আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 59, আল হাশর (সমাবেশ) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 59, আল হাশর (সমাবেশ)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২৪, রুকু সংখ্যা: ০৩

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৬ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং তাদের উৎখাতের বিবরণ।
০৭-১০ফায়দা লাভ করবে কারা?
১১-১৭মুনাফিকদের আচরণ শয়তানের আচরণের মতো।
১৮-২৪মুমিনদের প্রতি উপদেশ। কুরআনের মর্যাদা। আসমাউল হুসনা।
59-1 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তসবিহ করে আল্লাহর। তিনি মহাশক্তিধর, মহাপ্রজ্ঞাবান।
59-2 : তিনিই আহলে কিতাবের কাফিরদের (বনু নজিরের ইহুদিদের) বের করে দিয়েছেন তাদের আবাস থেকে প্রথমবার সমবেতভাবে। তারা বেরিয়ে যাবে বলে তো তোমরা কল্পনাও করোনি। আর তারা মনে করেছিল তাদের দুর্গগুলো তাদের রক্ষা করবে আল্লাহর পাকড়াও থেকে। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের এমন একদিক থেকে শাস্তি দিলেন, যা ছিলো তাদের কল্পনারও বাইরে। আর তাদের অন্তরে সঞ্চার করে দিয়েছিলেন ভীতি। তারা নিজেদের হাতেই নিজেদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ফেলছিল এবং মুমিনদের হাতেও। সুতরাং উপদেশ গ্রহণ করো হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা!
59-3 : আল্লাহ্ তাদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত না দিলেও পৃথিবীতে তাদের অন্য কোনো শাস্তি দিতেন। আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে আগুনের আযাব।
59-4 : এর কারণ, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। আর যারাই আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, আল্লাহ্ অবশ্যি কঠোর শাস্তিদাতা।
59-5 : তোমরা যে খেজুরগাছগুলো কেটেছিলে কিংবা কান্ডের উপর রেখে দিয়েছিলে তাতো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে করেছিলে এবং এজন্যে, যেনো আল্লাহ্ তাদের লাঞ্ছিত করেন।
59-6 : আল্লাহ্ ইহুদিদের থেকে তাঁর রসূলকে যে ফায় (যুদ্ধ ছাড়াই লব্ধ সম্পদ) পাইয়ে দিয়েছেন তার জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করোনি। আল্লাহ্ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রসূলকে কর্তৃত্ব প্রদান করেন। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
59-7 : আল্লাহ্ জনপদবাসীদের থেকে তাঁর রসূলকে যা কিছু দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রসূলের, রসূলের আত্মীয়দের, এতিমদের, মিসকিনদের এবং পথিকদের, যাতে করে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তশালী, কেবল তাদের মাঝেই অর্থ - সম্পদ আবর্তিত না হয়। রসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ করো, আর যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কঠোর শাস্তিদাতা।
59-8 : এই সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্যে যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও অর্থ - সম্পদ থেকে উৎখাত হয়ে এসেছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং সন্তুষ্টি কামনা করে, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে সাহায্য করে। তারা সত্যবাদী।
59-9 : আর তাদের জন্যেও, যারা মুহাজিরদের আসার পূর্ব থেকেই এ নগরীতে বসবাস করে আসছে এবং ঈমান এনেছে। তারা হিজরত করে আসা লোকদের ভালোবাসে। মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে, তার জন্যে তারা অন্তরে আশা পোষণ করেনা। মূলত তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যারা মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত, তারাই সাফল্য অর্জনকারী।
