আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 40, আল মুমিন/গাফির - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 40, আল মুমিন/গাফির



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৮৫, রুকু সংখ্যা: ০৯

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-২০আল্লাহর একত্বের বিষয়ে সব যুগেই কাফিররা বিতর্ক করেছে। আল্লাহর আরশ বহণকারী ফেরেশতারা আল্লাহর প্রশংসা করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। কাফিরদের পরকালীন দুরবস্থা। যালিমদের জন্য কোনো বন্ধু ও সুপারিশকারী থাকবে না।
২১-২৭মূসা আ.-এর বিরুদ্ধে ফিরাউন, হামান ও কারূণদের ষড়যন্ত্র।
২৮-৪৫ফিরাউনের পারিষদবর্গের মধ্যে একজন তার ঈমান আনার কথা গোপন রেখেছিলেন। ফিরাউন কর্তৃক মূসাকে হত্যা করার ঘোষণা করায় তিনি ফিরাউনদের উদ্দেশ্যে এক মর্মস্পর্শী দাওয়াতি ভাষণ দেন। তাঁর সে ভাষণের বিবরণ।
৪৬-৫০বরযখ জীবনে ফিরাউনের অনুসারীদের সকাল সন্ধ্যা জাহান্নাম দেখানো হয়। জাহান্নামে কাফির নেতাদের সাথে তাদের অনুসারীরা বিতর্ক করবে। জাহান্নামীরা আযাব হালকা করার আবেদন করবে।
৫১-৭৭কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাঁর রসূল ও মুমিনদের সাহায্য করবেন। রসূলের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা ও তসবিহ করার নির্দেশ। কিয়ামত অবশ্যি আসবে। মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিতর্ককারীরা ভ্রান্ত পথে দৌড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করে জাহান্নামে ফেলা হবে।
৭৮-৮৫অতীতে অনেক রসূল পাঠানো হয়েছে, মুহাম্মদ সা. এর কাছে সবার বিবরণ পেশ করা হয়নি। মানুষের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অসংখ্য অনুগ্রহ ও নিদর্শন। তারপরও তারা শরিক করে।
40-1 : হা - মিম।
40-2 : এই কিতাব নাযিল হচ্ছে মহাশক্তিধর মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে।
40-3 : যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী এবং কঠোর শাস্তিদাতা ও পরম দয়াবান। কোনো ইলাহ্ নেই তিনি ছাড়া। সবাইকে ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে।
40-4 : কাফিররা ছাড়া আর কেউই আল্লাহর আয়াত নিয়ে তর্ক করেনা। দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেনো তোমাকে প্রতারিত না করে।
40-5 : তাদের আগেও (আল্লাহর রসূলকে) প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের জাতি এবং তাদের পরে অন্যান্য সম্প্রদায়। প্রত্যেক উম্মতই তাদের নিজ নিজ রসূলকে আবদ্ধ করার চক্রান্ত করেছিল এবং তারা অর্থহীন বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল সত্যকে ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে। ফলে আমি তাদের পাকড়াও করেছিলাম এবং কতো যে নিকৃষ্ট ছিলো আমার সেই আযাব।
40-6 : এভাবেই কাফিরদের জন্যে প্রযোজ্য হয়েছিল তোমার প্রভুর এই ফায়সালা যে, তারা জাহান্নামী।
40-7 : যারা (যেসব ফেরেশতা) আল্লাহর আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা আছে আরশের চারপাশে, তারা তাদের প্রভুর প্রশংসাসহ তসবিহ করছে। তারা তাঁর প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারা বলে: ‘‘আমাদের প্রভু! সর্বত্র পরিব্যাপ্ত রয়েছে তোমার রহমত এবং এলেম। সুতরাং তুমি সেইসব লোকদের ক্ষমা করে দাও যারা তওবা করেছে এবং তোমার পথের অনুসরণ করেছে, আর তুমি তাদের রক্ষা করো জাহিমের (জাহান্নামের) আযাব থেকে।
40-8 : আমাদের প্রভু! তুমি তাদের দাখিল করো চিরস্থায়ী জান্নাতে, যার ওয়াদা তুমি তাদের দিয়েছো এবং তাদের বাবা - মা, স্বামী - স্ত্রী ও সন্তানদের যারা শুদ্ধতার ও পুণ্যের কাজ করছে তাদেরকেও দাখিল করো তাতে। নিশ্চয়ই তুমি মহাশক্তিমান ও প্রজ্ঞাময়।
40-9 : আর তুমি তাদের রক্ষা করো সমস্ত অনিষ্ট ও অমঙ্গল থেকে, আর সেদিন তুমি যাকে রক্ষা করবে অনিষ্ট - অমঙ্গল থেকে, অবশ্যি তার প্রতি রহম (অনুগ্রহ) করবে। আর এটাই হবে (তার জন্যে) মহাসাফল্য।’’
40-10 : যারা কুফুরি করেছে তাদের ডেকে বলা হবে, ‘তোমাদের নিজেদের প্রতি নিজেদের ক্ষোভের চাইতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টিই ছিলো অধিক, যখন তোমাদের ডাকা হয়েছিল ঈমানের দিকে, অথচ তোমরা অস্বীকার করছিলে ঈমান আনতে।’
40-11 : তখন তারা বলবে: ‘প্রভু! তুমি আমাদের দুইবার প্রাণহীন (মৃত) অবস্থায় রেখেছিলে আর জীবিত করেছো দুইবার। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। এখন এখান থেকে বের হবার কোনো পথ পাওয়া যাবে কি?’
40-12 : (বলা হবে:) ‘তোমাদের এই শাস্তি তো এ কারণে যে, যখন এক আল্লাহকে ডাকা হতো তোমরা তাঁর প্রতি কুফুরি করতে, অথচ তাঁর সাথে কেউ শরিক সাব্যস্ত করলে সে কথার প্রতি তোমারা ঈমান আনতে।’ মূলত সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক তো এক সর্বোচ্চ মহান আল্লাহ্।
40-13 : আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলি দেখান এবং আসমান থেকে নাযিল করেন তোমাদের রিযিক। আল্লাহর অভিমুখী ব্যক্তিই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।
40-14 : অতএব, আল্লাহকে ডাকো তাঁর প্রতি আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে, যদিও কাফিররা এটা পছন্দ করেনা।
40-15 : তিনি উঁচু মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি। তিনি তাঁর বান্দাদের যার প্রতি ইচ্ছা তাঁর নির্দেশ প্রেরণ করেন অহির মাধ্যমে, যাতে করে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে (মানুষকে) সতর্ক করতে পারে।
40-16 : সেদিন তাদের সব কিছু প্রকাশ হয়ে পড়বে। আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন নেই। (সেদিন জিজ্ঞাসা করা হবে:) আজ সমস্ত কর্তৃত্ব কার? (সমস্ত সৃষ্টি বলে উঠবে:) আল্লাহর, যিনি এক, মহাপরাক্রমশালী।
40-17 : আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া হবে। আজ কারো প্রতি কোনো প্রকার যুলুম (অবিচার) করা হবেনা। আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
40-18 : তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে যখন দুঃখ - দুদর্শায় তাদের প্রাণ হবে কণ্ঠাগত। যালিমদের জন্যে কোনো সহমর্মী থাকবে না এবং এমন কোনো সুপারিশকারীও থাকবে না, যার সুপারিশ গ্রহণ করা যেতে পারে।
40-19 : চোখের খিয়ানত এবং অন্তরের গোপন কথা তিনি জানেন।
40-20 : আল্লাহ্ ন্যায় বিচার করবেন। তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তারা বিচার করতে অক্ষম। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
40-21 : তারা কি জমিনে পরিভ্রমণ করে দেখেনা, তাদের আগেকার (কাফির) লোকদের কী অবস্থা হয়েছিল? তারা ছিলো এদের চাইতেও শক্তিশালী এবং পৃথিবীতে অধিক প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী। আল্লাহ্ তাদের অপরাধের জন্যে তাদেরকেও পাকড়াও করেছিলেন। আল্লাহর পাকড়াও থেকে তাদেরকে রক্ষাকারী কেউ ছিলনা।
40-22 : এর কারণ, তাদের কাছে তাদের রসূলরা এসেছিল সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে, কিন্তু তারা (ঈমান আনতে) অস্বীকার করে। ফলে আল্লাহ্ তাদের পাকড়াও করেন। তিনি অতি শক্তিশালী, কঠোর শাস্তিদাতা।
40-23 : আমরা মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমাদের নিদর্শন এবং সুস্পষ্ট প্রমাণসহ
40-24 : ফেরাউন, হামান ও কারূণের কাছে। কিন্তু তারা তাকে বলেছিল: ‘এতো এক ম্যাজেসিয়ান কট্টর মিথ্যাবাদী।’
40-25 : যখন তাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সত্য পৌঁছালো, তারা বললো: ‘মূসার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করো, আর জীবিত রাখো তাদের নারীদের।’ কাফিরদের চক্রান্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য।
