আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, Chapter: 46, আল আহক্বাফ - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10040

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

Chapter: 46, আল আহক্বাফ

46-1 : হা - মীম।
46-2 : এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্‌র নিকট হইতে অবতীর্ণ ;
46-3 : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুই আমি যথাযথভাবে নির্দিষ্ট কালের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। কিন্তু কাফিররা, উহাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হইয়াছে তাহা হইতে মুখ ফিরাইয়া নেয়।
46-4 : বল, ‘তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাহাদেরকে ডাক তাহাদের কথা ভাবিয়া দেখিয়াছ কি? ইহারা পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করিয়াছে আমাকে দেখাও অথবা আকাশমণ্ডলীতে উহাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি? পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান থাকিলে তাহা তোমরা আমার নিকট উপস্থিত কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’
46-5 : সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যাহা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও উহাতে সাড়া দিবে না? এবং এইগুলি উহাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিতও নয়।
46-6 : যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হইবে তখন ঐগুলি হইবে উহাদের শত্রু এবং ঐগুলি উহাদের ‘ইবাদত অস্বীকার করিবে।
46-7 : যখন উহাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয় এবং উহাদের নিকট সত্য উপস্থিত হয়, তখন কাফিররা বলে, ‘ইহা তো সুস্পষ্ট জাদু।’
46-8 : তবে কি উহারা বলে যে, ‘সে ইহা উদ্ভাবন করিয়াছে।’ বল, ‘যদি আমি ইহা উদ্ভাবন করিয়া থাকি, তবে তোমরা তো আল্লাহ্‌র শাস্তি হইতে আমাকে কিছুতেই রক্ষা করিতে পারিবে না। তোমরা যে বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত আছ, সে সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ সবিশেষ অবহিত। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে তিনিই যথেষ্ট এবং তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
46-9 : বল, ‘আমি কোন নূতন রাসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হইবে ; আমি আমার প্রতি যাহা ওহী করা হয় কেবল তাহারই অনুসরণ করি। আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’
46-10 : বল, ‘তোমরা ভাবিয়া দেখিয়াছ কি যদি এই কুরআন আল্লাহ্‌র নিকট হইতে অবতীর্ণ হইয়া থাকে আর তোমরা ইহাতে অবিশ্বাস কর, অথচ বনী ইসরাঈলের একজন ইহার অনুরূপ কিতাব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়াছে এবং ইহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে ; আর তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ কর, তাহা হইলে তোমাদের পরিণাম কি হইবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
46-11 : মু’মিনদের সম্পর্কে কাফিররা বলে, ‘যদি ইহা ভাল হইত তবে তাহারা ইহার দিকে আমাদেরকে অতিক্রম করিয়া যাইতে পারিত না।’ আর যখন উহারা ইহা দ্বারা সৎপথপ্রাপ্ত হয় নাই তখন তাহারা অবশ্য বলিবে, ‘ইহা তো এক পুরাতন মিথ্যা।’
46-12 : ইহার পূর্বে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ। আর এই কিতাব ইহার প্রত্যায়নকারী, আরবী ভাষায়, যেন ইহা জালিমদেরকে সতর্ক করে এবং যাহারা সৎকর্ম করে তাহাদেরকে সুসংবাদ দেয়।
46-13 : যাহারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক তো আল্লাহ্’ অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
46-14 : তাহারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, তাহারা যাহা করিত তাহার পুরস্কারস্বরূপ।
46-15 : আমি মানুষকে তাহার মাতা - পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়াছি। তাহার জননী তাহাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে, তাহাকে গর্ভে ধারণ করিতে ও তাহার স্তন্য ছাড়াইতে লাগে ত্রিশ মাস, ক্রমে সে যখন পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বৎসরে উপনীত হয় তখন বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক ! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাহাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা - মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করিয়াছ, তাহার জন্য এবং যাহাতে আমি সৎকর্ম করিতে পারি যাহা তুমি পসন্দ কর ; আমার জন্য আমার সন্তান - সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হইলাম এবং আমি অবশ্যই আত্মসর্মপণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
46-16 : ‘আমি ইহাদেরই সুকৃতিগুলি গ্রহণ করিয়া থাকি এবং মন্দ কর্মগুলি ক্ষমা করি, তাহারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। ইহাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে তাহা সত্য।
46-17 : আর এমন লোক আছে, যে তাহার মাতা - পিতাকে বলে, ‘আফসোস তোমাদের জন্য ! তোমরা কি আমাকে এই ভয় দেখাইতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হইব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হইয়াছে?’ তখন তাহার মাতা - পিতা আল্লাহ্‌র নিকট ফরিয়াদ করিয়া বলে, ‘দুর্ভোগ তোমার জন্য! তুমি বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য।’ কিন্তু সে বলে, ‘ইহা তো অতীত কালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়।’
46-18 : ইহাদের পূর্বে যে জিন ও মানব সম্প্রদায় গত হইয়াছে তাহাদের মত ইহাদের প্রতিও আল্লাহ্‌র উক্তি সত্য হইয়াছে। ইহারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।
