আল কুরআন: সমকালীন বাংলা অনুবাদ, Chapter: 10, ইউনুস (নবী ইউনুস আঃ) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10070

আল কুরআন: সমকালীন বাংলা অনুবাদ

Chapter: 10, ইউনুস (নবী ইউনুস আঃ)

10-1 : আলিফ - লাম - রা। এইগুলি জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত।
10-2 : মানুষের জন্য ইহা কি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাহাদেরই একজনের নিকট ওহী প্রেরণ করিয়াছি এই মর্মে যে, তুমি মানুষকে সতর্ক কর এবং মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও, তাহাদের জন্য তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে উচ্চ মর্যাদা! কাফিররা বলে, ‘এ তো এক সুস্পষ্ট জাদুকর!’
10-3 : তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন। তাহার অনুমতি লাভ না করিয়া সুপারিশ করিবার কেহ নাই। ইনিই আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক, সুতরাং তাহার ‘ইবাদত কর। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করিবে না?
10-4 : তাঁহারই নিকট তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; আল্লাহ প্রতিশ্রুতি সত্য। সৃষ্টিকে তিনিই প্রথম অস্তিত্বে আনেন, অতঃপর উহার পুনরাবর্তন ঘটান, যাহারা মু’মিন ও সৎকর্মপরায়ণ তাহাদেরকে ন্যায়বিচারের সঙ্গে কর্মফল প্রদানের জন্য। এবং যাহারা কাফির তাহারা কুফরী করিত বলিয়া তাহাদের জন্য রহিয়াছে অত্যুষ্ণ পানীয় ও মর্মন্তুদ শাস্তি।
10-5 : তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করিয়াছেন এবং উহার মনযিল নির্দিষ্ট করিয়াছেন যাহাতে তোমরা বৎসর গণনা ও সময়ের হিসাব জানিতে পার। আল্লাহ ইহা নিরর্থক সৃষ্টি করেন নাই। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এই সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।
10-6 : নিশ্চয়ই দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহাতে নিদর্শন রহিয়াছে মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য।
10-7 : নিশ্চয়ই যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং ইহাতেই পরিতৃপ্ত থাকে এবং যাহারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে গাফিল।
10-8 : উহাদেরই আবাস দোজখ, উহাদের কৃতকর্মের জন্য।
10-9 : যাহারা মু’মিন ও সৎকর্মপরায়ণ তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের ঈমান হেতু তাহাদেরকে পথনির্দেশ করিবেন; সুখদ কাননে তাহাদের পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হইবে।
10-10 : সেখানে তাহাদের ধ্বনি হইবে : ‘হে আল্লাহ! তুমি মহান, পবিত্র !’ এবং সেখানে তাহাদের অভিবাদন হইবে ‘সালাম’ এবং তাহাদের শেষ ধ্বনি হইবে এই:‘সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।’
10-11 : আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ ত্বরান্নিত করিতেন, যেভাবে তাহারা তাহাদের কল্যাণ ত্বরান্নিত করিতে চায়, তবে অবশ্যই তাহাদের মৃত্যু ঘটিত। সুতরাং যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহাদেরকে আমি তাহাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দেই।
10-12 : আর মানুষকে যখন দুঃখ - দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুইয়া, বসিয়া অথবা দাঁড়াইয়া আমাকে ডাকিয়া থাকে। অতঃপর আমি যখন তাহার দুঃখ - দৈন্য দূরীভূত করি, সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাহাকে যে দুঃখ - দৈন্য স্পর্শ করিয়াছিল তাহার জন্য সে আমাকে ডাকেই নাই। যাহারা সীমালংঘন করে তাহাদের কর্ম তাহাদের নিকট এইভাবে শোভনীয় করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
10-13 : তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি তো ধ্বংস করিয়াছি যখন তাহারা সীমা অতিক্রম করিয়াছিল। স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূলগণ আসিয়াছিল, কিন্তু তাহারা ঈমান আনিবার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এইভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়া থাকি।
10-14 : অতঃপর আমি উহাদের পর পৃথিবীতে তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করিয়াছি, তোমরা কিরূপ কর্ম কর তাহা দেখিবার জন্য।
10-15 : যখন আমার আয়াত, যাহা সুস্পষ্ট, তাহাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহারা বলে, ‘অন্য এক কুরআন আন ইহা ছাড়া, অথবা ইহাকে বদলাও।’ বল, ‘নিজ হইতে ইহা বদলান আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যাহা ওহী হয়, আমি কেবল তাহারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করিলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি।
10-16 : বল, আল্লাহ যদি চাহিতেন আমিও তোমাদের নিকট ইহা তিলাওয়াত করিতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করিতেন না। আমি তো ইহার পূর্বে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করিয়াছি; তবুও কি তোমরা বুঝিতে পার না?’
