আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 42, আশ্ শূরা (পরামর্শ) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 42, আশ্ শূরা (পরামর্শ)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৫৩, রুকু সংখ্যা: ০৫

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-১২যারা আল্লাহর সাথে শরিক করে, তাদের রক্ষক আল্লাহ্, শরিকরা নয়। কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য। আল্লাহ্ অনুপম। তাঁর মতো কেউ এবং কিছুই নেই। মহাবিশ্বের ভান্ডারের চাবিকাঠি তাঁর হাতে।
১৩-১৯মুহাম্মদ সা. সেই দীনেরই বাহক, পূর্ববর্তী রসূলরা যে দীনের বাহক ছিলেন। যারা কিয়ামত সম্পর্কে সন্দেহ করে তারা নিমজ্জিত চরম বিভ্রান্তিতে।
২০-২৯যে আখিরাতের ফসল চায় আল্লাহ্ তার আখিরাতের ফসল বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং মুমিনদের ডাকে সাড়া দেন।
৩০-৩৫মসিবত মানুষের কর্মফল।
৩৬-৪৩আখিরাতকে অগ্রাধিকার দানকারী মুমিনদের বৈশিষ্ট্য।
৪৪-৪৮যালিমদের পরকালীন দুরবস্থা। কিয়ামতের দিন যারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারাই আসল ক্ষতিগ্রস্ত। যারা নবীর দাওয়াতকে উপেক্ষা করে, নবী তাদের রক্ষক নন।
৪৯-৫৩কাকে কি সন্তান দিবেন এবং কাকে বন্ধ্যা করে রাখবেন তা আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ্ কোনো মানুষের সাথে সরাসরি ও প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে কথা বলেন না। অহি নাযিলের পদ্ধতি। কুরআন আল্লাহর নূর এবং মানবতার মুক্তির দিশারি।
42-1 : হা মিম।
42-2 : আঈন সিন কাফ।
42-3 : (হে মুহাম্মদ!) এভাবেই মহাক্ষমতাবান মহাজ্ঞানী আল্লাহ তোমার প্রতি এবং আগের (নবী রসূলদের) প্রতি অহি করে আসছেন।
42-4 : মহাবিশ্ব এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর। তিনি সর্বোচ্চ, অতি মহান।
42-5 : (এই মহান আল্লাহর সাথেই তারা শিরক করছে, যার ফলে) তাদের উপর আকাশ ভেংগে পড়ার উপক্রম হয়েছে। (আল্লাহ এতোই মহান ও উদার যে,) তা সত্ত্বেও ফেরেশতারা তাদের প্রভুর প্রশংসার তসবিহ্ করার সাথে সাথে পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্যেও ক্ষমা ভিক্ষা করছে। এখনো সতর্ক হয়ে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।
42-6 : যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অলি (বন্ধু, রক্ষক, প্রভু ও অভিভাবক) হিসেবে গ্রহণ করে, (তারা তো নিজেদের জন্যে অতি ঠুনকো ও নিকৃষ্ট অলি গ্রহণ করে), প্রকৃত পক্ষে আল্লাহই তাদের রক্ষক ও হিফাযতকারী। তুমি তাদের (কার্যক্রমের) জিম্মাদার নও।
42-7 : (হে মুহাম্মদ!) এভাবেই আমি তোমার প্রতি আরবি ভাষায় একটি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে তুমি সতর্ক করে দিতে পারো মানব বসতির কেন্দ্র (মক্কা) এবং তার চারপাশের লোকদের। যেনো তুমি সতর্ক করতে পারো, সেদিনটি সম্পর্কে যেদিন সবাইকে (বিচারের জন্যে) একত্র করা হবে এবং সেদিনটির আগমন সম্পর্কে কোনোই সন্দেহ নেই। সেদিন একদল লোককে থাকতে দেয়া হবে জান্নাতে, আরেক দলকে নিক্ষেপ করা হবে প্রজ্জ্বলিত আগুনে।
42-8 : আল্লাহ চাইলে তাদেরকে (মানুষকে) এক উম্মতে পরিণত করতে (এক আদর্শের অনুসারী জাতি বানাতে) পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন না, বরং তিনি যাকে চান তাকে নিজ রহমতের মধ্যে শামিল করে নেন। আর যালিমদের না আছে কোনো অলি, আর না আছে কোনো সাহায্যকারী।
42-9 : নাকি এরা আল্লাহকে ছাড়া অন্যদের অলি বানিয়ে নিয়েছে? অথচ আল্লাহই তো একমাত্র অলি। তিনিই তো মৃতকে জীবিত করেন আর একমাত্র তিনিই তো সক্ষম সবকিছু করতে।
42-10 : তোমরা যে ব্যাপারেই মতভেদ করো না কেন, তার ফায়সালা দেয়ার মালিক তো একমাত্র আল্লাহ। (হে মুহাম্মদ! ঘোষণা করে দাও) এই আল্লাহই আমার রব। তাঁর উপরই আমি আস্থা স্থাপন করেছি এবং (সকল ব্যাপারে) আমি কেবল তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করি।
42-11 : মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীর তিনিই সৃষ্টিকর্তা। তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া (নারী - পুরুষ) সৃষ্টি করেছেন এবং অন্যান্য জীব - জানোয়ারেরও জোড়া সৃষ্টি করেছেন (তাদের প্রজাতি থেকেই)। এই (নারী - পুরুষ মিলন) প্রক্রিয়াতেই তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেন। কিছুই নেই তাঁর মতো, তাঁর সদৃশ। সর্বশ্রোতা তিনি, সর্বদ্রষ্টা তিনি।
42-12 : মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীর (সমস্ত সম্পদ ভান্ডারের) চাবিকাঠি তাঁরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবিকা প্রশস্ত করে দেন, আর সীমাবদ্ধ করে দেন (যাকে ইচ্ছা)। (কারণ) সকল বিষয়ে তিনি সর্বজ্ঞানী।
42-13 : তিনি তোমাদের জন্যে স্থির করে দিয়েছেন সেই একই দীন (জীবন - পদ্ধতি), যা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা এখন আমরা অহি করছি (হে মুহাম্মদ!) তোমাকে। এটাই সেই দীন (জীবন - পদ্ধতি) যা আমরা স্থির করে দিয়েছিলাম ইবরাহিম এবং মূসা ও ঈসাকে। (তাদের সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলাম:) এই দীনকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে কোনো বিভক্তি সৃষ্টি করোনা। (হে মুহাম্মদ!) মুশরিকদের জন্যে (এই দীন) বড়ই অসহনীয় - যার দিকে তুমি তাদের ডাকছো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের জন্যে মনোনীত করেন এবং তিনি নিজের দিকে পথ দেখান সে ব্যক্তিকেই, যে (অনুশোচনা, আনুগত্য ও) বিনয়ের সাথে তাঁর প্রতি রুজু হয়।
42-14 : প্রকৃত জ্ঞান আসার পরেই লোকেরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক (স্বার্থগত) বাড়াবাড়ির কারণে। তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ প্রদানের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে অবশ্যি তাদের এই (বিবাদ বিভক্তির) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়া হতো। প্রথম দিকের লোকদের পরে যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে, তারা (আল্লাহর দীন ও কিতাব) সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিমজ্জিত রয়েছে।
42-15 : এমতাবস্থায় তুমি সরাসরি কেবল আল্লাহর দীনের দিকেই মানুষকে আহবান করো এবং এর উপরই অটল অবিচল থাকো, যেভাবে তোমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লোকেরা যা চায়, তা মেনে চলোনা; বরং তাদের বলো: ‘আমি তো আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছি (তাই আমি এ কিতাব বাদ দিয়ে মানুষের ইচ্ছার অনুসরণ করতে পারিনা), তাছাড়া তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে। আল্লাহই আমাদের প্রভু এবং তোমাদেরও প্রভু। আমাদের কর্ম আমাদের জন্যে আর তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্যে। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো বিতর্ক নেই। একদিন আল্লাহ আমাদের সবাইকে একস্থানে জমায়েত করবেন আর শেষ পর্যন্ত সবাইকে ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে।’
42-16 : আল্লাহর দেয়া দীন ও জীবন পদ্ধতি গ্রহণ করার পর যারা দীনের এই প্রকৃত অনুসারীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের প্রভুর দৃষ্টিতে তাদের এই বিতর্ক অর্থহীন - বাতিল। তাদের উপর আপতিত হয় প্রচন্ড গজব। আর তাদের জন্যে রয়েছে দু:সহ আযাব।
42-17 : আল্লাহ, নিঃসন্দেহে তিনিই নাযিল করেছেন ‘আল কিতাব’ (আল কুরআন) এবং ‘আল মীযান’ (জীবন - যাপনের সুষম বিধান)। তুমি কী করে জানবে হয়তো কিয়ামত একেবারে সন্নিকটে?
42-18 : যারা ঐ দিনটিকে বিশ্বাস করেনা, তারাই সে দিনটির জন্যে তাড়াহুড়া করে। আর যারা সে দিনটির প্রতি ঈমান এনেছে তারা তার ভয়ে ভীত। তারা জানে, সে দিনটি মহাসত্য। সাবধান! যারা সে দিনটির আগমন সম্পর্কে বিতর্ক করে, তারা নিমজ্জিত দুস্তর ভুলের মধ্যে।
42-19 : আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি পরম দয়াবান। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবিকার প্রাচুর্য দিয়ে থাকেন। তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
42-20 : যে (নিজের কর্মের মাধ্যমে) আখিরাতের ফসল (পুরস্কার) কামনা করে, আমি প্রবৃদ্ধি দান করি তার সেই ফসলে। আর যে (নিজের কর্মের মাধ্যমে) পেতে চায় ইহজাগতিক ফসল (পুরস্কার), আমি তাকে সেখান থেকে কিছু অংশ দিয়ে থাকি। কিন্তু তার জন্যে কিছুই নেই আখিরাতে।
42-21 : নাকি তারা আল্লাহর শরিকদার বানিয়ে নিয়েছে এবং সেই শরিকদাররা তাদের জন্যে এমন কোনো জীবন - বিধান প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (আখিরাতে) ফায়সালা করার ঘোষণা যদি দেয়া না থাকতো, তবে তাদের (এই বিরোধের) ফায়সালা (এখানেই) করে দেয়া হতো। আর এই যালিমদের জন্যে অবশ্যি রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
42-22 : তুমি দেখতে পাবে (বিচারের দিন) এই যালিমরা তাদের কৃতকর্মের জন্যে ভীত আতংকিত। অথচ তা (আল্লাহর আযাব) তাদের উপর আপতিত হবেই। পক্ষান্তরে যারা ‘ঈমান এনেছে’ এবং ‘আমলে সালেহ্’ করেছে, তারা বসবাস করবে জান্নাতের মনোরম বাগ - বাগিচায়। তারা যা যা ইচ্ছা করবে তাদের প্রভুর কাছে সবই পাবে। এ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ (Supreme Grace)।
42-23 : এটাই সেই মহোত্তম পুরস্কার, আল্লাহ এরই সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর সেইসব দাসদের, যারা ‘ঈমান এনেছে’ এবং ‘আমলে সালেহ’ করেছে। হে মুহাম্মদ! (তোমার জ্ঞাতির লোকদের) বলো: ‘এর (এই দাওয়াত ও আহবানের) বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে আত্মীয়তার সৌজন্য ছাড়া আর কোনো প্রতিদান চাইনা।’ যে কল্যাণকর কাজ করে, আমি তাতে তার কল্যাণের মাত্রা বাড়িয়ে দিই। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল এবং ভালো কাজের মর্যাদা দানকারী।
42-24 : নাকি তারা বলে: ‘সে (মুহাম্মদ) আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা - মনগড়া কথা বলছে?’আল্লাহ চাইলে তোমার দিলে মোহর মেরে দিতে পারেন। আসলে আল্লাহ তো মিথ্যাকেই মুছে (নির্মূল করে) দেন, আর নিজ বাণী (আল কুরআন) দিয়ে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করে দেন সত্যকে। অবশ্যি তিনি মানব মনের গোপন বিষয়ও ভালোভাবে অবগত।
42-25 : আর তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি নিজ বান্দাদের তওবা (অনুশোচনা) কবুল করেন এবং গুনাহ খাতা মাফ করেন। তিনি অবগত আছেন তোমরা যা করো।
42-26 : যারা ‘ঈমান আনে’ এবং ‘আমলে সালেহ্’ করে, তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাদের প্রতি বাড়িয়ে দেন নিজের অনুগ্রহ। অন্যদিকে রয়েছে কাফিররা, তাদের জন্যে রয়েছে শক্ত আযাব।
42-27 : আল্লাহ যদি তাঁর সব বান্দাকেই অঢেল সম্পদ - সামগ্রী দান করতেন, তবে অবশ্যি তারা পৃথিবীতে বিদ্রোহ - বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হতো। বরং তিনি একটি পরিমাণ মতো নাযিল করেন - যা তিনি চান। নিজ বান্দাদের প্রতি তিনি পূর্ণ সতর্ক ও দৃষ্টিবান।
42-28 : তিনিই সে মহীয়ান সত্তা, মানুষ নিরাশ হয়ে পড়ার পর যিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাদের প্রতি বিস্তার করেন নিজের করুণা। আর তিনিই সপ্রশংসিত প্রকৃত অভিভাবক।
42-29 : মহাবিশ্ব আর এই পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এগুলোতে তিনি ছড়িয়ে রেখেছেন যেসব প্রাণীকুল, তাতে রয়েছে তাঁর অন্যতম নিদর্শন। যখন চাইবেন, তখনই তিনি এদের সবাইকে একত্র জমায়েত করতে সক্ষম।
42-30 : তোমাদের জীবনে যে দুর্দশা - দুর্ঘটনাই (misfortune) ঘটে, তা তোমাদেরই হাতের কামাই। আর অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমাই করে দেন।
42-31 : তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর পাকড়াও থেকে পলায়ন করতে পারবেনা। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের না আছে কোনো অলি (অভিভাবক) আর না আছে কোনো সাহায্যকারী।
42-32 : সমুদ্রে চলমান পর্বতমালার মতো নৌযানগুলোও তাঁর অন্যতম নিদর্শন।
42-33 : তিনি চাইলে বাতাসকে থামিয়ে দিতে পারেন, তখন নৌযানগুলো দাঁড়িয়ে থাকবে সমুদ্রের পিঠে। অবশ্যি এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে।
42-34 : কিংবা তাদের কৃতকর্মের জন্যে তিনি সেগুলোকে ডুবিয়েও দিতে পারেন। আর অনেক (বা অনেকের) অপরাধ তো তিনিই ক্ষমা করে দেন।
42-35 : যারা আমাদের আয়াতসমূহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, (এতে করে) তারা যেনো জানতে পারে তাদের আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই।
42-36 : সুতরাং যা কিছু তোমাদের দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগের সামগ্রী মাত্র। অন্যদিকে আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, সেগুলো যেমনি উত্তম, তেমনি চিরস্থায়ী সেইসব লোকদের জন্যে, যারা ঈমান আনে এবং তারা তাদের প্রভুর উপর তাওয়াক্কুল করে;
42-37 : যারা কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ পরিহার করে চলে, এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়;
42-38 : যারা তাদের প্রভুর আহবানে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে, পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের বিষয়াদি পরিচালনা করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে খরচ করে;
42-39 : আর (তাদের উপর) অন্যায় অত্যাচার করা হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।
42-40 : মন্দের বিনিময় তো অনুরূপ মন্দ। তবে যে ক্ষমা করে দেয় এবং নিষ্পত্তি করে নেয়, তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়। তিনি অত্যাচারীদের মোটেও পছন্দ করেননা।
42-41 : তবে যারা অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাদের অপরাধ ধরা হবেনা।
42-42 : অপরাধী সাব্যস্ত করা হবে তদেরকে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায় বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
42-43 : যে সবর অবলম্বন করে এবং ক্ষমা করে দেয়, তার সে কাজ অবশ্যি আল্লাহর পছন্দনীয় মহোত্তম সংকল্পের কাজ।
42-44 : আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করে দেন, আল্লাহ ছাড়া তার কোনো রক্ষাকারী নেই। এই যালিমরা যখন আযাবের সম্মুখীন হবে, তখন তুমি তাদের বলতে দেখবে: ‘(পৃথিবীতে) ফিরে যাবার কোনো পথ আছে কি?’
42-45 : তুমি দেখতে পাবে, অবনত অপদস্থ করে এদের জাহান্নামে নেয়া হচ্ছে এবং নত চোখ বাঁকা করে তারা তাকে দেখছে। সেদিন মুমিনরা বলবে: ‘আসল ক্ষতিগ্রস্ত তারাই, যারা আজ নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।’ সাবধান, যালিমরা অবশ্যি থাকবে চিরস্থায়ী আযাবের মধ্যে।
42-46 : আল্লাহ ছাড়া তাদের সাহায্য করার জন্যে তাদের আর কোনোই অলি - অভিভাবক থাকবেনা। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করে দেন, তার রক্ষা পাবার আর কোনো পথ থাকেনা।
42-47 : সুতরাং, তোমরা আল্লাহর আহবানে সাড়া দাও (তাঁর নির্দেশ মতো জীবন পরিচালনা করো) সেই দিনটি আসার আগেই, যার আগমন অপ্রতিরোধ্য। সেদিন তোমাদের কোনো আশ্রয়স্থল থাকবেনা এবং তোমাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করারও কেউ থাকবেনা।
42-48 : এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আমরা তো তোমাকে তাদের রক্ষক বানিয়ে পাঠাইনি। বার্তা পৌঁছে দেয়া ছাড়া তোমার কোনো দায় দায়িত্ব নেই। মানুষের অবস্থা তো হলো এই যে, আমরা যখন তাকে আমাদের রহমতের স্বাদ গ্রহণ করাই, সে উল্লসিত হয়ে উঠে। আবার যখন তাদের কৃতকর্মের ফলে তাদের উপর দু:খ দুর্দশা চেপে বসে, তখন মানুষ হয়ে পড়ে চরম অকৃতজ্ঞ।
42-49 : মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীর শাসন - কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর। তিনি তাই সৃষ্টি করেন, যা তিনি চান। তিনি যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন, আর যাকে চান দান করেন পুত্র সন্তান।
42-50 : যাকে চান তিনি পুত্র - কন্যা উভয় সন্তানই দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা করে রাখেন বন্ধ্যা। তিনি সর্বজ্ঞানী এবং সর্বশক্তিমান।
42-51 : কোনো মানুষকে এ মর্যাদা দেয়া হয়নি যে, আল্লাহ তার সাথে (সরাসরি) কথা বলবেন। তিনি কারো সাথে কথা বললে বলে থাকেন অহির (সুক্ষ্ম ইংগিতের) মাধ্যমে, অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে, কিংবা তার কাছে বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠিয়ে দেন এবং সে তাঁর হুকুম মতো তিনি যা চান, তা অহি করে। নি:সন্দেহে তিনি অতি মহান ও মহাবিজ্ঞ।
42-52 : (হে মুহাম্মদ) এ পদ্ধতিতেই আমরা আমাদের নির্দেশ (Command) - এর একটি ‘রূহ’ তোমার কাছে অহি করেছি। তুমি তো কিছুই জানতে না, কিতাব কী? ঈমান কী? (আসল কথা হলো, আমরা তোমার কাছে প্রেরিত) সেই রূহটিকে (তোমার জন্যে) একটি আলোকবর্তিকা বানিয়ে দিয়েছি। এই আলোকবর্তিকা দিয়েই আমরা আমাদের দাসদের যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখিয়ে থাকি। আর নি:সন্দেহে (হে মুহাম্মদ!) তুমি সিরাতুল মুস্তাকিমের (সঠিক পথের) দিকেই ডাকছো।
42-53 : (তুমি মানুষকে) সেই মহান (আল্লাহর) পথের দিকেই ডাকছো, মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীর সবকিছুর যিনি মালিক। সতর্ক হও, নি:সন্দেহে সমস্ত বিষয় (চূড়ান্ত ফায়সালার জন্যে) ফিরে যায় আল্লাহরই কাছে।