আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক, Chapter: 28, আল কাসাস - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10060

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক

Chapter: 28, আল কাসাস

28-1 : ত্বা, সীন, মীম।
28-2 : এসব হচ্ছে সুস্পষ্ট গ্রন্থের বাণীসমূহ।
28-3 : আমরা তোমার কাছে মূসা ও ফিরআউনের কাহিনী থেকে যথাযথভাবে বিবৃত করছি সেই লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস করে।
28-4 : নিঃসন্দেহ ফিরআউন দেশে খুব উদ্ধত হয়েছিল, আর এর বাসিন্দাদের সে দলবিভক্ত করেছিল, সে তাদের একদলকে দুর্বল বানিয়েছিল, - - সে তাদের বেটাছেলেদের হত্যা করত ও বাঁচতে দিত তাদের মেয়েছেলেদের। নিঃসন্দেহ সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্যতম।
28-5 : আর আমরা চেয়েছিলাম যাদের পৃথিবীতে দুর্বল বানানো হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে। আর তাদের নেতা করতে আর তাদের উত্তরাধিকারী করতে,
28-6 : আর দেশে তাদের প্রতিষ্ঠা করতে, আর ফিরআউন ও হামান ও তাদের সেনাবাহিনীকে আমরা তা দেখাতে যা তারা তাদের থেকে আশংকা করত।
28-7 : আর আমরা মূসার মাতার কাছে অনুপ্রেরণা দিলাম এই বলে - - ''এটিকে স্তন্যদান করো, তারপর যখন তার সন্বন্ধে আশংকা কর তখন তাকে পানিতে ফেলে দাও, আর ভয় করো না ও দুঃখও করো না। নিঃসন্দেহ আমরা তাকে ফিরিয়ে দেব তোমার কাছে, আর তাকে বানিয়ে তুলব রসূলগণের একজন ক’রে।’’
28-8 : ''তারপর তাঁকে তোলে নিল ফিরআউনের পরিজনবর্গ যেন তিনি তাদের জন্য হতে পারেন একজন শত্রু ও দুঃখ। নিঃসন্দেহ ফিরআউন ও হামান ও তাদের সৈন্যসামন্ত ছিল দোষী।
28-9 : ''আর ফিরআউনের স্ত্রী বলল - - ''এ আমার জন্য ও তোমার জন্য এক চোখ - জোড়ানো আনন্দ! একে কাতল করো না, হতে পারে সে আমাদের উপকারে আসবে, অথবা তাকে আমরা পুত্ররূপে গ্রহণ করব।’’ আর তারা বুঝতে পারল না।’’
28-10 : আর পরক্ষণেই মূসার মায়ের হৃদয় মুক্ত হ’ল। সে হয়ত এটি প্রকাশ করেই ফেলত যদি না আমরা তার হৃদয়ে বল দিতাম, যেন সে মুমিনদের মধ্যেকার হয়।
28-11 : আর সে তাঁর বোনকে বলল - - ''এর পেছনে পেছনে যাও।’’ কাজেই সে তাঁর প্রতি লক্ষ্য রেখেছিল দূর থেকে, আর তারা বুঝতে পারে নি।
28-12 : আর আমরা আগে থেকেই স্তন্যপান তাঁর জন্য নিষিদ্ধ করেছিলাম। তখন সে বললে, ''আমি কি আপনাদের এমন কোনো ঘরের লোকের বিষয়ে বলে দেব যারা আপনাদের জন্য তাকে লালন - পালন করতেও পারে, আর তারা এর শুভাকাঙ্খী হবে?’’
28-13 : তখন আমরা তাঁকে ফিরিয়ে দিলাম তাঁর মায়ের কাছে, যেন তার চোখ জুড়িয়ে যায় আর যেন সে দুঃখ না করে, আর যেন সে জানতে পারে যে আল্লাহ্‌র ওয়াদা ধ্রুবসত্য। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
28-14 : আর যখন তিনি তাঁর যৌবনে পৌঁছলেন ও পূর্ণবয়স্ক হলেন, আমরা তখন তাঁকে জ্ঞান ও বিদ্যা দান করলাম। আর এইভাবেই আমরা সৎকর্মীদের প্রতিদান দিই।
28-15 : আর তিনি শহরে প্রবেশ করলেন যে সময়ে এর অধিবাসীরা অসতর্ক ছিল, তখন তিনি সেখানে দেখতে পেলেন দুজন লোক মারামারি করছে, - - একজন তাঁর দলের আর একজন তাঁর শত্রুপক্ষের, তখন যে ব্যক্তি তাঁর দলীয় সে তাঁর সাহায্যের জন্য চীৎকার করল তার বিরুদ্ধে যে তাঁর শত্রুপক্ষীয়, সুতরাং মূসা তাকে ঘুষি মারলেন, তখন তিনি তাকে খতম করে ফেললেন। তিনি বললেন - - ''এইটি শয়তানের কাজের ফলে। নিঃসন্দেহ সে এক শত্রু - - প্রকাশ্যভাবে বিভ্রান্তকারী।’’
28-16 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! আমি নিঃসন্দেহ আমার নিজের প্রতি অত্যাচার করে ফেলেছি, সেজন্য আমাকে পরিত্রাণ করো।’’ সুতরাং তিনি তাঁকে পরিত্রাণ করলেন। নিঃসন্দেহ তিনি - - তিনিই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
28-17 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! যেহেতু তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, তাই আমি কখনো অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক হবো না।’’
28-18 : তারপর তিনি সকালবেলায় ভীত - সন্ত্রস্ত অবস্থায় শহরটিতে বেরুলেন সতর্ক দৃষ্টি ফেলে, তখন হঠাৎ যে আগের দিনে তাঁর সাহায্য চেয়েছিল সে তাঁর প্রতি চীৎকার করল। মূসা তাকে বললেন - - ''তুমি তো স্পষ্টই একজন ঝগড়াটে।’’
28-19 : তারপর যখন তিনি পাকড়াতে চাইলেন তাকে যে তাঁদের উভয়েরই শত্রু তখন সে বললে - - ''হে মূসা! তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও যেমন তুমি একজনকে গতকাল মেরে ফেলেছ, তুমি তো চাইছ কেবল দেশে জবরদস্ত বনতে, আর তুমি চাও না শান্তিস্থাপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে।’’
28-20 : আর একজন লোক শহরের দূরপ্রান্ত থেকে ছুটতে ছুটতে এল। সে বললে - - ''হে মূসা! নিঃসন্দেহ প্রধানরা তোমার সন্বন্ধে পরামর্শ করছে তোমাকে হত্যা করতে, কাজেই বেরিয়ে যাও, নিঃসন্দেহ আমি তোমার জন্য মঙ্গলাকাঙ্খীদের একজন ।’’
28-21 : সুতরাং তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন ভীতসন্ত্রস্তভাবে সতর্ক দৃষ্টি মেলে। তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! আমাকে অত্যাচারীগোষ্ঠী থেকে উদ্ধার করো।’’
28-22 : আর তিনি যখন মাদয়ান অভিমুখে যাত্রা করলেন তখন বললেন - - ''হতে পারে আমার প্রভু আমাকে ঠিক পথে চালিয়ে নেবেন।’’
28-23 : আর যখন তিনি মাদয়ানের জলাশয়ের কাছে এলেন তখন তিনি তাতে দেখলেন একদল লোক পানি খাওয়াচ্ছে, আর তাদের পাশে তিনি দেখতে পেলেন দুজন মহিলা আগলে রেখেছে। তিনি বললেন - - ''তোমাদের দুজনের কি ব্যাপার?’’ তারা বললে - - ''আমরা পানি খাওয়াতে পারছি না যে পর্যন্ত না রাখালরা সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের আব্বা খুব বুড়ো মানুষ।’’