59-10 : যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘আমাদের প্রভু! ক্ষমা করে দাও আমাদেরকে, ঈমানের দিক থেকে আমাদের সাবেক (অগ্রগামী) ভাইদেরকে এবং আমাদের অন্তরে মুমিনদের জন্যে কোনো বিদ্বেষ রেখোনা। আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই তুমি পরম দয়াবান, পরম করুণাময়।’
59-11 : যারা মুনাফিকি করে, তুমি কি তাদের দেখোনা? তারা তাদের আহলে কিতাবের কাফির ভাইদের বলে: ‘তোমাদের যদি বহিষ্কার করা হয়, তবে আমরাও অবশ্যি তোমাদের সাথে দেশ ত্যাগ করবো এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনো কারো কথা শুনবোনা। তোমরা আক্রান্ত হলে অবশ্যি আমরা তোমাদের সাহায্য করবো।’ আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা অবশ্য অবশ্যি মিথ্যাবাদী।
59-12 : ওদেরকে বহিষ্কার করা হলে এরা দেশ ত্যাগ করবেনা, ওরা আক্রান্ত হলে এরা সাহায্যও করবেনা। এরা সাহায্য করতে গেলেও, পেছনে ফিরে পালাবে, তারপর তারা আর কোনো সাহায্য পাবেনা।
59-13 : মূলত এদের মনে আল্লাহর চেয়ে তোমাদের ভয়ই বেশি, কারণ তারা বেবুঝ লোক।
59-14 : তারা সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেনা, করতে পারবে কেবল সুরক্ষিত জনপদের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা দুর্গ প্রাচীরের অন্তরাল থেকে। তাদের পরস্পরের মধ্যেই তো যুদ্ধ প্রকট। তুমি মনে করছো তারা ঐক্যবদ্ধ, অথচ তাদের হৃদয়গুলো বিচ্ছিন্ন। এর কারণ, তারা বেআকল লোক।
59-15 : এদের অবস্থা তাদের অল্প আগের লোকদের মতো, যারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করেছে। এছাড়াও তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
59-16 : তাদের অবস্থা শয়তানের মতো। সে মানুষকে বলে: ‘কুফুরি করো।’ অত:পর সে যখন কুফুরি করে, তখন শয়তান বলে: ‘তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি আল্লাহ্ রাববুল আলামিনকে ভয় করি।’
59-17 : ফলে দু’জনের পরিণতিই হবে জাহান্নাম। সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল। এটাই যালিমদের প্রতিদান।
59-18 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তিই যেনো ভেবে দেখে, সে আগামিকালের (পরকালের) জন্যে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে? আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ খবর রাখেন তোমরা যা আমল করো।
59-19 : তোমরা ঐসব লোকদের মতো হয়োনা যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ্ও তাদের আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। এরাই ফাসিক।
59-20 : জাহান্নামিরা আর জান্নাতিরা সমান নয়। কারণ, জান্নাতিরা হবে সফলকাম।
59-21 : আমরা যদি এ কুরআনকে কোনো পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম, তবে তুমি সেটাকে দেখতে আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে পড়ছে। আমরা এসব দৃষ্টান্ত প্রদান করি মানুষের জন্যে যাতে করে তারা চিন্তা - ভাবনা করে।
59-22 : তিনিই আল্লাহ্, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি গায়েব ও দৃশ্যের জ্ঞানী। তিনি পরম করুণাময়, পরম দয়াবান।
59-23 : তিনিই আল্লাহ্, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তিনিই সার্বভৌম সম্রাট, তিনি সব ত্রুটি থেকে পবিত্র, তিনি শান্তি (দাতা), তিনি নিরাপত্তাদাতা, তিনি রক্ষক, তিনি মহাশক্তিধর, তিনি প্রবল - প্রচন্ড, তিনি সর্বোচ্চ - মহান। তারা (তাঁর সাথে) যাদের শরিক করে, তিনি সেগুলো থেকে পবিত্র - মহান।
59-24 : তিনিই আল্লাহ্, স্রষ্টা, সৃষ্টির উদ্ভাবক, আকৃতিদাতা, সব সুন্দর নাম তাঁরই। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই তাঁর তসবিহ্ করে। তিনি মহাশক্তিধর, মহাপ্রজ্ঞাবান।