিশালী যোদ্ধা জাতি। তারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সব কিছু ধ্বংস করেছিল। আর এটি ছিলো এমন একটি ওয়াদা যা অবশ্যি কার্যকর হয়েছে।
17-6 : তারপর আমরা পুনরায় তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম তাদের উপর আর তোমাদের সাহায্য করেছিলাম ধন - মাল আর সন্তান - সন্তুতি দিয়ে এবং তোমাদের করে দিয়েছিলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ।
17-7 : (তোমাদের বলেছিলাম): ‘তোমরা যদি কল্যাণকর কাজ করো, তাতে তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণ হবে, আর যদি মন্দ কাজ করো, তাতে অমঙ্গল হবে তোমাদের নিজেদেরই।’ তারপর যখন পরবর্তী ওয়াদার সময়কাল এসে উপস্থিত হলো, তখনো আমরা আমাদের আরেক দল বান্দাকে পাঠালাম তোমাদের চেহারা নিরাশাচ্ছন্ন করার জন্যে এবং পুনরায় মসজিদে (বায়তুল মাকদাসে) প্রবেশ করার জন্যে যেভাবে প্রবেশ করেছিল প্রথমবার এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্যে।
17-8 : (তোমরা যদি তোমাদের প্রভুর হুকুম পালন করো) হয়তো তোমাদের প্রভু তোমাদের রহম করবেন। কিন্তু তোমরা যদি আবার আগের মতোই আচরণ করো, তবে আমরাও পুনরায় একই আচরণ করবো। আর আমরা জাহান্নামকে তৈরি করেছি কাফিরদের জন্যে কারাগার হিসাবে।
17-9 : নিশ্চয়ই এই কুরআন হিদায়াত করে (পরিচালিত করে) সেই দিকে, যা সঠিক ও সুষম। আর যেসব মুমিন আমলে সালেহ্ করে তাদের (এ কুরআন) সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।
17-10 : যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনেনা, অবশ্যি আমরা তাদের জন্যে প্রস্ত্তত করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব।
17-11 : মানুষ অমঙ্গলের জন্যে দোয়া (কামনা) করে, যেভাবে দোয়া করা উচিত মঙ্গলের জন্যে। মানুষ খুবই তাড়াহুড়া প্রিয়।
17-12 : আমরা রাত আর দিনকে দুটি নিদর্শন বানিয়েছি। আমরা রাতের নিদর্শনকে মুছে দেই এবং দিনের নিদর্শনকে আলোকিত করি, যেনো তোমরা তোমাদের প্রভুর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো আর যাতে করে তোমরা বছরের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। আমরা সবকিছু বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি।
17-13 : আমরা প্রতিটি মানুষের কর্ম তার গলায় ঝুলিয়ে রেখেছি এবং আমরা কিয়ামতের দিন তার জন্যে বের করবো একটি কিতাব (রেকর্ড, আমলমানা), সেটি সে পাবে উন্মুক্ত।
17-14 : (তাকে বলা হবে): ‘পড়ো তোমার কিতাব (রেকর্ড)। আজ তুমি নিজেই নিজের বিরুদ্ধে হিসাবের জন্যে যথেষ্ট।’
17-15 : যে ব্যক্তি সঠিক পথে চলে, সে নিজের কল্যাণের জন্যেই সঠিক পথে চলে। আর যে ভুল পথে চলে, সে নিজের অমঙ্গলের জন্যেই ভুল পথে চলে। কেউই কারো (পাপের) বোঝা বহন করবেনা। আমরা রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কোনো জাতিকে শাস্তি দেইনা।
17-16 : আমরা যখন কোনো জনপদকে (জাতিকে) হালাক (ধ্বংস) করে দেয়ার এরাদা (ইচ্ছা) করি, তখন সেখানকার সীমালংঘনকারীদের ক্ষমতায় বসাই। ফলে তারা সীমালংঘনপাপাচার করতে থাকে। তখন তাদের (ধ্বংস করে দেয়ার বিষয়ে) আমাদের ফায়সালা বাস্তব সম্মত হয়ে যায়। ফলে আমরা সেই জনপদকে ধ্বংস ও বিরান করে দেই।
17-17 : নূহের পরে আমরা কতো যে জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি! নিজ বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণ করার জন্যে তোমার প্রভুই কাফী ।