28-24 : সুতরাং তিনি তাদের দুজনের জন্য পানি খাওয়ালেন, তারপর ছায়ার দিকে ফিরে গেলেন আর বললেন - - ''আমার প্রভু! তুমি আমার প্রতি যে কোনো অনুগ্রহ পাঠাবে আমি তারই জন্যে ভিখারী হয়ে আছি।’’
28-25 : তারপরে সেই দুইজন মহিলার একজন তাঁর নিকটে লাজুকভাবে হেঁটে এল। সে বললে - - ''আমার আব্বা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন আপনি যে আমাদের জন্য পানি খাইয়েছেন সেজন্য আপনাকে পারিশ্রমিক প্রদান করতে।’’ তারপর যখন তিনি তার কাছে এলেন এবং তার কাছে বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন তখন সে বলল - - ''ভয় করো না, তুমি অত্যাচারী লোকদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছ।’’
28-26 : মেয়ে দুজনের একজন বলল - - ''হে আমার আব্বা! তুমি একে কর্মচারী ক’রে নাও, তুমি যাদের নিযুক্ত করতে পার তাদের মধ্যে সে - ই সব চাইতে ভাল যে বলবান, বিশ্বস্ত।’’
28-27 : সে বলল - - ''আমি তো চাইছি আমার এই দুই মেয়ের একটিকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে এই শর্তে যে তুমি আমার জন্য চাকরি করবে আট হজ, আর যদি তুমি দশ পূর্ণ কর তাহলে সে তোমার ইচ্ছা, আর আমি চাই না যে আমি তোমার উপরে কঠোর হব। তুমি শীঘ্রই, ইন - শা - আল্লাহ্‌, আমাকে দেখতে পাবে ন্যায়পরায়ণদের একজন।’’
28-28 : তিনি বললেন - - ''এই - ই আমার মধ্যে ও আপনার মধ্যে রইল। এ দুটি মিয়াদের যে কোনোটি আমি যদি পূর্ণ করি তাহলে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকবে না। আর আমরা যা কথা বলছি তার উপরে আল্লাহ্ কার্যনির্বাহক রইলেন।’’
28-29 : তারপর মূসা যখন মিয়াদ পূর্ণ করেলন এবং তাঁর পরিবারবর্গসহ যাত্রা করলেন, তখন তিনি পাহাড়ের কিনার থেকে আগুনের আভাস পেলেন। তিনি তাঁর পরিজনদের বললেন - - ''তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুনের আভাস পাচ্ছি, সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য কোনো খবর নিয়ে আসতে পারব অথবা আগুনের একটি আঙটা যাতে তোমরা নিজেদের গরম করতে পার।’’
28-30 : তারপর যখন তিনি তার কাছে এলেন তখন একটি আওয়াজ উঠল উপত্যকার ডান দিকের ঝোপঝাড়ের পুণ্য স্থান থেকে এই বলে - - ''হে মূসা! নিঃসন্দেহ আমিই আল্লাহ্‌, বিশ্বজগতের প্রভু।’’
28-31 : আর এই বলে - - ''তোমার লাঠি ছুঁড়ে মার।’’ তারপর যখন তিনি এটিকে দেখলেন দৌড়ছে - - যেন এটি একটি সাপ, তখন তিনি পিছু হটলেন ছুটতে ছুটতে আর ঘুরে দেখলেন না। ''ওহ মূসা! সামনে এসো, আর ভয় করো না, নিঃসন্দেহ তুমি নিরাপদ লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
28-32 : ''তোমার হাত তোমার পকেটে ঢোকাও, এটি বেরিয়ে আসবে সাদা হয়ে কোনো দোষত্রুটি ছাড়া, আর তোমার পাখনা তোমার প্রতি চেপে ধর ভয়ের থেকে। সুতরাং এ দুটি হচ্ছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে ফিরআউন ও তার প্রধানদের কাছে দুই প্রমাণ। নিঃসন্দেহ তারা হচ্ছে সীমালংঘনকারী জাতি।’’
28-33 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করে ফেলেছিলাম, কাজেই আমি ভয় করছি তারা আমাকে মেরে ফেলবে।
28-34 : ''আর আমার ভাই হারূন, সে আমার থেকে কথাবার্তায় বেশী বাক্‌পটু, সেজন্য তাকে আমার সঙ্গে অবলন্বনস্বরূপ পাঠিয়ে দাও যাতে সে আমার সত্যতা সমর্থন করে। আমি অবশ্য আশংকা করছি যে তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’’
28-35 : তিনি বললেন - - ''আমরা শীঘ্রই তোমার বাহু শক্তিশালী করব তোমার ভাইকে দিয়ে, আর তোমাদের উভয়ের জন্য আমরা ক্ষমতা দেবো, কাজেই তারা তোমাদের নাগাল পাবে না, - - আমাদের নিদর্শনাবলী নিয়ে, - - তোমরা দুজন ও যারা তোমাদের অনুসরণ করে তারা বিজয়ী হবে।’’
28-36 : তারপর মূসা যখন তাদের কাছে এলেন আমাদের সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে, তারা বলল - - ''এ তো বানানো ভেলকিবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়, আর একরম আমাদের পূর্ববর্তী বাপদাদার আমলেও আমরা শুনি নি।’’
28-37 : আর মূসা বললেন - - ''আমার প্রভু ভাল জানেন কে তাঁর কাছ থেকে পথনির্দেশ নিয়ে এসেছে আর কার জন্য হবে চরমোৎকর্ষ আবাস। এটি নিশ্চিত যে অত্যাচারীদের সফলকাম করা হবে না।’’
28-38 : আর ফিরআউন বলল - - ''ওহে প্রধানগণ! তোমাদের জন্য আমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য আছে বলে তো আমি জানি না! সুতরাং, হে হামান, তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও, তারপর আমার জন্য একটি উঁচু দালান তৈরী কর, হয়ত আমি মূসার উপাস্যের সন্নিকটে উঠতে পারব। তবে আমি অবশ্য তাকে মিথ্যাবাদীদের একজন বলেই জ্ঞান করি।’’
28-39 : আর সে ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ অসঙ্গতভাবে দুনিয়াতে গর্ব করেছিল, আর তারা ভেবেছিল যে আমাদের কাছে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না।
28-40 : সেজন্য আমরা তাকে ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের পাকড়াও করেছিলাম, আর তাদের নিক্ষেপ করেছিলাম সমুদ্রে। অতএব দেখ, কেমন হয়েছিল অত্যাচারীদের পরিণাম!
28-41 : আর আমরা তাদের বানিয়েছিলাম সর্দার, - - তারা আহ্বান করত আগুনের দিকে, আর কিয়ামতের দিনে তাদের সাহায্য করা হবে না।
28-42 : আর এই দুনিয়াতে আমরা অসন্তষ্টিকে তাদের পিছু ধরিয়েছিলাম, আর কিয়ামতের দিনে তারা হবে ঘৃণিতদের মধ্যেকার।
28-43 : আর আমরা আলবৎ মূসাকে ধর্মগ্রন্থ দিয়েছিলাম - - পূর্ববর্তী বংশদের আমরা ধ্বংস করে ফেলার পরে - - মানুষদের জন্য দৃষ্টি - উন্মোচক, আর পথপ্রদর্শক, আর একটি করুণা, - - যেন তারা মনোযোগ দিতে পারে।
28-44 : আর তুমি পশ্চিম প্রান্তে ছিলে না যখন আমরা মূসার কাছে বিধান দিয়েছিলাম, আর তুমি প্রতক্ষদর্শীদের মধ্যেও ছিলে না।
28-45 : বস্তুতঃ আমরা বহু মানববংশের উদ্ভব করেছিলাম, তারপর জীবনটা তাদের কাছে সুদীর্ঘ মনে হয়েছিল। আর তুমি মাদয়ানের অধিবাসীদের সঙ্গে বসবাসকারী ছিলে না তাদের কাছে আমাদের বাণীসমূহ আবৃত্তি করা অবস্থায়, কিন্তু আমরাই তো রসূল প্রেরণ করতে রয়েছিলাম।
28-46 : আর তুমি পাহাড়ের নিকটে ছিলে না যখন আমরা আহ্বান করেছিলাম, কিন্তু এটি তোমার প্রভু থেকে এক করুণা, যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক বংশকে যাদের কাছে তোমার আগে সতর্ককারীদের কেউ আসেন নি, যেন তারা মনোযোগ দিতে পারে।
28-47 : আর পক্ষান্তরে যদি কোনো বিপদ তাদের পাকড়াত তাদের হাত যা আগবাড়িয়েছে সেজন্য তাহলে তারা বলতে পারত - - ''আমাদের প্রভু! কেন তুমি আমাদের কাছে কোনো রসূল পাঠাও নি তাহলে তো আমরা তোমার নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে পারতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতাম?’’
28-48 : কিন্তু যখন আমাদের তরফ থেকে তাদের কাছে সত্য এসেছে তারা বলছে - - ''মুসাকে যেমন দেওয়া হয়েছিল তাকে কেন তেমনটা দেওয়া হ’ল না?’’ কী! মূসাকে ইতিপূর্বে যা দেওয়া হয়েছিল তাতে কি তারা অবিশ্বাস করে নি? তারা বলে - - ''দুখানা জাদু - - একে অন্যের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’’ আর তারা বলে - - ''আমরা আলবৎ সবটাতেই অবিশ্বাসী।’’
28-49 : তুমি বলো - - ''তবে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে একখানা ধর্মগ্রন্থ নিয়ে এস যা এই দুইখানার চাইতেও ভাল পথনির্দেশক, আমিও তা অনুসরণ করব, যদি তোমরা।’’
28-50 : কিন্তু যদি তারা তোমার জবাব না দেয়, তাহলে জেনে রেখো, তারা অবশ্যই তাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ করছে। আর কে বেশী পথভ্রান্ত তার চাইতে যে তার খেয়াল - খুশির অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে পথনির্দেশ ব্যতিরেকে? নিঃসন্দেহ অন্যায়কারী লোককে আল্লাহ্ পথ দেখান না।
28-51 : আর আমরা অবশ্যই তাদের কাছে বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি যেন তারা মনোযোগ দিতে পারে।
28-52 : যাদের কাছে আমরা এর আগে ধর্মগ্রন্থ দিয়েছিলাম তারা স্বয়ং এতে বিশ্বাস করে।
28-53 : আর যখন এটি তাদের কাছে পাঠ করা হয় তারা বলে - - ''আমরা এতে ঈমান আনলাম, নিঃসন্দেহ এটি আমাদের প্রভু র কাছ থেকে সত্য, নিঃসন্দেহ আমরা এর আগেও মুসলিম ছিলাম।’’
28-54 : এদের দুইবার তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে যেহেতু তারা অধ্যবসায় করেছিল, এবং তারা ভালো দিয়ে মন্দকে প্রতিরোধ করে, আর আমরা তাদের যে রিযেক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে থাকে।
28-55 : আর যখন তারা বাজে কথা শোনে তখন তারা তা থেকে সরে যায় এবং বলে - - ''আমাদের জন্য আমাদের কাজ আর তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ, তোমাদের প্রতি 'সালাম’। অজ্ঞদের আমরা কামনা করি না।’’
28-56 : নিঃসন্দেহ তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি ধর্মপথে আনতে পারো না, কিন্তু আল্লাহ্‌ই পথ দেখান যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনিই ভাল জানেন সৎপথপ্রাপ্তদের।
28-57 : আর তারা বলে - - ''আমরা যদি তোমার সঙ্গে ধর্মপথ অনুসরণ করি তাহলে আমাদের দেশ থেকে আমাদের উৎখাত করা হবে।’’ আমরা কি তাদের জন্য এক নিরাপদ পুণ্যস্থান প্রতিষ্ঠিত করি নি যেখানে আনা হয় হরেক রকমের ফল - ফসল, আমাদের তরফ থেকে রিযেকস্বরূপে? কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
28-58 : আর জনপদদের কতটাকে যে আমরা ধ্বংস করেছি যে গর্ব করেছিল তার প্রাচুর্যের জন্য! আর এইসব তাদের ঘরবাড়ি, - - তাদের পরে অল্প কতক ব্যতীত সেগুলোতে বসবাস করা হয় নি। আর আমরা, খোদ আমরা হচ্ছি উত্তরাধিকারী।
28-59 : আর তোমার প্রভু কখনো জনপদগুলোর ধ্বংসকারক নন যে পর্যন্ত না তিনি তাদের মাতৃভূমিতে একজন রসূল উত্থাপন করেছেন তাদের কাছে আমাদের বাণীসমূহ বিবৃত করতে, আর আমরা কখনো জনপদসমূহের ধ্বংসকারী নই যদি না তাদের অধিবাসীরা সীমালংঘনকারী হয়।
28-60 : আর বিষয় - আশয়ের যা কিছু তোমাদের দেওয়া হয়েছে তা তো এই দুনিয়ার জীবনের ভোগসম্ভার ও এরই শোভা - সৌন্দর্য, আর যা কিছু আল্লাহ্‌র কাছে রয়েছে সে - সব আরো ভাল ও আরো স্থায়ী। তোমরা কি তবু বুঝবে না?
28-61 : যাকে আমরা প্রতি‌শ্রুতি দিয়েছি উত্তম প্রতি‌শ্রুতিতে যা সে পেতে যাচ্ছে, সে কি তবে তার মতো যাকে দেওয়া হয়েছে এই দুনিয়ার জীবনের ভোগসম্ভার, তারপর কিয়ামতের দিনে সে হবে অভিযুক্তদের মধ্যেকার?
28-62 : আর সেদিন তাদের তিনি ডাকবেন ও বলবেন - - ''কোথায় আমার শরীকরা যাদের তোমরা উদ্ভাবন করতে?’’
28-63 : যাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য সত্যপ্রতিপন্ন হয়েছে তারা বলল - - ''আমাদের প্রভু! এরাই তারা যাদের আমরা বিপথে নিয়েছিলাম, আমরা তাদের বিপথে নিয়েছিলাম যেমন আমরা নিজেরা বিপথে গিয়েছিলাম। আমরা তোমার কাছে আমাদের দোষ স্খালন করছি। এটি নয় যে তারা আমাদেরই পূজা করত।’’
28-64 : আর বলা হবে - - ''তোমাদের শরীকান - দেবতাদের ডাকো।’’ সুতরাং তারা তাদের প্রতি সাড়া দেবে না, আর তারা শাস্তি দেখতে পাবে। আহা! যদি তারা সৎপথ অনুসরণ করত!
28-65 : আর সেইদিন যখন তিনি তাদের ডাকবেন ও বলবেন - - ''তোমরা প্রেরিত - পুরুষদের কী জবাব দিয়েছিলে?’’
28-66 : তখন বক্তব্যগুলো সেইদিন তাদের কাছ ঝাপসা হয়ে যাবে, কাজেই তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে না।
28-67 : কিন্তু তার ক্ষেত্রে - - যে তওবা করে এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাহলে হয়ত সে সফলতাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
28-68 : আর তোমার প্রভু যা ইচ্ছা করেন তাই সৃষ্টি করেন আর মনোনয়ন করেন, তাদের কোনো এখতিয়ার নেই। আল্লাহ্‌রই সব মহিমা, আর তারা যা অংশী আরোপ করে তা থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।
28-69 : আর তোমার প্রভু ভাল জানেন যা তাদের অন্তর লুকিয়ে রাখে আর যা তারা প্রকাশ করে।
28-70 : আর তিনিই আল্লাহ্‌, তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। তাঁরই সমস্ত স্তুতি আগে ও পরে, আর বিধান তাঁরই, আর তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
28-71 : বল - - ''তোমরা কি ভেবে দেখেছ - - আল্লাহ্ যদি তোমাদের উপরে রাত্রি স্থায়ী করতেন কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাহলে আল্লাহ্ ছাড়া এমন কোন উপাস্য আছে যে তোমাদের জন্য প্রদীপ নিয়ে আসবে? তোমরা কি তবুও শুনবে না।’’
28-72 : বল - - ''তোমরা কি ভেবে দেখেছ - - আল্লাহ্ যদি তোমাদের জন্য দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করতেন তাহলে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন উপাস্য আছে যে তোমাদের জন্য রাত্রিকে নিয়ে আসবে যার মধ্যে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তোমরা কি তবুও দেখবে না?’’
28-73 : বস্তুতঃ তাঁর দয়া থেকেই তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন বানিয়েছেন যেন তাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর করুণাভান্ডারের সন্ধান করতে পার, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
28-74 : আর সেইদিন তিনি ওদের ডাকবেন ও বলবেন - - ''কোথায় আমার অংশীদাররা যাদের তোমরা উদ্ভাবন করতে?’’
28-75 : আর আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে বের করব একজন সাক্ষী, তখন আমরা বলব - - ''তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এস।’’ তখন তারা জানতে পারবে যে সত্য আল্লাহ্‌রই, আর তারা যা কিছু উদ্ভাবন করত তা তাদের থেকে বিদায় নেবে।
28-76 : নিঃসন্দেহ ক্কারূন ছিল মূসার স্বজাতিদের মধ্যেকার, কিন্তু সে তাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। আর আমরা তাকে ধনভান্ডারের এতসব দিয়েছিলাম যে তার চাবিগুলো একদল বলবান লোকের বোঝা হয়ে যেত। দেখো! তার লোকেরা তাকে বললে - - ''গর্ব করো না, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ দাম্ভিকদের ভালবাসেন না।
28-77 : ''আর আল্লাহ্ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তুমি পরকালের আবাস অণ্বেষণ করো, আর ইহকালে তোমার ভাগ ভুলে যেয়ো না, আর ভাল কর যেমন আল্লাহ্ তোমার ভাল করেছেন, আর দুনিয়াতে ফেসাদ বাধাতে চেয়ো না। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ ফেসাদে লোকদের ভালবাসেন না।’’
28-78 : সে বলল - - ''আমাকে এ - সব দেওয়া হয়েছে আমার মধ্যে যে জ্ঞান রয়েছে সেজন্য।’’ সে কি জানত না যে তার আগে বহু মানবগোষ্ঠীকে আল্লাহ্ ধ্বংস করে ফেলেছেন যারা ছিল তার চেয়েও শক্তিতে অধিক প্রবল এবং একাট্টাকরণে আরো প্রাচুর্যময়? আর অপরাধীদের তাদের পাপ সন্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে না।
28-79 : কাজেকাজেই সে তার স্বজাতির সামনে তার জাঁকজমকের সাথে বাহির হয়েছিল। যারা এই দুনিয়ার জীবন কামনা করেছিল তারা বলত - - ''হায়! ক্কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে তার মতো যদি আমাদেরও থাকতো! নিঃসন্দেহ সে বিরাট সৌভাগ্যের অধিকারী!’’
28-80 : আর যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল - - ''ধিক্ তোমাদের! যে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তার জন্য আল্লাহ্‌র পুরস্কার বেশি ভাল। আর ধৈর্যশীলদের ছাড়া অন্যে এর সাক্ষাৎ পাবে না।’’
28-81 : অতঃপর আমরা পৃথিবীকে দিয়ে তাকে ও তার প্রাসাদকে গ্রাস করিয়েছিলাম, তখন তার জন্য এমন কোনো দল ছিল না যারা আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারত, আর সে আ‌ত্মপক্ষকে সাহায্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
28-82 : আর আগের দিন যারা তার অবস্থার জন্য কামনা করত তারা সাত - সকালে বলতে লাগল - - ''আহা দেখো! আল্লাহ্ তাঁরে বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তার প্রতি রিযেক প্রসারিত করেন এবং মেপেজোখে দেন। আল্লাহ্ যদি আমাদের উপরে সদয় না হতেন তবে আমাদেরও গ্রাস করাতেন। আহা দেখো! অবিশ্বাসীরা কখনো সফলকাম হয় না।’’
28-83 : এই পরলোকের আবাস, - - আমরা এটি নির্ধারিত করেছি তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে বাড়াবাড়ি করতে চায় না এবং ফেসাদও বাধায় না। আর শুভ - পরিণাম হচ্ছে ধর্মপরায়ণদের জন্য।
28-84 : যে কেউ ভাল নিয়ে আসে তার জন্য তবে এর চেয়েও ভাল রয়েছে, আর যে মন্দ নিয়ে আসে - - তাহলে যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে না তারা যা করত তা ব্যতীত।
28-85 : নিঃসন্দেহ যিনি তোমার উপরে কুরআন বিধান করেছেন তিনি আলবৎ তোমাকে ফিরিয়ে আনবেন প্রত্যাবর্তনস্থলে। বলো - - ''আমার প্রভু ভাল জানেন কে পথনির্দেশ নিয়ে এসেছে আর কে হচ্ছে স্বয়ং সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে।’’
28-86 : আর তুমি তো আশা কর নি যে তোমার সঙ্গে গ্রন্থখানার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু এটি তোমার প্রভুর কাছ থেকে একটি করুণা, সুতরাং তুমি কখনো অবিশ্বাসীদের পৃষ্ঠপোষক হয়ো না।
28-87 : আর তারা যেন আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলী থেকে নিবৃত্ত না করে সে - সব তোমার কাছে অবতীর্ণ হবার পরে, বরঞ্চ তুমি ডাকো তোমার প্রভুর প্রতি, আর তুমি কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না।
28-88 : আর আল্লাহ্‌র সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্যকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। তাঁর অবয়ব ব্যতীত আর সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।