46-19 : প্রত্যেকের মর্যাদা তাহার কর্মানুযায়ী, ইহা এইজন্য যে, আল্লাহ্‌ প্রত্যেকের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তাহাদের প্রতি অবিচার করা হইবে না।
46-20 : যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সন্নিকটে উপস্থিত করা হইবে সেদিন উহাদেরকে বলা হইবে, ‘তোমরা তোমাদের পার্থিব জীবনেই সুখ - সম্ভার পাইয়াছ এবং সেইগুলি উপভোগও করিয়াছ। সুতরাং আজ তোমাদেরকে দেওয়া হইবে অবমাননাকর শাস্তি। কারণ তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিয়াছিলে এবং তোমরা ছিলে সত্যদ্রোহী।’
46-21 : স্মরণ কর, ‘আদ্ সম্প্রদায়ের ভ্রাতার কথা, যাহার পূর্বে এবং পরেও সতর্ককারীরা আসিয়াছিল। সে তাহার আহ্‌কাফ্‌বাসী সম্প্রদায়কে সতর্ক করিয়াছিল এই বলিয়া, ‘তোমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত কাহারও ‘ইবাদত করিও না। আমি তো তোমাদের জন্য মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করিতেছি।’
46-22 : উহারা বলিয়াছিল, ‘তুমি কি আমাদেরকে আমাদের দেব - দেবীগুলির পূজা হইতে নিবৃত্ত করিতে আসিয়াছ? তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদেরকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর।’
46-23 : সে বলিল, ‘ইহার জ্ঞান তো কেবল আল্লাহ্‌রই নিকট আছে। আমি যাহা লইয়া প্রেরিত হইয়াছি কেবল তাহাই তোমাদের নিকট প্রচার করি, কিন্তু আমি দেখিতেছি, তোমরা এক মূঢ় সম্প্রদায়।’
46-24 : ‘অতঃপর যখন উহারা উহাদের উপত্যকার দিকে মেঘ আসিতে দেখিল তখন বলিতে লাগিল, ‘উহা তো মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করিবে।’ হূদ বলিল, ‘ইহাই তো তাহা, যাহা তোমরা ত্বরান্বিত করিতে চাহিয়াছ, এক ঝড়, ইহাতে রহিয়াছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
46-25 : ‘আল্লাহ্‌র নির্দেশে ইহা সমস্তকিছুকে ধ্বংস করিয়া দিবে।’ অতঃপর উহাদের পরিণাম এই হইল যে, উহাদের বসতিগুলি ছাড়া আর কিছুই রহিল না। এইভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়া থাকি।
46-26 : আমি উহাদেরকে যে প্রতিষ্ঠা দিয়াছিলাম তোমাদেরকে তাহা দেই নাই ; আমি উহাদেরকে দিয়াছিলাম কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ; কিন্তু উহাদের কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় উহাদের কোন কাজে আসে নাই; কেননা উহারা আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহকে অস্বীকার করিয়াছিল। যাহা লইয়া উহারা ঠাট্টা - বিদ্রূপ করিত, উহাই উহাদেরকে পরিবেষ্টন করিল।
46-27 : আমি তো ধ্বংস করিয়াছিলাম তোমাদের চতুষ্পার্শ্ববর্তী জনপদসমূহ; আমি উহাদেরকে বিভিন্নভাবে আমার নিদর্শনাবলী বিবৃত করিয়াছিলাম, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।
46-28 : উহারা আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য লাভের জন্য আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাহাদেরকে ইলাহ্‌রূপে গ্রহণ করিয়াছিল তাহারা উহাদেরকে সাহায্য করিল না কেন? বস্তুত উহাদের ইলাহ্‌গুলি উহাদের নিকট হইতে অন্তর্হিত হইয়া গেল। উহাদের মিথ্যা ও অলীক উদ্ভাবনের পরিণাম এইরূপই।
46-29 : স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করিয়াছিলাম একদল জিনকে, যাহারা কুরআন পাঠ শুনিতেছিল। যখন উহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইল, উহারা বলিল, ‘চুপ করিয়া শ্রবণ কর।’ যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হইল উহারা উহাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরিয়া গেল সতর্ককারীরূপে।
46-30 : উহারা বলিয়াছিল, ‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাবের পাঠ শ্রবণ করিয়াছি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে মূসার পরে, ইহা উহার পূর্ববর্তী কিতাবকে প্রত্যয়ন করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে।
46-31 : ‘হে আমাদের সম্প্রদায় ! আল্লাহ্‌র দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাহার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহ্‌ তোমাদের পাপ ক্ষমা করিবেন এবং মর্মন্তুদ শাস্তি হইতে তোমাদেরকে রক্ষা করিবেন।’
46-32 : কেহ যদি আল্লাহ্‌র দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া না দেয় তবে সে পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র অভিপ্রায় ব্যর্থ করিতে পারিবে না এবং আল্লাহ্‌ ব্যতীত তাহাদের কোন সাহায্যকারী থাকিবে না। উহারাই সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রহিয়াছে।
46-33 : উহারা কি অনুধাবন করে না যে, আল্লাহ্‌, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং এই সকলের সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তি বোধ করেন নাই, তিনি মৃতের জীবন দান করিতেও সক্ষম? বস্তুত তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
46-34 : যেই দিন কাফিরদেরকে উপস্থিত করা হইবে জাহান্নামের নিকট, সেই দিন উহাদেরকে বলা হইবে, ‘ইহা কি সত্য নয়?’ উহারা বলিবে, ‘আমাদের প্রতিপালকের শপথ ! ইহা সত্য।’ তখন তাহাদেরকে বলা হইবে, ‘শাস্তি আস্বাদন কর, কারণ তোমরা ছিলে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী।’
46-35 : অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর যেমন ধৈর্য ধারণ করিয়াছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। তুমি উহাদের জন্য ত্বরা করিও না। উহাদেরকে যেই বিষয়ে সতর্ক করা হইয়াছে তাহা যেই দিন উহারা প্রত্যক্ষ করিবে, সেই দিন উহাদের মনে হইবে, উহারা যেন দিবসের এক দণ্ডের বেশি পৃথিবীতে অবস্থান করে নাই। ইহা এক ঘোষণা, পাপাচারী সম্প্রদায়কেই ধ্বংস করা হইবে।