10-17 : যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা আল্লাহ নিদর্শনকে অস্বীকার করে তাহার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে? নিশ্চয়ই অপরাধিগণ সফলকাম হয় না।
10-18 : উহারা আল্লাহ ব্যতীত যাহার ‘ইবাদত করে তাহা উহাদের ক্ষতিও করিতে পারে না, উপকারও করিতে পারে না। উহারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহ নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যাহা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তাহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে তিনি ঊর্ধ্বে।
10-19 : মানুষ ছিল একই উম্মত, পরে উহারা মতভেদ সৃষ্টি করে। তোমার প্রতিপালকের পূর্ব - ঘোষণা না থাকিলে তাহারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায় তাহার মীমাংসা তো হইয়াই যাইত।
10-20 : উহারা বলে, ‘তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ বল, ‘অদৃশ্যের জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই আছে। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।’
10-21 : আর দুঃখ - দৈন্য তাহাদেরকে স্পর্শ করিবার পর, যখন আমি মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদন করাই তাহারা তখনই আমার নিদর্শনের বিরুদ্ধে অপকৌশল করে। বল, আল্লাহ অপকৌশলের শাস্তিদানে দ্রুততর।’ তোমরা যে অপকৌশল কর তাহা অবশ্যই আমার ফিরিশ্তাগণ লিখিয়া রাখে।
10-22 : তিনিই তোমাদেরকে জলেস্থলে ভ্রমণ করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও এবং এইগুলি আরোহী লইয়া অনুকূল বাতাসে বহিয়া যায় এবং তাহারা উহাতে আনন্দিত হয়; অতঃপর এইগুলি বাত্যাহত এবং সর্বদিক হইতে তরঙ্গাহত হয় এবং তাহারা উহা দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া পড়িয়াছে মনে করে, তখন তাহারা আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হইয়া আল্লাহ ডাকিয়া বলে: ‘তুমি আমাদেরকে ইহা হইতে ত্রাণ করিলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হইব।’
10-23 : অতঃপর তিনি যখনই উহাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখনই উহারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে জুলুম করিতে থাকে। হে মানুষ! তোমাদের জুলুম বস্তুত তোমাদের নিজেদের প্রতিই হইয়া থাকে; পার্থিব জীবনের সুখ ভোগ করিয়া নাও, পরে আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানাইয়া দিব তোমরা যাহা করিতে।
10-24 : বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এইরূপ : যেমন আমি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি যদ্ধারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন - সন্নিবিষ্ট হইয়া উদ্গত হয়, যাহা হইতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করিয়া থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তাহার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং উহার অধিকারিগণ মনে করে উহা তাহাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ আসিয়া পড়ে ও আমি উহা এমনভাবে নির্মূল করিয়া দেই, যেন গতকালও উহার অস্তিত্ব ছিল না। এইভাবে আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
10-25 : আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।
10-26 : যাহারা কল্যাণকর কাজ করে তাহাদের জন্য আছে কল্যাণ এবং আরও অধিক। কালিমা ও হীনতা উহাদের মুখমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করিবে না। উহারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে উহারা স্থায়ী হইবে।
10-27 : যাহারা মন্দ কাজ করে তাহাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাহাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করিবে; আল্লাহ হইতে উহাদেরকে রক্ষা করিবার কেহ নাই; উহাদের মুখমণ্ডল যেন রাত্রির অন্ধকার আস্তরণে আচ্ছাদিত। উহারা দোজখের অধিবাসী, সেখানে উহারা স্থায়ী হইবে।
10-28 : এবং যেদিন আমি উহাদের সকলকে একত্র করিয়া, যাহারা মুশরিক তাহাদেরকে বলিব, ‘তোমরা এবং তোমরা যাহাদেরকে শরীক করিয়াছিলে তাহারা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান কর;’ আমি উহাদেরকে পরস্পর হইতে পৃথক করিয়া দিব এবং উহারা যাহাদেরকে শরীক করিয়াছিল তাহারা বলিবে, ‘তোমরা তো আমাদের ‘ইবাদত করিতে না।’
10-29 : আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট যে, তোমরা আমাদের ‘ইবাদত করিতে এ বিষয়ে আমরা তো গাফিল ছিলাম।’
10-30 : সেখানে তাহাদের প্রত্যেকে তাহার পূর্বকৃত কর্ম পরীক্ষা করিয়া লইবে এবং উহাদেরকে উহাদের প্রকৃত অভিভাবক আল্লাহ নিকট ফিরাইয়া আনা হইবে এবং উহাদের উদ্ভাবিত মিথ্যা উহাদের নিকট হইতে অন্তর্হিত হইবে।
10-31 : বল, ‘কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হইতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কাহার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত হইতে কে বাহির করে এবং মৃতকে জীবিত হইতে কে বাহির করে এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তাহারা বলিবে, আল্লাহ বল,‘তবুও কি তোমরা সাবধান হইবে না?’
10-32 : তিনিই আল্লাহ তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করিবার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী থাকে? সুতরাং তোমরা কোথায় চালিত হইতেছ?
10-33 : এইভাবে সত্যত্যাগীদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই বাণী সত্য প্রতিপন্ন হইয়াছে যে, তাহারা তো ঈমান আনিবে না।
10-34 : বল, ‘তোমরা যাহাদের শরীক কর তাহাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করে ও পরে উহার পুনরাবর্তন ঘটায়?’ বল, আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন ও পরে উহার পুনরাবর্তন ঘটান,’ সুতরাং তোমরা কেমন করিয়া সত্য - বিচ্যুত হইতেছ?
10-35 : বল, ‘তোমরা যাহাদেরকে শরীক কর তাহাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে, যে সত্যের পথ নির্দেশ করে?’বল, আল্লাহ সত্যের পথ নির্দেশ করেন। যিনি সত্যের পথ নির্দেশ করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হক্দার, না যাহাকে পথ না দেখাইলে পথ পায় না - সে? তোমাদের কী হইয়াছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত করিয়া থাক?’
10-36 : উহাদের অধিকাংশ অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না। উহারা যাহা করে নিশ্চই আল্লাহ তাহালা সে বিষয়ে অবহিত।
10-37 : এই কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও রচনা নয়। পক্ষান্তরে, ইহার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে ইহা তাহার সমর্থন এবং ইহা বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে, ইহা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে।
10-38 : তাহারা কি বলে, ‘সে ইহা রচনা করিয়াছে?’ বল, ‘তবে তোমরা ইহার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ব্যাতীত অপর যাহাকে পার আহবান কর, যদি তোমরা সত্যবাদি হও।
10-39 : পরন্তু উহারা যে বিষয়ের জ্ঞান আয়ত্ত করে নাই তাহা অস্বীকার করে এবং এখনও ইহার পরিণাম উহাদের নিকট উপস্থিত হয় নাই। এইভাবে উহাদের পূর্ববর্তীগণও মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল, সুতরাং দেখ, জালিমদের পরিণাম কী হইয়াছে।
10-40 : উহাদের মধ্যে কেহ ইহাতে বিশ্বাস করে এবং কেহ ইহাতে বিশ্বাস করে না এবং তোমার প্রতিপালক অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
10-41 : এবং তাহারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে তুমি বলিও, ‘আমার কর্মের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কর্মের দায়িত্ব তোমাদের। আমি যাহা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যাহা কর সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত।’
10-42 : উহাদের মধ্যে কেহ কেহ তোমার দিকে কান পাতিয়া রাখে। তুমি কি বধিরকে শুনাইবে, তাহারা না বুঝিলেও?
10-43 : উহাদের মধ্যে কেহ কেহ তোমার দিকে তাকাইয়া থাকে। তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাইবে, তাহারা না দেখিলেও?
10-44 : নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন জুলুম করেন না, বরং মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়া থাকে।
10-45 : যেদিন তিনি উহাদেরকে একত্র করিবেন সেদিন উহাদের মনে হইবে, উহাদের অবস্থিতি দিবসের মুহূর্তকাল মাত্র ছিল; উহারা পরস্পরকে চিনিবে। আল্লাহ সাক্ষাৎ যাহারা অস্বীকার করিয়াছে তাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে এবং তাহারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না।
10-46 : আমি উহাদেরকে যে ভীতি প্রদর্শন করিয়াছি তাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাইয়াই দেই অথবা তোমার কাল পূর্ণ করিয়াই দেই, উহাদের প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট; এবং উহারা যাহা করে আল্লাহ তাহার স্বাক্ষী।
10-47 : প্রত্যেক জাতির জন্য আছে একজন রাসূল এবং যখন উহাদের রাসূল আসিয়াছে তখন ন্যায়বিচারের সঙ্গে উহাদের মীমাংসা হইয়াছে এবং উহাদের প্রতি জুলুম করা হয় নাই।
10-48 : উহারা বলে, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে ‘বল এই প্রতিশ্রুতি কবে ফলিবে?’
10-49 : বল, আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের ভালমন্দের উপর আমার কোন অধিকার নাই।’ প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাহাদের সময় আসিবে তখন তাহারা মুহূর্ত কালও বিলম্ব বা ত্বরা করিতে পারিবে না।
10-50 : বল, ‘তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, যদি তাঁহার শাস্তি তোমাদের উপর রজনীতে অথবা দিবসে আসিয়া পড়ে তবে অপরাধীরা উহার কী ত্বরান্নিত করিতে চায়?’
10-51 : তোমরা কি ইহা ঘটিবার পর ইহা বিশ্বাস করিবে? এখন? তোমরা তো ইহাই ত্বরান্নিত করিতে চাহিয়াছিলে!
10-52 : পরে জালিমদেরকে বলা হইবে, ‘স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন কর; তোমরা যাহা করিতে, তোমাদেরকে তাহারই প্রতিফল দেওয়া হইতেছে।’
10-53 : উহারা তোমার নিকট জানিতে চায়, ‘ইহা কি সত্য?’ বল, ‘হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ! ইহা অবশ্যই সত্য। এবং তোমরা ইহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না।’
10-54 : প্রত্যেক সীমালংঘনকারীই পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা যদি তাহার হইত তবে সে মুক্তির বিনিময়ে উহা দিয়া দিত; এবং যখন উহারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে তখন মনস্তাপ গোপন করিবে। উহাদের মীমাংসা ন্যায়বিচারের সঙ্গে করা হইবে এবং উহাদের প্রতি জুলুম করা হইবে না।
10-55 : সাবধান! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা আল্লাহরই। সাবধান! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই অবগত নয়।
10-56 : তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে।
10-57 : হে মানুষ!তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আসিয়াছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহার আরোগ্য এবং মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।
10-58 : বল, ‘ইহা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁহার দয়ায়; সুতরাং ইহাতে উহারা আনন্দিত হউক।’ উহারা যাহা পুঞ্জীভূত করে তাহা অপেক্ষা ইহা শ্রেয়।
10-59 : বল,‘তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়াছেন তোমরা যে তাহার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করিয়াছ? বল, আল্লাহ কি তোমাদেরকে ইহার অনুমতি দিয়াছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করিতেছ?