40-26 : ফেরাউন বললো: ‘তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে কতল করে ফেলবো, সে তার প্রভুকে ডেকে দেখুক (তাকে রক্ষা করতে পারে কিনা)। আমি আশংকা করছি সে তোমাদের দীন (রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রক্ষমতা) বদল করে ফেলবে, কিংবা দেশে সৃষ্টি করবে বিপর্যয় বিশৃংখলা।’
40-27 : মূসা বললো: ‘হিসাবের দিনের প্রতি ঈমান রাখেনা এমন প্রত্যেক দাম্ভিক ব্যক্তি থেকে আমি আমার ও তোমাদের প্রভুর আশ্রয় গ্রহণ করেছি।’
40-28 : তখন ফেরাউন সভাসদদের এক মুমিন ব্যক্তি, যে এতোদিন তার ঈমান গোপন করে রেখেছিল, বললো: ‘‘আল্লাহ আমার প্রভু’ শুধু একথাটি বলার কারণেই কি তোমরা একজন মহাপুরুষকে হত্যা করবে? অথচ তিনি তো তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শন নিয়ে এসেছেন। তোমরা যে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলছো, তিনি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকলে তাঁর মিথ্যার দায় দায়িত্ব তো তাঁর। কিন্তু তিনি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তবে যেসব ভয়ংকর পরিণতির কথা তিনি বলছেন তার কিছুটা হলেও তো গ্রাস করবে তোমাদের। আল্লাহ্ সীমালংঘনকারী মিথ্যাবাদীদের সঠিক পথ দেখান না।
40-29 : হে আমার জাতির ভাইয়েরা! আজ তোমরা রাজত্বের অধিকারী এবং এই ভূখন্ডের বিজয়ী শক্তি। কিন্তু আল্লাহর আযাব এসে পড়লে আমাদের সাহায্য করার কে আছে?’’ ফেরাউন (তার বক্তব্যের মাঝখানে) বলে উঠে: ‘আমি যে পথ ভালো মনে করছি সে পথই তোমাদের দেখাচ্ছি আর আমি তো তোমাদের সঠিক পথই দেখাচ্ছি।’
40-30 : যে ঈমান এনেছিল সে বললো: ‘‘হে আমার জাতির ভাইয়েরা! আমি আশংকা করছি, তোমাদের উপর সে রকম আযাব না এসে যায়, যে রকম আযাব এসেছিল ইতোপূর্বে (নিজেদের নবীকে অস্বীকার ও অমান্য করার কারণে) বিভিন্ন জাতির উপর।
40-31 : যেমন এসেছিল নূহের কওম, আদ, সামুদ এবং তাদের পরবর্তী জাতিসমূহের উপর। আর একথা জেনে রেখো, আল্লাহ্ কখনো তাঁর দাসদের প্রতি অবিচার করেননা।
40-32 : হে আমার কওম! আমি আশংকা করছি, তোমাদের উপর এমন একটি সময় এসে পড়বে, যখন তোমরা ফরিয়াদ করবে, অনুশোচনা করবে, একে অপরকে ডাকতে থাকবে।
40-33 : সেদিন তোমরা দৌড়ে পালাতে থাকবে, কিন্তু তখন আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদের বাঁচাবার কেউ থাকবেনা। আসলে আল্লাহ্ যাকে বিপথগামী করে দেন তাকে কেউ সঠিক পথ দেখাতে পারেনা।’’
40-34 : ইতোপূর্বে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শন নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছিলেন (আল্লাহর নবী) ইউসুফ। তোমরা তাঁর আনীত শিক্ষার ব্যাপারেও সন্দেহই পোষণ করেছিলে। তাঁর মৃত্যুর পর তোমরা বলেছিলে: ‘এখন আল্লাহ আর কোনো রসূল পাঠাবেন না। এভাবেই আল্লাহ্ সেসব লোকদের গোমরাহিতে নিক্ষেপ করেন, যারা সীমালংঘনকারী সংশয়পরায়ণ।’