17-18 : যারা নগদ (দুনিয়া) পেতে চায়, আমরা এখানেই তাদের যাকে চাই এবং যা চাই নগদ দিয়ে থাকি। পরে তাদের জন্যে নির্ধারণ করি জাহান্নাম, তাতেই তারা প্রবেশ করবে নিন্দিত ও ধিকৃত অবস্থায়।
17-19 : আর যারা এরাদা (সংকল্প) করে আখিরাত পাওয়ার এবং তার জন্যে প্রচেষ্টা চালায় উপযুক্ত প্রচেষ্টা মুমিন অবস্থায়, তাদের প্রচেষ্টা অবশ্যি কবুল করা হবে।
17-20 : তোমার প্রভু তাঁর দান দ্বারা অবারিত সাহায্য করেন এদেরকেও এবং ওদেরকেও। তোমার প্রভুর দানের দরজা বন্ধ রাখা হয়না।
17-21 : দেখো, আমরা কিভাবে তাদের একদল লোককে আরেক দলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তবে আখিরাতই মর্যাদা ও দান লাভের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ।
17-22 : আল্লাহর সাথে আর কাউকেও ইলাহ্ বানিয়ে নিয়োনা। এমনটি করলে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।
17-23 : তোমার প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন: তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদত (আনুগত্য, দাসত্ব, উপাসনা ও প্রার্থনা) করোনা, ইবাদত করবে কেবল তাঁরই। পিতা - মাতার প্রতি ইহ্সান করবে, তাদের একজন কিংবা দু’জনই তোমার জীবদ্দশায় বৃদ্ধ বয়েসে এসে পৌঁছালে তাদেরকে ‘উহ্’ পর্যন্ত বলোনা এবং তাদেরকে ধমক দিয়োনা। তাদের সাথে কথা বলবে সম্মানের সাথে।
17-24 : দয়া - অনুকম্পা নিয়ে তাদের প্রতি কোমলতার ডানা অবনমিত করবে এবং তাদের জন্যে দোয়া করবে এভাবে: ‘আমার প্রভু! তাদের প্রতি রহম করো, যেভাবে শৈশবে তারা (দয়া, মায়া ও কোমলতার পরশে) আমাকে লালন পালন করেছে।’
17-25 : তোমাদের মনে কী আছে তা তোমাদের প্রভুই অধিক জানেন। তোমরা যদি সংশোধন পরায়ণ হয়ে থাকো, তবে তিনি আল্লাহমুখী লোকদের জন্য পরম ক্ষমাপরায়ণ।
17-26 : আত্মীয় - স্বজনকে তাদের হক প্রদান করবে এবং মিসকিন আর পথিকদেরকেও। কিছুতেই অপব্যয় করবেনা।
17-27 : অপব্যয়কারীরা অবশ্যি শয়তানের ভাই, আর শয়তান তো তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
17-28 : আর যদি তাদের থেকে মুখ ফেরাতেই হয় (অর্থাৎ দান করার সামর্থ যদি না থাকে), এবং যদি তোমার প্রভুর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় থেকে থাকো, তাহলে তাদের সাথে সহজ ও কোমলভাবে কথা বলবে।
17-29 : তোমার হাত গলায় বেঁধে রেখোনা এবং তা পুরোপুরি মেলেও দিয়োনা। তা করলে তুমি তিরস্কৃত এবং নি:স্ব হয়ে পড়বে।
17-30 : তোমার প্রভু যাকে ইচ্ছা রিযিক প্রসারিত করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন সীমিত। তিনি অবশ্যি তাঁর বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে খবর রাখেন এবং দৃষ্টি রাখেন।
17-31 : অভাবের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করোনা। আমরাই তাদের রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। তাদের হত্যা করা এক মহা অপরাধ।
17-32 : যিনার কাছেও যেয়োনা। এটা একটা ফাহেশা এবং নিকৃষ্ট পন্থা।
17-33 : আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন তোমরা তাকে হত্যা করোনা, তবে হক পন্থায় (ন্যায় বিচারের মাধ্যমে) হলে ভিন্ন কথা। কেউ যুলুমের শিকার হয়ে নিহত হলে আমরা তার অলিকে প্রতিকারের (কিসাস গ্রহণের) অধিকার দিয়েছি। কিন্তু সে যেনো হত্যার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে। কারণ, সে তো সহযোগিতা লাভ করবেই।