10-60 : যাহারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, কিয়ামত দিবস সম্বন্ধে তাহাদের কী ধারণা? নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
10-61 : তুমি যে কোন অবস্থায় থাক এবং তুমি তৎসম্পর্কে কুরআন হইতে যাহা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোন কাজ কর, আমি তোমাদের পরিদর্শক - যখন তোমরা উহাতে প্রবৃত্ত হও। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয় এবং উহা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নাই যাহা সুস্পষ্ট কিতাবে নাই।
10-62 : জানিয়া রাখ আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নাই এবং তারা দুঃখিত হবে না।
10-63 : যাহারা ঈমান আনে এবং তাক্ওয়া অবলম্বন করে,
10-64 : তাহাদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে, আল্লাহ বাণীর কোন পরিবর্তন নাই; উহাই মহাসাফল্য।
10-65 : উহাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়, সমস্ত শক্তি আল্লাহর, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
10-66 : জানিয়া রাখ! যাহারা আকাশমণ্ডলে আছে এবং যাহারা পৃথিবীতে আছে তাহারা আল্লাহ যাহারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে শরীকরূপে ডাকে, তাহারা কিসের অনুসরণ করে? তাহারা তো শুধু অনুমানেরই অনুসরণ করে এবং তাহারা শুধু মিথ্যাই বলে।
10-67 : তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদের জন্য রাত্রি, যেন উহাতে তোমরা বিশ্রাম করিতে পার এবং দিবস দেখিবার জন্য। যে সম্প্রদায় কথা শুনে নিশ্চয়ই তাহাদের জন্য ইহাতে আছে নিদর্শন।
10-68 : তাহারা বলে আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন।’ তিনি মহান পবিত্র! তিনি অভাবমুক্ত! যাহা কিছু আছে আকাশমণ্ডলে ও যাহা কিছু আছে পৃথিবীতে তাহা তাঁহারই। এ বিষয়ে তোমাদের নিকট কোন সনদ নাই। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলিতেছ, যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নাই?
10-69 : বল যাহারা আল্লাহ সমন্ধে মিথ্যা আরোপ করিবে, তারা সফল কাম হবে না।
10-70 : পৃথিবীতে ইহাদের জন্য আছে কিছু সুখ - সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট উহাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর কুফরী হেতু উহাদেরকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাইব।
10-71 : উহাদেরকে নূহ্ - এর বৃত্তান্ত শোনাও। সে তাহার সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থিতি ও আল্লাহ নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশদান তোমাদের নিকট যদি দুঃসহ হয় তবে আমি তো আল্লাহ উপর নির্ভর করি। তোমরা যাহাদেরকে শরীক করিয়াছ তৎসহ তোমাদের কর্তব্য স্থির করিয়া নাও, পরে যেন কর্তব্য বিষয়ে তোমাদের কোন সংশয় না থাকে। আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্ম নিষ্পন্ন করিয়া ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিও না।
10-72 : ‘অতঃপর তোমরা মুখ ফিরাইয়া লইলে লইতে পার, তোমাদের নিকট আমি তো কোন পারিশ্রমিক চাই নাই, আমার পারিশ্রমিক আছে আল্লাহর নিকট, আমি তো আত্বসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইতে আদিষ্ট হইয়াছি।’
10-73 : আর উহারা তাহাকে মিথ্যাবাদী বলে; অতঃপর তাহাকে ও তাহার সঙ্গে যাহারা তরণীতে ছিল তাহাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং তাহাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করি ও যাহারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাদেরকে নিমজ্জিত করি। সুতরাং দেখ, যাহাদেরকে সতর্ক করা হইয়াছিল তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল!
