আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 32, আল সিজ্দাহ - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 32, আল সিজ্দাহ



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৩০, রুকু সংখ্যা: ০৩

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
‌০১-০৩কুরআন আল্লাহর কিতাব, কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য।
০৪-১৪আল্লাহর মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং পরিচালন ব্যবস্থা নিখুঁত। তিনি নিখুঁতভাবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের অবিশ্বাস এক বড় বোকামি। অবিশ্বাসীদের পরকালীন করুণ পরিণতি।
১৫-১৯যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনে তাদের বৈশিষ্ট্য ও শুভ পরিণতি।
২০-৩০সীমালঙ্ঘনকারীদের করুণ পরিণতি। যারা আল্লাহর আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের কঠিন শাস্তি। অটলভাবে আল্লাহর কিতাব মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে সাফল্য।
32-1 : আলিফ লাম মিম।
32-2 : এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কিতাব রাব্বুল আলামিনের নাযিলকৃত।
32-3 : তারা কি বলে: ‘এটি সে নিজে রচনা করে নিয়েছে?’ বরং তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে এ এক মহাসত্য। এটি নাযিলের উদ্দেশ্য হলো: সেই কওমকে সতর্ক করা, যাদের মধ্যে তোমার পূর্বে কোনো সতর্ককারী আসেনি। হয়তো তারা সঠিক পথ ধরবে।
32-4 : আল্লাহ্, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়টি সময়কালে, তারপর তিনি সমাসীন হন আরশে। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অলিও নেই শফীও (শাফায়াতকারীও) নেই। তারপরও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবেনা?
32-5 : তিনিই আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সব বিষয় পরিচালনা করেন, তারপর একদিন সবকিছুই তাঁর কাছে উত্থাপন করা হবে, তোমাদের হিসাব অনুযায়ী যে দিনটির পরিমাণ হাজার বছর।
32-6 : তিনিই আল্লাহ্, তিনি গায়েব (অদৃশ্যের) এবং শাহাদাতের (দৃশ্যের) জ্ঞানী, মহাশক্তিধর, অতীব দয়াবান।
32-7 : তিনি অতি উত্তম ও সুষম করেছেন প্রতিটি জিনিসের সৃষ্টি এবং তিনি মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি থেকে।
32-8 : তারপর তিনি তার (মানুষের) বংশ চালু করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।
32-9 : তারপর তিনি তাকে সুষম ও সুঠাম করেন এবং তাতে ফুঁকে দেন তাঁর থেকে রূহ। আর তিনি তার শোনার জন্যে দিয়েছেন কান, দেখার জন্যে বানিয়ে দিয়েছেন চোখ এবং ভাববার জন্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন অন্তর। তোমরা খুব কমই শোকর আদায় করো।
32-10 : তারা বলে: ‘আমরা যখন মাটিতে বিলীন হয়ে যাবো, তখন কি আমাদের পুনরায় নতুন করে সৃষ্টি করা হবে?’ বরং তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিকেই অস্বীকার করছে।
32-11 : বলো: ‘তোমাদের ওফাত ঘটাবে মালাকুল মউত (মউতের ফেরেশতা) যাকে তোমাদের মৃত্যু ঘটাবার জন্যে নিযুক্ত করা হয়েছে। তারপর তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে তোমাদের প্রভুর কাছে।’
32-12 : হায়, তুমি যদি দেখতে, অপরাধীরা যখন তাদের প্রভুর সামনে মাথা নত করে বলবে: ‘আমাদের প্রভু! আমরা সবকিছু দেখলাম এবং শুনলাম, এখন তুমি আমাদের আবার পৃথিবীতে পাঠাও, আমরা সৎকাজ করবো এবং আমরা মজবুত বিশ্বাসী হয়েছি।’
32-13 : আমরা চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই হিদায়াতের পথে নিয়ে আসতাম, কিন্তু আমি তো ফায়সালা করে রেখেছি: ‘আমি অবশ্যি পরিপূর্ণ করবো জাহান্নামকে জিন ও মানুষ উভয়কে দিয়ে।’
32-14 : সুতরাং আজকের এই দিনের সাক্ষাতের কথা তোমরা যেহেতু ভুলে গিয়েছিলে তাই আস্বাদন করো আযাব। আমরাও তোমাদের ভুলে গেলাম, সুতরাং তোমাদের কর্মকান্ডের ফল হিসেবে আস্বাদন করো চিরস্থায়ী আযাব।
32-15 : আমাদের আয়াতের প্রতি ঈমান রাখে তো তারা, যাদেরকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে তারা সাজদায় অবনত হয়ে পড়ে এবং তাদের প্রভুর হামদসহ তসবিহ করতে থাকে, আর তারা দম্ভ করে বেড়ায়না। (সাজদা)
32-16 : তারা তাদের দেহকে শয্যা থেকে আলগা করে উঠিয়ে নিয়ে তাদের প্রভুকে ডাকে ভয় ও আশা নিয়ে, আর আমরা তাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে)।
32-17 : কেউই জানেনা, তাদের জন্যে চোখ জুড়ানো যেসব (নিয়ামত রাজি) গোপন করে রাখা হয়েছে তাদের আমলের পুরস্কার হিসেবে!
32-18 : যে ব্যক্তি মুমিন, সে কি ফাসিকের সমতুল্য? না, তারা সমান নয়।
32-19 : হাঁ, যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাতুল মা’ওয়া (স্থায়ী জান্নাত) তাদের আমলের আতিথ্য হিসেবে।
32-20 : আর যারা ফাসেকি (সীমালংঘনপাপাচার) করে, তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদের সেখানে ঠেলে দেয়া হবে। তাদের বলা হবে: আস্বাদন করো সেই জাহান্নামের আযাব, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।
32-21 : ‘আযাবুল আকবার’ (গুরুদন্ড) আস্বাদন করাবার আগে আমরা তাদের (এই দুনিয়াতে) কিছু কিছু ‘আযাবুল আদনা’ (লঘুদন্ড) আস্বাদন করাবো, যাতে করে তারা ফিরে আসে।
32-22 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যাকে বারবার তার প্রভুর আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, তারপরও সে তা উপেক্ষা করে চলেছে। আমরা অবশ্যি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নেবো।
32-23 : আমরা মূসাকেও কিতাব দিয়েছিলাম। সুতরাং তুমি তার সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে থেকোনা। আমরা সেই (মূসার) কিতাবকে বানিয়েছিলাম বনি ইসরাঈলের জন্যে জীবন যাপন পদ্ধতি।
32-24 : আমরা তাদের মধ্য থেকে বহু ইমাম (নেতা) বানিয়েছিলাম যখন তারা সবর অবলম্বন করেছিল। তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাতো। আর তারা একীন রাখতো আমাদের আয়াতের প্রতি।
32-25 : তারা যেসব বিষয়ে এখতেলাফ করতো, তোমার প্রভু সেসব বিষয়ে তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবেন কিয়ামতের দিন।
32-26 : তাদের জন্যে কি এ জিনিসটাও পথ নির্দেশ নয় যে, তাদের আগে আমরা কতো প্রজন্মকে হালাক করে দিয়েছিলাম! আজ তারা তাদের সেই আবাসভূমি দিয়ে চলাফেরা করছে। এতেও রয়েছে অনেক নিদর্শন। তারা কি শুনবেনা?
32-27 : তারা কি দেখেনা, আমরা ঊষর (dry) জমিনে পানি বইয়ে দিয়ে তার সাহায্যে উৎপাদন করি শস্য, যা থেকে তাদের পশুরাও খায়, তারাও খায়। তারা কি ভেবে দেখবেনা?
32-28 : তারা বলে: ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বলো, কখন হবে সেই জয়ের ফায়সালা?’
32-29 : তুমি বলো: ‘ফায়সালার দিন কাফিররা ঈমান আনলে তা তাদের কোনো কাজে আসবেনা, আর সেদিন তাদের অবকাশও দেয়া হবেনা।’
32-30 : সুতরাং তাদের উপেক্ষা করো এবং অপেক্ষা করো, আর তারাও অপেক্ষায় থাকুক।