আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 21, আল আম্বিয়া (নবীগণ) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 21, আল আম্বিয়া (নবীগণ)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১১২, রুকু সংখ্যা: ০৭

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১বিচারের দিন নিকটবর্তী।
০২-১০রসূল ও কিতাবের ব্যাপারে লোকদের আপত্তি। অথচ আল্লাহর কিতাবই তাদের মুক্তির পথ।
১১-২৯প্রত্যাখ্যানকারীরা ধ্বংস হয়েছে। আল্লাহ্ হক দিয়ে বাতিলকে আঘাত করেন, তার পরিণতিতে বাতিল বিদূরিত হয়ে যায়। একাধিক ইলাহ্ থাকলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেতো। আল্লাহর এককত্ব এবং শিরকের বাতুলতা।
৩০-৩৩জীবন সৃষ্টির তত্ত্ব।
৩৪-৩৫নবী এবং সব মানুষ মরণশীল।
৩৬-৫০নবীদের প্রতি সমাজের বিরূপ আচরণ। কাফিররা যালিম। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ সুবিচার করবেন।
৫১-৭৫নিজ পিতা ও জাতির কাছে ইবরাহিম আ. কর্তৃক তাওহীদের দাওয়াত। ইবরাহিম কর্তৃক তাওহীদের যুক্তি। ইবরাহিমকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ। আল্লাহ্ আগুনকে সুশীতল করে দেন। ইবরাহিমের বংশধরদের নেতৃত্ব প্রদান এবং তাদের জন্য কল্যাণের নির্দেশ। লুত জাতির অপকর্ম।
৭৬-৭৭নূহ আ.-কে তাঁর জাতির চক্রান্ত থেকে উদ্ধার।
৭৮-৮২দাউদ ও সুলাইমানের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ।
৮৩-৯৪আইউব, ইসমাঈল, ইদরিস, যুলকিফল, ইউনুস, যাকারিয়া এবং মরিয়মের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ। এরা সবাই ছিলেন একই আদর্শের অনুসারী।
৯৫-১১২ইয়াজুজ মাজুযের প্রকাশ। কিয়ামত নিকটবর্তী। আল্লাহ্ ছাড়া সব উপাস্য ও তাদের উপাসকরা জাহান্নামি। যারা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করে তারা থাকবে জান্নাতে। পৃথিবীর ওয়ারিশ হবে সালেহ্ লোকেরা। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ রহমতুল্লিল আলামিন।
21-1 : মানুষের হিসাব দেয়ার সময় তাদের নিকটেই চলে এসেছে, অথচ তারা গাফলতিতে তা উপেক্ষা করে চলেছে।
21-2 : তাদের কাছে যখনই তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে কোনো নতুন যিকির (কিতাব) আসে, তারা তা শুনে খেলাচ্ছলে।
21-3 : তাদের কলব থাকে অমনোযোগী। যালিমরা গোপন শলাপরামর্শ করে বলে: ‘এতো তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়। তোমরা কি দেখে শুনে ম্যাজিকের পিছে ছুটবে।’
21-4 : সে বললো: আমার প্রভু আসমান ও জমিনের সব কথাই জানেন। তিনি সব শুনেন, সব জানেন
21-5 : বরং তারা বলে: এগুলো হলো অলীক কল্পনা। হয় সে এগুলো উদ্ভাবন করে নিয়েছে, নয়তো সে একজন কবি। সুতরাং সে আমাদের কাছে কোনো নিদর্শন নিয়ে আসুক, যেভাবে নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিল পূর্বের রসূলরা।
21-6 : এদের আগেকার যেসব জনপদ আমরা হালাক করে দিয়েছিলাম তারা তো ঈমান আনেনি। তবে কি এরাও ঈমান আনবেনা?