10-74 : অনন্তর তাহার পরে আমি রাসূলগণকে প্রেরণ করি, তাহাদের সম্প্রদায়ের নিকট; তাহারা উহাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসিয়াছিল। কিন্তু উহারা পূর্বে যাহা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহার প্রতি ঈমান আনিবার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এইভাবে আমি সীমালংঘনকারীদের হৃদয় মোহর করিয়া দেই।
10-75 : পরে আমার নিদর্শনসহ মূসা ও হারূনকে ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট প্রেরণ করি। কিন্তু উহারা অহংকার করে এবং উহারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়।
10-76 : অতঃপর যখন উহাদের নিকট আমার নিকট হইতে সত্য আসিল তখন উহারা বলিল, ‘ইহা তো নিশ্চয়ই স্পষ্ট জাদু।’
10-77 : মূসা বলিল, ‘সত্য যখন তোমাদের নিকট আসিল তখন তৎসম্পর্কে তোমরা এইরূপ বলিতেছ? ইহা কি জাদু? জাদুকরেরা তো সফলকাম হয় না।’
10-78 : উহারা বলিল, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষগণকে যাহাতে পাইয়াছি তুমি কি তাহা হইতে আমাদেরকে বিচ্যুত করিবার জন্য আমাদের নিকট আসিয়াছ এবং যাহাতে দেশে তোমাদের দুইজনের প্রতিপত্তি হয়, এইজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি বিশ্বাসী নই।’
10-79 : ফির‘আওন বলিল, ‘তোমরা আমার নিকট সকল সুদক্ষ জাদুকরকে লইয়া আস।’
10-80 : অতঃপর যখন জাদুকরেরা আসিল তখন উহাদেরকে মূসা বলিল, ‘তোমাদের যাহা নিক্ষেপ করিবার, নিক্ষেপ কর।’
10-81 : অতঃপর যখন তাহারা নিক্ষেপ করিল তখন মূসা বলিল, ‘তোমরা যাহা আনিয়াছ তাহা জাদু, নিশ্চয়ই আল্লাহ উহাকে অসার করিয়া দিবেন। আল্লাহ অবশ্যই অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কর্ম সার্থক করেন না।’
10-82 : অপররাধীরা অপ্রিতিকর মনে করিলেও আল্লাহর তাহার বানী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করিবেন।
10-83 : ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গ নির্যাতন করিবে এই আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের একদল ব্যতীত আর কেহ তাহার প্রতি ঈমান আনে নাই। বস্তুত ফির‘আওন ছিল দেশে পরাক্রমশালী এবং সে অবশ্যই সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
10-84 : মূসা বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহতে ঈমান আনিয়া থাক, যদি তোমরা আত্মসর্মপণকারী হও তবে তোমরা তাঁহারই উপর নির্ভর কর।’
10-85 : অতঃপর তাহারা বলিল, ‘আমরা আল্লাহ উপর নির্ভর করিলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করিও না;
10-86 : ‘এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হইতে রক্ষা কর।’
10-87 : আমি মূসা ও তাহার ভ্রাতাকে প্রত্যাদেশ করিলাম, ‘মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন কর এবং তোমাদের গৃহগুলিকে ‘ইবাদতগৃহ কর, সালাত কায়েম কর এবং মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।’
10-88 : মূসা বলিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করিয়াছ যদ্বারা, হে আমাদের প্রতিপালক! উহারা মানুষকে তোমার পথ হইতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতি - পালক! উহাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, উহাদের হৃদয় কঠিন করিয়া দাও, উহারা তো মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনিবে না।’
10-89 : তিনি বলিলেন, ‘তোমাদের দুইজনের দু‘আ কবূল হইল, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনও অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করিও না।’
10-90 : আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফির‘আওন ও তাহার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য সহকারে সীমালংঘন করিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জমান হইল তখন বলিল, ‘আমি বিশ্বাস করিলাম বনী ইসরাঈল যাহাতে বিশ্বাস করে। নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই এবং আমি আত্মসর্মপণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
10-91 : ‘এখন! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করিয়াছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
10-92 : ‘আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করিব যাহাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হইয়া থাক। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল।’
10-93 : আমি তো বনী ইসরাঈলকে উৎকৃষ্ট আবাসভূমিতে বসবাস করাইলাম এবং আমি উহাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দিলাম, অতঃপর উহাদের নিকট জ্ঞান আসিলে উহারা বিভেদ সৃষ্টি করিল। উহারা যে বিষয়ে বিভেদ সৃষ্টি করিয়াছিল তোমার প্রতিপালক অবশ্যই তাহাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন উহার ফয়সালা করিয়া দিবেন।
10-94 : আমি তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি উহাতে যদি তুমি সন্দেহে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার নিকট সত্য অবশ্যই আসিয়াছে। তুমি কখনও সন্দিগ্ধচিত্তদের অন্তর্ভুক্ত হইও না,
10-95 : এবং যাহারা আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করিয়াছে তুমি কখনও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইও না - তাহা হইলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
10-96 : নিশ্চয়ই যাহাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছে, তাহারা ঈমান আনিবে না,
10-97 : যদিও উহাদের নিকট প্রত্যেকটি নিদর্শন আসে যতক্ষণ না উহারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে।
10-98 : তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত কোন জনপদবাসী কেন এমন হইল না যাহারা ঈমান আনিত এবং তাহাদের ঈমান তাহাদের উপকারে আসিত? তাহারা যখন ঈমান আনিল তখন আমি তাহাদের নিকট হইতে পার্থিব জীবনের হীনতাজনক শাস্তি দূর করিলাম এবং উহাদেরকে কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করিতে দিলাম।
10-99 : তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিলে পৃথিবীতে যাহারা আছে তাহারা সকলেই অবশ্যই ঈমান আনিত; তবে কি তুমি মু’মিন হইবার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করিবে?
10-100 : আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত ঈমান আনা কাহারও সাধ্য নয় এবং যাহারা অনুধাবন করে না, আল্লাহ তাদেরকে কলুষলিপ্ত করেন।
10-101 : বল, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহার প্রতি লক্ষ্য কর।’ নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শন অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপকারে আসে না।
10-102 : ইহারা কি ইহাদের পূর্বে যাহা ঘটিয়াছে উহার অনুরূপ ঘটনারই প্রতীক্ষা করে? বল, ‘তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।’
10-103 : পরিশেষে আমি আমার রাসূলগণকে এবং মু’মিনগণকেও উদ্ধার করি। এইভাবে আমার দায়িত্ব মু’মিনগণকে উদ্ধার করা।
10-104 : বল, ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের প্রতি সংশয়যুক্ত হও তবে জানিয়া রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাহাদের ‘ইবাদত কর আমি উহাদের ‘ইবাদত করি না। পরন্তু আমি ‘ইবাদত করি আল্লাহর যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং আমি মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হইবার জন্য আদিষ্ট হইয়াছি,
10-105 : আর উহাও এই যে, ‘তুমি একনিষ্ঠভাবে দীনে প্রতিষ্ঠিত হও এবং কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না,
10-106 : ‘এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে না, যাহা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না, কারণ ইহা করিলে তখন তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।’
10-107 : ‘এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত ইহা মোচনকারী আর কেহ নাই এবং আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান তবে তাঁহার অনুগ্রহ রদ করিবার কেহ নাই। তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
10-108 : বল, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট সত্য আসিয়াছে। সুতরাং যাহারা সৎপথ অবলম্বন করিবে তাহারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করিবে এবং যাহারা পথভ্রষ্ট হইবে তাহারা তো পথভ্রষ্ট হইবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং আমি তোমাদের কর্মবিধায়ক নই।’
10-109 : তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হইয়াছে তুমি তাহার অনুসরণ কর এবং তুমি ধৈর্য ধারণ কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফয়সালা করেন এবং আল্লাহ সর্ব উত্তম বিধান দাতা।