17-34 : উত্তম পন্থায় ছাড়া এতিমদের মাল সম্পদের কাছেও যেয়োনা যতোদিন না তারা বয়:প্রাপ্ত হয়। অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, কারণ অঙ্গীকার সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
17-35 : যখন মেপে দেবে মাপ পূর্ণ করবে এবং ওজন করবে সমান - সঠিক দাঁড়ি পাল্লায়। এটাই উত্তম এবং পরিণামের দিক থেকে কল্যাণকর।
17-36 : যে বিষয়ে তোমার এলেম নেই তার অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর এর প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
17-37 : জমিনে দম্ভ ভরে চলাফেরা করোনা, তুমি কখনো পদচাপে জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবেনা এবং উচ্চতায় পাহাড়ের সমানও পৌঁছাতে পারবেনা।
17-38 : এগুলোর মন্দ দিকগুলো তোমার প্রভুর কাছে খুবই ঘৃণ্য।
17-39 : তোমার প্রভু অহির মাধ্যমে তোমার কাছে যেসব হিকমাহ্ (জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কথা) নাযিল করেছেন এগুলো সেগুলোরই অংশ। তোমার প্রভুর সাথে আর কাউকেও ইলাহ্ বানিয়ে নিয়োনা। বানালে তুমি নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
17-40 : তোমাদের প্রভু কি তোমাদেরকে পুত্র সন্তানের জন্য মনোনীত করেছেন, আর তিনি নিজে কি ফেরেশতাদেরকে কন্যা সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছেন? তোমরা তো এক গুরুতর (অন্যায়) কথা বলে বেড়াচ্ছো।
17-41 : আমরা এ কুরআনে অনেক বিষয়ই বার বার বর্ণনা করেছি, যাতে করে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। কিন্তু এতে তাদের পালানোই বৃদ্ধি পেয়েছে।
17-42 : হে নবী! বলো: ‘তাঁর সাথে যদি আরো ইলাহ্ থাকতো, যেমন তারা বলে: তবে তো তারা আরশের মালিকের আসন দখল করার জন্যে পথ খুঁজতো।’
17-43 : তারা যা বলে তা থেকে তিনি পবিত্র এবং অনেক ঊর্ধ্বে, তিনি মহামর্যাদাবান।
17-44 : সপ্তাকাশ, এই পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যারাই আছে, সবাই তাঁরই তসবিহ্ করছে। এমন কোনো বস্ত্ত নেই যা তাঁর প্রশংসাসহ তাঁর তসবিহ্ করছেনা। তবে তোমরা তাদের তসবিহ্ অনুধাবন করতে পারোনা। নিশ্চয়ই তিনি অতীব সহনশীল মহাক্ষমাপরায়ণ।
17-45 : তুমি যখন কুরআন পাঠ করো, তখন আমরা তোমার আর যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখেনা, তাদের মধ্যে একটি গোপন পর্দা লাগিয়ে দেই।
17-46 : আমরা তাদের কলবের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি যেনো তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে, আর তাদের কানে সৃষ্টি করে দিয়েছি বধিরতা। তুমি যখন কুরআনে তোমার একমাত্র প্রভুর কথা স্মরণ করো: তখন তারা পেছনে ফিরে পালাতে থাকে।
17-47 : তারা যখন তোমার কথা কান পেতে শুনে তখন আমরা ভালোভাবেই জানি, তারা কেন কান পেতে শুনে এবং আমরা এটাও জানি, যালিমরা গোপন আলোচনার সময় বলে: ‘তোমরা তো এক জাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছো।’
17-48 : লক্ষ্য করে দেখো, তারা তোমার কী উপমা দিচ্ছে? তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, ফলে তারা আর পথ পাবেনা।
17-49 : তারা বলে: ‘আমরা হাড়গোড়ে পরিণত হলেও এবং চূর্ণ - বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টি হিসেবে পুনরুত্থিত হবো?’
17-50 : তুমি বলো: ‘‘তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহা,
17-51 : নতুবা এমন কিছুই হওনা কেন যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন (তবু তোমরা পুনরুত্থিত হবে)’’। তারা বলে: ‘কে আমাদের পুনরুত্থিত করবে?’ বলো: ‘তিনি পুনরুত্থিত করবেন, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার।’ তখন তারা তোমার সামনে মাথা নাড়ে এবং বলে: ‘সেটা অনুষ্ঠিত হবে কখন?’ বলো: ‘সম্ভবত সেটা খুবই কাছে।’
17-52 : সেদিন তিনি তোমাদের আহবান করবেন এবং তোমরা তাঁর প্রশংসাসহ তাঁর আহবানে সাড়া দেবে। তখন তোমরা মনে করবে, তোমরা সামান্য সময়ই অবস্থান করেছিলে।
17-53 : আমার দাসদের বলো: তারা যেনো সে রকম কথা বলে যা উত্তম। কারণ শয়তান তো তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে উস্কানি দিয়ে থাকে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট দুশমন।
17-54 : তোমাদের প্রভুই তোমাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। তিনি চাইলে তোমাদের রহম করবেন, কিংবা ইচ্ছা করলে তোমাদের আযাব দেবেন। (হে নবী!) আমরা তোমাকে তাদের উপর উকিল নিযুক্ত করিনি।
17-55 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারা আছে তোমার প্রভু তাদের ভালোভাবে জানেন। আমরা কিছু নবীকে কিছু নবীর উপর মর্যাদা দিয়েছি এবং দাউদকে দিয়েছি যবুর।
17-56 : বলো: তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর যাদের ইলাহ্ বলে ধারণা করছো, তাদের ডাকো, দেখবে তোমাদের দুঃখ - দুর্দশা দূর করার এবং তোমাদের অবস্থা পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই।
17-57 : তারা যাদের ডাকে তারা নিজেরাই তো তাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উসিলা সন্ধান করে যে, তাদের কে কতোটা তাঁর নিকটতর হতে পারে। তারাই তাঁর রহমত প্রত্যাশা করে এবং তাঁর আযাবের ভয়ে ভীত থাকে। কারণ, তোমার প্রভুর আযাব তো ভয়াবহ।
17-58 : এমন কোনো জনপদ নেই যাকে আমরা কিয়ামত কালের আগে হালাক করবোনা, কিংবা কঠিন আযাব দেবোনা। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
17-59 : আগেকার লোকদের নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করাটাই আমাদেরকে (তোমার কাছে) নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত রাখে। আমরা শিক্ষা গ্রহণের জন্যেই সামুদ জাতিকে উটনী দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তার প্রতি যুলুম করে। আমরা তো কেবল ভয় দেখানোর জন্যেই নিদর্শন পাঠাই।
17-60 : স্মরণ করো, যখন আমরা তোমাকে বলেছিলাম: ‘নিশ্চয়ই তোমার প্রভু মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন।’ আমরা (মেরাজ রাতে) তোমাকে যেসব দৃশ্য দেখিয়েছি, সেগুলো এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত গাছটি শুধুই মানুষের পরীক্ষার জন্যে। আমরা তাদের ভয় দেখালেও তা কেবল তাদের অবাধ্যতাই বাড়িয়ে দেয়।
17-61 : আমরা যখন ফেরেশতাদের বলেছিলাম: ‘সাজদা করো আদমকে।’ তখন তারা সাজদা করেছিল ইবলিস ছাড়া। সে বলেছিল: ‘আমি কি এমন একজনকে সাজদা করবো যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে?’
17-62 : সে আরো বলেছিল: ‘আপনি কি ভেবে দেখেছেন, আপনি এই ব্যক্তিকে আমার উপর মর্যাদা দিয়েছেন (সে কি এর যোগ্য ছিলো)? এখন কিয়ামত কাল পর্যন্ত যদি আপনি আমাকে সুযোগ দেন তাহলে তার বংশধরদের অল্প কিছু বাদে বাকিদের আমি বিপথগামী করে ফেলবো।’
17-63 : আল্লাহ্ বললেন: ‘‘ঠিক আছে, যা, তাদের মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে, জাহান্নামই হবে তাদের সবার প্রতিদান এবং পরিপূর্ণ দন্ড।
17-64 : চিৎকার করে তাদের যাকে পারিস পথভ্রষ্ট কর, তোর অশ্ববাহিনী এবং পদাতিক বাহিনী দিয়ে তাদের আক্রমণ কর, ধন মাল ও সন্তান - সন্তুতিতে তাদের শরিক হয়ে যা এবং তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে থাক।’’ কিন্তু শয়তান তাদের যে ওয়াদা দেয় তা তো প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
17-65 : (তিনি তাকে আরো বলেছেন:) ‘আমার দাসদের উপর তোর কোনো কর্তৃত্বই খাটবে না।’ উকিল হিসেব তোমার প্রভুই যথেষ্ট।
17-66 : তোমাদের প্রভু তো তিনি, যিনি সমুদ্রে তোমাদের জন্যে নৌযান পরিচালিত করেন, যাতে করে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের প্রতি দয়াময়।
17-67 : সমুদ্রে ভ্রমণকালে যখন তোমাদেরকে বিপদ আক্রমণ করে, তখন তোমরা তাঁকে ছাড়া আর যাদের ডেকে থাকো সব উধাও হয়ে যায়। অত:পর তিনি যখন তোমাদের উদ্ধার করে স্থলভাগে নিয়ে আসেন, তখন তোমরা (তাঁর দিক থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ খুবই অকৃতজ্ঞ।
17-68 : তোমরা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়ে গেছো যে, তিনি কোনো অঞ্চলকে তোমাদেরসহ ধ্বসিয়ে দেবেন না? কিংবা তোমাদের উপর শিলা বর্ষণকারী ঝড় পাঠাবেননা? তখন তোমরা তোমাদের জন্যে কোনো উকিলই (উদ্ধারকারীই) পাবেনা।
17-69 : নাকি তোমরা এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছো যে, তিনি আবার তোমাদের সমুদ্রে নিয়ে যাবেননা, এবং তোমাদের উপর প্রচন্ড ঝড় পাঠাবেননা, আর তোমাদের সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবেননা তোমাদের কুফুরির কারণে? তখন তোমরা আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারীই পাবেনা।
17-70 : আমরা বনি আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং স্থলে - সমুদ্রে চলাচলের জন্যে তাদের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম জীবিকা দিয়েছি এবং তাদেরকে আমাদের অনেক সৃষ্টির উপর দিয়েছি শ্রেষ্ঠত্ব।
17-71 : স্মরণ করো, সেদিন আমরা প্রতিটি জনসমষ্টিকে তাদের নেতার নেতৃত্বে ডাকবো। তখন যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পড়ে ফেলবে এবং তাদের প্রতি শস্যের অণুশীষ পরিমাণও যুলুম করা হবেনা।
17-72 : যে এখানে (পৃথিবীর জীবনে) থাকে অন্ধ, সে আখিরাতেও থাকবে অন্ধ এবং আরো অধিক পথভ্রান্ত।
17-73 : আমরা তোমার প্রতি যে অহি পাঠিয়েছি, তারা তা থেকে তোমার পদস্খলন ঘটানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটিই করেনি, যাতে করে তুমি আমার ব্যাপারে অহির বিপরীতে মিথ্যা রচনা করে নাও, তখনই তারা তোমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতো।
17-74 : আমরা যদি তোমাকে অটল অবিচল না রাখতাম, তাহলে তুমি তাদের দিকে কিছুটা হলেও প্রায় ঝুঁকে পড়তে।
17-75 : সে ক্ষেত্রে আমরা তোমাকে ইহজীবনে এবং মৃত্যুর পরে দ্বিগুণ শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতাম। তখন তুমি তোমার জন্যে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারীই পেতেনা।
17-76 : তারা তোমাকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল। সেটা করলে তোমার পরে তারাও সেখানে অল্প ক’দিনই টিকতে পারতো।
17-77 : আমার রসূলদের মধ্যে আমরা তোমার আগে যাদের পাঠিয়েছিলাম, তাদের ক্ষেত্রেও ছিলো এই একই নিয়ম। তুমি আমাদের নিয়মের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম পাবেনা।
17-78 : সালাত কায়েম করো সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার ঘনীভূত হওয়া পর্যন্ত (যুহর, আসর, মাগরিব, এশা) এবং ফজরে কুরআন পাঠ করো (অর্থাৎ আদায় করো ফজর সালাত)। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়।
17-79 : রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করো, এ সালাত তোমার জন্যে অতিরিক্ত কর্তব্য। অচিরেই তোমার প্রভু তোমাকে উঠিয়ে আনবেন প্রশংসিত স্থানে।
17-80 : আর বলো: ‘আমার প্রভু! আমাকে দাখিল করো সত্যের সাথে এবং আমাকে খারিজ (বের) করো সত্যের সাথে, আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে দাও সাহায্যকারী কর্তৃপক্ষ।’
17-81 : আরো বলো: ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা অপসারিত হয়েছে, আর মিথ্যা তো অপসারিত হবারই।’
17-82 : আমরা নাযিল করছি আল - কুরআন, যা মুমিনদের জন্যে শিফা (নিরাময়) এবং রহমত। এটি যালিমদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বাড়ায় না।
17-83 : আমরা যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে যায়। আর তাকে কোনো মন্দ স্পর্শ করলে সে হতাশ হয়ে পড়ে।
17-84 : বলো: ‘প্রত্যেকেই কাজ করে নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী, আর কার চলার পথ সবচাইতে নির্ভুল, সেটা তোমার প্রভুই অধিক জানেন।’
17-85 : তারা তোমার কাছে জানতে চাইছে রূহ সম্পর্কে, তুমি বলো: ‘রূহ আমার প্রভুর একটি আদেশ।’ আর তোমাদের খুব কমই এলেম দেয়া হয়েছে।
17-86 : আমরা চাইলে তোমার প্রতি যা অহি করেছি তা ফেরত নিয়ে যেতে পারতাম, তারপর তুমি এ বিষয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো উকিল পেতেনা।
17-87 : (তা যে ফেরত নেয়া হয়নি) সেটা তোমার প্রভুর রহমত। তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বিরাট।
17-88 : হে নবী! বলো: সমস্ত ইনসান ও জিন মিলে যদি এই কুরআনের মতো একটি কুরআন রচনার জন্যে জমা হয়, তারা অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবেনা, তারা যদি এ ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য করে, তবু নয়।
17-89 : আমরা এ কুরআনে প্রতিটি বিষয়ের উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অস্বীকার করে কুফুরি করেছে।
17-90 : তারা বলেছে: ‘‘আমরা কখনো তোমার কথায় ঈমান আনবোনা, যতোক্ষণ না আমাদের জন্যে জমিন থেকে একটি ঝরণা উৎসারিত করবে।
17-91 : অথবা তোমার এমন একটি বাগান হবে খেজুর এবং আঙ্গুরের, যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি প্রবাহিত করে দেবে নদ - নদী - নহর।
17-92 : কিংবা, তুমি যেমন বলে থাকো, সে মতে আকাশকে চূর্ণ - বিচূর্ণ করে আমাদের উপর ফেলবে, অথবা আল্লাহকে এবং ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে এনে উপস্থিত করাবে।
17-93 : কিংবা সোনা দিয়ে নির্মিত তোমার একটি ঘর হবে। অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, আর তোমার আকাশে আরোহণকেও আমরা কখনো মেনে নেবোনা, যতোক্ষণ না তুমি সেখান থেকে আমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব নাযিল করবে, যেটি আমরা পড়বো।’’ হে নবী! তুমি বলো: ‘ত্রুটিমুক্ত পবিত্র মহান আমার প্রভু, আমি কি একজন মানুষ রসূল ছাড়া আর কিছু?’
17-94 : মানুষের কাছে যখন আল হুদা (কিতাবনবী) আসে, তখন তাদেরকে ঈমান আনা থেকে বিরত রাখে তাদের এই বক্তব্য: ‘আল্লাহ্ কি একজন মানুষকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন?’
17-95 : (হে নবী!) বলো: ‘পৃথিবীতে যদি ফেরেশতারা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতো, তবে আমরা অবশ্যি আকাশ থেকে তাদের জন্যে কোনো ফেরেশতাকেই রসূল বানিয়ে পাঠাতাম।’
17-96 : (হে নবী!) বলো: আমার এবং তোমাদের মাঝে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর দাসদের বিষয়ে খবর রাখেন এবং দৃষ্টি রাখেন।
17-97 : আল্লাহ্ যাদের হিদায়াত করেন তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত হয়, আর তিনি যাদের বিপথগামী করেন, তাদের জন্যে তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) ছাড়া আর কোনো অলি (অভিভাবক) পাবেনা। কিয়ামতের দিন আমরা তাদেরকে উপুড় করে অন্ধ, বোবা ও কালা অবস্থায় হাশর করাবো। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম। যখনই (জাহান্নামের) আগুন স্তিমিত হয়ে আসবে, তখনই আবার আগুনের লেলিহান শিখা বাড়িয়ে দেয়া হবে।
17-98 : এটাই হলো তাদের উপযুক্ত সাজা, কারণ তারা আমাদের আয়াতের প্রতি কুফুরি করেছিল এবং বলেছিল: ‘আমরা হাড়গোড়ে পরিণত হলেও এবং চূর্ণ - বিচূর্ণ হয়ে গেলেও কি আমাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করে পুনরুত্থিত করা হবে?’
17-99 : তারা কি দেখেনা, যে মহান আল্লাহ মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি এগুলোর অনুরূপ সৃষ্টি করতে অবশ্যি সক্ষম? তিনি তাদের পুনরুত্থানের জন্যে একটি সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন, যে সময়টির আগমনের ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু যালিমরা তা অস্বীকার করবে বলে গোঁয়ার্তমি করেই যাচ্ছে।
17-100 : বলো : তোমরা যদি আমার প্রভুর দয়ার ভান্ডারের মালিকও হতে, তবু খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সেগুলো আঁকড়ে ধরে রাখতে। আসলে মানুষ বড় কৃপণ।
17-101 : আমরা মূসাকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। বনি ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখো যখন সে তাদের কাছে এসেছিল, তখন ফেরাউন তাকে বলেছিল: ‘হে মূসা! আমার সন্দেহ হচ্ছে তুমি একজন জাদুগ্রস্ত
17-102 : তখন মূসা বলেছিল: ‘তুমি তো জানো, এসব নিদর্শন সু্স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে মহাকাশ এবং পৃথিবীর প্রভু ছাড়া আর কেউ নাযিল করেনি। আর আমি মনে করি হে ফেরাউন, তোমার ধ্বংস আসন্ন।’
17-103 : তখন ফেরাউন তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার এরাদা (সংকল্প) করে। ফলে আমরা তাকে এবং তার সঙ্গি - সাথিদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।
17-104 : এরপর আমরা বনি ইসরাঈলকে বলেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে বসবাস করো। যখন আখিরাতের ওয়াদা বাস্তবায়িত হবে তখন আমরা তোমাদের সবাইকে একত্রে হাজির করবো।
17-105 : আমরা সত্য নিয়ে এ কুরআনকে নাযিল করেছি এবং সত্য নিয়েই তা নাযিল হয়েছে। আর আমরা তো তোমাকে পাঠিয়েছি কেবল একজন সুসংবাদদাতা এবং একজন সতর্ককারী হিসেবে।
17-106 : আমরা কুআনকে নাযিল করেছি ভাগে ভাগে, যাতে করে তুমি মানুষকে তা পাঠ করে জানাতে পারো বিরতি দিয়ে দিয়ে। এ জন্যে আমরা সেটিকে ধীর ধীরে ক্রমান্বয়ে নাযিল করেছি।
17-107 : হে নবী! বলো: ‘তোমরা এ কুরআনের প্রতি ঈমান আনো বা ঈমান না আনো, ইতিপূর্বে যাদের এলেম দেয়া হয়েছিল, তাদের কাছে যখন এটি পাঠ করা হয়, তখন তারা সাজদায় লুটিয়ে পড়ে।’
17-108 : তারা বলে: ‘আমাদের প্রভু পবিত্র, মহান। আমাদের প্রভুর ওয়াদা অবশ্যি কার্যকর হয়ে থাকে।
17-109 : তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটি (কুরআন) যখন তাদের প্রতি তিলাওয়াত করা হয়, তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে দেয়। (সাজদা)
17-110 : হে নবী! বলো: তোমরা তাঁকে ‘আল্লাহ্’ বলে ডাকো, কিংবা ‘রহমান’ বলে ডাকো, তোমরা যে নামেই তাঁকে ডাকো, সুন্দরতম নামসমূহ তো তাঁরই। তোমার সালাতে স্বর বেশি উঁচু করোনা, আর বেশি ক্ষীণও করোনা, এ দুয়ের মাঝখানে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।
17-111 : আর বলো: ‘‘সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর, যিনি সন্তান গ্রহণ করেননা। তাঁর কর্তৃত্বে কেউ অংশীদারও নেই। তাঁর কোনো অসহায়ত্বও নেই যে, তাঁর কোনো অলির প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্ব ঘোষণা করো।’’ (আল্লাহু আকবার)।