40-35 : তারা আল্লাহর আয়াতের (নিদর্শনের) ব্যাপারে বিবাদ করে, অথচ এ ব্যাপারে তাদের মতের সপক্ষে কোনো সার্টিফিকেট আসেনি। আল্লাহর কাছে এবং ঈমানদারদের কাছে বড়ই ঘৃণা ও ক্রোধ উদ্রেককারী তাদের এ আচরণ। এভাবেই তিনি সীল মোহর মেরে দেন প্রত্যেক দাম্ভিক স্বৈরাচারীর কলবে।
40-36 : ফেরাউন বললো: ‘‘হে হামান! আমার জন্যে একটি উঁচু টাওয়ার নির্মাণ করো, যাতে আমি পথসমূহে উঠতে পারি,
40-37 : আসমানের পথসমূহে, যেখান থেকে আমি মূসার ইলাহকে উঁকি মেরে দেখতে পাবো। তবে আমি তাকে (মূসাকে) মিথ্যাবাদী বলেই মনে করি।’’ এভাবেই ফেরাউনের জন্যে তার দুষ্কর্মসমূহ সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে এবং থামিয়ে দেয়া হয়েছে তার জন্যে সোজা পথে চলা। তবে ফেরাউনের সব চক্রান্ত তাকেই ঠেলে দিয়েছে ধ্বংসের পথে।
40-38 : যে ঈমান এনেছিল, সে আরো বললো: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা আমাকে অনুসরণ করো, আমি তোমাদের সঠিক পথ দেখাবো।
40-39 : হে আমার কওম! এই দুনিয়ার জীবনটা তো সামান্য ভোগের সময় মাত্র। আর আখিরাতই হলো চিরস্থায়ী আবাস।
40-40 : যে কেউ কোনো মন্দ কাজ করবে, তাকে ততোটুকু প্রতিফলই দেয়া হবে। কিন্তু যে কোনো মুমিন পুরুষ বা নারী আমলে সালেহ্ করবে, তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে। সেখানে তাদের রিযিক দেয়া হবে বেহিসাব।
40-41 : হে আমার কওম! এটা কেমন ব্যাপার, আমি তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছি নাজাতের দিকে, অথচ তোমরা আমাকে দাওয়াত দিচ্ছো জাহান্নামের দিকে!
40-42 : তোমরা আমাকে দাওয়াত দিচ্ছো, যেনো আমি আল্লাহর প্রতি কুফুরি করি এবং তাঁর সাথে শিরক করি, যে ব্যাপারে আমার কোনো এলেম নেই। অথচ আমি তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছি মহাপরাক্রমশালী অতীব দয়াবানের দিকে।
40-43 : সন্দেহ নেই, প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, তোমরা আমাকে যেসব জিনিসের দিকে দাওয়াত দিচ্ছো, সেগুলো এই দুনিয়ার জীবনেও দোয়া কবুল করার যোগ্যতা রাখেনা, আখিরাতেও নয়। আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহরই দিকে। আর অবশ্যি সীমালংঘনকারীরা হবে জাহান্নামের অধিবাসী।
40-44 : আমি তোমাদের যেসব কথা বলছি, তোমরা অচিরেই তা স্মরণ করবে। আমি আমার নিজের বিষয়টা ছেড়ে দিচ্ছি আল্লাহর উপর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর দাসদের প্রতি লক্ষ্য রাখেন।’’
40-45 : ফলে আল্লাহ্ তাকে রক্ষা করেন তাদের ন্যাক্কারজনক চক্রান্ত থেকে। পক্ষান্তরে নিকৃষ্ট ধরনের আযাবের চক্রে পড়ে যায় ফেরাউনের সাংগ পাংগরাই।
40-46 : সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে পেশ করা হয় জাহান্নামের সামনে। আর যেদিন কায়েম হবে কিয়ামত, সেদিন বলা হবে: ‘ফেরাউনের অনুসারীদের নিক্ষেপ করো কঠিন আযাবে।’
40-47 : জাহান্নামের মধ্যে যখন তারা পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা দাম্ভিকদের বলবে: ‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা কি আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ নিবারণ করতে পারবে?
40-48 : তখন দাম্ভিকরা বলবে: ‘আমরা প্রত্যেকেই তো জাহান্নামে আছি। আল্লাহ্ তো তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করেই দিয়েছেন।’
40-49 : জাহান্নামীরা জাহান্নামের রক্ষীদের বলবে: ‘তোমাদের প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো তিনি যেনো আমাদের থেকে একদিনের জন্যে আযাব লাঘব করে দেন।’
40-50 : তারা বলবে: ‘তোমাদের কাছে কি তোমাদের রসূলরা সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে যাননি।’ তারা বলবে: ‘হ্যাঁ, গিয়েছিলেন।’ তখন প্রহরীরা বলবে: ‘তাহলে তোমরাই প্রার্থনা করো, আর কাফিরদের প্রার্থনা ব্যর্থ হয়েই থাকে।’
40-51 : আমরা অবশ্য অবশ্যি সাহায্য করবো আমাদের রসূলদের এবং মুমিনদের, দুনিয়ার জীবনেও এবং সেদিনও, যেদিন দাঁড়াবে সাক্ষীরা।
40-52 : সেদিন যালিমদের ওজর - আপত্তিতে কোনো লাভ হবেনা। তাদের প্রতি লানত এবং তাদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।
40-53 : আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম আল হুদা (সত্য জীবন ব্যবস্থা সম্বলিত কিতাব), আর বনি ইসরাঈলকে ওয়ারিশ বানিয়েছিলাম সেই কিতাবের,
40-54 : যা ছিলো জীবন যাপনের নির্দেশনা এবং বুঝবুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের জন্যে উপদেশ।
40-55 : অতএব (হে নবী!) তুমি সবর করো। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যি সত্য। আর তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার ভুলত্রুটির জন্যে। তোমার প্রভুর হামদসহ তসবিহ্ ঘোষণা করো সন্ধ্যায় এবং সকালে।
40-56 : কোনো প্রমাণ প্রাপ্তি ছাড়াই যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, অবশ্যি তাদের অন্তরে রয়েছে অহংকার, যে পর্যন্ত তারা পৌঁছুতে পারবেনা। অতএব আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।
40-57 : মহাকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টির কাজ মানুষ সৃষ্টির চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানেনা।
40-58 : অন্ধ আর দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি সমান নয়। যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে তারা, আর দুর্নীতিবাজরা সমতুল্য নয়। তোমরা খুব কমই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকো।
40-59 : কিয়ামত অবশ্যি আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ঈমান রাখেনা।
40-60 : তোমাদের প্রভু বলেছেন: ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকের (দোয়ার) জবাব দেবো (দোয়া কবুল করবো)। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদতের ব্যাপারে হঠকারিতা প্রদর্শন করে, শীঘ্রি তারা দাখিল হবে জাহান্নামে অপদস্ত হয়ে।
40-61 : আল্লাহ্ই রাত বানিয়েছেন তোমাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিন বানিয়েছেন আলোকোজ্জ্বল (তোমাদের জীবিকা অণ্বেষণের জন্যে)। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি বিশাল অনুগ্রহপরায়ণ, তবে অধিকাংশ মানুষই শোকর আদায় করেনা।
40-62 : তোমাদের প্রভু আল্লাহ্ই প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। ফলে মিথ্যার ফানুসে বিভ্রান্ত করে তোমাদের কোথায় নেয়া হচ্ছে?
40-63 : এভাবেই বিভ্রান্ত করে মিথ্যার পথে নিয়ে যাওয়া হয় তাদেরকে, যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে।
40-64 : আল্লাহ্ই পৃথিবীকে বানিয়েছেন তোমাদের বাসোপযোগী, আর আসমানকে বানিয়েছেন ছাদ। তিনিই তোমাদের সুরত (আকৃতি) গঠন করেছেন উত্তম ও সুন্দরতম আকৃতিতে। তিনিই ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্যে উত্তম জীবিকার। তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রভু। কতো যে মহান বরকতওয়ালা মহাজগতের প্রভু আল্লাহ্।
40-65 : তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই। তাঁর জন্যে আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে তোমরা কেবল তাঁকেই ডাকো। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের।
40-66 : বলো: ‘তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের কাছে দোয়া - প্রার্থনা করো, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, যেহেতু আমার প্রভুর পক্ষ থেকে আমার কাছে সুস্পষ্ট দলিল - প্রমাণ এসেছে। আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেনো আত্মসমর্পণ করি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের জন্যে।’
40-67 : তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর নোতফা (শুক্রবিন্দু) থেকে, তারপর আলাকা (জরায়ুর সাথে শক্তভাবে আটকে থাকা ভ্রুণ) থেকে। তারপর তিনি তোমাদের বের করে আনেন শিশু হিসেবে। তারপর তোমাদের পৌঁছে দেয়া হয় যৌবনে। তারপর তোমরা পরিণত হও বৃদ্ধে। তোমাদের কারো কারো ওফাত ঘটানো হয় এর আগেই। যাতে করে তোমরা তোমাদের জন্যে নির্ধারিত সময়কাল পূর্ণ করো এবং যেনো তোমরা বুঝবুদ্ধিকে কাজে লাগাও।
40-68 : তিনিই জীবন দান করেন এবং মউত ঘটান। তিনি যখন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন সেটাকে বলেন: ‘হও’, সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
40-69 : তুমি কি তাদের দেখোনা, যারা আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়? কীভাবে তাদের বিপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
40-70 : যারা প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর কিতাবকে এবং যা নিয়ে আমরা আমাদের রসূলদের পাঠিয়েছি সেটাকে। অচিরেই তারা জানতে পারবে (এর পরিণতি),
40-71 : যখন তাদের গলায় পরানো থাকবে বেড়ি আর শিকল এবং তাদের নিয়ে যাওয়া হবে টেনে হিঁচড়ে
40-72 : টগবগে ফুটন্ত গরম পানির দিকে। তারপর তাদের দগ্ধ করা হবে আগুনে।
40-73 : তারপর তাদের বলা হবে: ‘তারা এখন কোথায় যাদেরকে তোমরা শরিক বানিয়েছিলে
40-74 : আল্লাহর পরিবর্তে?’ তারা বলবে: ‘তারা আমাদের থেকে উধাও হয়ে গেছে। আসলে আমরা পূর্বে (পৃথিবীর জীবনে) কাউকেও ডাকিনি।’ এভাবেই আল্লাহ্ কাফিরদের ফেলে রাখেন বিভ্রান্তিতে।
40-75 : এর কারণ, তোমরা পৃথিবীতে অযথা উল্লাসে মেতেছিলে এবং এর আরো কারণ হলো, তোমরা নিমজ্জিত ছিলে দাম্ভিকতায়।
40-76 : এখন দাখিল হও জাহান্নামের দরজাসমূহ দিয়ে সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্যে। অহংকারীদের আবাস কতো যে নিকৃষ্ট!
40-77 : (হে নবী!) তুমি সবর করো। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আমরা ওদেরকে যে ওয়াদা দিচ্ছি তার কিছু যদি তোমাকে দেখিয়ে দেই, কিংবা যদি তোমার ওফাত ঘটাই, তাদেরকে তো আমার কাছেই ফেরত আনা হবে।
40-78 : তোমার আগেও আমরা বহু রসূল পাঠিয়েছি, তাদের মধ্যকার কিছু রসূলের বিবরণ তোমাকে দিয়েছি, আর কিছু রসূলের বিবরণ তোমাকে দেইনি। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া নিদর্শন হাজির করা কোনো রসূলের কাজ নয়। আল্লাহর নির্দেশ যখন এসে যাবে, তখন ফায়সালা করে দেয়া হবে ন্যায়সংগতভাবে। আর তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে বাতিলপন্থী মিথ্যাবাদীরা।
40-79 : আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে চারপায়ী পশু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা সেগুলোর কিছু পশুতে আরোহণ করতে পারো, আর খেতে পারো কিছু পশু।
40-80 : এছাড়াও সেগুলোর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্যে অনেক মুনাফা। তোমরা যেসব প্রয়োজনের কথা ভাবো এর মাধ্যমে যেনো তা পূর্ণ করতে পারো এবং সেগুলোতে আর নৌযানে যেনো তোমরা বহন ও আরোহণ করতে পারো।
40-81 : তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলি দেখিয়ে থাকেন। তোমরা তাঁর কোন্ নিদর্শন অস্বীকার করবে?
40-82 : তারা কি পৃথিবী ভ্রমণ করে দেখেনা, তাদের আগেকার অস্বীকারকারীদের কী পরিণতি হয়েছিল? তারা ছিলো এদের চাইতে অধিক সংখ্যক ও অধিক শক্তিশালী এবং জমিনে অধিক প্রভাব বিস্তারকারী। কিন্তু তাদের কীর্তি তাদের কোনো উপকারেই আসেনি।
40-83 : যখনই তাদের রসূলরা সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে তাদের কাছে এসেছে, তারা নিজেদের এলেমের দম্ভ করেছে। তারপর তারা যা নিয়ে বিদ্রুপ করেছে সেটাই তাদের পরিবেষ্টন করে নিয়েছে।
40-84 : যখন তারা আমার শাস্তি সামনে উপস্থিত দেখেছে, বলেছে: ‘আমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদের শরিক করতাম তাদের প্রতি কুফুরি করলাম।’
40-85 : আমাদের আযাব দেখার পর তারা যে ঈমানের ঘোষণা দিতো, সে ঈমান তাদের কোনো উপকারে আসেনি। আল্লাহর এই সুন্নত (বিধান) পূর্ব থেকেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে, আর সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাফিররাই।