আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 24, আন্ নূর (আলো) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 24, আন্ নূর (আলো)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৬৪, রুকু সংখ্যা: ০৯

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-১০ব্যভিচারের বিধান, অপবাদের বিধান, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগ সংক্রান্ত বিধান।
১১-২৬উম্মুল মুমিনিন আয়েশার রা. প্রতি অপবাদ আরোপের তীব্র নিন্দা, মুমিনদের সংশোধন, আয়েশার পবিত্রতা ঘোষণা।
২৭-৩১পর্দার বিধান।
৩২-৩৪দাসদাসী ও অভাবীদের বিয়ের উপদেশ।
৩৫আল্লাহ্ মহাবিশ্বের নূর। তাঁর নূরের উপমা।
৩৬-৪০মুমিনদের প্রশংসা, কাফিরদের আমল ও কর্মনীতির উপমা।
৪১-৫০আল্লাহর মহিমা ও কর্তৃত্ব। প্রতিটি প্রাণীর সৃষ্টি পানি থেকে। মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
৫১-৫৭মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। মুমিনদের খিলাফত দানে আল্লাহর ওয়াদা।
৫৮-৬০পর্দার আরো কিছু বিধান।
৬১যারা অনুমতি ছাড়া খেতে পারবে এবং যাদের ঘরে অনুমতি ছাড়া খেতে পারবে।
৬২-৬৪মুমিনদের গুণাবলি, মহাবিশ্বের সব কিছুর মালিক আল্লাহ।
24-1 : এটি একটি সূরা। আমরা এটি নাযিল করেছি এবং ফরয করে দিয়েছি এর বিধান। আর এতে নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ, যাতে করে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।
24-2 : জিনাকারী নারী এবং জিনাকারী পুরুষ তাদের প্রত্যেককে বেত্রাঘাত করো একশটি করে।১ আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে তাদের প্রতি দয়া যেনো তোমাদের প্রভাবিত না করে যদি তোমরা ঈমান রাখো আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি। আর তাদের শাস্তি দেখার জন্যে একদল মুমিন যেনো উপস্থিত থাকে।
24-3 : জিনাকারী বিয়ে করেনা কোনো জিনাকারিনী কিংবা মুশরিক নারী ছাড়া। আর কোনো জিনাকারিনীও বিয়ে করেনা কোনো জিনাকারী কিংবা মুশরিক ছাড়া। এটা হারাম করে দেয়া হলো মুমিনদের জন্যে।
24-4 : যারা সতী সাধ্বী নারীদের প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ আরোপ করে, তারপর চারজন সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং কখনো তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করবেনা। কারণ, তারা ফাসিক (সীমালঙ্ঘনকারী)।
24-5 : তবে যারা এমনটি করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাদের কথা ভিন্ন। কারণ আল্লাহ্ তো পরম ক্ষমাশীল অতীব দয়াবান।
24-6 : আর যারা নিজ স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করবে, অথচ নিজেরা ছাড়া তাদের আর কোনো সাক্ষী নেই, তাদের একজনের সাক্ষ্যই চার সাক্ষীর সমতুল্য হবে। এভাবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে, সে অবশ্যি সত্যবাদী।
24-7 : পঞ্চমবার বলবে, তার উপর আল্লাহর লা’নত নেমে আসুক যদি সে মিথ্যাবাদী হয়।
24-8 : আর তার স্ত্রীর দন্ডও রহিত হয়ে যাবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামী মিথ্যাবাদী।
24-9 : আর পঞ্চমবার বলবে, তার নিজের উপর আল্লাহর গজব নেমে আসুক যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়।
24-10 : (তোমাদের কেউই রক্ষা পেতোনা) যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না হতো এবং তিনি যদি তওবা কবুলকারী প্রজ্ঞাবান না হতেন।
24-11 : যারা এই অপবাদ রচনা করেছে২ তারা তো তোমাদেরই একটি গ্রুপ। এ ঘটনাকে তোমাদের জন্যে ক্ষতিকর মনে করোনা, বরং ওটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। এ মিথ্যা ঘটনা রটনাকারী প্রত্যেকের জন্যে তাই রয়েছে, যে যা পাপ কামাই করেছে। আর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি৩ এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে তার জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব।
24-12 : মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা যখন এই (অপবাদের) ঘটনা শুনলো, তখন কেন তারা নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা করলো না এবং কেন বললোনা: ‘এ তো এক সুস্পষ্ট অপবাদ।’
24-13 : তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী হাজির করলোনা? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তাই তারা আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী।
24-14 : তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমত না হতো, তাহলে তোমরা যে অন্যায়ে লিপ্ত হয়েছিলে তার জন্যে তোমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতে স্পর্শ করতো মহাশাস্তি।
24-15 : তোমরা মুখে মুখে তা ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করে যাচ্ছিলে যার কোনো এলেম তোমাদের ছিলনা। তোমরা এটাকে মনে করছিলে সহজ। অথচ এটা ছিলো এক জঘন্য বিষয় আল্লাহর কাছে।
24-16 : তোমরা এই (অপবাদ) শুনার সাথে সাথে কেন বললেনা: ‘এ বিষয়ে আমাদের কথা বলা উচিত নয়, আল্লাহ্ পবিত্র, এ - তো এক বিরাট অপবাদ।’
24-17 : আল্লাহ্ তোমাদের ওয়ায (উপদেশ) করছেন, তোমরা যেনো অনুরূপ কাজে আর কখনো জড়িত না হও, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
24-18 : আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে পরিষ্কারভাবে বয়ান করছেন আয়াতসমূহ। আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবান।
24-19 : যারা মুমিনদের মাঝে ফাহেশার প্রচার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব দুনিয়া এবং আখিরাতে। আল্লাহ্ জানেন, তোমরা জানোনা।
24-20 : (তোমরা রক্ষা পেতেনা) যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমত না হতো এবং আল্লাহ্ যদি কোমল ও দয়াবান না হতেন।
24-21 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা ইত্তেবা (অনুসরণ) করোনা শয়তানের পদাংক। যে কেউ ইত্তেবা করবে শয়তানের পদাংকের, সে জেনে রাখুক, শয়তান নিশ্চয়ই নির্দেশ দেয় ফাহেশা এবং গর্হিত কাজের। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমত না হতো, তাহলে তোমাদের কেউ কখনো পবিত্র থাকতে পারতোনা। আল্লাহ্ই পবিত্র রাখেন যাকে ইচ্ছা করেন। আল্লাহ্ সব শুনেন, সব জানেন।
24-22 : তোমাদের মধ্যে যারা ধন - মালে প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেনো কসম খেয়ে না বলে যে, তারা আত্মীয় - স্বজন, মিসকিন (অভাবী) এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কিছুই দেবেনা। তারা যেনো তাদের ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের দোষ - ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাওনা যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করে দিন? আর আল্লাহ্ তো পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।
24-23 : যারা সতী সাধ্বী সরলমনা ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তাদের প্রতি লা’নত বর্ষিত হয়েছে দুনিয়া এবং আখিরাতে, আর তাদের জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব।
24-24 : যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের জবান, তাদের হাত, তাদের পা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে,
24-25 : সেদিন আল্লাহ্ তাদের পুরোপুরি দেবেন তাদের সত্যিকার প্রতিফল এবং (তখন) তারা জানতে পারবে আল্লাহ্ই প্রকৃত সত্য, স্পষ্টভাষী।
24-26 : খবিছ নারীরা খবিছ পুরুষদের জন্যে এবং খবিছ পুরুষরা খবিছ নারীদের জন্যে। আর পবিত্র নারীরা পবিত্র পুরুষদের জন্যে এবং পবিত্র পুরুষরা পবিত্র নারীদের জন্যে। লোকেরা যা বলে তা থেকে এরা পবিত্র। তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিযিক।
24-27 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে অনুমতি না নিয়ে এবং ঘরবাসীদের সালাম না দিয়ে ঢুকে পড়োনা। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম নিয়ম। আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।
24-28 : যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও, তাহলে তোমরা সে ঘরে প্রবেশ করোনা যতোক্ষণ না তোমাদের অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদের ফিরে যেতে বলা হয়, তবে ফিরে যাও। এটাই তোমাদের জন্যে পবিত্রতম পন্থা। আল্লাহ্ জ্ঞাত তোমরা যা আমল করো।
24-29 : এমন ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে তোমাদের কোনো দোষ হবেনা, যে ঘরে কেউ বসবাস করেনা যদি সেখানে তোমাদের মাল সামগ্রী থাকে। তোমরা কী প্রকাশ করো আর কী গোপন করো তা আল্লাহ্ জানেন।
24-30 : হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলো: তারা যেনো (নারীদের থেকে) নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং হিফাযত করে নিজেদের যৌন জীবনকে। এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম পন্থা। তারা যা করে আল্লাহ্ সে বিষয়ে ভালোভাবে অবহিত।
24-31 : আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেনো (পুরুষদের থেকে) নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং হিফাযত করে নিজেদের যৌন জীবন। যা সাধারণত প্রকাশ থাকে, তা ছাড়া নিজেদের যীনত (সৌন্দর্য) যেনো তারা প্রকাশ না করে। তাদের চাদর (বা ওড়না) দিয়ে যেনো তাদের গলা এবং বক্ষ ঢেকে রাখে। তারা যেনো তাদের যীনত (সৌন্দর্য) প্রকাশ না করে এদের সম্মুখে ছাড়া: তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনপুত, আপন নারীকুল, তাদের মালিকানাধীন দাস - দাসী, যৌন কামনাহীন পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গসমূহ সম্পর্কে চেতনাহীন শিশু। তারা যেনো তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পা ফেলে না চলে। হে মুমিনরা! তোমরা সবাই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা অর্জন করো সফলতা।
24-32 : তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী নেই এবং যাদের স্ত্রী নেই, তাদের বিয়ে দিয়ে দাও, আর তোমাদের দাস দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও। তারা যদি অভাবী হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন। আল্লাহ্ উদার, জ্ঞানী।
24-33 : যাদের বিয়ে করার (আর্থিক) সামর্থ নেই, তাদেরকে আল্লাহ্ তাঁর অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করা পর্যন্ত তারা যেনো সংযম অবলম্বন করে। তোমাদের দাসদাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তি করতে চাইলে তোমরা তাদের সাথে লিখিত চুক্তি করে নাও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ দেখতে পাও। আর আল্লাহ্ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তাদের দান করো। পার্থিব জীবনের (অর্থ) লোভে তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করোনা যদি তারা তাদের সতীত্ব রক্ষা করতে চায়। আর কেউ তাদেরকে বাধ্য করলে, বাধ্য হওয়াদের ব্যাপারে আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
24-34 : আমরা তোমাদের কাছে নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং তোমাদের আগেকার লোকদের উদাহরণ আর সতর্ক সচেতন লোকদের জন্যে উপদেশ।
24-35 : আল্লাহ্ মহাকাশ এবং পৃথিবীর নূর। তাঁর নূরের উপমা হলো একটি প্রদীপ ঘর। তাতে আছে প্রদীপ। প্রদীপটি স্থাপিত একটি কাঁচের পরিবেষ্টনীর মধ্যে। কাঁচের পরিবেষ্টনীটি যেনো উজ্জ্বল নক্ষত্র। সেটি জ্বালানো হয় পবিত্র যয়তুন গাছের তেল দিয়ে। সেটি পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়। আগুন সেটিকে স্পর্শ না করলেও যেনো সেটির তেলই ছড়াচ্ছে উজ্জ্বল আলো। নূরের উপর নূর। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর নূরের দিকে। আল্লাহ্ মানুষের জন্যে এভাবেই দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন। আল্লাহ্ সব বিষয়ে জ্ঞানী।
24-36 : সেইসব ঘর, যেসব ঘরে আল্লাহ্ তাঁর নাম সমুন্নত ও স্মরণ করতে অনুমতি দিয়েছেন, সকাল - সন্ধ্যায় সেগুলোতে তাঁর তসবিহ করে
24-37 : সেইসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা - বাণিজ্য ও বেচা - কেনা বিরত রাখেনা আল্লাহর যিকির, সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে। তারা ভয় করে সেই দিনটিকে যেদিন মানুষের অন্তর আর চোখ উল্টে যাবে।
24-38 : যাতে করে আল্লাহ্ তাদের আমলের উত্তম পুরস্কার তাদের দিতে পারেন এবং বৃদ্ধি করে দিতে পারেন তাঁর অনুগ্রহ থেকে। আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা রিযিক দিয়ে থাকেন বিনা হিসাবে।
24-39 : আর যারা কুফুরি করে, তাদের আমলের উপমা হলো মরুভূমির মরীচিকা, পীপাসার্ত ব্যক্তি যাকে মনে করে পানি। যখন সে সেখানে এসে পৌঁছে, কিছুই পায়না। সে তো সেখানে পায় কেবল আল্লাহকে। তিনি তাকে তার কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দিয়ে দেবেন, আর আল্লাহ্ দ্রুত হিসাবগ্রহণকারী।
24-40 : অথবা (তাদের আমলের) উপমা হলো গভীর সমুদ্রের অন্ধকাররাশি, যাকে ঢেকে রাখে ঢেউয়ের উপর ঢেউ, তার উপর কালো মেঘপুঞ্জ। অন্ধকার রাশির স্তর একটির উপর একটি। সে যখন তার হাত বের করে, আদৌ দেখতে পায় না। আল্লাহ্ যাকে নূর দান করেন না, তার কোনো নূর নেই।
24-41 : তুমি দেখোনা মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে তারা সবাই এবং উড়ন্ত পাখিকুল তসবিহ করছে আল্লাহর। তারা প্রত্যেকেই জেনেছে তার সালাত (ইবাদত) ও তসবিহর পদ্ধতি। তারা যা করে আল্লাহ্ তা জ্ঞাত আছেন।
24-42 : মহাকাশ ও পৃথিবীর কর্তৃত্ব আল্লাহর এবং আল্লাহর কাছেই হবে সবার প্রত্যাবর্তন।
24-43 : তুমি কি দেখোনা, আল্লাহ্ই তো পরিচালিত করেন মেঘমালাকে, তারপর সেগুলোকে একত্র করেন, অত:পর পুঞ্জীভুত করেন, তারপর তুমি দেখতে পাও সেগুলোর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে বৃষ্টির পানি। আকাশের জমে যাওয়া মেঘস্তূপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা, আর তা দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা থেকে রক্ষা করেন উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে। তার বিদ্যুতের ঝলক দৃষ্টি প্রায় কেড়ে নেয়।
24-44 : আল্লাহ্ই পরিবর্তন ঘটান রাত আর দিনের। দৃষ্টিবান লোকদের জন্যে এতে রয়েছে একটি শিক্ষা।
24-45 : আল্লাহ্ প্রতিটি জীবকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। তাদের কিছু জীব চলে পেটে ভর দিয়ে, কিছু চলে দুই পায়ে এবং কিছু চলে চার পায়ে। আল্লাহ্ সৃষ্টি করেন যা তিনি চান। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সব বিষয়ে শক্তিমান।
24-46 : নিশ্চয়ই আমরা নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত করেন সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে।
24-47 : তারা বলে: ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলের প্রতি আর আমরা আনুগত্য মেনে নিলাম।’ কিন্তু এর পরই তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আসলে তারা মুমিন নয়।
24-48 : তাদেরকে যখন আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের দিকে ডাকা হয় তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেয়ার জন্যে, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়
24-49 : আর যদি তাদের প্রাপ্য কোনো অধিকারের বিষয় হয়, তখন তারা বিনীত হয়ে রসূলের কাছে ছুটে আসে।
24-50 : তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে, নাকি তারা সংশয়ে নিমজ্জিত? আর নাকি তারা ভয় করে যে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন? আসল কথা হলো তারা যালিম।
24-51 : মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ্আল্লাহর রসূলের দিকে ডাকা হয় তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেয়ার জন্যে তখন তাদের কথা একটাই হয়ে থাকে যে, ‘আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।’ এসব লোকই হবে সফলকাম।
24-52 : যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের ইতায়াত (আনুগত্য) করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে আত্মরক্ষা করে, তারাই অর্জন করবে সাফল্য।
24-53 : তারা (মুনাফিকরা) শক্তভাবে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলে, তুমি তাদের নির্দেশ দিলে তারা অবশ্যি (যুদ্ধে) বের হবে। বলো: তোমরা কসম খেয়োনা, তোমাদের থেকে প্রচলিত আনুগ্যতই কাম্য। তোমরা যা করো সে বিষয়ে আল্লাহ্ গভীরভাবে অবহিত।
24-54 : হে নবী! বলো: তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো এই রসূলের। যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার (রসূলের) প্রতি অর্পিত দায়িত্বের জন্যে সে - ই দায়ী হবে, আর তোমরা দায়ী হবে তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্যে। তোমরা যদি আনুগত্য করো, তবেই সঠিক পথ পাবে। স্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়া ছাড়া আমাদের রসূলের উপর আর কোনো দায়িত্ব নেই।
24-55 : তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদেরকে আল্লাহ্ ওয়াদা দিচ্ছেন, তিনি তাদের ভূ - খন্ডে প্রতিনিধিত্ব (রাষ্ট্রক্ষমতা) দান করবেন, যেমন তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের। তিনি তাদের জন্যে প্রতিষ্ঠিতি করে দেবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তাদেরকে ত্রাস ও ভীতির বদলে দেবেন শান্তি ও নিরাপত্তা। তখন তারা কেবল আমারই দাসত্ব করবে এবং আমার সাথে কাউকেও শরিক করবেনা। তবে এরপরও যারা কুফুরি করবে তারা হবে ফাসিক (সীমালঙ্ঘনকারী পাপিষ্ঠ)।
