আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 20, তোয়াহা - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 20, তোয়াহা



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১৩৫, রুকু সংখ্যা: ০৮

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৮কুরআন দুর্ভাগ্যের কারণ নয়। এটি মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর কিতাব।
০৯-৪০মূসা আ. এর নবুয়্যত লাভ। তাঁকে মুজিযা প্রদান ও ফিরাউনের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ। মূসা আ. এর জন্ম ও প্রতিপালনে আল্লাহর অনুগ্রহ।
৪১-৭৬মূসা আ. এর প্রতি ফিরাউনকে দাওয়াত দানের নির্দেশ ও দাওয়াতের পন্থা। ফিরাউনকে দাওয়াত দান। মূসার সাথে ফিরাউনের বিতর্ক ও দ্বন্দ্ব। ফিরাউনের জাদুকররা ঈমান আনেন।
৭৭-১০৪ফিরাউনের কবল থেকে বনি ইসরাঈলের মুক্তি। বনি ইসরাঈল কর্তৃক আল্লাহর নবী মূসা আ. কে কষ্টদান, তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাদের হঠকারিতার ইতিহাস।
১০৫-১১৪কিয়ামত, হাশর ও বিচার। কুরআন আল্লাহর সতর্কবাণী।
১১৫-১২৩আদম আ. থেকেই মানুষের সাথে ইবলিসের দ্বন্দ্ব শুরু। শয়তান আদমকে কিভাবে প্রতারিত করেছিল? কারা দুর্ভাগা হবে ?
১২৪-১২৯যারা কুরআনকে উপেক্ষা করবে, তাদের হাশর।
১৩০-১৩৫রসূল সা. এর প্রতি আল্লাহর কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ।
20-1 : তোয়াহা!
20-2 : তুমি দুর্দশাগ্রস্ত হবে এ জন্যে আমরা তোমার প্রতি এই কুরআন নাযিল করিনি।
20-3 : বরং এটি একটি উপদেশবার্তা তার জন্যে, যে ভয় করে।
20-4 : এটি নাযিল হয়েছে তাঁর পক্ষ থেকে, যিনি সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবী এবং সুউঁচু মহাকাশ।
20-5 : তিনি দয়াময় - রহমান, আরশে সমাসীন।
20-6 : সবকিছুর মালিকই তিনি, যা কিছু আছে মহাকাশে, পৃথিবীতে এবং এ দুটির মধ্যবর্তী স্থানে, আর যা কিছু আছে মাটির নিচে।
20-7 : তুমি যদি উঁচু স্বরে কথা বলো, তবে (জেনে রাখো) তিনি যা গোপন এবং যা অব্যক্ত সবই জানেন।
20-8 : তিনি আল্লাহ্, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। সুন্দরতম নামসমূহ তাঁরই।
20-9 : তোমার কাছে মূসার সংবাদ এসেছে কি?
20-10 : সে যখন আগুন দেখেছিল, তখন তার পরিবারবর্গকে বলেছিল: ‘তোমরা এখানে থাকো, আমি আগুন দেখেছি, হয়তো সেখান থেকে আমি তোমাদের জন্যে কিছু জ্বলন্ত অংগার আনতে পারবো, অথবা আগুনের কাছে গেলে পথের দিশা পাবো।’
20-11 : তারপর সে যখন আগুনের কাছে এলো, তখন তাকে ডাক দিয়ে বলা হলো: ‘‘হে মূসা!
20-12 : আমি তোমার রব। তোমার জুতা খুলে ফেলো। তুমি পবিত্র তুয়া উপত্যাকায় রয়েছো।
20-13 : আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, সুতরাং যা অহি করা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনো।
20-14 : নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই। অতএব কেবল আমারই ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে কায়েম করো সালাত।
20-15 : কিয়ামত অবশ্যি আসবে, তার সময়কাল আমি গোপন রাখবো। (কিয়ামত এ জন্যে হবে) যাতে করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রচেষ্টা অনুযায়ী দেয়া যায় প্রতিদান।
20-16 : সুতরাং যারা কিয়ামতে ঈমান রাখেনা আর নিজ কামনা বাসনার অনুসরণ করে, তারা যেনো তোমাকে কিয়ামতের প্রতি ঈমান থেকে ফেরাতে না পারে। তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
20-17 : তোমার ডান হাতে ওটা কী হে মূসা?’’
20-18 : সে বললো: ‘এটি আমার লাঠি। এতে আমি ভর দেই। এটি দিয়ে আঘাত করে আমি আমার মেষপালের জন্যে গাছের পাতা ফেলি এবং এটি দিয়ে আমি অন্যান্য কাজও করে থাকি।’
20-19 : (আল্লাহ্) বললেন: ‘ হে মূসা, লাঠিটি নিক্ষেপ করো।’
20-20 : সে সেটি নিক্ষেপ করলো। সাথে সাথে তা সাপ হয়ে দৌড়াতে থাকলো।
20-21 : আল্লাহ্ বললেন: ‘তুমি এটিকে ধরো, ভয় পেয়োনা। আমরা এটিকে এটির পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেবো।’
20-22 : আর তোমার হাত তোমার বগলে রাখো। এটি বের হয়ে আসবে অনাবিল উজ্জ্বল হয়ে কোনো ক্ষতি ছাড়াই। এটি আরেকটি নিদর্শন।
20-23 : এর কারণ, আমরা তোমাকে দেখাবো আমাদের মহা নিদর্শনগুলোর কয়েকটি।
20-24 : তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে তাগুত হয়েছে (সীমালঙ্ঘন ও বিদ্রোহ করেছে)।
20-25 : সে বললো: ‘‘আমার প্রভু! আমার বুক প্রশস্ত করে দাও।
20-26 : আমার কাজ (দায়িত্ব পালন) আমার জন্যে সহজ করে দাও।
20-27 : আমার যবানের বন্ধন (জড়তা) দূর করে দাও,
20-28 : যাতে করে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
20-29 : আমার পরিবারের একজনকে আমার উযির বানিয়ে দাও,
20-30 : আমার ভাই হারূণকে দাও,
20-31 : তাকে দিয়ে আমার শক্তিকে মজবুত করে দাও।
20-32 : এবং তাকে আমার দায়িত্বের অংশীদার বানিয়ে দাও,
20-33 : যাতে করে আমরা তোমার বেশি বেশি তসবিহ করতে পারি,
20-34 : এবং বেশি বেশি তোমাকে যিকির করতে পারি
20-35 : নিশ্চয়ই তুমি আমাদের প্রতি দৃষ্টি দাতা।’’
20-36 : আল্লাহ্ বললেন: ‘‘মূসা! যা চেয়েছো সবই তোমাকে দেয়া হলো।
20-37 : এর আগেও একবার আমরা তোমার প্রতি ইহসান করেছি।
20-38 : যখন আমরা তোমার মাকে অহি (ইশারা) করেছিলাম যা অহি করার:
20-39 : (তাকে ইশারায় বলেছিলাম:) তুমি তাকে (মূসাকে) সিন্ধুকের মধ্যে রাখো, তারপর তাকে দরিযায় (নীলনদে) ভাসিয়ে দাও, যাতে করে দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেয়। তখন তাকে আমার দুশমন এবং তার দুশমন ঘরে তুলে নেবে। আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি মহববত ঢেলে দিয়েছিলাম, আর (এমন ব্যবস্থা করেছিলাম) যেনো তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’
20-40 : যখন তোমার বোন এসে তাদের বললো: আমি কি আপনাদের বলবো, কে ওকে সঠিকভাবে লালন পালন করতে পারবে? তখন আমরা তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে করে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুশ্চিন্তায় না থাকে। তারপর তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে, তখনো আমরা তোমাকে দুশ্চিন্তা থেকে নাজাত দিয়েছি এবং আমরা তোমার থেকে আরো অনেকগুলো পরীক্ষা নিয়েছি। এরপর কয়েক বছর তুমি মাদায়েনবাসীদের মধ্যে ছিলে। তারপর নির্ধারিত সময়ই তুমি (এখানে) উপস্থিত হয়েছো হে মূসা!
20-41 : আর আমি তোমাকে আমার নিজের (রিসালাত প্রদানের) জন্যে তৈরি করে নিয়েছি।
20-42 : তুমি এবং তোমার ভাই আমার দেয়া নিদর্শনগুলো নিয়ে (ফেরাউনের কাছে) যাও, আর তোমরা আমার যিকির - এ (আমার কথা উচ্চারণে) গাফলতি করোনা।
20-43 : তোমরা দুজনেই যাও ফেরাউনের কাছে, সে সীমালঙ্ঘন ও বিদ্রোহ করেছে।
20-44 : তোমরা তার সাথে কোমল ভাষায় কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, নয়তো ভয় পাবে।’’
20-45 : তারা বললো: ‘আমাদের প্রভু! আমরা আশংকা করছি, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে, কিংবা বিরুদ্ধাচরণে সীমালঙ্ঘন করবে।’
20-46 : তিনি বললেন: ‘তোমরা ভয় পেয়োনা। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি, শুনছি এবং দেখছি।’
20-47 : তোমরা তার কাছে যাও এবং বলো: ‘‘আমরা দুজন তোমার প্রভুর রসূল। সুতরাং বনি ইসরাঈলকে আমাদের সাথে পাঠাও। তাদের আর শাস্তি দিওনা। আমরা তোমার প্রভুর নিকট থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। যারা সঠিক পথের অনুসরণ করে তাদের প্রতি সালাম - শান্তি।
20-48 : আমাদেরকে অহি করে জানানো হয়েছে, আযাব তাদের জন্যে, যারা মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়।’’
20-49 : সে (ফেরাউন) বললো: ‘তোমাদের দুজনের রব কে, হে মূসা?’
20-50 : মূসা বললো: ‘আমাদের রব তিনি, যিনি প্রতিটি বস্ত্তকে তার সৃষ্টিগত আকৃতি দান করেছেন এবং চলার পথ নির্দেশ করেছেন।’
20-51 : সে বললো: ‘তাহলে অতীত হয়ে যাওয়া লোকদের অবস্থা কী ?’
20-52 : মূসা বললো: ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আমার প্রভুর কাছে কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি ভুলও করেন না, ভুলেও যাননা।’
20-53 : তিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্যে বিছানার মতো সমতল করে দিয়েছেন, তাতে তোমাদের চলাচলের জন্যে পথ করে দিয়েছেন এবং সেখানে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, আর তা থেকে আমরা উৎপন্ন করি বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ।
20-54 : তোমরা তা থেকে খাও এবং তাতে তোমাদের গবাদি পশু চরাও। বুদ্ধি - বিবেক সম্পন্ন লোকদের জন্যে এতে রয়েছে অনেক নিদর্শন।
20-55 : আমরা তা (মাটি) থেকেই তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদের ফেরত দেবো এবং তা থেকেই তোমাদের পুনরায় খারিজ (বের) করে আনবো।
20-56 : আমরা তাকে (ফেরাউনকে) আমাদের সব নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। কিন্তু সে (সেগুলোকে) মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং (ঈমান আনতে) অস্বীকার করে।
20-57 : সে বলেছিল: ‘‘হে মূসা! তুমি কি তোমার ম্যাজিকের সাহায্যে আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্যে এসেছো?
20-58 : আমরাও অনুরূপ ম্যাজিক উপস্থিত করবো। সুতরাং আমাদের এবং তোমার মাঝে একটি প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারণ করো, যেটি আমরাও লঙ্ঘন করবোনা, তুমিও লঙ্ঘন করবেনা। সেটি হতে হবে মধ্যবর্তী স্থান।’’
20-59 : মূসা বললো: ‘সেই প্রতিশ্রুত সময়টি হলো উৎসবের দিন এবং সেদিন পূর্বা‎হ্ন থেকেই জনগণকে সমবেত করা হবে।’
20-60 : ফেরাউন (একথার উপর) উঠে গেলো, তার সমস্ত কৌশল (ম্যাজিক ও ম্যাজেসিয়ানকে) জমা করলো। তারপর (নির্ধারিত দিনে) হাজির হলো।
20-61 : মূসা তাদের বললো: ‘ধ্বংস হও তোমরা, তোমরা মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর উপর আরোপ করোনা, তা করলে তিনি তোমাদের আযাব দিয়ে সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। (এ যাবত) যারাই মিথ্যা রচনা করেছে, তারাই ব্যর্থকাম হয়েছে।’
20-62 : (একথা শুনে) তারা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং গোপনে পরামর্শ করে।
20-63 : তারা (ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গ জনগণের উদ্দেশ্যে) বললো: ‘‘এরা দুই ভাই দুই পাক্কা ম্যাজেসিয়ান। তারা তাদের ম্যাজিকের সাহায্যে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায় এবং তোমাদের অনুকরণীয় জীবন পদ্ধতি ধ্বংস করে দিতে চায়।
20-64 : অতএব (হে ম্যাজেসিয়ানরা!) তোমরা তোমাদের সমস্ত কৌশল জমা করো, তারপর সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও। আজ যে জয়ী হবে, সে - ই হবে সফল।’’
20-65 : তারা (ম্যাজেসিয়ানরা) বললো: ‘হে মূসা! হয় আপনি নিক্ষেপ করুন, নয়তো পয়লা আমরাই নিক্ষেপ করি।’
20-66 : মূসা বললো: ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ করো।’ তাদের ম্যাজিকের প্রভাবে মূসার খেয়াল (মনে) হলো, তাদের সব দড়ি এবং লাঠি ছুটাছুটি করছে।
20-67 : ফলে, মূসা তার মনে কিছুটা ভয় অনুভব করলো।
20-68 : আমরা বললাম: ‘‘ভয় পেয়োনা, তুমিই থাকবে উপরে।
20-69 : তোমার ডান হাতে যা আছে সেটি নিক্ষেপ করো, তারা যা করেছে সেটি সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে সেটা তো ম্যাজিসিয়ানদের কৌশলমাত্র। ম্যাজেসিয়ানরা যা - ই উপস্থাপন করুক, সফল হয়না।’’
20-70 : (তাদের সমস্ত জাদুক্রিয়া নিষ্ক্রীয় হয়ে যেতে দেখে) ম্যাজিসিয়ানরা সবাই সাজদায় লুটিয়ে পড়লো। তারা বললো: ‘আমরা ঈমান আনলাম হারূণ এবং মূসার প্রভুর প্রতি।’
20-71 : (ফেরাউন) বললো: ‘আমার অনুমতি ছাড়াই তোরা মূসার প্রতি ঈমান এনেছিস? বুঝতে পেরেছি, সে তোদের গুরু, সে - ই তোদের ম্যাজিক শিখিয়েছে। আমি তোদের হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেবো এবং খেজুর গাছের কান্ডে তোদের শূলবিদ্ধ করবো, তখন তোরা জানতে পারবি, আমাদের দুইজনের (আমার আর মূসার) মধ্যে কে কঠোর এবং স্থায়ী শাস্তিদাতা?’
20-72 : তারা বললো: ‘‘আমাদের কাছে যেসব স্পষ্ট নিদর্শন প্রকাশ হয়েছে এবং যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার উপর আমরা তোমাকে প্রাধান্য দিতে পারিনা। তুমি যে ফায়সালা করতে চাও করো। তুমি তো কেবল এই দুনিয়ার জীবনের উপরই ফায়সালা করতে পারবে।
20-73 : আমরা আমাদের প্রভুর প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে করে তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন আর তুমি আমাদেরকে যে ম্যাজিক দেখাতে বাধ্য করেছো সেই অপরাধও। আল্লাহ্ই সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী।’’
20-74 : যে কেউ তার প্রভুর কাছে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হবে, তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না, আর (বাঁচার মতো) বাঁচবেওনা।
20-75 : আর যে কেউ তাঁর কাছে উপস্থিত হবে মুমিন হিসেবে আমলে সালেহ্ করে, তাদের জন্যে নির্ধারিত আছে উঁচু মর্যাদাসমূহ,
20-76 : চিরস্থায়ী জান্নাতে, যার নীচে দিয়ে বহমান রয়েছে নদ - নদী - নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। যারা আত্মোন্নয়ন - আত্মশুদ্ধি করবে, এ পুরস্কার পাবে তারাই।
20-77 : আমরা মূসাকে অহি করে নির্দেশ দিয়েছিলাম, আমার দাসদের নিয়ে তুমি রাতের বেলায় বের হবে এবং তাদের জন্যে সমুদ্রে একটি শুকনো পথ তৈরি করে নেবে। পেছন থেকে এসে তোমাকে ধরে ফেলবে - এই আশংকা করোনা এবং (সাগর পার হতে গিয়ে) ভয়ও পেয়োনা।
20-78 : ফেরাউন তার বাহিনী নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে, তারপর সমুদ্র তাদের ডুবিয়ে নেয় পুরোপুরি।
20-79 : ফেরাউন তার কওমকে বিপথগামী করে দিয়েছিল এবং সঠিক পথ দেখায়নি।
20-80 : হে বনি ইসরাঈল! তোমাদের দুশমনদের কবল থেকে আমরাই তোমাদের নাজাত দিয়েছি এবং আমরা তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তুর পাহাড়ের ডান পাশে আর তোমাদের প্রতি আমরা নাযিল করেছি মান্না এবং সালওয়া।
20-81 : (আমরা তোমাদের বলেছি:) আমাদের দেয়া উত্তম জীবিকা তোমরা খাও এবং এক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করোনা, করলে তোমাদের প্রতি আমার গজব নিশ্চিত হয়ে যাবে। আর যার প্রতিই আমার গজব নিশ্চিত হয়ে পড়ে, সে তো হয়ে যায় ধ্বংস।
20-82 : যে তওবা করে, ঈমান আনে, আমলে সালেহ্ করে এবং হিদায়াতের পথে চলে অবশ্যি আমি তার জন্যে অনন্ত ক্ষমাশীল।
20-83 : তোমার কওমকে সাথে আনার ক্ষেত্রে তোমাকে তাড়াহুড়ায় ফেললো কোন্ জিনিস হে মূসা?
20-84 : সে বললো: ‘তারা পেছনেই আছে আর আমি তাড়াহুড়া করে এসেছি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যে হে প্রভু!’
20-85 : তিনি বললেন: আমরা তো তোমার কওমকে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর। আর তাদের বিপথগামী করেছে সামেরি।
20-86 : তখন মূসা তার কওমের কাছে ফিরে এলো ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়ে। এসে তাদের বললো: ‘হে আমার কওম! তোমাদের প্রভু কি তোমাদের একটি উত্তম ওয়াদা দেননি? ওয়াদার সময়কাল কি তোমাদের কাছে সুদীর্ঘ হয়েছে, নাকি তোমরা চাও তোমাদের প্রভুর গজব (ক্রোধ) তোমাদের উপর হালাল হয়ে যাক? আর সে কারণেই কি তোমরা আমার প্রতি দেয়া ওয়াদা ভঙ্গ করলে?’
20-87 : তারা বললো: ‘‘আমরা তোমার প্রতি দেয়া ওয়াদা স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি। বরং আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল কওমের অলংকারের বোঝা। তখন আমরা সেগুলো অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করি। একইভাবে সামেরিও নিক্ষেপ করে।
20-88 : তখন সে (সামেরি) তাদের জন্যে গড়ে নিলো একটি গো - বাছুরের অবয়ব যা হাম্বা করছিল। তখন তারা বললো: ‘‘এটাই তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ্, কিন্তু সে (মূসা) ভুলে গেছে (তার এই ইলাহকে)।’’
20-89 : তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, সেটা তাদের কথায় সাড়া দেয়না এবং তাদের কোনো ক্ষতি কিংবা কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখেনা।
20-90 : ইতোপূর্বে হারূণও তাদের বলেছিল: ‘হে আমার কওম! এই গো - বাছুরের মাধ্যমে তো তোমাদের পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু পরম দয়াময়, সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ পালন করো।’
20-91 : জবাবে তারা বলেছিল: ‘মূসা আমাদের কাছে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এটিকে পূজা করা থেকে কিছুতেই বিরত হবোনা।’
20-92 : মূসা বললো: ‘‘হে হারূণ! তাদেরকে বিপথগামী হতে দেখা সত্ত্বেও কিসে আপনাকে বিরত রাখলো
20-93 : আমার অনুসরণ করা থেকে? তবে কি আপনি আমার আদেশ অমান্য করলেন?’’
20-94 : হারূণ বললো: ‘হে আমার মায়ের পেটের ভাই! তুমি আমার দাড়ি এবং চুল ধরোনা। আমি আশংকা করেছিলাম, তুমি বলবে: তুমি বনি ইসরাঈলিদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছো এবং আমার কথা রক্ষা করোনি।’
20-95 : মূসা বললো: ‘সামেরি! তোমার ব্যাপারটা কী?’
20-96 : সে বললো: ‘আমি এমন কিছু দেখেছি যা তারা দেখেনি। তখন আমি সেই রসূলের (জিবরিলের) পদচি‎হ্ন থেকে এক মুষ্টি (ধূলো) নিয়েছিলাম এবং তা নিক্ষেপ করেছিলাম, এ কাজটির জন্যে আমার নফস আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’
20-97 : মূসা বললো: ‘‘যাও, তোমার জন্যে জীবদ্দশায় এই শাস্তি নির্ধারিত হলো যে, তুমি সব সময় বলতে থাকবে: ‘আমাকে স্পর্শ করোনা,’ তোমার জন্যে নির্ধারিত হলো একটি নির্দিষ্টকাল, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবেনা। তোমার ইলাহ্টির (দেবতাটির) প্রতি তাকাও, তুমি যার পূজা করতে, আমরা অবশ্যি সেটিকে পুড়ে ফেলবো এবং বিক্ষিপ্ত করে সেটিকে নিক্ষেপ করবো সাগরে।
20-98 : নিশ্চয়ই তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র আল্লাহ্ যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। সব বিষয়ে তাঁর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত।’’
20-99 : এভাবেই আমরা তোমাকে অতীত সংবাদের বিবরণ দিচ্ছি, আর এ উদ্দেশ্যে আমরা তোমাকে দিয়েছি একটি যিকির (কুরআন)।
20-100 : যে এ গ্রন্থ থেকে মুখ ফেরাবে, সে কিয়ামতের দিন বহন করবে এক বিশাল বোঝা।
20-101 : চিরদিন তারা তাতেই থাকবে, কিয়ামতকালের এই বোঝা তাদের জন্যে হবে কতো যে নিকৃষ্ট বোঝা!
20-102 : যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং যেদিন আমরা অপরাধীদের দৃষ্টিহীন করে হাশর করবো,
20-103 : সেদিন তারা নিজেরা নিজেরা চুপিসারে বলাবলি করবে: ‘তোমরা তো (পৃথিবীতে) মাত্র দশদিন অবস্থান করেছিলে।’
20-104 : সেদিন তারা কী বলবে সেটা আমরা অধিক জানি, সেদিন তাদের সর্বাধিক উন্নত বুদ্ধির অধিকারী ব্যক্তি বলবে: ‘তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে।’
20-105 : তারা তোমার কাছে পর্বতমালা সম্পর্কে জানতে চাইছে। তুমি বলো: ‘আমার প্রভু সেগুলোকে সমূলে উঠিয়ে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন।’
20-106 : তারপর তিনি সেগুলোকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল মাঠে।
20-107 : তাতে তুমি কোনো প্রকার বক্রতা কিংবা উঁচু (নিচু) দেখবেনা।
20-108 : সেদিন তারা ঘোষণাকারীকে অনুসরণ করবে (ঘোষণাকারীর দিকে দৌড়াবে), কোনো প্রকার এদিক সেদিক করতে পারবেনা। রহমানের সামনে সমস্ত আওয়ায স্তব্ধ হয়ে যাবে। ফলে মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি আর কিছুই শুনতে পাবেনা।
20-109 : সেদিন শাফায়াতে কোনো কাজ হবেনা, তবে রহমান যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা শুনতে রাজি হবেন তার বিষয়টি আলাদা।
20-110 : তাদের সামনে পিছে যা কিছু আছে সবই তাঁর এলেমে আছে, কিন্তু তাদের এলেম তাঁকে আয়ত্ত করতে পারেনা।
20-111 : সেদিন চিরঞ্জীব, সর্ববস্ত্তর ধারকের উদ্দেশ্যে সবাই হবে নতশির। সেদিন ব্যর্থ হবে সে, যে বইয়ে আনবে যুলুম।
20-112 : মুমিন অবস্থায় যে কেউ আমলে সালেহ্ করবে, তার কোনোই আশংকা থাকবেনা অন্যায় বিচার কিংবা কোনো প্রকার ক্ষতির।
20-113 : এভাবেই, আমরা এটিকে নাযিল করেছি একটি আরবি কুরআন হিসেবে এবং বিভিন্নভাবে তাতে বর্ণনা করেছি সতর্ক বার্তা, যাতে করে তারা নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে অথবা এটি যেনো হয় তাদের জন্যে একটি উপদেশ।
20-114 : আল্লাহ্ অতীব মহান, প্রকৃত সম্রাট তিনিই। তোমার প্রতি অহি সম্পূর্ণ হবার আগেই তুমি তাড়াহুড়া করে কুরআন পাঠ করোনা। তুমি বলো: ‘আমার প্রভু! আমাকে সমৃদ্ধ করো জ্ঞানে।’
20-115 : ইতোপূর্বে আমরা আদমকে একটি নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল। আমরা তাকে পাইনি মজবুত সংকল্পের অধিকারী।
20-116 : আমরা যখন ফেরেশতাদের বলেছিলাম, তোমরা সাজদা করো আদমকে, তখন তারা সাজদা করলো, কিন্তু করেনি শুধু ইবলিস। সে অস্বীকার করলো (সাজদা করতে)।
20-117 : তখন আমরা বলেছিলাম, হে আদম! নিশ্চয়ই এ (ইবলিস) তোমার এবং তোমার স্ত্রীর শত্রু। সে যেনো তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে না দেয়। দিলে তোমরা পড়বে দুর্ভোগে।
20-118 : তোমার জন্যে নিয়ম করে দেয়া হলো, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবেনা বিবস্ত্রও হবেনা।
20-119 : তুমি সেখানে পিপাসার্তও হবেনা, রোদেও পুড়বেনা।
20-120 : তখন শয়তান তাকে অস্অসা দিলো। সে বললো: ‘হে আদম! আমি কি আপনাকে সংবাদ দেবো এক অমর গাছের এবং এক অক্ষয় সাম্রাজ্যের?’
20-121 : ফলে তারা দুজনে সেই গাছের ফল খেলো। তখন তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং তারা জান্নাতের পত্রপল্লব দিয়ে নিজেদের আবৃত করতে থাকলো। এভাবে আদম তার প্রভুর আদেশ অমান্য করলো এবং বিপথগামী হলো।
20-122 : তারপর তার প্রভু তাকে মনোনীত করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে প্রদান করেন সঠিক জীবন পদ্ধতি।
20-123 : তিনি তাদের বললেন: ‘‘তোমরা উভয়ে (আদম ও শয়তান) এক সাথে এখান থেকে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। আমার পক্ষ থেকে যখন তোমাদের কাছে হুদা (জীবন পদ্ধতি এবং নবীকিতাব) আসবে, তখন যে আমার হুদার অনুসরণ করবে, সে বিপথগামীও হবেনা, দুর্ভাগাও হবেনা।
20-124 : কিন্তু যে আমার যিকির (কিতাব) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জীবন যাপন পদ্ধতি হয়ে পড়বে সংকুচিত আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে হাশর করবো অন্ধ করে।’’
20-125 : তখন সে বলবে: ‘প্রভু! আমাকে অন্ধ করে কেন হাশর করেছো, আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তির অধিকারী?’
20-126 : তিনি বলবেন: ‘এভাবেই, তোমার কাছে এসেছিল আমাদের আয়াত, কিন্তু তুমি তা ভুলে থেকেছিলে, একইভাবে তুমিও বিস্মৃত হলে।’
20-127 : আমরা তাদেরকে এরকমই প্রতিফল দিয়ে থাকি যারা সীমালঙ্ঘন করে এবং তাদের প্রভুর আয়াতের প্রতি ঈমান আনেনা। আর আখিরাতের আযাব তো অবশ্যি আরো অধিক কঠোর এবং স্থায়ী।
20-128 : এ বিষয়টিও কি তাদেরকে হিদায়াতের পথে আনতে পারলোনা যে, তাদের আগে আমরা কতো মানব প্রজন্মকে হালাক করে দিয়েছি, তারাও তাদের বাসস্থানে চলাফেরা করতো। নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা বুদ্ধি বিবেকওয়ালা লোক।
20-129 : তোমার প্রভুর পূর্ব বাণী এবং সময় নির্দিষ্ট করা না থাকলে তাদেরকে দ্রুত শাস্তি দেয়া আবশ্যক হয়ে যেতো।
20-130 : সুতরাং তারা যা বলে, সে সম্পর্কে তুমি সবর অবলম্বন করো এবং তোমার প্রভুর হামদসহ তসবিহ করো সূর্যোদয়ের আগে আর সূর্যাস্তের আগে। এছাড়া রাত্রিকালে তাঁর তসবিহ করো আর দিনের দুইপ্রান্তে। আশা করা যায় এর ফলে (তুমি তোমার প্রভুর অনুগ্রহ লাভ করবে) এবং হয়ে যাবে সন্তুষ্ট।
20-131 : আমরা তাদের বিভিন্ন শ্রেণীর লোককে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য ও ভোগবিলাসের জন্যে যেসব সামগ্রী দিয়েছি তাদের পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে, তুমি সেদিকে চোখ তুলেও তাকিয়োনা। তোমার প্রভুর দেয়া রিযিকই উত্তম এবং স্থায়ী।
20-132 : তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তার উপর অবিচল থাকো, আমরা তোমার কাছে রিযিক চাইনা। আমরাই তোমাকে রিযিক দেই। পরিণামের শুভ ফল তো তাকওয়াবানদের জন্যেই।
20-133 : তারা বলে: ‘সে তার প্রভুর কাছ থেকে আমাদের কাছে কোনো নিদর্শন নিয়ে আসেনা কেন?’ তাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণ আসেনি, যা রয়েছে আগেকার কিতাবসমূহে?
20-134 : আমরা যদি (তাকে পাঠাবার) পূর্বেই তাদেরকে আযাব দিয়ে হালাক করে দিতাম, তবে অবশ্যি তারা বলতো: ‘আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের কাছে একজন রসূল পাঠালে না কেন? পাঠালে তো আমরা লাঞ্ছিত ও অপমাণিত হবার আগেই তোমার আয়াতের অনুসরণ করতাম।’
20-135 : হে নবী! বলো: প্রত্যেকেই প্রতীক্ষায় আছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা করো। তারপরই তোমরা জানতে পারবে কারা সরল সঠিক পথে আছে আর কারা প্রতিষ্ঠিত হিদায়াতের উপর?