21-7 : তোমার আগে আমরা যতো রসূলই পাঠিয়েছিলাম, তারা সবাই ছিলো মানুষ। তাদের কাছেই আমরা অহি পাঠাতাম। তোমরা যদি না জানো, তাহলে কিতাবধারীদের (জ্ঞানীদের) জিজ্ঞাসা করো।
21-8 : তাদেরকে আমরা এমন দেহ দেইনি যে, তাদের খাবার খেতে হতোনা, আর তারা চিরস্থায়ীও ছিলনা।
21-9 : তারপর তাদের প্রতি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করি। ফলে আমরা তাদেরকে এবং যাদেরকে চেয়েছি নাজাত দিয়েছি, আর সীমালঙ্ঘনকারীদের করেছি হালাক (ধ্বংস)।
21-10 : আমরা তোমাদের কাছে নাযিল করেছি একটি কিতাব। তাতে রয়েছে তোমাদের উপদেশ। তবু কি তোমরা আকল খাটাবেনা?
21-11 : আমরা কতো যে জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি, কারণ সেগুলোর অধিবাসীরা ছিলো যালিম। তাদের পরে আমরা সৃষ্টি করেছি অন্য লোকদের।
21-12 : তারা যখন আমাদের শাস্তির আগমন অনুভব করে, তখনই লোকালয় থেকে পালাতে শুরু করে।
21-13 : তাদের বলা হয়: পলায়ন করোনা, ফিরে আসো তোমাদের ভোগবিলাসের কাছে, তোমাদের আবাসে, যাতে করে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়।
21-14 : তখন তারা বলে: হায়, ধ্বংস আমাদের! বাস্তবিকই আমরা ছিলাম যালিম।
21-15 : তাদের এই আর্তনাদ চলতে থাকে, যতোক্ষণনা আমরা তাদের করে ছাড়ি কাটা ফসল আর নেভানো আগুনের মতো (ভুষি আর ছাই)
21-16 : আসমান, জমিন এবং এই উভয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে, সেগুলো আমরা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।
21-17 : আমরা যদি খেলার উপকরণ চাইতাম, তবে আমরা তা গ্রহণ করতাম আমাদের নিকট থেকেই। আমরা তা করিনি।
21-18 : বরং আমরা সত্যকে দিয়ে আঘাত হানি মিথ্যার উপর। তখন তা মিথ্যাকে চূর্ণ - বিচূর্ণ করে দেয়, আর তখন মিথ্যা হয়ে যায় অপসৃত। তোমরা যেসব কথা বানাচ্ছো, সেজন্যে তোমাদের দুর্ভোগ।
21-19 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই তাঁর। তাঁর কাছে যারা (যেসব ফেরশতা) রয়েছে তারা তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্যের ব্যাপারে অহংকার করেনা এবং ক্লান্তিও বোধ করেনা।
21-20 : তারা তাঁর তসবিহ করে, রাতদিন। কোনো প্রকার বিরাম ও শৈথিল্য তাদের নেই।
21-21 : ওরা মাটি দিয়ে যেসব ইলাহ্ (দেবতা) বানিয়েছে, সেগুলো কি মৃতকে জীবিত করতে পারে?
21-22 : যদি মহাকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ্ ছাড়া অনেক ইলাহ্ থাকতো তাহলে উভয়টাই ধ্বংস হয়ে যেতো। সুতরাং তাদের আরোপিত এসব অপবাদ থেকে আরশের মালিক আল্লাহ্ অনেক ঊর্ধ্বে, মহান ও পবিত্র।
21-23 : তাঁর কর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবেনা (প্রশ্ন করার কেউ নেই), অথচ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে।
21-24 : তারা কি তাঁর পরিবর্তে অন্যদেরকে ইলাহ্ গ্রহণ করেছে? হে নবী! বলো: ‘(তাদের ইলাহ্ হবার) প্রমাণ উপস্থিত করো। এটা (এই কুরআন) উপদেশ যারা আমার কালে আছে তাদের জন্যে, এবং উপদেশ তাদের জন্যে যারা ছিলো আমার আগে।’ বরং তাদের অধিকাংশই জানেনা প্রকৃত সত্য। ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
21-25 : তোমার আগে আমরা যে রসূলই পাঠিয়েছি, তার কাছে এই অহি করেছি যে: ‘অবশ্যি কোনো ইলাহ্ নেই আমি ছাড়া, সুতরাং তোমরা কেবল আমারই ইবাদত করো।’
21-26 : তারা বলে: ‘রহমান সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ সুবহানাল্লাহ, তিনি এ থেকে পবিত্র মহান। তারা (ফেরেশতারা) তো তাঁর সম্মানিত দাস।
21-27 : তারা তাঁকে অতিক্রম করে কোনো কথা বলেনা। তারা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে।
21-28 : তিনি তাদের সামনের ও পেছনের সবকিছু অবগত! তারা শাফায়াত করবেনা, তবে আল্লাহ্ যাদের ব্যাপারে সন্তুষ্ট। আর তারা সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকে তাঁর ভয়ে।
21-29 : তাদের কেউ যদি বলে: ‘আল্লাহ্ ছাড়া আমিও একজন ইলাহ্।’ আমাদের কাছে তার দন্ড হলো জাহান্নাম। যালিমদের আমরা এ রকম দন্ডই দিয়ে থাকি।
21-30 : যারা কুফুরি করে তারা কি ভেবে দেখেনা, মহাকাশ আর পৃথিবী তো প্রথমে ছিলো ওতপ্রোত জড়িত থাকা একটি পিন্ড। তারপর আমরা তাদের পৃথক করে দিয়েছি, আর সমস্ত প্রাণবানকেই আমরা সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তবু কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেনা।
21-31 : আর আমরা পৃথিবীতে সৃষ্টি করে দিয়েছি পাহাড় পর্বত, যাতে করে পৃথিবী তাদের নিয়ে এদিক সেদিক ঢলে না পড়ে। আর আমরা তাতে প্রশস্ত পথও সৃষ্টি করে দিয়েছি, যাতে তারা পৌঁছাতে পারে গন্তব্যস্থলে।
21-32 : আমরা আকাশকে বানিয়ে দিয়েছি সুরক্ষিত ছাদ। অথচ তারা আমাদের এসব নিদর্শনকে উপেক্ষা করে চলছে।
21-33 : তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন রাত আর দিন এবং সূর্য আর চাঁদ। এরা প্রত্যেকেই সাঁতরে চলছে নিজ নিজ কক্ষ পথে।
21-34 : (হে মুহাম্মদ!) তোমার আগেও আমরা কোনো মানুষকে চিরস্থায়ী করিনি। তাহলে (এখন দেখো) তোমারই যদি মৃত্যু হয়, তবে তারা কি হবে চিরজীবী?
21-35 : প্রত্যেক ব্যক্তিই গ্রহণ করবে মৃত্যুর স্বাদ। আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি, আর আমাদের কাছেই তোমাদের আনা হবে ফেরত।
21-36 : কাফিররা যখনই তোমাকে দেখে, তখনই তারা তোমাকে বিদ্রুপের পাত্র হিসেবে গ্রহণ করে। তারা বলে: ‘এই লোকটিই কি তোমাদের ইলাহ্দের (দেবদেবীর) সমালোচনা করে?’ অথচ তারাই (এই কাফিররাই) রহমানের যিকির - এর বিরোধিতা করে।
21-37 : মানুষকে তাড়াহুড়া প্রবণ করে সৃষ্টি করা হয়েছে। অচিরেই আমরা তোমাদেরকে আমাদের নিদর্শনাবলি দেখাবো। সুতরাং আমাকে তাড়াহুড়া করতে বলোনা।
21-38 : তারা বলে: ‘ওয়াদা করা দিনটি কখন আসবে, তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে বলো।’
21-39 : হায়, কাফিররা যদি জানতো, সে সময়টি যখন আসবে, তখন তারা তাদের সামনে এবং পেছনে থেকে আসা আগুন প্রতিরোধ করতে পারবেনা এবং তাদেরকে কোনো প্রকার সাহায্যও করা হবেনা।
21-40 : সেই সময়টি তাদের কাছে এসে পড়বে আকস্মিক এবং তা তাদেরকে হতভম্ব করে দেবে। তারা তা প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হবেনা এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবেনা।
21-41 : তোমার আগেকার রসূলদের সাথেও ঠাট্টা - বিদ্রুপ করা হয়েছিল, তারা যা নিয়ে ঠাট্টা - বিদ্রুপ করতো, পরিণামে সেই (আযাবই) বিদ্রুপকারীদের পরিবেষ্টন করে নেয়।
21-42 : হে নবী ! তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘রাতে এবং দিনে রহমানের পাকড়াও থেকে তোমাদের রক্ষা করবে কে?’ বরং তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের প্রভুর যিকির (আল কুরআন) থেকে।
21-43 : তাহলে কি আমরা ছাড়াও তাদের আরো ইলাহ্ আছে যারা তাদের রক্ষা করবে? তারা তো তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারবেনা, আর আমাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো সাহায্যকারীও থাকবেনা।
21-44 : বরং আমরাই তাদের এবং তাদের পূর্ব পুরুষদের ভোগবিলাসের উপকরণ দিয়েছি, তাছাড়া তাদের বয়সকালও হয়েছিল দীর্ঘ। তারা কি দেখেনা, আমরা তাদের দেশকে চারদিক থেকে সংকুচিত করে আনছি, তবু কি তারা বিজয়ী হবে?
21-45 : হে নবী! তাদের বলো: ‘আমি তোমাদের সতর্ক করছি অহির সাহায্যে।’ কিন্তু বধির লোকেরা কোনো ডাকই শুনেনা, যতোই তাদের করা হয় সতর্ক।
21-46 : তোমার প্রভুর কিছু আযাবও যদি তাদের স্পর্শ করে, তারা অবশ্যি বলে উঠবে: হায়, আমাদের ধ্বংস, আমরা অবশ্যি যালিম ছিলাম।
21-47 : কিয়ামতকালে আমরা স্থাপন করবো ন্যায়বিচারের দন্ড। তখন কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবেনা। কারো কর্ম যদি শস্য পরিমাণ ওজনেরও হয়, সেটাও আমরা ওজনের আওতায় নিয়ে আসবো। হিসাবগ্রহণকারী হিসেবে আমরাই যথেষ্ট।
21-48 : আমরা মূসা এবং হারূণকে দিয়েছিলাম ফুরকান, জ্যোতি এবং যিকির সেইসব মুত্তাকিদের জন্যে,
21-49 : যারা না দেখেও তাদের প্রভুকে ভয় করে এবং তারা কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত সন্ত্রস্ত।
21-50 : এ (কুরআন) এক কল্যাণময় উপদেশ, তবু কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?
21-51 : আমরা ইতোপূর্বে ইবরাহিমকে সত্য পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম, তার বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে অবগত।
21-52 : সে যখন তার পিতা এবং তার কওমকে বলেছিল: ‘এই ভাস্কর্যগুলো কী, যাদের প্রতি আপনারা নত হচ্ছেন?’
21-53 : জবাবে তারা বলেছিল: ‘আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখে এসেছি।’
21-54 : তখন সে বললো: ‘আপনারা এবং আপনাদের পূর্ব পুরুষরা রয়েছেন সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।’
21-55 : তারা বললো: ‘তুমি কি আমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছো, নাকি কৌতুক করছো?’
21-56 : সে বললো: ‘‘আপনাদের রব হলেন মহাকাশ ও পৃথিবীর রব, যিনি সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে আমি একজন সাক্ষী।
21-57 : আল্লাহর কসম, আপনারা চলে গেলে আমি অবশ্যি আপনাদের ভাস্কর্যগুলো সম্পর্কে কৌশল অবলম্বন করবো।’’
21-58 : তারপর সে ভাস্কর্যগুলোকে ভেঙ্গে চূর্ণ - বিচূর্ণ করে দিলো বড়টিকে বাদে, যাতে করে তারা তার কাছে ফিরে আসে।
21-59 : তারা এসে বললো: ‘আমাদের দেবদেবীদের সাথে এমন আচরণ করলো কে? সে তো নিশ্চয়ই একজন যালিম।’
21-60 : তারা বলাবলি করলো: ‘ইবরাহিম নামের এক যুবককে তাদের সমালোচনা করতে শুনেছি।’
21-61 : তারা বললো: ‘তাকে জনসম্মুখে নিয়ে আসো, যাতে করে সবাই তাকে দেখে।’
21-62 : (ইবরাহিম এলে) তারা জিজ্ঞেস করলো: ‘তুমিই কি আমাদের দেব - দেবীদের প্রতি এমন আচরণ করেছো, হে ইবরাহিম?’
21-63 : ইবরাহিম বললো: ‘বরং তাদের এই বড়টাই একাজ করেছে। তারা (তোমাদের দেবদেবীরা) কথা বলতে পারলে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখো।’
21-64 : তখন তারা মনে মনে আত্মসমালোচনা করলো এবং বললো: ‘তোমরাই তো যালিম (সীমালঙ্ঘনকারী)।’
21-65 : তাতে তাদের মাথা নত হয়ে গেলো। তারা বললো: ‘তুমি তো জানো, এরা কথা বলেনা।’
21-66 : ইবরাহিম বললো: ‘‘তবে কি আপনারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন সব জিনিসের ইবাদত (পূজা উপাসনা) করেন যারা আপনাদের কোনো উপকার করতে পারেনা এবং ক্ষতিও করতে পারেনা?
21-67 : ধিক, আপনাদের প্রতি এবং আল্লাহর পরিবর্তে আপনারা যাদের ইবাদত করেন তাদের প্রতি। আপনারা কি মোটেই বুদ্ধি বিবেক খাটান না?’’
21-68 : তখন তারা বললো: ‘তোমরা যদি কিছু করতে চাও, তবে একে আগুনে পোড়াও এবং তোমাদের দেব দেবীদের সাহায্য করো।’
21-69 : আমরা আগুনকে বললাম: ‘ হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্যে সুশীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’
21-70 : তারা তার ক্ষতি সাধনের এরাদা করেছিল, কিন্তু আমরা তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে ছেড়েছি।
21-71 : আর আমরা তাকে এবং লুতকে (তাদের কবল থেকে) নাজাত দিয়ে নিয়ে গেলাম সেই ভূ - খন্ডের দিকে, যে ভূ - খন্ডে আমরা বরকত দান করেছি জগদ্বাসীর জন্যে।
21-72 : আর আমরা তাকে সেই সাথে অতিরিক্ত হিসেবে দান করেছি (পুত্র) ইসহাক এবং (পৌত্র) ইয়াকুবকে। আর তাদের প্রত্যেককে আমরা বানিয়েছি দক্ষ পুণ্যবান।
21-73 : আর তাদেরকে আমরা বানিয়েছি ইমাম (নেতা), তারা আমাদের নির্দেশ মতো মানুষকে সঠিক পথ দেখাতো। আমরা তাদেরকে অহির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছি জনকল্যাণের কাজ করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে। তারা ছিলো আমার অনুগত দাস (উপাসক)।
21-74 : আর লুতকে আমরা দিয়েছিলাম হিকমাহ এবং এলেম। তাকেও আমরা নাজাত দিয়েছিলাম অশ্লীল কাজে লিপ্ত এক খবিছ জনপদ থেকে। তারা ছিলো এক নিকৃষ্ট সীমালঙ্ঘনকারী কওম।
21-75 : আর আমরা তাকে দাখিল করে নিয়েছিলাম আমাদের রহমতের মধ্যে। সেও ছিলো দক্ষ পুণ্যবানদের একজন।
21-76 : স্মরণ করো, এর আগে নূহ (আমাকে) ডেকেছিল। আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে আর তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করেছিলাম মহাসংকট থেকে।
21-77 : আমরা তাকে সাহায্য করেছিলাম এমন একটি কওমের বিরুদ্ধে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের আয়াত। তারা ছিলো একটি মন্দ কওম, ফলে আমরা তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম পানিতে।
21-78 : আরো স্মরণ করো দাউদ আর সুলাইমানের কথা। তারা যখন শস্যক্ষেত সম্পর্কে ফায়সালা দিচ্ছিল, তাতে রাতের বেলায় অন্য লোকের মেষপাল ঢুকে পড়েছিল, আমরা তাদের বিচার কাজ প্রত্যক্ষ করছিলাম।
21-79 : আমরা বিষয়টি সম্পর্কে সুলাইমানকে সঠিক বুঝ দিয়েছিলাম, তবে দুজনকেই দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা এবং এলেম। আমরা পাহাড় পর্বত আর পাখিদেরকে অধীনস্থ করে দিয়েছিলাম দাউদের সাথে তারা তসবিহ করতো। এসব কিছুর কর্তা ছিলাম আমরাই।
21-80 : আর তোমাদের জন্যে আমরা তাকে বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে করে তোমাদের যুদ্ধে তা তোমাদের রক্ষা করে। তারপরও কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবেনা?
21-81 : আর আমরা সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বাতাসকে, তা তার আদেশক্রমে বয়ে চলতো এমন দেশের দিকে, যেখানে আমরা কল্যাণ রেখেছি, আর প্রত্যেক বিষয়ে আমরা অবগত।
21-82 : আর কিছু শয়তান (জিন) তার জন্যে ডুবুরির কাজ করতো। এ ছাড়াও অন্যান্য কাজ করতো। আমরাই ছিলাম তাদের রক্ষক।
21-83 : আর স্মরণ করো আইউবের কথা, সে যখন তার প্রভুকে ডেকে বলেছিল: ‘প্রভু! আমার অসুখ হয়েছে, আর তুমি তো সব দয়াময়ের বড় দয়াময়।’
21-84 : তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম, তার অসুখ দূর করে দিয়েছিলাম, ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তার পরিবার পরিজন এবং তাদের সাথে অনুরূপ আরো দিয়েছিলাম আমার বিশেষ রহমত হিসেবে আর ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশ হিসেবে।
21-85 : আরো স্মরণ করো ইসমাঈল, ইদরিস এবং যুলকিফল - এর কথা। এরা সবাই ছিলো ধৈর্যশীল অবিচল।
21-86 : আমরা তাদের দাখিল করেছিলাম আমাদের রহমতের মধ্যে। তারা ছিলো যোগ্য ও পুণ্যবান।
21-87 : আরো স্মরণ করো মাছওয়ালার (ইউনুসের) কথা। সে গোস্বা নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল এবং ধারণা করেছিল আমরা তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেবোনা। কিন্তু পরে সে অন্ধকার থেকে আমাদের ডেকে বলেছিল: ‘(প্রভু!) তুমি ছাড়া কোনো উদ্ধারকারী নেই, তুমি পবিত্র, মহান। আমি তো যালিম, অন্যায়কারী।’
21-88 : ফলে আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছি এবং তাকে উদ্ধার করেছি দুশ্চিন্তা থেকে। এভাবেই আমরা নাজাত দিয়ে থাকি মুমিনদের।
21-89 : আরো স্মরণ করো যাকারিয়ার কথা। সে তার প্রভুকে ডেকে বলেছিল: ‘প্রভু! তুমি আমাকে (সন্তানহীন করে) রেখোনা, তুমিই সর্বোত্তম ওয়ারিশ।’
21-90 : ফলে আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছি এবং তার জন্যে দান করেছি ইয়াহিয়াকে, আর তার জন্যে তার স্ত্রীকে করে দিয়েছি (সন্তান ধারণের) যোগ্য। এরা সবাই ছিলো কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতাকারী। তারা আমাকে ডাকতো আশা ও ভয় নিয়ে এবং তারা ছিলো আমার প্রতি বিনয়ী।
21-91 : আর স্মরণ করো ঐ নারীর কথা, যে রক্ষা করেছিল তার সতীত্ব। তারপর আমরা তার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছি আমাদের রূহ। আর আমরা তাকে এবং তার পুত্রকে বানিয়েছি জগদ্বাসীর জন্যে একটি নিদর্শন।
21-92 : তোমাদের এই সব উম্মত মূলত একই উম্মত এবং আমিই তোমাদের প্রভু, সুতরাং তোমরা কেবল আমারই ইবাদত করো।
21-93 : কিন্তু তারা তাদের কার্যকলাপ তাদের মাঝে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। সবাইকেই ফিরিয়ে আনা হবে আমাদের কাছে।
21-94 : যে কেউ মুমিন অবস্থায় আমলে সালেহ্ করবে, তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবেনা। আমরা তা লিখে রাখছি।
21-95 : যে জনপদ আমরা হালাক করে দিয়েছি, তার জন্যে এটা নিষিদ্ধ যে, তার অধিবাসীরা আর ফিরে আসবেনা।
21-96 : এমন কি যখন ইয়াজুজ ও মাজুজ (জাতিকে) মুক্তি দেয়া হবে এবং তারা উঁচু ভূমি থেকে ছুটে আসবে,
21-97 : এবং প্রতিশ্রুত সময়টি নিকটে আসবে। তখন তা অকস্মাৎ সংঘটিত হতেই কাফিরদের চোখগুলো স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে: হায়, ধ্বংস আমাদের, আমরা তো এ বিষয়ে গাফলতির মধ্যে ছিলাম, বরং আমরা ছিলাম যালিম।
21-98 : হ্যাঁ, তোমরা নিজেরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত করছো তারা সবাই হবে জাহান্নামের জ্বালানি। তোমরা তাতে প্রবেশ করবে।
21-99 : তারা যদি ইলাহ্ হতো, তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করতোনা। তারা প্রত্যেকেই স্থায়ীভাবে থাকবে সেখানে।
21-100 : সেখানে থাকবে তাদের চিৎকার আর আর্তনাদ এবং তারা কিছুই শুনবেনা সেখানে।
21-101 : যাদের জন্যে আগে থেকেই আমাদের পক্ষ থেকে কল্যাণের ফায়সালা হয়েছে, তাদেরকে তা থেকে রাখা হবে দূরে।
21-102 : তারা তার (জাহান্নামের) ক্ষীণতম আওয়াযও শুনবেনা। তারা থাকবে তাদের কাঙ্ক্ষিত ভোগবিলাসে চিরকাল।
21-103 : মহাভীতি তাদেরকে চিন্তিত করবেনা। ফেরেশতারা তাদের সাথে মোলাকাত করে বলবে: ‘এটাই হলো আপনাদের সেইদিন, যার ওয়াদা আপনাদের দেয়া হয়েছিল।’
21-104 : সেদিন আমরা আকাশ গুটিয়ে ফেলবো, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দস্তাবেজ। যেভাবে আমরা প্রথমবার সৃষ্টি করেছি, সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করবো। ওয়াদা পালন করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এটা করেই ছাড়বো।
21-105 : আমরা যিকির (উপদেশ) - এর পর কিতাবে লিখে রেখেছি, নিশ্চয়ই পৃথিবীর ওয়ারিশ হবে আমার সালেহ্ (যোগ্য) দাসেরা।
21-106 : নিশ্চয়ই অনুগত - দাসদের জন্যে এতে রয়েছে বার্তা।
21-107 : জগদ্বাসীর জন্যে রহমত (অনুকম্পাও আশীর্বাদ) ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমরা তোমাকে রসূল বানিয়ে পাঠাইনি।
21-108 : (হে নবী!) বলো: ‘আমার কাছে অহি করা হয়েছে যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং তোমরা (তাঁর প্রতি) আত্মসমর্পণকারী হবে কি?’
21-109 : তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তুমি বলে দাও: ‘‘আমি তোমাদেরকে যথাযথ আহবান জানিয়েছি। আমি জানিনা, তোমাদেরকে যে বিষয়ে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, সেটা কি নিকটে নাকি দূরে।
21-110 : তিনিই জানেন প্রকাশ্য কথা এবং যা তোমরা গোপন করো তা।
21-111 : আমি জানিনা, হয়তো এটা তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা এবং কিছু সময়ের জন্যে জীবন উপভোগ।’’
21-112 : সে (রসূল) আরো বলেছে: ‘আমার প্রভু! তুমি সত্য ও ন্যায্য ফায়সালা করে দাও। (আর হে মানুষ!) আমাদের প্রভু দয়াময় - রহমান। তোমরা যা বলছো, সে বিষয়ে তাঁরই সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।’