24-56 : তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আনুগত্য করো এই রসূলের, আশা করা যায় তোমরা অনুকম্পা লাভ করবে।
24-57 : তোমরা পৃথিবীতে কাফিরদের কখনো প্রবল পরাক্রমশালী মনে করোনা। তাদের আশ্রয় তো হবে জাহান্নামে, যা খুবই নিকৃষ্ট ফিরে যাবার জায়গা।
24-58 : হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের মালিকানাধীন দাসদাসীরা এবং তোমাদের যারা এখনো বয়োপ্রাপ্ত হয়নি, তারা যেনো তিনটি সময় তোমাদের কক্ষে প্রবেশ কালে অনুমতি নেয়: ফজর সালাতের আগে, দুপুরে যখন তোমাদের পোশাক খুলে রাখো তখন এবং এশার সালাতের পরে। এই তিনটি তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। এই সময় ছাড়া বাকি সময়ে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করলে তোমাদেরও এবং তাদেরও কোনো দোষ হবেনা। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়। এভাবেই আল্লাহ্ বয়ান করেন তোমাদের জন্যে তাঁর আয়াতসমূহ। আল্লাহ্ জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়।
24-59 : তোমাদের বাচ্চারা যখন বয়োপ্রাপ্ত হয়, তখন তারাও যেনো অনুমতি চেয়ে নেয় যেভাবে অনুমতি নেয় তাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা। এভাবেই বর্ণনা করেন আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে তাঁর আয়াত। আল্লাহ্ জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান।
24-60 : বৃদ্ধ নারীরা, যারা বিয়ের আশা রাখেনা, তারা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে বহিরাবরণ খুলে রাখে, তবে তাদের কোনো দোষ হবেনা। তবে সংযত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ্ সব শুনেন, সব জানেন।
24-61 : অন্ধদের দোষ নেই, খোড়াদের দোষ নেই এবং রোগীদেরও দোষ নেই (তারা যদি অনুমতি ছাড়া কারো কিছু খেয়ে নেয়), আর তোমাদের নিজেদেরও দোষ হবেনা তোমরা যদি (অনুমতি ছাড়া) খাও তোমাদের নিজেদের ঘরে, তোমাদের পিতাদের ঘরে, তোমাদের মায়েদের ঘরে, তোমাদের ভাইদের ঘরে, তোমাদের বোনদের ঘরে, তোমাদের চাচাদের ঘরে, তোমাদের ফুফুদের ঘরে, তোমাদের মামাদের ঘরে, তোমাদের খালাদের ঘরে, সেইসব ঘরে যেসব ঘরের চাবি তোমাদের অধিকারে থাকে এবং তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে খাও কিংবা আলাদা আলাদা খাও তাতে তোমাদের কোনো দোষ হবেনা। যখনই তোমরা ঘরে দাখিল হবে নিজেদের প্রতি সালাম করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া অভিবাদন কল্যাণময় ও উত্তম। এভাবেই আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে বয়ান করেন আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে, যাতে করে তোমরা আকল খাটাও।
24-62 : মুমিন তো তারাই, যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি, আর রসূলের সাথে সামষ্টিক বিষয়ে একত্র হলে তারা অনুমতি ছাড়া চলে যায়না। যারা (প্রয়োজনে) তোমার কাছে অনুমতি চায় তারাই ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলের প্রতি। তারা তাদের কোনো প্রয়োজনে (বৈঠক থেকে) বাইরে যেতে তোমার কাছে অনুমতি চাইলে তুমি যাকে ইচ্ছা অনুমতি দেবে এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে মাগফিরাত প্রার্থনা করবে। কারণ আল্লাহ্ তো অতীব ক্ষমাশীল দয়াময়।
24-63 : (হে মুমিনরা!) রসূলের আহবানকে তোমাদের পরস্পরকে আহবান করার সমতুল্য মনে করোনা। তোমাদের যারা (রসূলের ডাকা বৈঠক থেকে) অনুমতি ছাড়াই সরে পড়ে, আল্লাহ্ তাদের জানেন। সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা যেনো সতর্ক হয় এ জন্যে যে, তাদের উপর ফিতনা এসে পড়তে পারে, কিংবা তাদের উপর আপতিত হতে পারে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
24-64 : সাবধান, জেনে রাখো, মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমরা যেসব কাজে নিরত আছো সবই আল্লাহ্ জানেন। যেদিন তাদেরকে তাঁর (আল্লাহর) কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে সেদিন তিনি তাদের অবহিত করবেন তারা কী কাজ করেছিল? আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞাত।