আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 57, আল হাদিদ (লোহা, ইস্পাত) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 57, আল হাদিদ (লোহা, ইস্পাত)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২৯, রুকু সংখ্যা: ০৪

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৬মহাবিশ্বের সবকিছু আল্লাহর হুকুম মতো চলছে। আল্লাহ্ মহাবিশ্বের মালিক, জীবন মৃত্যুর মালিক। তিনি আদি ও অন্ত। তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন ছয়টি কালে। তিনি মহাবিশ্বের সম্রাট ও সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক।
০৭-১১ঈমান আনার এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান।
১২-১৯মুমিনদের পরকালীন নিষ্কৃতি। মুনাফিক ও কাফিরদের জন্য জাহান্নাম। আল্লাহর পথে দানকারীরা বহুগুণ বেশি ফেরত পাবে।
২০-২৪দুনিয়ার জীবন প্রকৃত জীবন নয়, পরকালীন জীবনই প্রকৃত জীবন।
২৫রসূলদের পাঠানোর উদ্দেশ্য।
২৬-২৯অতীতের রসূলদের দাওয়াতও কিছু লোক গ্রহণ করেছিল, কিছুলোক গ্রহণ করেনি। ঈমানের পথ আলোকিত পথ।
57-1 : মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবাই আল্লাহর তসবিহ করছে এবং তিনি মহাশক্তিধর মহাপ্রজ্ঞাবান।
57-2 : মহাকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁর। তিনিই জীবনদান করেন এবং মউত ঘটান। তিনি প্রতিটি বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
57-3 : তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন এবং প্রতিটি বিষয়ে তিনি জ্ঞানী।
57-4 : তিনি সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ ও পৃথিবী ছয়টি কালে, অত:পর তিনি সমাসীন হয়েছেন আরশে। তিনি জানেন যা প্রবেশ করে জমিনে এবং যা বের হয় জমিন থেকে, যা নাযিল হয় আসমান থেকে এবং যা মে’রাজ হয় (উঠে যায়) আসমানে। তিনি তোমাদের সাথে থাকেন, তোমরা যেখানেই থাকো। তোমরা যা করো তিনি সবকিছুর দ্রষ্টা।
57-5 : মহাকাশ এবং পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই। আল্লাহর দিকেই ফিরে যায় সমস্ত বিষয়।
57-6 : তিনিই রাতকে ঢুকিয়ে দেন দিনের মধ্যে এবং দিনকে ঢুকিয়ে দেন রাতের মধ্যে এবং তিনিই অন্তরযামী।
57-7 : তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি, আর আল্লাহ্ তোমাদের যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা থেকে ব্যয় করো (আল্লাহর পথে)। তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনে এবং ব্যয় করে (আল্লাহর পথে) তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।
57-8 : তোমাদের কী হয়েছে, কেন তোমরা ঈমান আনোনা আল্লাহর প্রতি, অথচ রসূল তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছেন ঈমান আনতে তোমাদের প্রভুর প্রতি, আর আল্লাহ্ তো তোমাদের থেকে মজবুত অংগীকার গ্রহণ করেছেনই, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
57-9 : তিনিই তাঁর দাসের প্রতি নাযিল করেন সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যা তোমাদের বের করে আনে অন্ধকাররাশি থেকে আলোতে এবং অবশ্যি আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি পরম করুণাময়, পরম দয়াবান।
57-10 : তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কেন ব্যয় করবেনা আল্লাহর পথে? অথচ মহাকাশ এবং পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই। তোমাদের যারা বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে, তারা ঐসব লোকদের চেয়ে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, যারা ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে বিজয়ের পরে। তবে আল্লাহ্ উভয়ের জন্যেই কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা আমল করো আল্লাহ্ সে বিষয়ে খবর রাখেন
57-11 : কে আছে আল্লাহকে ‘করজে হাসানা’ (উত্তম ঋণ) দেবে, তাহলে আল্লাহ্ তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। তাছাড়া তার জন্যে থাকবে সম্মানজনক পুরস্কার।
57-12 : সেদিন তুমি দেখবে, মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীদের, তাদের নূর (আলো) তাদের সামনে এবং ডানে দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের বলা হবে: ‘আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার নিচে দিয়ে জারি থাকবে নদ নদী নহর। সেখানে থাকবে তোমরা চিরকাল। আর এটাই মহাসাফল্য।
57-13 : সেদিন মুনাফিক পুরুষ এবং মুনাফিক নারীরা মুমিনদের বলবে: ‘আপনারা আমাদের জন্যে একটু অপেক্ষা করুন, যাতে আমরা আপনাদের নূর থেকে কিছু (আলো) গ্রহণ করতে পারি।’ তখন তাদের বলা হবে: ‘তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও এবং আলোর সন্ধান করোগিয়ে।’ তখন উভয়ের মাঝখানে স্থাপিত হয়ে যাবে একটি প্রাচীর, যাতে থাকবে একটি দরজা। তার ভেতরভাগে থাকবে রহমত (জান্নাত), আর বহির্ভাগে থাকবে আযাব (জাহান্নাম)।
57-14 : তখন মুনাফিকরা মুমিনদের ডেকে বলবে: ‘আমরা কি (পৃথিবীতে) আপনাদের সাথে ছিলাম না?’ তখন তারা বলবে: ‘হাঁ ছিলে, তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদের ফিতনায় (পরীক্ষায়) ফেলেছিলে, তোমরা (আমাদের অমঙ্গলের) অপেক্ষা করছিলে, সন্দেহ পোষণ করছিলে এবং অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা তোমাদের প্রতারিত করে রেখেছিল। এমনি করে আল্লাহর হুকুম (মৃত্যু কিংবা ইসলামের বিজয়) এসে পড়েছিল, আর মহাপ্রতারক (শয়তান) আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের প্রতারিত করে রেখেছিল।
57-15 : সুতরাং আজ তোমাদের থেকে কোনো ফিদিয়া (মুক্তিপণ) গ্রহণ করা হবেনা এবং কাফিরদের থেকেও নয়। জাহান্নামই হবে তোমাদের আবাস এবং সেটাই হবে তোমাদের মাওলা (তত্ত্বাবধায়ক), আর সেটা যে কতো নিকৃষ্ট পরিণাম!
57-16 : যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর যিকির এবং তিনি যে মহাসত্য (আল কুরআন) নাযিল করেছেন তার পাঠে তাদের হৃদয় বিগলিত হবার সময় কি এখনো হয়নি? ইতোপূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল, এরা যেনো তাদের মতো না হয়। (তাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যে,) একটা দীর্ঘসময় অতিবাহিত হবার পর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অনেকেই হয়ে পড়েছিল ফাসিক।
57-17 : জেনে রাখো, মরে শুকিয়ে যাবার পর আল্লাহ্ জমিনকে পুনর্জীবিত করেন। এভাবে আমরা তোমাদের জন্যে বিশদ বিবরণ দেই আমাদের আয়াতের, যাতে করে তোমরা বুঝতে পারো।
57-18 : নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ এবং দানশীল নারীদের এবং যারা আল্লাহকে করযে হাসানা (উত্তম ঋণ) দেয়, তাদের (ফেরত) দেয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।
57-19 : যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলের প্রতি, তারাই তাদের প্রভুর কাছে সিদ্দিক (সত্যনিষ্ঠ) এবং শহীদ (সত্যের সাক্ষ্য)। তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে তাদের পুরস্কার এবং নূর। আর যারা কুফুরি করে এবং অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আয়াত, তারাই হবে জাহিমের (জাহান্নামের) অধিবাসী।
57-20 : জেনে রাখো, দুনিয়ার জীবনটা হলো খেল তামাশা, চাকচিক্য, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধনমাল ও সন্তান - সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা। এর উপমা হলো বৃষ্টি, যার উৎপাদিত শস্য কৃষকদের উৎফুল্ল করে। তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি দেখতে পাও তা হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে, অবশেষে তা পরিণত হয় খড়কুটায়। আর আখিরাতে রয়েছে কঠোর আযাব, মাগফিরাত (ক্ষমা) এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবনটা প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া আর কিছু নয়।
57-21 : তোমরা প্রতিযোগিতা করে দৌড়ে এসো তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে আর সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান জমিনের প্রশস্ততার মতো। এই জান্নাত প্রস্ত্তত রাখা হয়েছে তাদের জন্যে, যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং রসূলদের প্রতি। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ্ অতীব অনুগ্রহপরায়ণ।
57-22 : পৃথিবীতে কিংবা তোমাদের জীবনে যে বিপদ মসিবত আসে, তা সংঘটিত করার আগেই লিপিবদ্ধ থাকে, এটা আল্লাহর জন্যে খুবই সহজ।
57-23 : যাতে করে তোমরা যা হারাও, তাতে বিমর্ষ না হয়ে পড়ো এবং যা তিনি তোমাদের দেন তাতে অতি উৎফুল্ল না হয়ে পড়ো। আল্লাহ্ তো উদ্ধত দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।
57-24 : যারা বখিলি করে এবং মানুষকে বখিলি করার আদেশ করে এবং যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা জেনে রাখুক, আল্লাহ্ অভাবমুক্ত সপ্রশংসিত।
57-25 : আমরা আমাদের রসূলদের পাঠিয়েছি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এবং তাদের সাথে আমরা নাযিল করেছি কিতাব আর মিজান (মানদন্ড), যাতে করে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। তাছাড়া আমরা নাযিল করেছি ইস্পাত, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি এবং মানুষের জন্যে বহু রকম মুনাফা। এটা এ জন্যে, যাতে আল্লাহ্ বাস্তবে জেনে নেন, না দেখেও কারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলদেরকে সাহায্য করে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
57-26 : আমরা নূহ এবং ইবরাহিমকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের বংশধরদের মধ্যে দিয়েছিলাম নবুয়্যত এবং কিতাব। কিন্তু তাদের কিছু লোক হিদায়াতের পথ অনুসরণ করলেও অধিকাংশই ছিলো ফাসিক।
57-27 : আর আমরা তাদের আদর্শের অনুগামী করেছিলাম আরো অনেক রসূলকে এবং অনুগামী করেছিলাম ঈসা ইবনে মরিয়মকে আর তাকে দিয়েছিলাম ইনজিল। তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম, করুণা এবং দয়া। আর বৈরাগ্য - যা তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে উদ্ভাবন করে নিয়েছিল, আমরা এই বিধান তাদের দেইনি। অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। ফলে তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল আমরা তাদের দিয়েছিলাম তাদের পুরস্কার। তবে তাদের অধিকাংশই ছিলো ফাসিক (সত্যত্যাগী)।
57-28 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ঈমান আনো তাঁর রসূলের প্রতি, তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদের দেবেন দ্বিগুণ পুরস্কার, আর তোমাদের দেবেন নূর (আলো) যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে (জীবন যাপন করবে) এবং তিনি তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।
57-29 : এটা এজন্যে যে, আহলে কিতাবরা যেনো জানতে পারে, আল্লাহর সামান্যতম অনুগ্রহের উপরও তাদের কোনো অধিকার নেই। সমস্ত অনুগ্রহ আল্লাহরই এখতিয়ারে, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল।